#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
২২
আহফিন ড্রয়িংরুমে বসে আছে। একা যে বসে আছে এমন নয় সাথে লম্বা ফর্সা একটা মেয়েও বসে আছে। দুজন খানিকটা দূরত্ব রেখে বসলেও হেসেই কথা বলছে বোধহয়। এই দৃশ্য দেখে তূবার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল কিন্তু এক চুল পরিমাণও নড়েনি সে। তূবা কে আসতে দেখে আহফিন বলল
“চলে এসেছো? এদিকে এসো পরিচয় করিয়ে দেই। এ হলো লুবনা আমার কলেজের বন্ধু। আগেও এর কথা তোমায় বলেছিলাম তূবা।” কথা শেষে আহফিন বাঁকা হাসল।
তূবা দুই পা পিছিয়ে গেল। আহফিন লুবনার সাথে.. তূবার দম টা সেদিনের মতোই আটকে আসছিল। ঢোক গিলতে পারছিল না তূবা। ঠোঁট গুলি কাঁপছিল সাথে শরীরটাও। পলক কিছুতেই পড়ছিল না আহফিনের বাঁকা ঠোঁটের হাসি থেকে।
“কি হলো তূবা দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
তূবা যুদ্ধ করে যেন ঢোক টা গিলল। চোখের পানিটা মুছে ফেলে দৌড়ে তূবা উপরে উঠে গেল। আহফিনও সঙ্গেসঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ল। লুবনা কে বলল
“তুমি এখন যাও।”
“কেন আহফিন?”
“তোমাকে যেতে বলছি তো যাও।”
আহফিন ধমকে কথাটা বলল।
“এটা ঠিক হয়নি আহফিন। আমাকে আসতে বলে..”
“তুমি কি যাবে?”
আহফিন দৌড়ে উপরে উঠল। কিন্তু রুমে ঢুকার আগেই তূবা দরজা লাগিয়ে দিল। আহফিন হাজারবার ডাকলেও তূবা দরজা খুলেনি। ভেতরে বসে শব্দ করে কাঁদছে।
“দোহাই লাগে তূবা দরজা খুলো। তূবা।”
শতশত ডাক তূবা উপেক্ষা করে গেছে। আহফিন ইচ্ছা করে এমন টা করেছে এটা তার অজানা নয়।
“তূবা দেখলে তো কতটা কষ্ট হয়? বিশ্বাস করো আমি এমন টা চাই নি। খুব রেগে গিয়েছিলাম তখন। তাই এমনটা করে ফেলেছি। যা করেছি তোমাকে রিয়েলাইস করানোর জন্যে করেছি। আমাকে দয়া করে ভুল বুঝো না। প্লিজ তূবা। সরি।”
দরজার নিচে পাওয়া কাগজ টা পড়ে তূবা ছিড়ে সেটা ফেলে দিল। তারপর আবারও কাঁদতে লাগল।
রাত তখন ১১ টার উপরে। তূবা এখনো দরজা খুলেনি। আহফিন দরজার সামনে অনেকক্ষণ বসে ছিল। নিজের করা কাজটার জন্যে এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আহফিন অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
—-
সকালে তূবা আহফিন কে না জানিয়ে চলে গিয়েছে। আহফিন সারা বাড়িতে খুঁজে যখন তাকে পেল না তখন সে বুঝেছে তূবা চলে গেছে। এর একটু পরই তূবা একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আহফিনের কাছে। সে দ্রুত তা ওপেন করল। তাতে লেখা ছিল,
“আমি তুসির অপারেশনের পর বাড়ি ফিরব।”
সারাদিন বাদে রাতে আহফিন তূবাদের বাড়ি চলে গেল। আহফিন কে আসতে দেখে তূবা অবাক হলো। কিন্তু তেমন কিছু বলে নি। শিরিণ বেগম এসে বললেন
“জামাই বাবা তুমি কাইল এমনে গেছিলা গা যে?”
