ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -২৪ ও শেষ

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ২৪ #অপূর্ণের_স্রোত
লেখিকা – Zaira Insaan

নিজেকে ধাতস্থ করে মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা টেনে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,

“ওহ্ ভালো। তবে বিয়ে কখন?”

মিহি কিছু একটা চিন্তা করে বলল,,

“পরীক্ষার পরে।”

স্নিগ্ধ নিজের মধ্যে একই ভাব রেখে বলল,,

“এই বিয়েতে তোমার মত আছে?”

মিহির মুখ মেঘের কালো আঁধার হয়ে চুপ করে গেল। স্নিগ্ধ মলিন ভাবে চেয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। মিহি সময় নিয়ে বলল,,

“হ্যা।”

স্নিগ্ধ মুচকি হাসি দিয়ে খাতায় লেখা চলমান করে বলল,,

“ভালো খুব ভালো।”

স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেও কন্ঠস্বর কেঁপে উঠেছিল তার। দ্রুত গলা ঝাড়ল যেন মিহি আঁচ করতে না পারে। বুক ব্যাথা করছে খুব যেন কড়ঘাত করছে ধারালো ছুরি দিয়ে। লেখা থামিয়ে দিয়ে মিহির দিকে তাকালো। মিহি কাগজপত্র সব গুছিয়ে এক জট করে আলমারিতে নিয়ে গিয়ে রাখল। ওকে শান্তই দেখা যাচ্ছে। মিহি এসে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাসি দিয়ে বলল,,

“স্যার সব হয়ে গেছে এবার আমি আসি?”

ওকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,,

“যাও।”

মিহি মুচকি হেসে চলে গেল। স্নিগ্ধ ফোঁস করে দুঃখের ছোট শ্বাস ফেলে বলে,,

“এত খারাপ লাগা কিসের? আমাকে দেখলে তো যে কেউ বলবে, আমি ছ্যাকা খাওয়া এক পৃথকীকরণ প্রেমিক। তার উপর এখানে বেশি দিন তো থাকব না আমি।”
___________

বাহিরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। অনেকেই দোকান পাট বন্ধ করে নিজ ঘরে ফিরে যাচ্ছে। মিহি নীল রঙের শাড়ি পরে তার পিসির বাসা থেকে বেরিয়ে আসছে। বাইরে এমন বৃষ্টি দেখে সবাই যেতে নিষেধ করলেও মিহি অবাধ্য করল। সে এক গাঢ় নীল রঙের ছাতা মাথার উপরে ধরে হাঁটছে। হয়ত কোন রিকশা পাওয়া যাবে এ আশায়। হাঁটতে হাঁটতে এক ফার্মেসি তে স্নিগ্ধের দেখা মিলল। সে মেডিসিন ক্রয় করছে। মিহি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। স্নিগ্ধ জরুরী ঔষুধ কিনে নিয়ে ছোট এক ব্যাগে ভরে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। পাশে মেয়েটার দিকে চোখ যেতেই চোখ ঝলমল করে উঠল। সে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে ছাতা নিয়ে। কি যে অপরূপ লাগে। স্নিগ্ধ প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকাল ওর মুখশ্রী দিকে পুরো লাবণ্যময়ী চমৎকার মায়াবী চেহারা। আগে কখনো সেই নজরে দেখেনি তাকে। কিন্তু আজ তাকে শুধু দেখতে মন চাইছে। মিহি মিষ্টি এক চমৎকার হাসি দিয়ে বলল,,

“কেমন আছেন আপনি?”

স্নিগ্ধ ও হাসল তবে সেই প্রশ্নের উত্তর জানাল না বরং সেও একই প্রশ্ন করল,,

“তুমি কেমন আছো?”

“ভালো।”

“কিছু বলবে?”

“এমনে কথা বলতে আসছি। ব্যস্ত?”

স্নিগ্ধ না বোধক মাথা নাড়ল। মিহি মুচকি হাসল।
স্নিগ্ধ একটু ভাবল সে আজ এত হাসছে কেন? সে তো আগে কখনো এমন চমৎকার হাসত না তার উপর সে আজ কথা বলতে দ্বিধাচ্ছে না বরং নিজ গায়ে কথা বলতে আসলো। মিহি দেখল উপর পাট দেখে টুপ টুপ বৃষ্টি স্নিগ্ধের মাথায় পড়ছে সে চটজলদি সামনে এসে স্নিগ্ধের মাথা উপর ছাতা ধরল। স্নিগ্ধ প্রচুর অবাক হলো মিহির এমন কান্ড দেখে। কুড়ি মিনিটের মধ্যেই হাত ধরে এসেছে মিহির ওমন উঁচু করে ছাতা ধরতে ধরতে। স্নিগ্ধ খেয়াল করলো আর ওর হাত থেকে ছাতা নিয়ে নিজেই ধরল। এবার বরাবর হলো। মিহি কিছু একটা আন্দাজ করে বলল,,

“আপনি ছাতা আনেন নি?”

