ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -২৩

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ২৩
লেখিকা – Zaira Insaan

ক্লাসে ঢুকতে না ঢুকতেই কে যেন মুখে এক গ্লাস পানি মেরে দিল। চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল মিহি। কিয়ৎ জল চোখে পড়তেই জ্বলে উঠলো। বা হাত দিয়ে মুখের সমস্ত পানি ঝেড়ে ফেলল সে। সুবন্তী ভান করে বলল,,

“স্যরি মিহি আমি খেয়াল করিনি। আসলে দীপ কে মারতে গিয়ে তোমাকে…। আ’ম রিয়্যালি স্যরি ফোর দ্যাট!”

সুবন্তী জলদি টিস্যু নিয়ে মিহির সোয়েটারে হালকা পড়া পানি গুলো সযত্নে মুছে দিচ্ছে। মিহি চোয়াল শক্ত করে তীর্যক দৃষ্টিতে ওর কর্ম দেখছে। খপ করে ওর হাত ধরে নিল মিহি। আঙুল দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল কব্জি। সুবন্তী কঁকিয়ে উঠলো।
মিহি দেখতে পেল তার নাটক। সুবন্তী মলিন চেহেরা করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ক্লাসের বাইরে চোখ যেতেই ভড়কে গেল সুবন্তী। স্নিগ্ধ এদিকেই আসছে ক্লাসে। আমতা আমতা করতে লাগল সে। মিহি সেদিকে ভূক্ষেপ নেই!
স্নিগ্ধ এসে ওদের কে এভাবে ভ্রুকুঞ্চিত করল।‌ মিহি হাত নামিয়ে নিল কিন্তু ধরে চেপে রইল। স্নিগ্ধ মিহির ভেজা মুখ দেখে বলল,,

“মুখ ভিজা কেন তোমার?”

মিহি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,,

“গরম লাগছিল তাই মুখ ধুয়েছি।”

কুঞ্চিত ভ্রু আরো কুঞ্চিত করল সে। সুবন্তীর দিকে তাকালো, সে আলগা হেসে নিজের দোষ লুকানো চেষ্টা করছে। স্নিগ্ধ বলল,,

“এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে সীটে বসো গিয়ে, যাও।”

মিহি স্মিত হাসল তারপর সম্মতি জানালো। স্নিগ্ধ পাশ কেটে চলে গেল নিজ কর্মে।
মিহি অগ্নিচোখে তাকালো এবার। হাত মুঠোয় প্রগাঢ় শক্ত করল। তারপর শক্ত গলায় বলল,,

“এবার ছাড় দিলাম কিন্তু পরের বার থেকে এমন কিছু করলে, তোমার কপালে দুঃখ আছে সুবন্তী।”

বলে এক ঝটকা মেরে হাত ছেড়ে দিল। ব্যাথায় হাত ঘষলো সে। লাল বর্ণ ধারণ করেছে কব্জি।
মিহি তাচ্ছিল্য ভাবে তার দিকে একনজর বুলিয়ে পাশ কেটে ভেতরে ঢুকল।
___________

ক্লাস শেষে মার্কেটে যাচ্ছিল মিহি। জরুরী কেনাকাটা প্রয়োজন। কিন্তু ভার্সিটি বের হওয়া মাত্র মুখ পলকে ছাই হয়ে গেল। প্রতীক দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে বুকে দু’হাত গুজে। মিহির তার সামনে যেতে ইচ্ছে না করলেও যেতে হলো। না যাওয়ার উপায় কি? আসা মাত্র মুখে চমৎকার হাসি ফুটে উঠল প্রতীকের। যা একদমও সহ্য হলো না মিহির। তাও মুখে চাপা হাসি রাখল। গাড়ির দরজা খুলে বলল,,

“সীট।”

মিহি নম্র গলায় বলল,,

“আমি বাসায় যাচ্ছি না…”

“তো কোথায় যাবা?”

মিহির পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে অর্ধেকের মধ্যে প্রশ্ন করে বসল প্রতীক। প্রচুর রাগ রাগল মিহির। বহু কষ্টে শান্ত রেখে বলল,,

“মার্কেটে যাচ্ছি এরপর বাসায় যাব।”

“ফ্যান্টাস্টিক, আমিও মার্কেটের সাইডেই যাচ্ছি চলো একসাথে।”

থতমত খেয়ে গেল মিহি। ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,

“জ্বি আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে যাচ্ছি।”

“যেটাই হোক আমি ড্রোপ করে দিব।”

মিহি হাসি রেখে বলল,,

“জ্বি আমার জন্য কোন কষ্ট করতে হবে না আপনার। বললাম তো ফ্রেন্ডের সাথে যাচ্ছি।”

স্নিগ্ধ ভার্সিটির উপর বা পাশে রুম থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে চেষ্টা করছে এই লোকটা কে? মিহির ভাবভঙ্গি দেখে এতটুকু বুঝতে পারল যে লোকটা তাকে কোনকিছু নিয়ে জোর করছে। ভ্রু উঁচু করলো। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল চৈতি কে যেতে দেখে ডাকল সে। চৈতি আসল। স্নিগ্ধের হুকুমতে মিহি কে ডাকতে গেল।
মিহি কে ডেকে বলল,,

“স্নিগ্ধ স্যার তোমাকে ডাকছে।”

মিহি কোনমতে প্রতীকের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে জলদি গেল স্নিগ্ধের রুমে। রুমে এসে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল।
স্নিগ্ধ নোট করছে খাতায়। মিহি কে দেখা মাত্রই সামনে আসতে বলল। মিহি সামনে দাড়াতেই বলল,,

“এই কাগজ পত্র গুলো ফোল্ড করে আলমারিতে তুলে রাখো।”

মিহি হালকা বিরক্ত হলো। সবসময় কাগজের কাজ কেন দেই তাকে? মিহি সীটে ব্যাগ রেখে কাজ শুরু করল। স্নিগ্ধ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,

“নীচে ছেলেটা কে?”

ঘাবড়ে গেল মিহি। দু’তিন বার শুকনো ঢোক গিলল। কি বলবে? কি আর বলবে।
কথার মধ্যে প্যাঁচগোচ না রেখে সোজাসাপ্টা উত্তর দিল,,

“আমার বিয়ে হবে।”

কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে যায় স্নিগ্ধ। লিখা বন্ধ করে দেয়।
ভেতর টা হিমশীতল হয়ে যায়। বুকের মধ্যে অদ্ভুত রকমের ব্যাথা অনুভব করল সে।
এই বাক্য শুনার পর মাথা কাজ করছে না। মেঝের দিকে চঞ্চল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কপালে ভাঁজ পরেছে।
নিজেকে ধাতস্থ করে মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা টেনে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,

“ওহ্ ভালো। তবে বিয়ে কখন?”

(চলবে…)

[ বড় করে মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here