বড্ড ভালোবাসি পর্ব ৩৫+৩৬

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৩৫ এবং ৩৬
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
আমি এখন কি করবো কি করে বাঁচাবো নিজেকে।অজানা এক ভয় গ্রাস কর চলেছে আমাকে। এগুলো ভাবতে ভাবতে দু চোখ জলে ভরে এলো।হঠাৎ মনে হলো আমি কারো বুকের উপর শুয়ে আছি।তার হার্টবিট খুব দ্রুত চলছে।এই হার্টবিট আমার খুব পরিচিত।আমিও আগেও এই বুকে কান পেতে শুনেছি।এই সুরেই নিজেকে হারিয়েছি বারবার।হুম এবার বুঝতে পেরেছি এটা রিহান।গুটিশুটি মেরে শুয়ে আলতো করে বলে উঠলাম “রিহান”।সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলো।চারিদিক তাকিয়ে দেখলাম এটা একটা নদীর পাড়।পরক্ষণে আবার মনে হলে আরে এটা তো সেই জায়গা যেখানে উনি প্রথম আমায় উনার মনের কথা বলেছিলেন।উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ বন্ধ করে ঘাসের উপর শুয়ে আছেন।আমি উঠতে যাব তখনি বলে উঠলেন….উহুম উঠছো কেন রোজ?থাকনা কিছুটা সময়।জানো তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না।এই দুদিন আমি বেঁচে থেকেও মরে গিয়েছিলাম।এই তুমি আমার সাথে এমন করো কেন?
.
কোনো কিছু না বলে উনার বুকে গিল ঘুষি মারতে ব্যস্ত আমি।আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কি করে।জানেন আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।কেন করলেন এমন হুম….
.
শান্ত হও রোজ এভাবে মারছো কেন?নিজের বরকে কেউ এভাবে মারে।কি করবো বলো সেদিনের পর তুমি দুদিন ধরে ফোন অফ করে রেখেছে।তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে তুলে আনতে হলো।
.
আপনি আমাকে এখানে আনলেন কি করে?আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে….
.
আমার কথায় হাসলেন উনি।এই ঘুম কুমারী তোমাকে একদিন বলেছিলাম না তুৃমি যেই ঘুম কাতুরে মেয়ে কেউ তুলে নিয়ে গেলেও টের পাবে না।তখন তো খুব বলেছিলে না তা কখনও হবে না।আজ কি হলো আমি তেমাকে ঘুমের মধ্যে ব্যালকোনি দিয়ে নিয়ে এসেছি।আর তুমি এমন ঘুমে ছিলে আমি তোমাকে তুলে এনে এক ঘন্টা ধরে এখানে আছি আর তুমি টেরও পেলে না।
.
কিহহ!এক ঘন্টা।সত্যি আমি এমন করে কি করে ঘুমাই।ব্যালকোনি দিয়ে আমায় নিয়ে এলেন আর আমি কিচ্ছুটি টের পেলাম না।আপনি আমাকে এভাবে নিয়ে আসলেন কেন?যদি পরে গিয়ে হাত পা ভাংতো তখন।
.
কিচ্ছু হতো না।আমার প্রাণ থাকতে আমি তোমার কিচ্ছু হতে দিতাম না।
.
আরে আমি উনার সাথে কথা বলছি কেন?আমি তো রাগ করেছি রোজ অভিনয় করে হলেও রাগ করতে হবে।আমি আপনার কোনো কথা শুনতেও চাই না আর বলতেও চাই না।আমি বাড়ি যাবো আপনি আমায় বাড়িতে দিয়ে আসেন।
.
আমার কথা শুনে আমাকে দাঁড় করিয়ে উনিও উঠে দাঁড়ালেন আর পকেটে হাত দিয়ে একটা চুরি বের করে আমার সামনে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে ডেবিল স্মাইল দিলেন।উনার এরকম হাসি দেখে আমি ভয়ে চুপসে গেছি।চুরি নিয়ে আমার দিকে এগুচ্ছেন।নির্ঘাত আজ আমার জীবনের শেষ দিন।আজ আর রক্ষা নেই মেরে ফেলবেন আমায়।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম কি করছেন আপনি?উনি কোনো কথা না বলে আমার কাছে এসে আমাকে অবাক করে দিয়ে চুরিটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন উনি।চেখ বন্ধ করে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে বলতে লাগলেন…..
