#ফোটা_শিউলি_ফুল_একবারই_শিশিরে_ভেজে
#Writer_NE_EL(Noor)
#Neel
৫.
শিউলি দাঁড়িয়ে আছে নিজ বারান্দায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ আকাশে মেঘ রা হানা দিছে। মনে হয় আকাশের ও মন খারাপ, শিউলির মতো।
শিউলির মনে পরছে সেই ঘটনা গুলো,যেগুলো সে পিছনে ছেড়ে দিয়ে এসেছিল।
যেদিন শিশির দিনাকে বউ করে নিয়ে এসেছিল, শিউলির কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল। মনে প্রানে চাইছিল ভুল কিছু যেন না হয়, কিন্তু তাই হয়েছে। শিউলি জানতো শিশির আর দিনার সম্পর্কে। শিউলির আগে থেকেই কিছু টা আঁচ করেছিল শিশির কে নিয়ে।ঘন ঘন দিনা বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। তাছাড়া শিউলির শুভাকাঙ্খী ও জানিয়েছিল, শিশির আর দিনার সম্পর্কে।তাই, শিউলি ধীরে ধীরে নিজেকে শক্ত করতেছিল। তাছাড়া শিশির কে সে অনেক ভালোবাসত,তাই নিজ চোখে দেখার আগে,কানে শোনার আগে বিশ্বাস করতে পারে নাই।
ডিভোর্স পেপার এ সিগনেচার নিয়ে শিউলি তার উকিল কে ঠিক ই দিয়েছিল। কিন্তু প্রেগন্যান্ট হওয়ার কারনে তার উকিল তাকে বলে ডিভোর্স হবে না। শিউলি চিন্তায় পড়ে যায়। তখনই শিউলির শুভাকাঙ্খী আসে।আর শুভাকাঙ্খী কেউ নয় ,তার ছোট বেলার বন্ধু রিয়া। রিয়া শিক্ষিতা।তাই উকিলের সাথে বিবেচনা করে, ডিভোর্স কার্যকর করে।তারা প্লান করে, এই পেপার টা রেখে দিবে, বাচ্চা হওয়ার পর কার্যকর করে দিবে।
রিয়া শিউলি কে তার সাথে যাওয়ার জন্য বলেছিল । কিন্তু শিউলি কিছুতেই রাজি হয় নাই। ভাগ্য চেয়েছিল অন্য কিছু। হয়তো!!
শিউলি নিজ গন্তব্যে চলতে শুরু করলো। কিন্তু রাস্তায় সে গাড়ির সামনে অজ্ঞান হয়ে যায়। ভাগ্য ভালো সেদিন গাড়ি দ্রুত বেক করে।
সেদিন শিউলির জীবনে হয়তো দেবদূত হয়ে এসেছিল মেহেদী। কোথায় থেকে যেন আসতেছিল।ডাক্তার হওয়ায়, শিউলির অবস্থা বুঝে যায়। শিউলি কে বাড়ি নিয়ে গেল।(রাইটার -নীল নূর)
শিউলির জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে একটা রুমে পায়।প্রথমে ভয় পেয়ে ও নিজেকে স্থির রাখে। কিছুক্ষণ পর একটা মহিলা আসে। মহিলা কে দেখে কিছু টা শান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,সে কোথায়, এখানে কি করে এলো?
এর মধ্যেই মেহেদী আসে। তাকে কিভাবে পেল, তা সব খুলে বলে।আর এখন সে তার বাড়িতে আছে।তার রেস্ট দরকার। সকাল হলে কথা বলবে।চলে গেল।
মেহেদী কে শিউলি নিজের ব্যাপারে সব কিছু খুলে বলল। শিউলি নিজ পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল। মেহেদী কে তার কাছে ভালো মানুষ লেগেছিল।তাই মেহেদী আশ্বাসে সে কয়েকদিন সেই বাড়িতে থাকার পরিকল্পনা করে।
কয়েকদিন ই শিউলি মেহেদীর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারে এ মহিলা থেকে। তাছাড়া রোজ রাতেই মেহেদী কান্না করে, বাড়ির পিছনে গিয়ে বসে থাকে,নিজে নিজে কথা বলে। এগুলো দেখে শিউলি সেই মহিলা কে প্রশ্ন করে কী হয়েছিল?
