ফিলোফোবিয়া পর্ব -০৬

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির)

৬.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

জুবাইদাদের ফ্যামিলি পিকনিকে যাবেনা বলেও শেষমেশ প্রিয়’কে যেতে হলো। গত পরশু পরিক্ষা শেষে জুবাইদা সরাসরি বাড়ি এসেছে। অনেক বুঝিয়ে পড়িয়ে খালাকে রাজি করেছে সে। খালার কথার উপর কোন কথা বলতে পারেনি প্রিয়।চুপচাপ মাথা দুলিয়েছে শুধু।
বাড়ির সামনে রাস্তাটার কাছে বাস থেমে। নিচ থেকে গলা উঁচিয়ে প্রিয়’কে তাড়া দিচ্ছে জুবাইদা। বারান্দার ফটক দিয়ে মাথা বের করে জবাব দিলো প্রিয়,
‘ দুই মিনিট! আসছি।’
ধুপধাপ সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নামলো প্রিয়। খালা সকালে বেরিয়েছে, টিউশনি শেষে বিকেল ফিরবে। সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঝরণা আন্টিদের বাড়ি চাবি রেখে গেল। কয়েক কদম আগাতেই জুবাইদাকে দেখলো। বাসের সামনে দাঁড়িয়ে। প্রিয়’কে দেখেই হাত উঁচিয়ে দ্রুত যাওয়ার ইঙ্গিত দিলো। মুখোমুখি হতেই প্রিয়’কে দেখে জুবাইদার চোখ কপালে। সবসময় প্রিয়’কে জিন্স, টপ, শর্ট কুর্তি এসব পড়তে দেখেছে। এই প্রথম সেলোয়ার-কামিজে দেখছে। খোলা চুল। পড়নে ডার্ক রেট সেলোয়ার-কামিজ। চোখে গাঢ় করে কাজল লেপ্টে রেখেছে। ঠোঁটে গোলাপি রঙ্গের আলতো ছোঁয়া কি দারুণ লাগছে মেয়েটাকে।
জুবাইদাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে নিলো প্রিয়। গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ এভাবে তাকাবিনা। আমার অস্বস্তি লাগে।’
‘ তোর অস্বস্তিকে ঝেরে ফেল। আমি ছাড়াও এভাবে আরো অনেকে তাকাবে এখন। জানিস কত সুন্দর লাগছে তোকে! সবসময় এভাবে ড্রেসআপ করিস না কেন ? ভাগ্যিস করিস না। নরমালি ওই জিন্স কুর্তিতে দেখে পাড়ার কত ছেলেরা প্রেমের জন্য ঘুরঘুর করে। যদি এই সেলোয়ার-কামিজে একবার দেখে। মাই গড! প্রেমের জলে হাবুডুবু খেয়ে রোজ তোর বাড়ির সামনে এসে আত্মহ*ত্যা করবে! ‘
জুবাইদা অনবরত বলে যাচ্ছে। চোখ রাঙ্গালো প্রিয়। কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বলল,
‘ বাজে বকবকানি বন্ধ করবি? আমি কিন্তু বাড়ি গিয়ে চেঞ্জ করে আসবো! ‘
মুখ কাচুমাচু করে নিলো জুবাইদা। মিনমিন করে বলল,
‘ ভালোমানুষের দিন আর রইল না। আজকাল মানুষের প্রশংসাও হজম হয়না।’
ফিক করে হেসে ফেলল প্রিয়। এমন সময় সমুদ্র ভাইয়ের আওয়াজ পেল। গাড়িতে উঠতে ডাকছে। জুবাইদা প্রিয়’র হাত টেনে বড় বড় পা ফেলতে ফেলতে বলল,
‘ প্রিয়! তাড়াতাড়ি চল। সামনের সিট দখল করতে হবে। নয়তো রাক্ষসী গুলা দখল করে নিবে।’
গাড়িতে চড়তে গিয়ে কপাল কুঁচকে কিছুটা একটা ভাবলো প্রিয়, বোকাসোকা মুখ করে জিজ্ঞেস করল,
‘ রাক্ষসী গুলা আবার কে?’
জুবাইদা পিছন ফিরে প্রিয়’র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আমার ফুফাতো বোনেরা।’