.
আমি জানিনা তুমি ঠিক কি কারনে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছো।রোজ আমার একটা উপকার করো প্লিজ!মেরে ফেলো আমাকে।আমি এই টানাপোড়ন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছিনা।জানো এই দুদিন বেঁচে থেকেও মরে গিয়েছিলাম।দম বন্ধ হয়ে আসছিল।কি করবো বড্ড ভালোবাসি যে তেমায়।তোমায় ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারিনি না।তোমার এই অবহেলা আমি আর পারছিনা সহ্য করতে তার চেয়ে আমাকে শেষ করে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দাও প্লিজ।আমার বুকে বসিয়ে দাও এই চুরিটা।
.
উনর কথা শুনে চুরিটা হাত থেকে ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো।আমি কোনো কিছু বলতে পারছিনা।কেমন দম বন্ধ লাগছে যেন কেউ আমার নিশ্বাস আটকে দিয়েছে।আস্তে আস্তে উনার সামনে দাঁড়ালাম।আচমকাই উনাকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে লাগলাম আমি।কাঁদতে কাঁদতে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে হউক তবুও কাঁদবো আরো কাঁদবো।কাঁদতে কাঁদতে মরে যাবো।
.
রোজ কাঁদছো কেন?শান্ত হও। দেখ তুমি কাঁদলে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়।
.
একদম ছুঁবেন না আমাকে আমার কাছেও আসবেন না।আপনি খুব খারাপ পঁচা স্বার্থপর একটা লোক।কি ভাবেন আপনি নিজেকে(শার্টের কলার টেনে)ভালো শুধু আপনি বাসতে জানেন?আর কেউ ভালোবাসতে পারেনা।আমি আপনাকে ভালোবাসিনি আমার কষ্ট হয়নি।অহহ হবে কেন আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না শুধু আপনি একাই ভালোবাসেন।বাসায় ফিরে সবার আগে আপনাকে কল দিয়েছিলাম বার বার বিজি আসছিলো ঠিক আছে মেনে নিলাম হয়তো কোথাও কথা বলতে বিজি ছিলেন তাই বলে কল ব্যাকও করা গেলো না।পুরো দিন ফোন খোলা ছিল না একটা কল বা টেক্সট কিছুই নেই তাই বাধ্য হয়েই ফোন অফ করে দিয়েছি।এসবে আমার একটুও কষ্ট হয়নি একটুও না।আপনি কেন মরতে যাবেন আমি মরে গেলেই সব প্রবলেম সলভ হুম আমিই মরে যাবো।(চুরি খুঁজতে খুঁজতে)
.
রোজ আমার কথা শোন।কেন পাগলামি করছো।
.
আমি কারো কোনো কথা শুনতে চাই যা।আমি আজ নিজেকে শেষ করে দিবো।তখন আপনাকে জ্বালানোর কেউ থাকবেনা।কারো জন্য আপনার কষ্ট পেতেও হবেনা।
.
রোজ কি আবোল তাবোল বলছো।তুমি ছাড়া আমি বেঁচে থাকবো এটা তুমি ভাবলে কি করে।কথা শুনো প্লিজ এমন কিছু করোনা আমি বাঁচতে পারবো না।তুমি আছো বলেই আমি আছি।
.
চারিদিক তাকিয়ে চুরি খুঁজতে ব্যস্ত আমি।তখন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায় উনি।আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও বরাবরের মতো ব্যর্থ হলাম।আস্টে পৃষ্টে জড়িয়ে আছেন আমায়।যেন ছাড়া পেলেই কোথাও হারিয়ে যাব।।অনেক্ষণ পর জোরাজোরি বন্ধ করে শান্ত হয়ে উনার হার্টবিট শুনতে ব্যস্ত আমি।হঠাৎ ঘাড়ের উপর গরম কিছু ফিল হলো বুঝতে পারলাম উনি কাঁদছেন।কাঁদছেন কেন আপনি?