“না”

“কেন? বৃষ্টি যে পড়ছে আপনার তা চোখে পড়ে না?”

“না”

স্নিগ্ধের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে হালকা বিরক্ত হলো মিহি। কথাই কথাই শুধু না না করছে! স্নিগ্ধ ওর হাতে প্যাকেট দেখে বলল,,

“এই বৃষ্টিতে কোথায় গিয়েছিলে?”

“পিসির বাসায়।”

“প্যাকেটে কি?”

“পিঠা। ভাপা পিঠা, ‌আপনার পছন্দ?”

“একদম।” খুশি হয়ে ‌বলল স্নিগ্ধ।

মিহি প্যাকেট থেকে টিফিন বের করতে নিলে স্নিগ্ধ বলল,,

“কি করছো?”

“আপনার না পিঠা পছন্দ! সেটাই বের করছি।”

“এখানে?”

“তো তাতে প্রোবলেম কি? খেতে পারলে তো হচ্ছে তাই না?”

বলে প্যাকেট থেকে টিফিন বের করল মিহি। টিফিন টা অর্ধেক খুলে একটা পিঠা স্নিগ্ধের মুখের সামনে তুলে ধরল, বলল,,

“হা করেন।”

স্নিগ্ধ অবাক হলো চরম অবাক হলো। মুখ খুলতেই যত্ন করে খাইয়ে দিল মিহি। খিলখিলিয়ে হেসে দিল বলল,,

“মজা না?”

“হু।” মুখ ভরে যেতেই অস্ফুট শব্দ করে জানাল স্নিগ্ধ।

পুরোটা খাইয়ে দিয়ে টিফিন টা পুনরায় প্যাকেটে ভরে নিল তারপর স্নিগ্ধের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,

“এই নিন।”

“আমাকে দিচ্ছো কেন?”

“সব আপনার জন্য রাখেন।”

জোর পূর্বক ধরিয়ে দিল মিহি। স্নিগ্ধ ইতস্তত বোধ করল। মিহি আশ্বস্ত করতে বলল,,

“এতো চিন্তা করছেন কেন? পিসির বাসায় তো রোজ যায় আর খেয়ে আসি। এইজন্য আপনাকে দিলাম। রাখেন আর খেয়ে নিবেন।”

স্নিগ্ধ তাকাল ওর দিকে। সে আজ অদ্ভুত আচরণ করছে! তার চোখের দিকে তাকালো। চোখ দুটো কাজল দিয়ে সুন্দর করে আঁকার করা। নয়ন গভীরে চলে গেল সে। আর আনমনেই বলে উঠল,,

“তোমার কাজল কালো চোখের বাঁধনে বাঁধাপড়া আমার প্রাণ।”

শুনলো মিহি আর নিঃশব্দে হাসল। কত সুন্দর ঘায়েল করা হাসি। মিহি কোমল গলায় বলে,,

“কি দেখছেন এভাবে?”

হুঁশ ফিরতেই ঘাবড়ে গেল সে। মিহি দুষ্টুমি ভরা হাসি দিল। স্নিগ্ধ অবাক হয়ে তাকাল। আজ সে শুধু অবাক হচ্ছে। মিহি বলল,,

“আসি তাহলে।”

বলে ছাতার নিচ থেকে সরে যেতে নিলে স্নিগ্ধ ওর বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে নিল। খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল নিজেদের দূরত্ব। মিহি চমকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকালো। স্নিগ্ধ অতি দ্রুত ছেড়ে দিল, বলল,,

“ছাতাটা তোমার, ছাতা ছাড়া যাচ্ছো কেন ষ্টুপিড!”
মিহি আবারো হাসল স্নিগ্ধ ভ্রু কুঞ্চিত করল। মিহি রাশভারী গলায় বলল,,

“এ বৃষ্টিতে ভিজবেন আমার সাথে?”

এ কথাই অবাক হয়ে পারল না স্নিগ্ধ। বলল,,

“নেশা করছো তুমি?”

