#বর্ণচোরা
#৩য়_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
–“ও… ওই ছেলেতো আমার ফ্রেন্ড! ”
–“কেমন ফ্রেন্ড? ”
–“মা তুমি এখন যাওতো! ফ্রেন্ড আবার কেমন হয়! আমি গোসল করে রেস্ট নেবো৷ এবার যাও!”
বলেই ও ওর মাকে ঠেলতে থাকে। ওর মা মেয়েকে থামিয়ে বলল,
–“আমি এবার নেহালকে নয়, তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি! তোর বিয়ে হয়ে গেলেই ওরা দুজন বিয়ে করবে!”
বলেই চলে যাচ্ছিল। তখন অরু চেঁচিয়ে উঠল,
–“ভাইয়াদের রেখে এখন আমার পিছনে কেন লাগলে? তোমার খেয়ে আর কাজ নেই নাকি!”
–“লাগবো না তোর পিছে! তোর ভাইদের রাজি করা বিয়েতে! তুই মুক্ত!”
বলেই অরুর উত্তরের আশা না করেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো ওর মা। অরু ভাবতে লাগলো কি করে ওর ভাইদের বিয়েতে রাজি করানো যায়!
রাতে খাবার খাওয়ার সময় অরু নেহাল আর নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“মায়ের হাতের রান্না খেতে-খেতে বোর হয়ে গেছি। তাই না বাবা?”
ওর বাবা অবাক হয়ে একবার অরুর দিকে আরেকবার অরুর মায়ের দিকে তাকালো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। তখন অরু আবার বলল,
–“এইবার ঈদের আগে বাসায় ভাবি না আসলে আমি তোমাদের কারো সাথেই কথা বলব না! এই বলে দিলাম!”
কথাগুলো শুনে এবার অরুর মা খুশি হয়ে গেলেন। অরুর বাবাও ওর সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
–“ঠিক বলেছিস অরু! একজনের হাতের রান্না আর কতদিন ভালো লাগে! আমিতো আরো আগে থেকে খাচ্ছি! তাহলে আমার কথা একবার ভাব!”
বলেই অরুর মায়ের দিকে তাকালো। অরুর মা তখন ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলল,
–“দুই ভাইয়ের জন্য আমি দুইটা মেয়ে দেখে রেখেছি। এই শুক্রবারে মেয়ে দেখতে না গেলে আমি আর রান্নাবান্না করতে পারবো না বলে দিলাম!”
অরু তখন বলল,
–“ভাইয়া তোমরা কি চাও যে, আমি রান্নাবান্না করি! মা না রান্না করলেতো আমাকেই করতে হবে! প্লিজ রাজি হয়ে যাও! তোমাদের জন্য মা এবার আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে! আর তোমরাতো জানো আমি এক্ষুণি বিয়ে করবো না! প্লিজ!”
সবার কথা শুনে দুইভাই কিছুটা ইমোশনাল হয়ে রাজি হয়ে যায় মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য। অরুর মা একই বাড়ির দুইটা মেয়েকে দেখেছে। উনার খুব ইচ্ছে দুই ছেলের এক বাড়িতেই বিয়ে করাবে! একই দিনে।
অরু আবার আদিবকে মেসেজ করেছে। কিন্তু কোনো রিপ্লাই না পেয়ে মনটা একটু খারাপ করে ফেলেছে। কিন্তু ভার্সিটি গিয়ে সবার সাথে কথা বলতেই ওর মন ভালো হয়ে গেলো। ও তন্বীকে হায়াতের কথা জানালো। আসলে আদিবের কথাও অরু তন্বীকে বলেছে। ওর কোনো কথাই ও তন্বীর কাছে গোপন রাখে না। আর তন্বীও ওর সাথে সব কথা শেয়ার করে।
ক্লাস শেষে অরু নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। তন্বীও নিবিড়কে একনজর দেখার জন্য অরুর সাথে অপেক্ষা করছিলো৷ অরু যেদিন নিবিড়ের সাথে যায় সেদিন-ই তন্বী অপেক্ষা করে। নিবিড় কখনো ওর দিকে তাকালে ও খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।
–“তোর নেহাল ভাই কি সত্যিই বিয়ে করবে না অরু? আমারতো আর তর সইছে না!”