সমুদ্র আগে থেকেই তাদের জন্য সামনে সিট রেখে দিয়েছে। প্রিয়’রা উঠতেই সিট ছেড়ে বসতে দিলো। ঝটপট করে জানালার পাশের সিটটায় জুবাইদা বসলো। দাঁত বের করে বলল,
‘ প্রকৃতি দেখতে আমার ভালো লাগে। প্লিজ আমি এখন এখানে বসি? ফেরার পথে তুই বসিস। কেমন?’
জুবাইদাকে এমন দাঁত বের করে আকুতি করতে দেখে হেসে ফেলল প্রিয়। মুচকি হেসে মাথা দুলাতে দুলাতে পাশের সিটে বসলো। আড়চোখে আশেপাশে তাকাল। শতাব্দ নেই কোথাও। কৌতূহল জাগলো। জুবাইদাকে জিজ্ঞেস করল,
‘ তোর শতাব্দ ভাই যাবেনা?’
‘ এদিকের কাজ চাপিয়ে দুইদিন আগেই ভাইয়া চলে গেছে। ওইদিকের আয়োজনও তো দেখতে হবে তাকে।’
প্রিয় মনে মনে খুশি হলো। যাক গাড়িতে অন্তত উনার মুখোমুখি হয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হবেনা তার। বুক ফুলিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে যেই গেটের কাছে তাকালো অমনি তার মুখ চুপসে গেল। শাদ নামের সেই বিচ্ছু ছেলেটা। তবে এই ছেলেটাও কি চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলে! সারা রাস্তা এই বাঁদরটাকে তার সহ্য করতে হবে? ভেবেই চোখমুখ অন্ধকার হয়ে এলো প্রিয়’র। সবাই উঠতেই গাড়ি রওনা হলো।