দম ফেটে হাসল মিহি। হাসতে হাসতে বলল,,

“নেশা করব কেন?”

“তো আজ এতো পরিবর্তন যে!”

এর জবাব দিল না মিহি শুধু তাকিয়ে রইল। ছাতা থেকে বেরিয়ে আসতেই আবারো টেনে নিয়ে আসলো স্নিগ্ধ। এবার গরম হয়ে গেল, বলল,,

“পাগল হয়ে গেছ? বৃষ্টিতে ভিজছো কেন এভাবে?”

“ভিজলে সমস্যা কি?”

“জ্বর ট্বর এসে গেলে?”

“আপনি নাহয় আমার চিকিৎসা করবেন।”

মুখে মৃদু হাসি রেখে শান্ত গলায় বলল মিহি। কিছুক্ষণ সেইভাবে তাকিয়ে আছে দু’জন দু’জনের দিকে। চোখাচোখি হওয়ার পরেও এবার চোখ সরাল না মিহি ‌। স্নিগ্ধের মনে পরল কিছুদিন পরেই মিহির বিয়ে ‌তাই সে মুখে হাসি নিয়ে বলে,,

“বিয়েতে দাওয়াত দিবা তো?”

মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল মিহির। নজর নামিয়ে নিল। সময় নিয়ে ঢোক গিলে বলল,,

“না। আমি আপনাকে দাওয়াত দিব না।”

“কেন? তুমি চাওনা আমি তোমার বিয়েতে আসি?”

“না চাই না।”

কথা আর বাড়ালো না স্নিগ্ধ। মিহি মুখ তুলল। তার চোখের মধ্যে কেমন যেন বিষাদ হয়ে আছে। স্নিগ্ধ তা স্পষ্ট দেখতে পেল। মিহি কম্পমান গলায় বলল,,

“আপনি তো আমার মনের কথা বুঝতে পারেন। এবারো কি বুঝতে পারছেন?”

বুক মোচড় দিয়ে উঠলো স্নিগ্ধের। হঠাৎ মিহি এমন বলল কেন? স্নিগ্ধ কিছু বলতে নিলে মিহি বাঁকা হাসল, বলল,,

“অনেক সময় হয়ে গেল এবার আমি আসি।”

স্নিগ্ধ পুনরায় তার হাত ধরল। মিহি দাঁড়িয়ে প্রশ্নতুর চোখে তাকালো ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কি?‌’ ওর হাতে ছাতা ধরিয়ে দিয়ে পকেট থেকে একটা কালো ব্রেসলেট বের করল। চোখ মুখ ঝলমলে সতেজ হয়ে গেল মিহির। ঠোঁটে হাসি ফুটে দৃঢ় প্রসারিত হলো। স্নিগ্ধ হাতে ব্রেসলেট টা বেঁধে দিল। মিহি আনন্দে ভরে গেল, বলল,,

“এটাতো আমি…। ধন্যবাদ।”

স্নিগ্ধ তাকে মনে করিয়ে দিয়ে বলল,,

“সামনে পরীক্ষা মনে আছে তো?”

“জ্বি।” খুশি হয়ে ব্রেসলেট টা ভালোভাবে দেখতে দেখতে বলল মিহি। এমন খুশি সে আজ পর্যন্ত হয়নি। খুশিতে গদগদে উঠলো। স্নিগ্ধ শুধু দেখতে লাগল তাকে। মিহি নিজ হাতে বেঁধে থাকা সোনালী রঙের ব্রেসলেট টা খুলে ফেলল। সেটা স্নিগ্ধের হাতে বেঁধে দিল তারপর চট করে ছাতার নিচ থেকে বেরিয়ে গেল। বর্ষণ তাকে সন্তর্পণে ছুঁয়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধ কে শেষবারের মত দেখে মুখে চমৎকার হাসি দিয়ে বলল,,

“তাহলে দেখা হবে কোন এক সময়ে…”

বলে উল্টো পথে হাঁটতে লাগলো। স্নিগ্ধ স্তব্ধ হয়ে গেল মিহি আর ফিরল না। স্নিগ্ধ দেখে যেতে লাগল। শক্তি যেন লোপ পেয়েছে তার। কন্ঠস্বর অবশ হয়ে গেল। দেখতেই দেখতে সে বৃষ্টির মাঝেই অদৃশ্য হয়ে গেল। দেখা মিলল না আর…
______________