তন্বীর কথা শুনে অরুর মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। ওর মাতো অলরেডি মেয়ে দেখে রেখেছে! এটা শুনলেতো তন্বী খুব মন খারাপ করবে। কথাটা তন্বীকে বলবে কিনা! এসব ভাবতে-ভাবতেই নিবিড় চলে আসে। অরু তন্বীকে আর ওদের বিয়ের কথা জানাতে পারে না।
কাল অরু ওর ভাইদের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। অরুর মা এই প্রথম অরুর ভীষণ প্রশংসা করেছে ভাইদের বিয়েতে রাজি করানোর জন্য৷ তিনি এইভেবে আফসোস করছেন যে, অরুকে দিয়ে আরো আগে কেন বলায়নি ছেলেদের! যাইহোক অরু ভাইদের বিয়ে নিয়ে খুশি হলেও তন্বীর জন্য একটু খারাপ লাগছিলো৷ মেয়েটা কি সত্যিই কষ্ট পাবে? কিন্তু নিবিড়তো ওকে পছন্দ করে না! তাহলে ওর এখন কি করা উচিত! ও ভেবে পায়না। এমন সময় ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসে। আদিব ওকে এতদিন পর মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছে দেখে ও ভীষণ খুশি হয়।
–“কেমন আছো আদিবা? হায়াতের সাথে নাকি তোমার দেখা হয়েছিলো? আসলে আমি খুব ব্যস্ত আছি। আর কোরবানির ঈদের পর আমার বিয়ে। তোমাকে জানানোই হয়নি, আমার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো। ওর সাথেই আমার বিয়ে!”
মেসেজটা দেখে রাগে ফেটে পড়ে অরু। ওর গার্লফ্রেন্ড আছে এটা আগে জানাতে পারে নি! এখন এসে জানাচ্ছে! গার্লফ্রেন্ড ছিলো তাহলে অরুর সাথে কেন এত কথা বলেছে? অরুর সব কথা কেন শুনেছে? ওতো এসবকে ভালবাসা ভেবেছিলো! ওর ধারণা সম্পূর্ণ ভুল!
আদিবের গার্লফ্রেন্ড আছে! ও তাকে বিয়ে করতে চলেছে ভাবতেই এক অজানা কষ্ট অরু অনুভব করতে লাগলো। যাকে চেনে না, জানেনা, তার জন্য ওর কেন এত কষ্ট হচ্ছে! কেন অচেনা একজনের কথায় ও এত কষ্ট পাচ্ছে! চোখের পানিগুলো মুছে আদিবকে ও প্রথমে ব্লক করে দিলো। তারপর তন্বীকে ফোন করে কান্না-কান্না গলায় বলল,
–“সরি রে তন্বী!”
–“কি হয়েছে অরু? তুই কান্না করছিস কেন? আন্টি কিছু বলেছে? নাকি তোর ভাইয়েরা কিছু বলেছে?”
–“কয়দিন পর আদিবের বিয়ে! ”
–“তো তাতে তোর কি! তুইতো ওই আদিবকে চিনিস না পর্যন্ত! দেখিসও নি কোনোদিন! তাহলে তুই কেন কান্না করছিস?”
–“আমি ভাবতাম ও আমাকে ভালবাসে! আমার সাথে এত ভালো ব্যবহার কেন করতো?”
–“আরে অনলাইনে সবাই ভালোভাবেই কথা বলে। তুই বোকার মতী ভাবছিস! বাদ দে।… ওয়েট, এরজন্য তুই আমাকে সরি বলছিস কেন?”
–“তোকে সরি বলেছি কারণ! কাল নিবিড় ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো! আদিবের বিয়ের কথা শুনে আমি যেমন কষ্ট পাচ্ছি তুইওতো নিবিড় ভাইয়ার বিয়ে হলে কষ্ট পাবি! তাই….”
–“তোর ভাইয়া রাজি হয়েছে বিয়ে করার জন্য?”
–“হুম। আমরা জোর করে ভাইয়াদের রাজি করিয়েছি। তুই চিন্তা করিস না! আমি মাকে বুঝিয়ে বলব তোর কথা! ভাইয়াকেও বলব! তুই সত্যি নিবিড় ভাইয়াকে ভালবাসিসতো? নাকি আমার সাথে মজা করতি?”
নিবিড় মেয়ে দেখতে যাবে শুনে তন্বী অনেক কষ্ট পেয়েছে। ও ভাঙা গলায় বলল,
–“তোর ভাই যদি বিয়েতে রাজি হয়ে যায় তাহলে আমার আর কি করার আছে বল! আমার ভালবাসা একতরফা ভালবাসা ছিলো হয়তো! তাই কখনো পূর্ণতাও পাবে না!”