.
তুমি জানো না কেন?আর যদি কোনোদিন মরার কথা বলো তাহলে মজা টের পাবে।কথাটা শুনে আমার কেমন লেগেছে বুঝতে পারছো ডেমেড।(সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে)
.
আর আপনি যখন আমাকে আপনাকে মারার জন্য বলছিলেন তখন আমার বুঝি দেই দেই করে নাচতে ইচ্ছা করছিলো তাই তো।আমার কেমন লাগছিলো আপনি ভেবেছিলেন তাহলে আমি ভাববো কেন?
.
ঠিক আছে আর কখনও আমিও এসব বলবো না আর তুমিও বলবে না।আমাদের বাসা থেকে তুমি যাওয়ার পরদিন থেকে আমি অফিস জয়েন করি।কাজ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারনা নেই আমার।।এগুলো বুঝে নিতে আমার কিছু টাইম লাগে।হুম তুমি যখন কল দিয়েছিলে তখন আমি একটা প্রজেক্ট নিয়ে ক্লান্টের সাথে কথা বলছিলাম।কথা বলে আবার কাজ নিয়ে বিজি হয়ে পরি ভেবেছিলাম পরে ব্যাক করবো কিন্তু কাজের প্রেশারে করা হয়ে উঠেনি।সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যায় তোমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে বলে আর কল দেইনি।পরেরদিন সকাল থেকে অনেকবার ট্রাই করি কিন্তু তোমার ফোন সুইচ অফ।বিশ্বাস কর রোজ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।তুমি যখন জানতে না আমি তোমাকে ভালোবাসি তখন একরকম ছিলো কিন্তু এখন যখন জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো তখন তোমার ইগনোর সহ্য করতে পারিনা।
.
তো আমাকে কি বলেছেন আপনি অফিস জয়েন করেছেন।আমাকে বলবেন ই বা কেন?আমি তো আপনার কেউ হইনা(গাল ফুলিয়ে)কেউ হলে তো নিশ্চয় বলতেন?ফোন বিজি পেয়ে ভেবেছিলাম কোনো মেয়ের সাথে প্রেম-আলাপ করছেন তাইতো রাগ উঠে গেছিলো।
.
কিহ সিরিয়াসলি তুমি এটা মনে করেছিলে?তুমি এখনও আমাকে সন্দেহ করো।তুমি আমার কেউ না কে বলললল তুমিই তো আমার পৃথিবী।হঠাৎ করে হওয়ায় বলতে পারিনি।এই নিয়ে গাল ফুলিয়ে থেকে না।
.
হ্যাঁ তো।(মুখ কালো করে)।কিন্তু সন্দেহ করি না করলে এক ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে দিতাম হুহ।আমার কথায় মৃদু হাসলেন উনি।
.
আরে পাগলি!আমি শুধু তোমাকে চাই।সবসময় বিশ্বাস রেখো।জানো বিশ্বাস ছাড়া সম্পর্ক টিকানো অসম্ভব।তাই কোনো কিছুর জন্য আমাকে ভুল না বুঝে আগে আমার সাথে তা নিয়ে ডিসকাস করো তারপর যা ডিসিশন নেওয়ার নিও।অফিসে জয়েন করার জন্য আব্বু আমাকে অনেকদিন ধরে বলছিলো কিন্তু এসব আমার ভালো লাগতো না।কিন্তু একদিন সকালে আব্বু বলল তার সাথে অফিস যেতে তাই চলে গেলাম হঠাৎ করে হওয়ায় তোমাকে বলতে পারিনি তার জন্য সরি।
.
আগে ভালো লাগতো না।তাহলে এখন ভালো লাগে তো।
.
হুম এখন ভালো লাগতেই হবে।কারন আগে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য কোনোটাই ছিলো না কিন্তু এখন একটা উদ্দেশ্য আছে।
.
উদ্দেশ্য….কি উদ্দেশ্য বলা যাবে?
