#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
১৫
সেদিন সন্ধ্যায় তূবা আহফিনের বাড়ির দিকে রওনা দিল। প্রতিদিন বিকেল বেলাতেই চলে যায়। আজ একটু বের হতে দেরি হয়ে গেল। দেরি হলেও তাকে বের হতে হয়েছে। না হলে লোকটা খাবেও না আর সারারাত না ঘুমিয়ে তাকে ফোনের ওপাড় থেকে রাগ ঝাড়বে। তাই তূবা বের হয়েছে।
যেতে যেতে হঠাৎ সে জোরে ধাক্কা খেলো। শক্ত কিছুর সাথে মাথাটা লেগে বেশ ব্যথা পেয়েছে। রাগে ব্যথায় তূবা যেই মাথা তুলে কিছু বলতে যাবে তখনি চমকে উঠল। আবার রনি? আবার কোন বিপদ নিয়ে হাজির হয়েছে সে? চোখ মুখের অবস্থা স্বাভাবিক নয়। চিকন শ্যামলা শরীরের গলার হাড্ডির সাথে লেগে কপালে ব্যথা পেয়েছে তূবা। ইতিমধ্যে সুপারি আকার ধারনও করে ফেলেছে। তূবা মাথা থেকে হাত সরিয়ে মুখে কঠিন ভাব নিয়ে এলো। পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় রনিও সেই রাস্তায় আটকে দাঁড়িয়েছে। তূবা শক্ত গলায় বলল
“পথে আটকে দাঁড়িয়েছিস কেন?”
“…
“রাস্তা ছাড়।”
“বিয়া করবি নাকি?”
“….
“যদি হইতে না দেই?”
আৎকে উঠল তূবার বুক। রনি এমনটা করবেই হয়তো। ভয়ে তূবার বুক চিপা দিল।
“কিরে যদি তোর বিয়া আমি হইতে না দেই? ওই বড়লোক সাহেব কে যদি মাইরা ফালাই? তহন? তহন কি করবি রে তূবা?”
ভয়ে তূবার হাত পা কাঁপা শুরু করে দিয়েছে। ভেতরে ভয় শিরায় শিরায় দৌড়াচ্ছে। দম টা আটকে আসছে রনির কথা শুনে। শ্বাস নিতেও সময় নিচ্ছে।
“ভয় পাইছোস?”
“….
“ভয় পাইছ না রে তূবা। তোর আর তোর হবু জামাইয়ের আমি কিছু করতাম না। তুই তো ওই বড়লোক ছেরার সাথে সুখে শান্তিতে আরামে থাকতে পারবি। আর আমি? আমি তোরে তো কিছুই দিতে পারতাম না রে। তাই আমার ভাগ্যও নাই তোরে নিজের কাছে রাহনের। তোর শান্তিই আমার শান্তি রে তূবা। তুই সুখে থাক। ভুল তো আমি আগেই করছিলাম। নিজেই নিজের কপাল খাইছি ছোডুবেলায়। বড় হয়ে তোরে হারাইলাম নিজের দোষে। তুই আমার কপালে আছিলি না রে। তোর কোনো ক্ষতি আমি করতাম না। তোরে আর বিরক্তও করতাম না রে তূবা। তুই ভালো থাক। আমার ভালোবাসা ভালো থাক এইডাই চাই আমি। আমার ভিতরের আগুন আর ভালোবাসা আমার ভিতরে লুকাইন্না থাক। তুই ভালো থাক তূবা তুই ভালো থাক।”
মুখে তাচ্ছিল্যের কষ্ট জর্জরিত হাসি আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পরছে পানি। এই প্রথম রনি কে দেখে তূবার মায়া হচ্ছে। মন টা কেমন অস্থির লাগছে রনির জন্যে। নিজের অজান্তে তূবার দুই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। এক চোখের পানি টুপ করে পড়তেই তূবা অন্য চোখের পানি আড়াল করে নিল।
“আমার জীবনডা আইজ সার্থক হইলো রে তূবা। আমার লাইগা তোর চোখের এই দুই ফোঁডা পানি আমার জীবন ডা পূর্ণ কইরা দিছে। তোর এই দুই ফোঁডা চোখের পানি আর এই মুখ মনে কইরা দিন পাড় করতে পারবাম আমি। তূবা শুধু তোর লাইগা আমার বুক টা সারাডাক্ষণ জ্বলব রে তূবা।” কথাটা শেষ করেই রনি বাচ্চাদের মতো ঢুকরে কেঁদে উঠল। তূবা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে ছেলেটার জন্যে। চোখ বারবার ভরে আসছে। হঠাৎ তার চোখ গেল রনির বুকের দিকে। চিড়া দাগ। রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। তূবা কেন যেন সহ্য করতে পারল না। দৌড়ে সামনে চলে গেল। কিছু পথ এগিয়ে থমকে দাঁড়াল। পিছন ফিরল আবার। রনি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তূবা আর নিতে পারল না এই দৃশ্য। বুকটা ব্যথায় টনটন করছে। রনির জন্যে চোখের পানি গুলি আর আটকে রাখতে পারছে না। ভেতরটা জ্বলছে খুব কষ্ট লাগছে। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তূবা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করল। বড্ড পুড়ছে মনটা রনির জন্যে!
