বর্ষার_এক_রাতে পর্ব ১৬

#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া

১৬
সকালে আহফিন উঠার আগেই তূবা বের হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে তূবা দেখতে না পেয়ে সে রেগে গেল। সাথে বেশ অবাক হচ্ছে তূবার ব্যবহারে। হঠাৎ এমন আচারন করছে কাল থেকে। কি এমন হলো কাল যে তূবা এমন এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে? আহফিনের মেজাজ গরম হয়ে আছে। সে তূবা কে কল দিল। একটা রিং হওয়ার পর সে কল টা রিসিভ করতেই আহফিন গলা ছেড়ে বলে উঠল, “কল টা ধরতে এত সময় লাগে কেন তোমার? আর আমাকে না বলে চলে গেলে যে? কি হয়েছে কি তূবা?”

“আমি আপনাকে একটু পর কল দিচ্ছি।” শান্ত স্বরে তূবা এই কথা বলে কল টা কেটে দিল। আহফিন রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে। সে আবার কল দিল তূবার নাম্বারে। কিন্তু আশ্চর্য তূবা ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছে। আহফিন তূবার এমন কাজে হতভম্ব। চুপচাপ থম মেরে বসে অনেক কিছু চিন্তা করছে। কিন্তু তূবার এমন পরিবর্তনের কোনো কারণ সে খুঁজে না পেয়ে গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে উঠে পরল।

তূবা ফোন টা বন্ধ করে ব্যাগের ভেতরে রেখে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। সামনে থাকা মানুষ টা খানিক হেসে বলল “ফোন ডা বন্ধ কইরাল্লি যে? তোর হবু জামাই রাগ করত না?”
রনির কথায় তূবা কিছু বলল না। পাশ ফিরে তাকিয়ে আছে। এলোমেলো হাওয়া তূবার চুল গুলি কে দুলিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। আর রনি অপলক তাকিয়ে আছে সেদিকে। কি সুন্দর প্রকৃতির খেলা।

বাড়ি ফিরার সময় রনি কে গলির সামনের ব্রিজে দেখতে পেয়ে তূবাই তাকে নিয়ে এসেছে। ব্রিজের খানিক নিচে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। সামনে মরা পুকুরটা থেকে গা গিনগিন করা গন্ধ আসছে। কাকেদের চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে। আর দুজনে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।

রনি বলল “তূবা আমারে কেন ডাকলি এইখানে?”

“রনি তুমি কি করছো নিজের জীবন টা কে নিয়ে?”

“কেরে?”

“নিজের ভালো একটা জীবন তুমি নিজে নষ্ট করছো।”

“তাতে তোর তো কিছু না তূবা।”

“জানি আমার কিছু না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার জন্যে তোমার জীবন টা এমন হয়ে গেছে।”

“এসব তোর ভুল ধারনা। আমার জীবনডা আমার ভাগ্যের দোষে এমন হইয়া গেছে। এইডা আমার কপালের দোষ। এতে তোর কিছুই না।”

“…..

“তুই তোর জীবন নিয়া ভাব। তোর নতুন জীবন নিয়া। কেমনে সাজাইবি এইসব ভাব। আর এইসব তো তুই ভাইবাই রাখছোস আমি হুদাহুদি চিল্লাইতাছি।” বলে রনি কষ্টভরা একটা হাসি হাসল। যা তূবার ভেতরটা কে জ্বালিয়ে দিয়েছে একদম। কষ্ট গুলি গলায় এসে ঠেকেছে।

“বাসায় যা তূবা।”

“….

“এসব ছেড়ে ভালো একটা মানুষ হওয়া যায় না?”

“আমি তো ছোডু থেইকাই খারাপ ভালা হইয়াম কেমনে? আমারে নিয়া তুই ভাবিস না। আর আমার পিছনে তোর সময় নষ্ট করিস না রে। কিন্তু বিশ্বাস কর তূবা আমার লাইগা তোর এমন মায়া দেইখা আমার অন্তরডা জুড়াইয়া গেছে। এমন শান্তি আমি আমার জীবনে পাই নাই।”

তূবা কিছু বলতে যাবে তার আগে খেয়াল করল তাদের থেকে দুই তিন হাত দূরেই আহফিন দাঁড়িয়ে আছে। আহফিন কে দেখে তূবা থমকে গেলো। বুকের ভেতর কিছু একটা প্রবল ভাবে বারি খেয়েছে মনে হলো। হঠাৎ আহফিন কে দেখে সে বোকা হয়ে গেল। তূবা তাকাতেই আহফিন তার দিকে তাকাল। অচেনা দৃষ্টি, চোখ মুখ লাল তূবা তাকিয়েই রইল আহফিনের দিকে। এদিকে রনি দুজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। সে পরিস্থিতি কিছুই বুঝতে পারছে না। আহফিন মুখে চাওড়া একটা হাসি টেনে লম্বা পায়ে রাস্তায় রাখা গাড়ির দিকে যেতে লাগল। পিছন থেকে দুই পা এগিয়ে তূবা তাকে ডাকল। আহফিন ফিরেও তাকাল না। রনি ব্যস্ত হয়ে গেল।
“তূবা উনারে আটকা উনি তোরে ভুল বুইঝা চইলা যাইতাছে। তূবা ডাক দে।”
তূবা পাথরের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