কত বৎসর কেটে গেল। ২০০৯ শুরু করে ১০,১১,১২..করতে করতে ২০২১ এসে থামল। শহরে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিবর্তন হয়ে গেল প্রত্যেক অলি গলি। স্নিগ্ধ নিউ ইয়র্ক থেকে দেশে ফিরল। ফিরেছে প্রায় এক সপ্তাহ হচ্ছে। রোহিনী তার কক্ষে প্রবেশ করল দু’কাপ কফি নিয়ে। চার বছরের বড় স্নিগ্ধ থেকে। স্নিগ্ধ বারান্দায় চেয়ারে বসে মোবাইলে কিছু একটা স্ক্রোল করছে। রোহিনী এসে পাশে বসল, বলল,,

“জীবনে নতুন কিছু একটা উপভোগ করতে মন চায় না তোর?”

“না চাই না।”

ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল স্নিগ্ধ। রোহিনী ফোঁস করে আফসোসের শ্বাস ফেলল। কিছু সময় নীরবতা পালন করে বলল,,

“তোর বিয়ে করে নেওয়া উচিত। চল্লিশের কাছাকাছি এসেছিস আর কয়েক বছর পর দাদার বয়সী হয়ে যাবি তুই।”

স্নিগ্ধ শুনেও না শোনার ভান ধরে কফি খাচ্ছে। ওসবে কান দিতে মন চায় না। যখন তখন ভালো ও লাগে না। রোহিনী বিরক্ত হলো এবার, বলল,,

“শুনছিস তুই? মা তো আর বেঁচে নেই মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল তোর বিয়ে দেখা, কিন্তু তুই সেটাও হতে দিলি না।”

স্নিগ্ধ নিশ্চুপ হয়ে থাকল। বরং চুপ থাকায় শ্রেয়। রোহিনী আরো কিছুক্ষণ তাকে ঝালাপালা করে বিরক্ত হয়ে চলে গেল।

বন্নির খোঁজ নিয়ে ওকে দেখতে গেল স্নিগ্ধ। হাতে অনেক খাবারের প্যাকেট। কলিং বেল চাপ দিতেই দরজা খুলল কেউ। স্নিগ্ধ সামনের মানুষটির দিকে চোখ মেলে তাকালো। নীলয়। নীলয় এসে দরজা খুলেছে। ভেতর থেকে কে কে করতে করতে দরজার ধারে আসল বন্নি। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। নীলয় ও বন্নি স্নিগ্ধকে চিনে অবাক হয়ে গেল। দ্রুত ঘরে ঢুকালো আর আপ্যায়ন করা শুরু করল। স্নিগ্ধ হাসল ওদের কে দেখে। নিজের থেকে বেশ বুড়ো লাগছে তাদের। ভেতর থেকে ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে আসল। স্নিগ্ধ কে দেখে ভয়ে পুনরায় রুমের ভিতরে চলে গেল। স্নিগ্ধ বন্নির দিকে তাকানোর সাথে সাথেই লজ্জা পেল বন্নি। স্নিগ্ধ বুঝলো সবকিছু আর হাসল। বন্নি ও নীলয় কে বসতে বলল তারপর খোশগল্প শুরু করল। গল্পের এক পর্যায়ে স্নিগ্ধ জিজ্ঞেস করল,,

“তনু ও মিহি এদের কি অবস্থা?”

বন্নির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মুখে আলগা হাসি আনার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হলো। তাও বলল,,

“তনু রাজশাহীতে থাকে সংসার নিয়ে আর মিহি…”

বলেই থেমে গেল বন্নি। স্নিগ্ধ চোখ হালকা প্রসারিত করে তাকালো কাপ রেখে দিল টেবিলে।

“কি হয়েছে মিহির?”

নীলয় কথা ঘোরাতে বলল,,

“স্যার আপনি…।”

হাত দিয়ে ইশারায় থামিয়ে দিল স্নিগ্ধ। সে নীলয়ের কথা এ মুহূর্তে শুনতে চাই না। স্নিগ্ধ অতিরিক্ত গম্ভীর হয়ে গেল বন্নি কে সমস্ত কথা বলতে বলল।
বন্নি মাথা নত করে জড়োসড়ো হয়ে নীচু গলায় থেমে থেমে বলে,,