.
হুম!তোমাকে বলা যায় না এমন কোনো কথা আমার লাইফে নেই।আগে কাউকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিলো না।কিন্তু এখন একজনকে সারাক্ষণ কাছে পেতে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে আর এই বেকার অধমের হাত তো কেউ তার মেয়েকে তুলে দেবে না তাই মন দিয়ে কাজটা করছি।যাতে খুব তাড়াতাড়ি তাকে নিজের করে পেতে পারি।জানো তোমাকে বউয়ের সাজে দেখতে খুব ইচ্ছা করে কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়।আল্লাহ চাইলে খুব তাড়াতাড়ি আমার ইচ্ছা পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।
.
উনার কথায় লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমার।কেন যে কারন জিজ্ঞেস করতে গেলাম।তবে ভালোই হয়েছে জানতে তো পেরেছি।কিন্তু আমার জন্য এত কষ্ট করবেন।নিজের লজ্জাকে কাটানোর জন্য জিজ্ঞেস করলাম ভার্সিটি আর অফিস একসাথে সামলাবেন কি করে?
.
এটা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। কিছুদিনের মধ্যেই এক্সাম শেষ হয়ে যাবে তারপর তো ফ্রী থাকবো।
.
আপনার তো খুব কষ্ট হবে।কি করে পারবেন আপনি?লেখাপড়ার ক্ষতি হবে তো।
.
ধুর পিচ্চি কিসের কষ্ট!তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি যেকোনো কিছু করতে রাজি।সব কষ্টের বিননিময়ে হলেও তোমাকে পেতে রাজি।এসব নিয়ে তোমার এই ছোট্র মাথায় এত চাপ দেওয়ার প্রয়োজন নাই।এসব ভাবার জন্য আমি আছি।আর লেখাপড়া কিচ্ছু হবেনা।সব দিক সামলে নিবো।
.
আমি করুন চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।কি অনায়াসে বলে দিলেন সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি।কি করে পারবেন অফিস আর পড়াশোনা একসাথে কন্টিনিউ করতে।উনিও তো মানুষ নাকি!
:
:
#Part_36
:
:
হীরের আংটি হাতে নিয়ে হাঁটু গেরে আমার সামনে বসে আছেন উনি।আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি তার পানে।সত্যি এত এত সারপ্রাইজের ভীরে আমি অবাক নাকি মুগ্ধ সেটা নিয়ে নিজেই কনফিউজড।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন…..
.
এই ঘুম কুমারী তুমি হবে কি আমার নিত্য দিনের চলার সাথী….তুমি হবে কি আমার মনের অব্যক্ত কথার প্রতিটি বাণী…..হবে কি আমার পথ চলার একমাত্র সম্বল……হবে কি আমার বুড়ো বয়সের এতটুকু বাঁচার অবলম্বন….হবে কি সেই স্বপ্নের রাণী যেখানে রাজা আমিই।ঘুমকুমারি সারাজীবন কি চলবে আমার হাত ধরে এভাবে…. হাতে হাত রেখে দূর থেকে বহুদূরে দেবে কি পাড়ি….ভাসবে কি ভালো আজীবন আমায়……
.
আমি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছি না।বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছি আমি। রিহানও যে এমন পাগলামি করতে পারে কখনো ভাবতে পারেনি আমি।
.
উনি আমার উওরের অপেক্ষায় বসে আছেন।আর আমার চোখে অশ্রু টলমল করছে।সত্যি উনিও এমন করে প্রপোজ করবেন বুঝতে পারিনি।রিহান হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আমার দিকে।আমি মুচকি হেসে উনার হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই উনি আমার হাতে ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিয়ে হাতে চুমু খেলেন।আমি রিংয়ের দিকে একবার তাকিয়ে উনার দিকে তাকালাম…. উনি কি করে যেন আমার মনের কথাটা বুঝে ফেললেন…..
.
