বর্ষার_এক_রাতে পর্ব ২৭

#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া

২৭
২.৪২ এ আহফিন দুপুরে নাকে মুখে খেয়ে রেডি হতে শুরু করেছে। বড্ড দুপুর এখন। সূর্য এখনো মাথার উপর থেকে সরেনি। খানিক ঝুঁকেছে মাত্র। কলা গাছ ভেঙ্গে পরার মতো হেলে আছে। আহফিন কে এভাবে ব্যস্ত হয়ে রেডি হতে দেখে মিজান বারবার বলছে স্যার কোথায় যাবেন এখন? কিন্তু আহফিনের কোনো উত্তর নেই। তার কালো বেল্টের ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছে না। ড্রয়ারে, কাবার্ডের ভেতর এদিক ওদিক খুঁজেও পাচ্ছে না সে। এবার মিজান অনেক টা বিরক্ত নিয়েই বলল “স্যার আপনি যাবেন কোথায় এই দুপুর বেলায়?” আহফিন হয়তো তার গলার রাগ টা বুঝল। তার দিকে শান্ত চোখের দৃষ্টি দিয়ে শান্ত ভাবেই বলল “পার্কে যাবো।”

মিজান কেমন ভ্যাবাচেকা খেয়া গেল। তার উচ্চগলায় কথা শুনেও আহফিনের কোনো রিয়েকশন না পেয়ে সে ফের শান্ত গলায় বলল “স্যার এখন তো পার্ক খোলার সময় নয়। পার্কে গিয়ে এখন কি করবেন? এখন পার্কের গেইটই খুলে নি। পার্কের গার্ডই আসে সাড়ে তিনটার দিকে। এখন গিয়ে কি করবেন আপনি?”

“…..

“স্যার আপনি এত অস্থির হচ্ছেন কেন বলুন তো আমায়।”

“তাহফিবার জন্যে।”

চমকে উঠল মিজান। বিস্ময়কর নয়নে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আহফিনের দিকে। মিজান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও খানিক অবাক হলো। তার বোধগম্য হলো না মিজানের এভাবে তাকিয়ে থাকাতে।

“কি হলো তোমার?”

“তা তাহফিব?”

“হ্যাঁ।”

“সে আবার কে?”

“কালকের বাচ্চা সেই মেয়েটা।”

ফুস করে মিজান নিশ্বাস ত্যাগ করল। তার এমন ভাব দেখে আহফিন এবার ভ্রুকুটি করে তাকাল। আর আহফিনের এমন তাকানো দেখে মিজান বিষয়টা বুঝতে পারল। এড়িয়ে যেতে মুচকি হাসি দিয়ে বলল “কি কিছু না স্যার।”

আহফিন অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে চলছে তাহফিবার জন্যে। কখন সে আসবে। কখন তাকে হিরো আঙ্কেল বলে চুমু খাবে। তার গাল স্পর্শ করে মিষ্টি মধুর সেই হাসি দিবে।

—-
কাল মেয়েটা বলেছিল আজ তাহফিবা আসবে। কিন্তু সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে এখনো তাহফিবা আসল না। একটুপর গার্ড গেইট লাগিয়ে চলে যাবে নিজের বাসায়। কিন্তু তাহফিবার দেখা তো আজ মিলেনি। আহফিন অসহায় করুণ চোখে আবার রাস্তার দিকে তাকাল। এখনি যদি তাহফিবা এসে তার গলা জড়িয়ে বলত হিরো আঙ্কেল আমি এসেছি। আহফিন ওদিকেই তাকিয়ে থাকে আশাহতের মতো।

মিজানের এবার মায়া হতে শুরু করেছে আহফিনের মুখ দেখে। সে তার কাছে গিয়ে বসল। আর বলল
“স্যার। আজ হয়তো মেয়েটা আসবে না।”

মিজানের এমন কথায় আহফিন কষ্ট পেল। মনমরা কালো মুখ টা নিয়ে মিজানের দিকে তাকালে মিজানের ভেতরে কষ্ট পেতে লাগল। আহফিন আবার শূন্যের দিকে তাকিয়ে থেকে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। আনমনে বিড়বিড় করে বলল “যার জন্যে অপেক্ষার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছি সেই আসে নি এত বছরেরও আর ওই বাচ্চা মেয়েটা কি না..” মুখে তাচ্ছিল্যের রেখা টেনে আনল আহফিন। এই হাসি তার কষ্ট কে পানিতে পরা কলা গাছের টুকরোর মতো ভাসিয়ে তুলে। আহফিন উঠে দাঁড়াল। ডান হাতে চকলেট গুলি নিয়ে মৃদু কদমে হাটতে শুরু করেছে। মিজান তখনো স্তব্ধ হয়ে বসে ছিল। আহফিনের কথাটা নিয়ে ভাবনার জগতে খেলতে নেমে পরল সে।

