বরষায় ভেজা মন পর্ব – ০৪

বরষায় ভেজা মন
রূবাইবা মেহউইশ
৪.

ছাঁদে টাঙানো শামিয়ানার উপর তেরপালও দেওয়া হয়েছিল বৃষ্টির ভয়ে। কি লাভ হলো! আচমকা ঝড়ের তান্ডবে হলুদের অনুষ্ঠান ভন্ডুল হয়েছে। চারপাশ থেকে বৃষ্টি আর হাওয়ার তোড়ে ছাঁদে টেকা মুশকিল হয়ে উঠছিল। বাধ্য হয়েই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে নিচতলার গ্যারেজ সাইডের বড় হলের মতন অংশে সোফা দিয়ে, বেলুন দিয়ে কনের স্টেজ করা হলো। চেয়ার বিছিয়ে মেহমান বসানোর ব্যবস্থাও হয়ে গেল ঝটপট। হাতে হাতে সবাই মিলে পুনরায় হলুদ আয়োজন করে ফেলল তবুও পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিয়ে মন খারাপ হয়ে গেল পিয়ার। কলির একদমই ইচ্ছে ছিল না সবার মাঝে বসার কিন্তু নানা বাড়ির বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাই-বোনের যে বিরাট দল তারজন্য সম্ভব হলো না একা থাকা। সবে মিলে ননা রকম হাসি আড্ডায় পিয়াকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে তাই কলিও যোগ দিল। বাইরের তান্ডব একতলার গ্যারেজে আঁচ না ফেললেও তাপ দিলো চোখের সামনেই বসে থাকা সুন্দরী হবু ভাবী। ভাবী! কলি মনে মনে আৎকে উঠলো ভাবতেই, পরশের বউ তার ভাবীই তো হবে। মজার ব্যাপার হলো পরশের হবু বাগদত্তার পাশে বসা ছিল পিয়ালের প্রেমিকাও। বাড়ি ভর্তি সবাই জানে মেয়েটি পিয়ালের বান্ধবী অথচ কলি প্রথম দেখেই আন্দাজ করলো মেয়েটি একসময় এ বাড়ির বউ হবে। হাসি পেল তার খুব এই ভেবে, তার আম্মু বড় সাধ করে এক সেট সোনার গহনা আর একটি নতুন কাতান শাড়ি নিয়ে এসেছেন সঙ্গে করে৷ পিয়ার বিদায়ী পর্বে শেষে কলির একটা হিল্লে হবে৷ সময়ে, সুযোগে আংটিবদলটাও করিয়ে যাবেন৷ এদিকে কলির মনে পরশ ভাইয়ের নামের মালা মনেই গাঁথা। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় চমৎকারভাবে তৈরি পরশ আর পিয়াল ভাইয়ের যুগল এখন পাশাপাশি বসে মিষ্টি হেসে গল্প করছে। দূর থেকে কলি তা আড়নজরে দেখতে লাগল। আজকের আয়োজনে কলির থাকার চেয়ে না থাকাটাই বুঝি বেশ হতো! রাত বাড়তেই ত্রয়ী তাড়া দিল তার বাড়ি ফিরতে হবে। ত্রয়ী পরশ ভাইয়ের হবু বাগদত্তা কিংবা হবু স্ত্রী বলা যায়। ঝড়-বাদল তখনও জিরিয়ে জিরিয়ে প্রকৃতিতে তার অশান্ত রূপ প্রকাশে ব্যস্ত। পরশ ভাইদের নিজস্ব গাড়ি নেই তাই বিয়েতে আসা পরশ ভাইয়ের খালামনির গাড়ি নিয়ে তিনি রওনা হলেন ত্রয়ীকে পৌঁছে দিতে। কলি চুপচাপ তাকিয়ে দেখলো তাদের বেরিয়ে যাওয়া। তারা যেতেই অনুভূত হলো বুকের ভেতর বৈশাখের প্রলয়। চোখ জ্বলছে, বুকে হাহাকার বসে থাকা দায়। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে দোতলায় উঠতেই মেজোমামী দেখে কাছে ডাকলেন। বলা হয়নি, পিয়ার বিয়ে উপলক্ষে মেজোমামা দেশে এসেছেন সপরিবারে। মামার দুই ছেলে রায়ান ভাই আর ছোট তায়ান দুজনের সাথেই কলির আলাপ হয়েছে টুকরো টুকরো। সোশ্যালের যুগে যোগাযোগ থাকলেও ঘনিষ্ঠতার কমতি আছে তবুও কোথাও একটু সুক্ষ্ম আকর্ষণ রায়ান ভাইয়ের বরাবরই ছিল কলির প্রতি। মেজোমামী হাত টেনে দোতলায় বসার ঘরে নিয়ে গেলেন কলিকে। হুট করেই একটা শাড়ি ধরিয়ে দিলেন, ‘বাড়ির সব মেয়ে শাড়ি পরেছে তুই কেন পরিসনি বলতো! আচ্ছা বলতে হবে না চল আমি পরিয়ে দিচ্ছি।’

ঝমঝম বৃষ্টির ছন্দে সিক্ত কপোল বেয়ে তপ্ত জলের ধারা। বিয়ে বাড়ির হুল্লোড় একটুও কমেনি মধ্যরাতে। শাড়ির আঁচল মেঝে ছুঁয়ে বৃষ্টিস্নাত অষ্টাদশীর সঙ্গী হয়েছে সন্তর্পণে। মেজোমামীর পরিয়ে দেয়া শাড়ি গায়ে জড়িয়েই কলি ছাতা হাতে ছাঁদে উঠে এসেছে। কেউ দেখেনি তার চোখের কোণের চিকচিকে রূপালী জলধারা। ভেতর বাহির সবেতেই যখন তুফান চলে প্রকৃতির তান্ডব তখন ম্লান হয়েছে। ভেবেছিল একলা কিছু মুহূর্ত ঘোর আঁধারা তমিস্রায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখলে হয়তো ভেতরটা শীতল হবে। কিন্তু হায়! চোখ বুঁজতেই হাতের ছাতাটা আচমকা বাতাসে উড়ে যাওয়ার যোগাড় আর পেছনে কারো পদধ্বনি স্পট। কয়েক সেকেন্ডেই তার ঠিক পিঠ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে গেছে পেছনের মানুষটি। চোখ খুলতে গিয়েও খুলল না সে মানুষটির বলা একটি কথায়।

‘ভালো বাসলে প্রকাশ করতে হয়।’

(লেখাটা আপনারা বড় চাচ্ছেন আমিও চেষ্টা করলাম বড় করতে। কিন্তু কি বলেন তো, বড় করে চমৎকার কিছু বের করতে পারছি না। সব এক সব কমন সব হযবরল 😑)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here