তুমি এটাই ভাবছো তো আমি এত টাকা কোথায় পেলাম।খুব সিম্পল আমি অফিস জয়েন করেই একটা ঝুলে থাকা বড় এমাউন্টের ডিল ফাইনাল করেছি আর তার জন্য আব্বু খুশি হয়ে আমাকে বোনাস হিসাবে টাকাগুলো দিয়েছন ক্লিয়ার।আমি ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম।
.
চাঁদের আলোয় ভাসছে দুজনে।রোজ রিহানকে জড়িয়ে চাঁদ দেখছি।আর রিহান তার চাঁদকে দেখতে ব্যস্ত।এদিকে রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যাচ্ছে তাদের কোনো হুশই নেই।হঠাৎ রিহান বলে উঠলো….
.
এই রেড রোজ বাসায় যাবে না।ভোর হতে চললো যে।নাকি এভাবে আমাকে জড়িয়ে থাকবে।অবশ্য তাতে আমার কোনো প্রবলেম নেই আমি তো এভাবেই তোমাকে সারাক্ষণ কাছে চাই।
.
উনার কথায় ঘোর কাটলো আমার।সবসময় বেফাঁস কথা বলে আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয়। সত্যি তো ভোর হয়ে যাচ্ছে এখন বাসায় না পৌছালে যাব কখন।হুম চলুন বাসায় যাওয়া যাক।অনেক্ষণ ধরে বাসার বাহিরে আছি।
.
হুম চলো আমাকে পৌছে দিয়ে উনি নিজের বাসায় ব্যাক করলেন।এসেই বিছানায় পরে ধুম ঘুমে আমি।সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো আমার।আবারও সেই কলেজ আর তিশা প্যারা।তিশাকে রেগে বললাম….
.
তুই আজকে না আসলেও পারতি।তোর জন্য আজ আমায় কলেজ যাইতে হইবো।আর ভাল্লাগেনা।না খেয়েই কলেজের জন্য রওয়ানা দিলাম।
.
বটতলায় বসে আছি আমি আর তিশা।সবাই মিলে আড্ডা মারছি।দূরে আবির আর রিহান ভাইয়াকে আসতে দেখলাম।উনারা নিজেদের মতো কথা বলতে বলতে আমাদের দিকে আসছেন।এসেই রিহান ভাইয়া বললেন রোজ তোমার ঘুম হয়েছে তো?
.
উনার এমন প্রশ্নে সবাই অবাক।এতজন থাকতে উনি শুধু আমার ঘুমের খবর নিচ্ছেন আশ্চর্য।সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।আর আমি লজ্জায় মাথানিচু করে আছি।উনি আবারও বলে উঠলেন….
.
কি হলো কথা বলছো না কেন?মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে সকালে কিছু খাওনি। উফ তোমাকে নিয়ে কি করবো বলতো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে কি করে হবে।চলো ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে নেবে।
.
না আমি খেয়ে এসেছি লাগবেনা।আপনি আপনার কাজে যান।
.
চুপচাপ কোনো কথা না বলে চলো।বলেই হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন।আর ভার্সিটির সবাই আমাদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
.
ক্যান্টিনে বসে আছি আর উনি সেই কখন থেকে খেয়েই চলেছেন।আর আমি খাবার সামনে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি।
.
কি হলো তুমি খাচ্ছ না কেন?
.
না আমি খাবো না আপনি খান।ওভাবে সবার সামনে শুধু আমাকে নিয়ে এলেন ওরা কি ভাবলো।
.
কি আর ভাববে আমি আমার বউকে নিয়ে এসেছি।ওরা সবাই তো আর আমার বউ না তাই সবাইকে নিয়ে আসিনি।এবার মুখভার না করে খেয়ে নাও।আর একটা কথা শোন এভাবে আর কোনোদিন না খেয়ে ভার্সিটি আসবে না।একটু লেইট হলেও খেয়ে আসবে মনে থাকবে।হুম বলে সম্মতি জানালাম।আচ্ছা তুমি খাও আমি দু মিনিটে আসছি।বলেই উঠতে গিয়ে আহ বলে কোমড়ে হাত দিয়ে আবার বসে পড়লেন উনি।মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। খাবারের প্লেট রেখে ঝটপট উঠে দাঁড়ালাম আমি।উনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে উনি মাথা নাড়িয়ে কিছুনা জানালেন।বুঝতে পারছি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।এই অবস্থায় আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।উনি মাথানিচু করে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছেন।আর আমি কান্নায় ব্যস্ত হয়ে পরেছি।উনিও নিজের কষ্টকে পাওা না দিয়ে আমাকে বলে উঠলেন….