পুরো চার ঘন্টা বাস জার্নি করে কমলাপুর পৌছালো তারা। গ্রামে প্রবেশ করতেই প্রিয়’র চোখের ক্লান্তি ভাবটা যেন নিমিষেই মিশে গেল। মন ভরে এলো মুগ্ধতার ছোঁয়ায়। সবুজের মাঝে সিমসাম ছোট্ট একটি গ্রাম। চারদিকে বড় বড় গাছ। দুইপাশে সবুজের ঢেউ, মাঝ বরাবর ইট গাঁথা পাকারাস্তা। বিমুগ্ধ হয়ে প্রকৃতিতে ডুবে আছে প্রিয়। যেন এটা সবুজের দুনিয়া কোন। কিছুদূর এগিয়ে বড় প্রাচীরের সামনে বাস থামলো। গেটের সামনে থেকে মোটা কালো করে একজন ছুটে এলো। গদগদ কন্ঠে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কোন অসুবিধা হয় নাইতো বাজান?’
সমুদ্র আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মাথা নাড়াল। সমুদ্রের ব্যাগ তুলে পিছন পিছন হাঁটছে লোকটা। আশেপাশের কথা বলছে টুকটাক। সমুদ্র শুনছে। মাঝেমধ্যে হু, হা মাথা দোলাচ্ছ। গেটের কাছাকাছি গিয়ে জিজ্ঞেস করল সমুদ্র,
‘ ভাই কই?’
‘ বড় বাজানে তো উপরে।’
‘ দোতলায়?’
‘ হ, মনে হয় রাইগা আছে। কারে জানি ফোনে বকাবকি করল তারপর ফ্রেশ হইতে উপরে গেল।
ঢোক গিলল সমুদ্র। ফোনে তার উপরই রাগ ঝারছিল শতাব্দ। এখানে এসে পৌছানোর কথা ছিল এগারোটায়। এখন বাজছে একটা। শতাব্দ কড়া ভাবে বলে দিয়েছিল ঠিক সাতটায় রওনা হতে। কিন্তু তারা রওনা হয়েছে আটটার অনেক পড়ে। যদিও বাড়ির মেয়েদের জন্য দেরি হয়েছে। কিন্তু শতাব্দ কি তা মানবে? সামনে পড়লেই খুব ঝারবে। ভুলেও সে দোতলার দিক পা বাড়াবেনা আজ। না শতাব্দের সামনে যাবে।
গাড়ি থেকে এক এক করে সবাই নামছে। প্রিয় নেমে জুবাইদার পাশে দাঁড়াল। জুবাইদা ছাড়া আশেপাশে সবাই তার অচেনা। পাশাপাশি কাচুমাচু হয়ে হাঁটছে। গেটে প্রবেশ করতেই প্রিয় বড়সড় ধাক্কা খেল। বাহির থেকে প্রাচীরের উপর ভেসে থাকা বাড়ির মাথাটুকু দেখে ভেবেছিল হয়তো ছোটখাটো কোন বাগান বাড়ি। কিন্তু ভিতরে এসে তার ধারণা পুরোপুরি পাল্টে গেল। সবুজে ডুবে থাকা বিশাল মাঠ। পাশেই বড় ধবধবে সাদা দোতালা দালান।দুইদিক দিয়ে সিড়ি উঠা বাড়িটা দেখতে অনেকটা পুরানো জমিদার বাড়ির মত।
বাড়ির ভিতরে এসে আরেক দফা ধাক্কা খেল প্রিয়। বাড়ির বাহিরে যতটা সুন্দর ভিতরেও ঠিক ততটাই মনোরম। কাঠ বেতের ফার্নিচারে সাজানো হল ঘর। যিনি সাজিয়েছেন তার রুচির প্রশংসা করতে হবে। ভীষণ নৈপুণ্যভাবে সাজিয়েছে। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে দেখছে প্রিয়। দুজন মহিলাতে যেয়ে চোখ আটকালো। গ্রাম্য শাড়ি সাজসজ্জায় সবাইকে জলখাবার দিতে ব্যস্ত।
প্রিয় জুবাইদা এক কোনায় গিয়ে বসলো। সামনের টেবিল ভিন্নরকম গ্রাম্য পিঠা খাবারে সাজানো। এত এত জানা, নাম না জানা খাবার ঘ্রাণে প্রিয়’র খুদা বেড়ে গেল। সকাল সকাল না খেয়ে বেরিয়েছে। এতটা পথ জার্নি করে পেটের খুদাটাও বেশ বেড়েছে। ভদ্রতার খাতিরে হাতপা খিঁচে বসে আছে শুধু। কেউ জিজ্ঞেস করলেই খাওয়ায় লেগে পড়বে এখনি। পাশ থেকে জুবাইদার ফুফাতো বোনেদের চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে এলো। লেবু গুড়ের শরবত দেখে নাক ছিটকাচ্ছে। সমানে রাখা খাবার গুলোকে আনহাইজেনিং বলে মহিকাদের উপর রাগ ঝারছে।এক্ষুণি বাহির থেকে নতুন খাবার আনাতে বলছে। প্রিয় ভ্রু কুঁচকে দেখছে তাদের। প্রথমে জুবাইদার কথা বিশ্বাস না করলেও, এখন বুঝতে পারছে। সত্যি মেয়ে গুলো বড্ড অহংকারী! ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে সারা রাস্তা গাড়িতে বেশ ঝামেলা করেছে। সবাইকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তাদের মুখ ছিটকান দেখে সমুদ্র বেশ কড়া গলায় বলল,
‘ সবাই সমান। তোদেরকে এখানে আলাদাভাবে ট্রিট করা হবেনা। এগুলো খেতে পারলে খা। নাহলে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত না খেয়েই থাক। ‘
সমুদ্রের কথা শুনে মেয়ে দুটো চোখমুখ কালো করে নিলো। সবাইকে রুম দেখিয়ে দিলো। নিচতলার ঘর গুলো সব দখল। তাই জুবাইদা প্রিয়কে নিয়ে উপরে চলে গেল। সেখানকার সব ঘর খালি আর নিরিবিলি। আরামে থাকবে তারা। অর্ধেক সিড়ি উঠেই জুবাইদার গাড়িতে ফেলে আসা ব্যাগের কথা মনে পড়ল। প্রিয়কে রুমে যেতে বলে ব্যাগ আনতে চলে গেল।