রনি দৌড়ে আহফিনের কাছে যেতে চাইল। আর তূবা তাকে পিছন থেকে ডাকতে লাগল। ততক্ষণে আহফিন গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। তূবা গলা ছেড়ে রনি কে ডাকল।রনি আবার দৌড়ে তূবার কাছে এসে হাঁপাতে লাগল।
“তুই আটকালি না কেরে?”

“….

“তূবা আমার লাইগা তোরার মাঝে ঝামেলা হোক আমি এখন চাই না। তোরা ভালা থাক আমি এইডাই চাই।”

তূবা কিছু না বলে রনি কে ফেলে চলে গেল। যাওয়ার আগে একবার পিছন ফিরে রনির দিকে তাকিয়ে বলল “এসব বাদ দিয়ে নিজের যত্ন নাও। জীবন টা কে সুন্দর করে সাজিয়ে নয় গুজিয়ে নাও।”

বাসায় এসে তূবা ব্যাগ বিছানার উপর ফেলে দিয়ে ক্লান্তির নিশ্বাস ফেলে দিল। শরীর টা নয় মন টা বড্ড ক্লান্ত। একবার আহফিনের বাসায় যেতে চেয়েও কেন যেন যেতে মন চাইল না। ব্যাগ থেকে ফোন টা নিল। সিম টা অন করে আহফিন করে কল দিতেই ওপাশ থেকে একজন মহিলা বলতে লাগল “আপনার ডাইলকৃত নম্বার টি এই সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার..” তূবা ফোন টা রেখে বিছানার উপর বসে পরল। তখন ঘরে তুসি ঢুকল “আপা আপা” করে।

“তুসি সোনা কি হয়েছে?”

“আপা ডাক্তার আমারে সত্যি ঠিক করে দিতে পারবে তো?”

“ডাক্তার নয় আল্লাহ ঠিক করতে পারবে। ডাক্তার তো চেষ্টা করবে। আর আমার তুসি এবার হাটতে পারবে। আমি আর তুসি এবার কিশোরগঞ্জ নিকলি হাওয়ারে নীরবে হাটব।”

চিকচিক করা চোখ নিয়ে তুসি বলল “সত্যি আপা?”

“ইনশাল্লাহ। এবার খুশি?”

“হু। আপা কবে অপারেশন হবে?”

“এই মাসেই আর কয়দিন বাকি আছে।”

“আপা আমার জন্যে দোয়া করিস।”

“পাগলি আমার সব দোয়া তোর জন্যে। তুই আমার বোন নিজের মেয়ের মতো ছোটবেলা থেকে বড় করেছি। দেখবি আল্লাহ আমাদের আবার সুন্দর জীবন দিবে।”

“ইনশাল্লাহ আপা।”

দুই বোন জড়িয়ে আছে একে অপরের সাথে। তুসির মুখে হাসি মনে ভয়। তূবার চোখে পানি মনে চিন্তা ভয় সব এক সাথে। অথচ দুজনই নিখুঁত অভিনেত্রী।

আহফিন বেশ বেগে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ির গতি একদম শেষ পর্যায়ে। না জানি কখন কি হয়ে যায়। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার। চোখে বিন্দু বিন্দু পানির দানার কারণে ঝাপসা দেখছে সে। রাগে শ্বাস নিতে পারছে না ঠিক মতো। তূবা তার সাথে এমন টা করতে পারে সে কল্পনাও করে নি। সব মেয়ে এক, বেইমান, স্বার্থপর, লোভী। আবারো মনে এমন ধারনা পুষতে লাগল সে। লুবনার বিরহের কাছে এই বিরহ কিছুই না। ওটা এক বিন্দু আর এটা এক সাগর। এত কষ্ট সে কি করে সহ্য করবে তাই বুঝতে পারছে না। ভেতরটা আগুনের মতো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। এই টনটনে ব্যথা সে সহ্য করতে পারবে না। সব কিছু শেষ করে দিতে মন চাইছে তার। টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পরছে। তূবা কি রনির জন্যে কাল থেকে এমন করছে তার সাথে? তবে কি তূবার মন পরিবর্তন হয়ে গেলো? আহফিন এসব ভাবছে আর শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার শ্বাসের গতি আস্তেআস্তে কমে আসছে। গাড়ির গ্লাস টা তার কাছে ঝাপসা মনে হচ্ছে। হঠাৎ তার গাড়ির সামনে কোনো একটা বাচ্চা মেয়ে এসে পরাতে সে ব্রেক করে গাড়ি ঘুরিয়ে নিল। আর তখনি হলো এক দুর্ঘটনা..!

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here