—-
আজ দুইদিন তাহফিবা আসছে না। আহফিন প্রতিদিন গিয়ে মন ভাঙ্গা অনুভূতি টুক নিয়ে একা ফিরে আসে। একদিনের কয়েক মিনিটের দেখায় কেন সে অস্থির হয়ে উঠছে সে বুঝতে পারছে না। তার কিছুই ভালো লাগে না। এখন মনে হচ্ছে সিলেট না আসাই তার জন্যে ভালো হতো। আবার নতুন একটা কষ্ট বুক পেতে নিতে হতো না। তাহফিবার মুখটা চোখে ভেসে উঠতেই নিশ্বাস ফেলে দিল সে।

মিজান রুমে এসে দেখল আহফিন ব্যালকুনিতে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। দুই দিন ধরে সে তার পুরাতন স্যার কে দেখতে পাচ্ছে। তার নিজের কাছেও ভালো লাগছে না। কয়দিন এখানে এসে হাসিখুশি আহফিন আবার তলিয়ে যাচ্ছে তার দুঃখ কষ্টে। মিজান আজও জানে না আহফিনের রহস্য কি। খুব জানার ইচ্ছা থাকলেও সাহস হয়ে উঠে না তার। আজ মন টা একটু বেশিই খারাপ স্যারের জন্যে। মিজান এগিয়ে গেল ব্যালকুনিতে। পিছন থেকে ডাকল।
“স্যার।”

মিজান আবার ডাকল।
“স্যার আসব?”

আহফিন তার দিকে না তাকিয়েই বলল “মিজান। এসো।”

“স্যার মন খারাপ আপনার তাই না?”

“আর বেটা মন খারাপ? আমার মন তো বিষাদের সাগরে কবেই ডুবে গেছে। অস্থির লাগছে শুধু।”

“বাচ্চা মেয়েটার জন্যে?”

“জানো মিজান আমার না তাহফিবা কে অন্য রকম লাগে। ওকে যতক্ষণ কাছে পেয়েছিলাম ততক্ষণ মনে হচ্ছিল তূবা আমার পাশেই ছিল। তাহফিবার কাছাকাছিতে আমি অন্য রকম একটা অনুভূতি পেয়েছিলাম। তাই বোধ হয় এমন লাগছে।”

“স্যার তূবা কে? আপনার গার্লফ্রেন্ড?”

“স্ত্রী ছিল আমার। প্রথম আর জীবনের শেষ ভালোবাসা তূবা। সে আমার হৃদয়ের শরীরের প্রতিটি লোমকূপে গভীর ভাবে মিশে গেছে। তূবা আমার ভালোবাসা।”

—-
“মাম্মাম আমি কিন্তু কাল পার্কে যাবোই যাবো। না করলে একটুও শুনব না।”

“মামুনি আমার লক্ষ্মী সোনা এত অবুঝ হলে চলে বলো? তুমি না আমার গুড গার্ল। সময় পেলে নিশ্চয় নিয়ে যাবো। দেখো না কত ঝামেলা।”

“সময় টময় আমি বুঝি না। আমি যাবো যাবো আর যাবোই।”

ল্যাপটপ সরিয়ে তাহু কে কাছে টেনে কোলে তুলে নিল তূবা। ঘাড়ে থুতনি রেখে জিজ্ঞেস করল
“এত পার্কে যাওয়ার তোরজোড় উঠেছে কেন? পিনার জন্যে?”

“না হিরো আঙ্কেলের জন্যে।”

“হিরো আঙ্কেল?”

“হ্যাঁ।”

“হিরো আঙ্কেল আবার কে তাহু?” ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল তূবা।

“তোমাকে তো বলিই নি মাম্মাম। সেদিন না একটা হিরো আঙ্কেলের সাথে আমার দেখা হয়েছে। কি বলেছে জানো?”

“কি বলেছ?” মুচকি হেসে বলল তূবা।

“বলেছে আমাকে দেখতে নাকি উনার কাছের একজনের মতো।”

“….

“ও মাম্মাম? জানো আমি পরে গিয়েছিলাম বলে উনি আমাকে আদর করে দিচ্ছিল।”

“তাহু মা কোনো আঙ্কেল ফাঙ্কেলের দরকার নেই। ওসবের থেকে দূরে থাকবে ডাকলেও কাছে যাবে না।”

“হোয়াই মাম্মাম।”

“মাম্মাম বলেছে তাই।”

“কিন্তু মাম্মাম উনি খুব ভালো। জানো উনি না কাঁদছিল।”

“কাঁদছিল? কেন?”

“সেটা কি আমি জানি নাকি? তুমি না।”

“তাহু বলেছি না মাম্মাম দূরে থাকতে অপরিচিত মানুষের থেকে।”

“….

“মনে থাকবে?”

“হু।”

“তুমি কিন্তু মুটেও কথা বলবে না কারো সাথে।”

“একটু একটু বলব।”

“তাহু।” জোর গলায় বলল তূবা।

তাহফিবাও তাল মিলিয়ে বলল “জ্বি।”

মেয়ের কান্ড দেখে তূবা ফিক করে হেসে উঠল।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here