“আসলে মামুনি কাজ ছিল।”
“কয়দিন আমগো বাড়িতে থাকবা। একটু আদর যত্ন করনের সুযোগ দিও। না করতে পারবা না কিন্তু তাইলে রাগ করবাম।”
“আচ্ছা” হেসে বলল আহফিন।
তূবা তুসির কাছে গিয়ে বসে আছে। তুসির মাথায় তেল দিয়ে আচড়ে দিচ্ছে। আহফিন রুমে ঢুকে তূবার দিকে তাকাল। সে মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করছে। আহফিন গলা কাঁশল। এতেও তূবা তাকাল না আহফিনের দিকে। সে বিছানার এক পাশে গিয়ে বসল।
“তুসি কেমন আছো?”
“ভালো আছি ভাইয়া আপনি?”
“এই তো তোমার আপা যেমন রাখছে।”
এই কথা শুনে তুসি মাথা উপরে তুলে তূবার মুখ দেখল। তূবা বকুনি স্বরে বলল “নাড়াচাড়া করছিস কেন? চুপচাপ বসে থাক।”
তুসি বুঝতে পারল হয়তো তাদের মাঝে রাগ অভিমান হয়েছে।
“ভাইয়া আপনার মন কি ভালো নেই?”
“না তুসি। আমার মন তো তোমার আপার কাছেই।”
“তুসি বড় বেড়ে গেছিস। এত কথা বলিস কেন? ঠিক করে বেণি টা করতে দে।”
“দেখলে তো তোমার আপা কত পাষাণ।”
“আমি কথা বললেই তো আপা বকবে ভাইয়া।”
“বকবেই তো রাক্ষসনী যে।”
এই কথা শুনে তূবা আহফিনের দিকে তাকাল রাগান্বিত বড়বড় চোখ নিয়ে। আহফিন একবার দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল।
“দেখো না পেত্নীর মতো কি করে তাকিয়ে আছে কখন না ঘাড় মটকে দেয়।”
“….
তূবা রাগে ফুসফুস করছে। গাল গুলি ফুলে লাল হয়ে উঠছে। তাদের দুষ্টুমি দেখে তুসি মুচকি মুচকি হাসছে।
বেণি করা শেষ হতেই তুসি বাহানা ধরে চলে গেল। তূবা যেতে চাইলে আহফিন খপ করে হাত ধরে নেয়।
“কোথায় যাচ্ছো?”
“ছাড়ুন আমার হাত।”
“ছাড়ব কেন?”
“ছাড়ুন বলছি।”
“তুমি বললেই ছেড়ে দিতে হবে? তা তুমি কোন দেশের মন্ত্রী?”
তূবা বড় চোখ করে তাকাল আহফিনের দিকে। সে মিষ্টি করে হেসে তাকে জানাল
“ইশশ লাল স্টবেরি। মন চায় টুপ করে খেয়ে ফেলি।” তারপর আবার মুচকি হাসল। আহফিনের মুখ দেখে তূবার হাসি আসতে চাইলেও আটকে নিল সে। কাল যেটা করেছে আহফিন তা একদম ঠিক করে নি। সে না হয় পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে কিন্তু আহফিন কি করে ইচ্ছা করে জেনে বুঝে এমন টা করতে পারল? আহফিন ভাবান্তর তূবা কে হেচকা টানে কাছে নিয়ে এলো। দাঁড়িয়ে কোমর টেনে আনতেই তূবা ছুটার জন্যে ছটফট করতে লাগল।
“ও আমার পাখিরে!” বলে আহফিন তূবার ঠোঁটে ঠোঁট দেওয়ার আগেই শিরিণ বেগমের ডাক পরে।
“তূবা জামাইরে লইয়া খাইতে আয়।”
তূবা ঝাড়ি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে চলে গেল। মুচকি হেসে আহফিনও পিছুপিছু গেল।
রাতে তূবা ঘুমাবে তুসির সাথে আর আহফিন তূবার রুমে একা থাকবে। তূবার বিছানায় একা শুয়ে আছে আহফিন। অনেকক্ষণ ধরে ফোন টিপছে তূবা কে আসতে না দেখে ম্যাসেজ করল।
“আসো না কেন এখনো?”