কলিংবেলের আওয়াজে আহফিন যখন দরজা খুলল তখন তূবা কে জিজ্ঞেস করল
“আসতে এত দেরি হলো যে?”
“….
“তূবা?”
তূবা কে ভাবান্তর না দেখে আহফিন তাকে ধরে ভেতরে নিয়ে এলো। তূবার চোখ মুখ ফোলা দেখেও আহফিন সাথে সাথে কিছু জিজ্ঞেস করল না। তাকে সোফায় বসিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।
“তূবা পানিটা খাও?”
আহফিনের কথায় তূবা তাকাল। চুপচাপ পানির গ্লাস টা নিয়ে অল্প পানি খেয়ে রেখে আবার আহফিনের দিকে তাকাল। আহফিনের চোখে তূবার কপালে ফোলা টা দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল “তোমার কপালে কি হয়েছে তূবা?”
“কিছু না।”
“তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে?”
“কি লুকাতে যাবো? আপনি বসুন আমি একটু ওয়াশরুম থেকে এসে রান্না বসাচ্ছি।”
“….
আহফিন তাকে আর কিছু বলে বিরক্ত করল না। কিন্তু হঠাৎ তূবার এমন ব্যবহার তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। কপাল কুঁচকে চিন্তিত মুখে থম মেরে বসে রইল আহফিন।
এদিকে তূবা ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে। আল্লাহ কি এমন দিল তার মাঝে যার কারণে একটা ছেলের এতটা কষ্ট নিতে হচ্ছে? রনির জীবন টা শেষ বললেই চলে আর অন্যদিকে তার প্রেমে একজন মাতাল। একটু ছাড়লেই মনে হয় অস্থির হয়ে উঠে। এই মুহূর্তে আহফিনের কথা তেমন না মনে পরলেও রনির কথা বড্ড মনে হচ্ছে। ছেলেটার জীবন শেষের মূল দায়ী কি সে? হয়তো সে নয়তো তার ভাগ্য। কিন্তু রনির জন্যে মনে টান লাগছে তার। এটাই বা কেন হচ্ছে? ওর ওই কষ্ট ভরা বুক মুখ দেখে নাকি অন্য কারণ? এত চিন্তায় তূবার মাথা চিনচিন করা শুরু করে দিয়েছে। ওমনি দরজায় টোকা পরল।
“তূবা তূবা। কি হলো? এতক্ষণ ধরে ওয়াশরুমে আছো। সব ঠিক আছে তো?”
তূবা কোনো জবাব দিল না। আহফিন আবার গলা ছেড়ে ডাকতে লাগল তাকে। তূবা বেসিনে হাল্কা ঝুঁকে মুখে পানির ঝাপটা দিল। চোখ মুখ বেয়ে সব পানির দলা বেয়ে নিচে নামতে লাগল। আহফিন ওখনো দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকছে তাকে। জবাবে সে বলল “কিছু হয় নি আমার। আসছি।”
মিনিট কয়েক পর তূবা বের হয়ে দেখতে পেল আহফিন সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আছে। তূবা তার পাশে এসে বসল।
“কি হয়েছে আপনার?”
“আমার কিছু হয়নি তূবা। তোমার কি হয়েছে সেটাই ভাবছি আমি।”
“আমার কিছু হয়নি আহফিন। আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।”
“সত্যি কিছু হয়নি তো?”
আহফিন কে মিথ্যে বলতে তূবার ভালো লাগছে না। তবুও মুখ ফুটে বলল “না।” আহফিন তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল। অনেক শক্ত হাতে ধরেছে তূবা কে। তূবা বুঝল না কিছু কিন্তু মুখে হাসি ফুটে উঠল। মনটা স্বস্তিও পাচ্ছে।
রান্না করার সময় হুট করে আহফিন এসে তূবার কোমর জড়িয়ে ধরল।
“আরে কি করছেন কি আপনি?”
“তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরার লোভ সামলাতে পারলাম না।”
তূবার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে আবার বলল “জানো তূবা মুভিতে আর রোমান্টিক ভিডিও তে যখন দেখি হিরোরা এভাবে জড়িয়ে ধরে বউ কে তখন খুব আনন্দ হয়। এটা বাস্তবে একটু অনুভব করার জন্যেই ছুটে এলাম। জানো ভেতরে কতশত অনুভূতি খেলা করতে থাকে? আসলেই তো দারুণ একটা স্টেপ এটা।”
“ছাড়ুন তো ছাড়ুন। তরকারি পুরে যাবে। আর আমি কিন্তু আপনার বউ হইনি এখনো। না আপনি কোনো হিরো আর না আমি কোনো হিরোইন।”
আহফিন তূবার হাত খোঁপায় নাক ডুবিয়ে দিতে দিতে বলল,
“হিরো না হই তাই বলে যে এটা করা যাবে না এমন কোনো কথা আছে? মাঝে মাঝে বাস্তবেও কিছু স্টেপ নিয়ে ফিলিংস টা অনুভব করতে হয়। এতে ভালোবাসাও বাড়ে আর অনুভূতিও। এখন থেকে রোজ এভাবে এসে একবার জড়িয়ে ধরব।”
“আমি আপনায় খুন্তি দিয়ে দিব। ছাড়ুন। সত্যিই তরকারিটা লেগে যাচ্ছে।”
আহফিন তূবার নরম গালে চুমু দিয়ে চলে গেল। তূবা এক গাল হেসে আহফিনের দিকে তাকিয়ে রইল। যতই না করুক হাজার খানিক ভালোলাগা কাজ করেছে এতে। সব কথা যে সবসময় বলে দিতে হয় এমন কোনো কথা নেই। কিছু অনুভূতি এভাবেই অনুভব করে নিতে হয় চুপিসারে। তূবা আবারো মুচকি হাসল।
রাতে খাবার শেষ করে তূবা ব্যালকুনিতে এসে দাঁড়াল। পিছন থেকে আহফিন এসে তার ঘাড়ের চুল সরিয়ে দিয়ে সেখানে থুতনি রাখল। আর জিজ্ঞেস করল
“কি ভাবা হচ্ছে?”
“…..
“তূবা?”
“হ্যাঁ।”
“কি হয়েছে তোমার?”
“কই কিছু না তো।”
“মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাও বলো তো।”
“….
“আবার?”
আহফিন তূবা কে নিজের দিকে ফিরাল। গালে হাত রাখতেই তূবা কপাল কুঁচকে নিল।
“কি হয়েছে বলো তো তূবা? অন্তত একটু আলতো করে জড়িয়ে তো ধরতে পারো?”
হঠাৎ করে তূবা বলে উঠল
“আমাদের বিয়ে কবে?”
“….
“কি হলো?”
“তুমি এটা নিয়ে চিন্তিত?”
“….
“আরে তুমি বললে কাল কেই বিয়ে করে নিব। এটা নিয়ে এত চিন্তা? দূর পাগলি?”
আহফিন তূবা কে জড়িয়ে ধরল মুচকি হেসে। তূবা তার হাত ছাড়িয়ে যেতে যেতে বলে গেল “ঘুম পেয়েছে রাতও হয়েছে ঘুমিয়ে পুড়ুন এসে।”
আহফিন স্তব্ধ হয়ে তূবার কান্ড দেখল পিছন ফিরে। সে এখন খুবি চিন্তিত তূবা কে নিয়ে। হঠাৎ কি হলো তূবার?
চলবে♥
(আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সামনে বলার মতো কিছু নেই আমার। কারণ জীবন কতটা কঠিন হতে পারে আমি বুঝতে পারছি। সমস্যা সব দিক দিয়ে ধেয়ে বসছে। শরীর অনেক অসুস্থ ঠিক মতো দাঁড়াতে গেলেও হাত পা কাঁপে। তার উপর গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছি। নেটের এত সমস্যা বলার মতো না। আম্মু ফোনেই আমার সাথে কথা বলতে পারেনি ঠিক মতো। তাই ফেসবুকে আসি নি। বাপের বাড়ি আছি এখন। কয়দিন গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব কষ্ট করে হলেও। সমস্যা সবার জীবনে থাকে। কখনো বেশি কখনো কম। আমার সমস্যা গুলির কারণে গল্প দিতে এত লেইট হয় নিজের কাছেই খারাপ লাগে। তবুও বলব যদি আপনাদের পড়তে ভালো না লাগে তাহলে বাদ দিন। যখন নিয়মিত দিতে পারব বা শেষ হবে তখন না হয় পড়বেন❤️)