.
রোজ কিচ্ছু হয়নি আমার।দেখ আমি ঠিক আছি তাড়াহুড়ো করে যাচ্চিলাম তাই হয়তো কোমড়ে একটু টার্ন পরেছে কিচ্ছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে।তুমি খেয়ে নাও আমরা একসাথেই যাবো।
.
রাখুন তো আপনার খাওয়া আমি খাবো না।আপনি সত্যি ঠিক আছেন তো।উনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালেন।এত কাঁদছো কেন দেখ আই এম অলরাইট বলে ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে উঠে দাঁড়ালেন।উনাকে ঠিক দেখে এতক্ষণে আমার দেহে প্রাণ ফিরলো।
.
ক্যান্টিনে বিল পে করে আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলেন উনি।আমাকে ক্লাসে দিয়ে অফিসে যেতে লাগলেন তখনই পেছন থেকে ডেকে উঠলাম আমি…..শুনুন।উনি দুপা পিছিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন….
.
হুম কিছু বলবে।
.
হুম আপনি অফিস যাচ্ছেন ভালো কথা টাইমলি খাবেন।একদম তাড়াহুড়ো করে কাজ করবেন না।ধীরে স্বস্তে কাজ করবেন।মনে থাকবে তো।
.
জ্বী আজ্ঞা মহারাণী বলে মুচকি হেসে চলে গেলেন উনি।আমি পেছন ফিরতেই দেখি তিশা অর্ণা শাওন সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
.
হোয়াট!সবাই এভাবে গাধার মতো হাসছিস কেন?আর আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
.
তিশাঃসামনে গেলে তো সিনেমার সিন মিস করব তাই পেছনে থেকেই দেখছি।
.
সিনেমার সিন!কোথায় পেলি আমাকেও দেখা।
.
তিশা+অর্ণা+শাওনঃসবাই একসাথে বলল…এখন শেষ।
.
আমি দেখতে চাইলাম আর শেষ হয়ে গেলো।(অবাক হয়ে)
.
তিশাঃহুম!কারন হিরো হিরোইনকে বিরহের সাগরে ভাসিয়ে অফিস চলে গেলো।এতক্ষণে সিনেমা শেষ।
.
হারামী তার মানে এতক্ষণ ধরে আমাদের কথা বলছিলি তোরা।
.
হ বইন আজ একটা বফ নাই বলে এভাবে পাবলিক প্লেস থেকে আদর করে একা নিয়ে কেউ খাওয়ায় না।বফকেও এত এত উপদেশ দিতে পারিনা।
.
মুচকি হেসে তাই নাকি রে তিশা বলে ওর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম!তাহলে তোর খুব কষ্ট! ঠিক আছে তোর এই কষ্ট ভোলানোর জন্য বফ নাই থাকতে পারে কিন্তু আমি একজনকে ডাকতে পারি যে তোর সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারে।
.
অনেক আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করলো তিশা কাকে রে
.
কেন মিঃবান্দরকে।যে তোকে খামচি দেয় হলুদ মাখায় নিশ্চয় চুম্মা টুম্মাও দিয়েছে যেটা আমাকে বলিসনি।
.
বইন তোর পায়ে ধরি আর কখনও রিহান ভাইরে নিয়ে কিছু কমু না তবুও তুই এদের সামনে আমায় এভাবে বেইজ্জত করিস না।
.
পাক্কা তো।
.
হ পাক্কা।
.
ওকে ওদের কিছু বলবো না।এইবারের মতো ছাইড়া দিলাম।এর পরে কোনো দিন এক ভুল করলে নো ছাড়াছাড়ি ওকেে।
.
.
চলবে……..