“মিহি কে যার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই লোক ছিল পতিতাবৃত্তি এক বড় অংশের মালিক। হাজার হাজার মেয়েদের রাত কাটিয়ে আসে। মিহি লোকটির সাথে সংসার করতে চাচ্ছিল না এসব জানার পর। বিয়ের পর তার সকল পড়ালেখা চালিয়ে যাবে এমন বলে কিন্তু বিয়ের পর ওকে ঘর থেকে বের হতে দিত না। চুরি করে ফোন দিয়ে আমাকে বলেছিল মিহি। আমি খোঁজ নিয়ে গেলে আমাকে ফিরিয়ে দেয় তার স্বামী প্রতীক। চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম। ওকে নানারকম গালিগালাজ করে গায়ে হাত তুলতো। অতিরিক্ত জখমে হাসপাতালে ভর্তি করানোও হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের একটা বিল ও পে করল না সব চেপে দিল আঙ্কেলের উপর। তিন দিন হয়ে গিয়েছিল সুস্থ না হয়ে বরং উল্টো খারাপ অবস্থা হচ্ছিল মিহির। এই তিন দিনে একবারও দেখতে আসলো না প্রতীক। সেই মধ্যরাতেই মিহি…”

এতটুকু বলে টপটপ করে অশ্রুজল ফেলতে লাগল বন্নি। পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল একদম। স্নিগ্ধ স্তব্ধ হয়ে শুনে আছে। বুকে দ্রিমদ্রিম শব্দ শুনতে পাচ্ছে। হৃদয় কাঁপছে তার। নেত্র জোড়া ঝাঁপসা হয়ে আসছে। স্নিগ্ধ আর শুনলো না উঠে দাঁড়িয়ে গেল। সাথে দাঁড়িয়ে গেল বন্নি ও নীলয়। স্নিগ্ধ চুপচাপ বেরুতে নিলে বন্নি বলল,,

“একটা কথা আছে।”

থেমে দাঁড়ালো সে। ফিরল। বন্নি জলদি উপর রুম থেকে একটা চিরকুট নিয়ে আসলো। স্নিগ্ধের মুখোমুখি দাঁড়াল কম্পিত গলায় বলল,,

“জানেন! সেই মুহূর্তে মিহি আপনাকে খুঁজছিল। আপনার খবর না পেয়ে আমাকে এই চিরকুট টা দিয়েছিল সে। তার কেন যেন বিশ্বাস ছিল, আপনি কোন এক সময় আসবেন আর তার খোঁজ নিবেন। বলেছিল আপনি আসলে এই চিরকুট টা যেন দিয়ে দেই। কত বছর পরে ছিল এটা, এই নিন।”

চিরকুট টা দিয়ে দিল বন্নি। কাঁপা হাতে নিল স্নিগ্ধ আর বেরিয়ে আসলো। রাস্তার মাঝখানে আসলো। নির্জন রাস্তা। কেউ নেই জনমানব শূন্য। ঘাম ছুটেছে কপালে কেন যেন ভয় করছে এই চিরকুট টা খুলতে। হৃদয় ধপধপ করে কাঁপছে। চোখ জ্বালা করছে অশ্রুজল গুলো আঁটকে রাখতে। ধীরে ধীরে খুলল চিরকুট। তেমন কিছু লেখা নেই শুধু সুন্দর করে তিন শব্দে বাক্য সাজিয়ে লেখা,

“আপনার প্রাণপ্রিয় মিহি”

টপ করে এক ফোঁটা জল পড়লো চিরকুটে। ভিজে গেল ‘প্রাণপ্রিয়’ লেখাটা। আর আঁটকে রাখতে পারল নোনাজল গুলো। মুক্ত করে দিল তাদের। গাল বেয়ে বেয়ে টপটপ করে পরছে তারা। হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধের। নিজেকে যে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে! কেন সে মিহির দুঃসময়ে পাশে ছিল না! মিহি তো তাকে খুঁজছিল!
তাহলে কি সে অভিমান করে চিরকালের জন্য চলে গেছে! নিজেকে সামলাতে পারছেনা স্নিগ্ধ। হাঁটু গেড়ে ভেঙে বসে পড়ল। বাচ্চার মত হু হু করে কাঁদছে। সে তো হারিয়ে ফেলল! সবকিছু হারিয়ে ফেলল! তাহলে কি সে আর ঠিক করতে পারবে না? না পারবে না! চোখ বুজলেই চিরচেনা প্রিয় মুখ ভেসে আসে যে।
অনেক মানুষের জীবন অপূর্ণের স্রোতের মত ভেসে যায় ঠিক এক গল্পের মতো….

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here