দরজা খোলা দেখে, সামনের ঘরটায় যেয়ে ডুকল প্রিয়। আবছা দুয়ার ভিড়িয়ে। টান টান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল । এত পথ জার্নি করে গা ম্যাচ ম্যাচ করছে প্রচন্ড। ঘরের সব দরজা জানলা খোলা। দক্ষিণা দমকা হাওয়া সুড়সুড়ে গায়ে এসে পড়ছে। শরীরের থেকে মন অবধি শীতল পরশ দিয়ে যাচ্ছে। আবেশে চোখ বুজে নিলো প্রিয়। এখানে শান্ত পরিবেশটা বেশ ভালো লাগছে। চেঁচামেচি কোলাহল শূন্য শান্ত পরিবেশ।
আচমকা কোথা থেকে যেন মুখের উপর দুএক ফোঁটা পানির ছিটে পড়ল। চোখ খুলে হতভম্ব প্রিয়। মাথার উপর ঝুঁকে আছে শতাব্দ। খালি গায়ে ভেজা চুলে কপাল ল্যাপ্টানো। তার সরু দৃষ্টিখানা গভীর গম্ভীরভাবে প্রিয়’র দিকেই চেয়ে। ছোট ঢোক গিলল প্রিয়। সবটা এখনো তার চোখের ভুল মনে হচ্ছে যেন। দুইতিনবার অনবরত চোখ বুজলো আর খুলল। উহু, পরিবর্তন হলো না কোন। শতাব্দ আগের মতই গম্ভীর হয়ে চেয়ে। হুস ফিরল প্রিয়’র। ধরফরিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হাত পা কাঁপছে তার। শতাব্দকে খালি গায়ে দেখে লজ্জা লাগছে ভীষণ। চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। আধো আধো গলায় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
‘ স..সরি। জুবাইদা দরজা খোলা ঘরটায় যেতে বলেছিল। তাই এখানে… এটা আপনার ঘর জানতাম না। জানলে কখনো আসতাম না।আপ..’
‘ হুসস’
প্রিয়’র ঠোঁটে আঙ্গুল রাখল শতাব্দ। বিস্মিত হতভম্ব প্রিয় দৃষ্টি তুলে তাকাল। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শতাব্দ। দৃষ্টিতে অদ্ভুত এক মায়া। অজানা কোন ঘোর।ধুকপুক করছে প্রিয়’র বুক। নিশ্বাসের দ্রুত উঠানামা। এলোমেলো দক্ষিণা হাওয়ায় উড়ছে প্রিয়’র অবাধ্য কেশ। চোখমুখে ছেয়ে এক অন্যরকম আবেশ। হাত বাড়ালো শতাব্দ। মুখে পড়ন্ত অবাধ্য কেশ গুলো আলতো করে কানে গুজে দিলো। ঠকঠক কাঁপছে প্রিয়। গাঁ জুড়ে বইছে শীতল রেশ। আরেকটু ঝুঁকল শতাব্দ। প্রিয়’র থুতনি ছুঁয়ে আলতো করে মুখ তুলল। গভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি কিছু বলেছি?’
দুদিকে মাথা দুলাল প্রিয়।
‘ ভয় পাচ্ছো কেন?’
জিজ্ঞেস করল শতাব্দ। প্রিয় চুপ। শতাব্দের কথা কানে ঢুকছে না তার। ধ্যান অন্যকোথাও। বাম হাতটা তখনো শতাব্দের হাতের মুঠোয়। অদৃশ্য এক মায়া জালে জড়িয়ে গেছে সে। দৃষ্টি থেমে আছে শতাব্দের অদ্ভুত সুন্দর সেই চোখজোড়ায়। ঘরের নকশি ফটক উপচে আসা সোনালী রোদ এসে পড়ছে শতাব্দের মুখে। কি মায়া, কি ঘোর সেই চোখেতে। আচ্ছা, পৃথিবীটা কি থেমে গেল! এমন মনে হচ্ছে কেন প্রিয়’র? কেন দৃষ্টি সরছে না শতাব্দ থেকে। খানিক পূর্বের তো লজ্জা লাগছিল। সেই লজ্জাটা কোথায় মিয়িয়ে গেল? এ কেমন অদ্ভুত টান। জুবাইদার চেঁচামেচির আওয়াজে প্রিয়’র হুস ফিরল। তাড়াতাড়ি করে হাত ছাড়িয়ে যেতে নিলো। হাত টেনে ধরল শতাব্দ। পিছন ফিরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঝুঁকে পড়ল। প্রিয়’র চোখে চোখ রেখে গভীর কন্ঠে বলল,
‘ শুনো মেয়ে! এমন ডার্ক কালার পড়ে, চোখে কাজল লেপ্টে, ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে আমার সামনে আসবেনা আর।’
‘ কেন?’ বিবশ প্রিয়, যন্ত্রের মত করে জিজ্ঞেস করল।
‘ মাথা ঝিমঝিম করে, নিশ্বাসের গতি বাড়ে। তখন উল্টাপাল্টা কিছু ঘটে গেলে কিন্তু দায়ভার থাকবেনা আমার!’
প্রিয় হকচকিয়ে উঠল। কথার গভীরতা না বুঝলেও দৃষ্টির গভীরতা ঠিক বুঝল। কিঞ্চিৎ ভয় হলো মনে। হাত ছাড়ানো জন্য ছটফট করতে লাগল। হাতের বাঁধন সামান্য হালকা হতেই ঘর ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। প্রিয়’র যাওয়ার দিক তাকিয়ে আছে শতাব্দ। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেশ।