ম্যাসেজ টা পড়ে তূবা রাগবে না হাসবে জানে না। কিন্তু দাঁত কিটে জবাব দিল।
“আসব না।”
“কেন? আমি একা ঘুমাব কি করে?”
“একাই ঘুমান না হলে জেগে থাকুন। আমি তুসির সাথে।”
“আরে আজব আমি তোমাকে ছাড়া ঘুমাব কি করে? না আছো তুমি না আছে কোলবালিশ। অন্তত একটা কোলবালিশ তো দিয়ে যাও।”
“আজ কোলবালিশ ছাড়াই ঘুমান।”
“প্লিজ লক্ষ্মী টা আমার সোনাপাখিটা দিয়ে যাও না।”
“পারব না বললাম তো।”
“ওই আসো না।”
তূবা আর কোনো রিপ্লে দেয় নি।
আহফিন একটু পর আবার ম্যাসেজ দিল।
“মাই ডিয়ার পানি নেই জগে। পানি তো দিয়ে যাবে?”
অনেকদিন পর আহফিনের কাছ থেকে “মাই ডিয়ার” শব্দটা শুনে তূবার মন টা খানিক নরম হয়ে গেল। তুসির কাছ থেকে আস্তে আস্তে উঠে এলো সে।
ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল টা নিয়ে তূবা নিজের ঘরে গেল। দরজা দিয়ে ঢুকার আগেই তার হাত চেঁপে টেনে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। দেওয়াল ঘেঁষে আহফিন তূবার কোমর চেঁপে রেখেছে। আরেক হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে তূবার যাওয়ার পথ আটকে দিয়েছে। ডিম লাইটের মৃদু আলোতে তূবা কে মোহনীয় লাগছিল। আহফিন তূবার মুখের খুব কাছে এসে ফিসফিস করে বলল
“মাই ডিয়ার সেই আসতেই হলো তো তোমাকে।”
“ছাড়ুন।”
“ইশশ বউ কে ছেড়ে দিব এই রাতে? তবে ঘুম কি করে হবে?”
“দেখুন বেশি হচ্ছে কিন্তু।”
“একটু বেশি হতেই দাও না। সাথে একটু রোমান্স।”
“একদম ভালো হবে না কিন্তু।”
“আমি যদি এখন তোমার ঠোঁটে কিস করি তাহলে কি হবে?”
“তাহলে ঠোঁটে কামোর খাবেন।” রেগে গিয়ে বলল তূবা।
“তাই? তাহলে তো একটু টেস্ট করতেই হয়। বেগমের ঠোঁটের স্পর্শে তো শিহরণের সাগরে ভেসেছি এবার না হয় ইঁদুর দাঁতের কামোর খেয়ে দেখি কেমন লাগে।”
আহফিন এগিয়েই আসছে ক্রশম তার দিকে। না পেরে সে চোখ বন্ধই করে নিল। আহফিনের উষ্ণ নিশ্বাসের ছুঁয়াতে বুঝতে পেল আহফিন তার খুব কাছে। আহফিন যেই না ঠোঁট ছু্য়ে দিবে তখনি তূবার কল এলো। তূবা ভয় নড়েচড়ে উঠল। আহফিন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
“এত রাতে কে কল দিয়েছে?”
তূবা একবার আহফিনের দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করল। ওপাশ থেকে কলদাতার আওয়াজ শুনেই তূবা ফোন টা কেটে দিল। আহফিন আবার জিজ্ঞেস করল।
“কে কল করেছিল তূব?”
“র রং নাম্বার।”
“দেখি দাও তো।”
“অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন।” বলে এক প্রকার পালিয়ে এলো তূবা সেখান থেকে। বিড়বিড় করে বলল
“মাফ করবেন আমাকে আহফিন। আমি আর ঝামেলা চাই না।”
আহফিন স্ট্রেচুর মতো শূন্যে চিন্তিত নয়নে তাকিয়ে তূবা কে নিয়ে ভাবতে লাগল।
চলবে♥
(এমনিতেই সময় পাই না লিখার তারউপর যদি আপনারা কোনো মন্তব্য না করেন তাহলে মনে হয় গল্প টা বন্ধ করে দেই)