প্রথমে সে মহিলা না বলতে চাইলেও পরবর্তী তে বলতে বাধ্য হয়, মেহেদীর পাস্ট সম্পর্কে বলে দেয়।এক এক্সিডেন্ট এ মেহেদী সবাই কে হারিয়ে ফেলে। সেদিন মেহেদী সবাইকে হারায়, সবাইকে। নিজের গর্ভবতী স্ত্রী,মা বাবা সবাইকে।
কেটে যায় আরো কয়েকদিন। শিউলি চলে যাবে,তখন মেহেদী একটা অফার দেয় শিউলি কে। এই বাড়িতে থাকবে, এই খালা আর তার খেয়াল রাখবে,এর পরিবর্তে সেফটি, তার আর তার বেবির রিসপন্সিবিলিটি নিবে।
সেদিন শিউলি এর থেকে ভালো কিছু আর পাবে না জেনে ই রাজি হয়ে যায়। এভাবে ই কেটে যায় আরো নয় মাস। শিউলির ব্যবহার কথা বার্তা সব দিক থেকেই এতটাই মার্জনীয় ছিল যে,খুব সহজেই এই পরিবারের অংশ হয়ে পড়ে।
শিউলি বাচ্চা জন্ম দেয়। ফুটফুটে কন্যা সন্তান। তখন থেকে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়, সবকিছু।
_____
হঠাৎ ফুল দৌড়ে এলো। শিউলির ধ্যান ভাঙল। মেহেদী দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মুচকি মুচকি হাসতেছে। এই পুরুষটার হাসি দেখলে শিউলির খুব ভালো লাগে ।স্বচ্ছ, পবিত্র, দুনিয়াতে সব পুরুষ খারাপ হয় না, কিছু পুরুষ ভালো ও আছে।
ফুল – মাম্মি, চলো না । তুমি একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?
এই ফুল কে দেখলে শিউলির শিশির এর কথা মনে পড়ে। শিশির কে তো সে ভালোবেসেছিল মন থেকে। তাহলে, শিশির কেন এমন করল?
_____
অন্যদিকে শিশির বাসায় আসতেই পাগল পাগল বিহেবিয়ার করতে শুরু করেছে। নিজেকে রুম বন্ধি করে রুমের ভেতর ভাঙতে শুরু করছে। হঠাৎ করেই মনে পড়লো শিউলি আর ফুল কে।তার তাদের চাই।যেকোন মূল্যে ই চাই। হঠাৎ করে মনে পড়লো তাদের তো ডিভোর্স হয়নি, তাহলে?
শিশির শয়তানি হাসি দিল,বললো তোমাকে আমার কাছেই আসতে হবে।আসতেই হবে।
____
কেটে গেল আরো দুই দিন। মেহেদী আর শিউলি চিন্তায় আছে।কোর্ট থেকে নোটিশ এসেছে। শিশির কোর্টে কেইস করেছে। দুদিনের মধ্যে হাজির হতে হবে। শিশির মেহেদীর বিরুদ্ধে কেইস করেছে,যে তার স্ত্রী আর মেয়েকে বে আইনি ভাবে নিজের কাছে রেখেছে।
মেহেদী মুচকি হাসল।বলল – বড্ড বোকা। শিউলি চিন্তা করো না, তোমার মেয়ে তোমার কাছে ই থাকবে, তবে আমার পাশে থেকো।
____
কোর্টে হাজির হয়েছে।দিনা চুপচাপ।দিনা ও যেন চাচ্ছে, শিউলি ফুল কে নিয়ে ফিরে আসুক শিশিরের কাছে। শিশির শিউলির দিকে তাকিয়ে আছে, আশেপাশে তাকাচ্ছে, ফুল নেই। তবে তার তো শিউলি কে দেখার তৃষ্ণা বেশি। শিউলি কে খুব সুন্দর লাগছে।ভরা পেট নিয়ে এখানে এসেছে, সমস্যা নেই এই বেবি ও সে মেনে নিবে।
চলবে….