এখান থেকে মাঠের শেষ মাথা দেখতে পারছেনা প্রিয়। পুরোটা জায়গা আলাদা আলাদা করে বিভক্ত। এক এক পাশে এক এক রকম করে সাজানো। কোথাও ফল ফুলের গাছ, কোথাও আবার বিচিত্র নানা রকমের দেশবিদেশি পশুপাখির খামার। শুনেছে নিচের দিকে পুকুর আছে, মাছ চাষ হয় সেখানে। পুরোটা জায়গা ভীষণ সুন্দর করে সাজানো। পার্ফেক্ট পিকনিক স্পট। এখানে সবকিছুই ভালো ছিল। শুধু চেয়ারম্যান বাড়ি সেই দুই ছেলে শতাব্দ আর শাদকে ছাড়া। শতাব্দ! যাকে দেখে খুব অদ্ভুত অনুভূতি, ভয় হয় প্রিয়’র। আর অন্যদিকে শাদ যার সাথে এক মিনিটের জন্যেও বনে না প্রিয়’র। এখানে এসে দুইতিনবার কথা কাটাকাটি হয়েছে দুজনের।
বিকেলের পর পরই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক। বৃষ্টি শুরু হলে অন্ধকারে গ্রাম থেকে বেরানো মুশকিল। সবাইকে তাড়া দিলো শতাব্দ। এখনি বের হতে হবে।
এতটা পথ জার্নি করতে হবে তাই ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছে সবাই। দোতলা অন্ধকার। সবাই নেমে এসেছে। নিচ তলার সব ওয়াশ রুম ভীড় দেখে, প্রিয় ফ্রেশ হতে বাড়ির পেছনের পুরানো ওয়াশরুমে চলে গেল। পাশেই কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। এখানটা নিরিবিলি।আসবেনা কেউ। আচমকা ওয়াশরুমের লাইটটা বন্ধ হয়ে গেল। ঘাবড়ে গেল প্রিয়। বাহিরে কারো ছুটে যাওয়ার শব্দ পেল। আওয়াজ করল প্রিয়। উত্তর এলো না কোন।অন্ধকারে দেয়াল হাতিয়ে দরজা খোঁজার চেষ্টা করল। কিছুটা সামনে যেতেই পেয়ে গেল। তাড়াহুড়ো করে দরজার লক খুলে বের হতে চাইল প্রিয়। কিন্তু দেখল, দরজাটা অপরপাশ থেকে বন্ধ। প্রিয় দরজা ধাক্কালো। চিৎকার করে ডাকল।কিন্তু অপর পাশ থেকে উত্তর এলো না কোন। অন্ধকারে প্রিয় ভয় হচ্ছে খুব। মাথাটাও ভনভন করছে। ঝাপসা লাগছে সব। চোখের সামনে বারবার বড় আপার ঝু*লন্ত লা*শের দৃশ্যটা ভেসে উঠছে। কানের কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ। মনে হচ্ছে কেউ গলা চেপে ধরে রেখেছে। নিশ্বাস নিতে ক*ষ্ট হচ্ছে তার। শরীরটাও অবশ হয়ে এলো। ধপ করে দরজার কাছে বসে পড়ল প্রিয়। নিশ্বাস থেমে থেমে আসছে। আস্তে আস্তে সব অচেতন হয়ে গেল…

চলবে………

ভুল ত্রুটির ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।

( জানি শতাব্দকে নিয়ে সবাই কনফিউজড খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু ক্লিয়ার হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here