বলেই খট করে কল কেটে দেয় তন্বী। তন্বীর এমন প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়ে যায় অরু। সব সময় মজা করা মেয়েটা এমন থমথমে ভাবে কথা কেন বলল? ও আদিবকে পাবে না! কিন্তু তন্বীরতো চান্স আছে নিবিড়কে পাওয়ার!
তাই ও নিবিড়ের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওর দরজায় কারো কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনতে পায়। ও দরজা খুলে নিবিড়কে দেখে পুরাই অবাক হয়ে যায়।
–“ভাইয়া তুমি? আমিতো তোমার কাছেই যেতে চাচ্ছিলাম! ”
নিবিড় মাথাটা নিচু করে আমতা-আমতা করে বলে,
–“তোর সাথে একটু কথা ছিলো।”
তারপর অরু ওর বিছানার উপরে বসে পড়ে। আর নিবিড় একটা চেয়ার টেনে বসতে-বসতে কথাগুলো বলে। অরু অবশ্য নিবিড়কে দেখে খুশিই হয়েছে। তন্বীর কথাটা বলতে পারবে।
–“আসলে ভাইয়া, আমারো তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।”
–“আচ্ছা তুই আগে বল তাহলে!”
–“না ভাইয়া, তুমি আগে বলো।”
তারপর অনেক জোড়াজুড়ি করার পর নিবিড় আগে বলতে রাজি হয়ে যায়। তারপর আমতা-আমতা করে বলে,
–“আমি কাল মেয়ে দেখতে যেতে পারবো না। তুই মাকে একটু বুঝাবি? প্লিজ?”
অরু নিবিড়ের কথার কোনো মানে বুঝতে না পেরে বলে,
–“কেন? তখনতো বললে মেয়ে দেখতে যাবে! ওখন আবার হঠাৎ করে কি হলো?”
নিবিড় লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
–“আমি একজনকে ভালবাসি!”
কথাটা শুনে অরু যেন আকায়াহ থেকে পড়ে। নিবিড় কাউকে ভালবাসে অথচ এই কথাটা ওরা কেউ জানেই না! এতবড় একটা সত্য ও কী করে গোপন রাখলো! আর তন্বীর জন্য ওর আরো বেশি খারাপ লাগে। মেয়েটাকে ও কি বলবে! যে ওর ভাই আগে থেকেই একজনকে ভালবাসে! ও কিছুটা অভিমানের সুরে বলে,
–“এসব তুমি কি বলছো ভাইয়া! তোমার পছন্দ আছে তাহলে এতদিন বিয়ে করতে রাজি হওনি কেন? আমাদের জানাওনি কেন?”
–“আমিতো নেহাল ভাইয়ার বিয়ের জন্য ওয়েট করছিলাম! তাই কাউকে কিছু বলিনি! কিন্তু কে জানতো যে, মা আমাদের দুইজনকে একসাথে বিয়ে দেওয়ার প্লান করে রেখেছে।”
–“তো একথা তুমি মাকে না বলে আমার কাছে কেন এসেছো?”
–“একমাত্র তুই-ই আমাকে বাঁচাতে পারিস! প্লিজ অরু! তুই না আমার লক্ষী বোন! আমার এই উপকারটুকুতো করতেই পারিস! ”
–“তারপর? ”
–“মানে?”
–“মানে কাল না হয় আমি তোমাকে বাঁচিয়ে নিলান! তারপর কি করবে?”
–“সুযোগ বুঝে আমি মাকে সবটা জানিয়ে দেবো৷ পরের চিন্তা আর তোকে করতে হবে না৷ তুই শুধু কালকের মতো আমাকে হেল্প কর।প্লিজ! কালকের এই হেল্পটা করলে সামনের পুরো সপ্তাহ আমি তোকে কাচ্চি খাওয়াবো! তুই যা খেতে চাস তাই খাওয়াবো!”
অরু বিষন্ন মনে “হুম” বলে চুপ করে যায়। নিবিড় তখন অরুকে বলে,
–“তুই নাকি কি বলবি?”
অরুতো তন্বীর কথা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু নিবিড়তো অন্যকাউকে ভালবাসে! এখন তন্বীর কথাতো আর বলা যাবে না! তাই ও মুখে একটু হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,
–“না, কিছুনা। তুমি যাও।”
নিবিড় তখন হাসিমুখে অরুকে বলে,
–“আমি কাকে ভালবাসি তা শুনবি না?”
অরু অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাসিমুখে বলে,
–“অবশ্যই! বলো, তুমি কাকে ভালবাসো?”
চলবে….?