সিঁথিতে এক গাঁদা সিঁদুর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সামনেই ভাবলেসহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমার সিঁথি রঙ্গিন করা লোকটা। স্কুল থেকে স্বরস্বতী পূজোতে এসেছিলাম বন্ধুদের সাথে। আচমকাই আমার সাথে এমন কিছু হবে বুঝতে পারি নি।
।স্যার ম্যাম এবং পূজোতে উপস্থিত থাকা সকল ছাত্র ছাত্রীরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।আমার সিঁথিতে রক্তের মতো লাল সিঁদুর লেপ্টে আছে।সরস্বতী মা আমার সাথে এটা কি করলেন?কি চাই তিনি।ছেলেটার হাত সিঁদুর এ ভর্তি। আজ স্কুলে সরস্বতী পুজো সব মেয়েরা শাড়ি পরে স্কুলে এসেছে। ছেলেরা পাঞ্জাবী। বেশ মজা করছিলাম।আরতি করতে গিয়ে কোথা থেকে এই ছেলেটা এসে সিঁদুর পড়িয়ে দিল। সবাই এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাত নীরবতা ভেঙে প্রধান শিক্ষক বলে উঠলেন
” এসব কি হচ্ছে? এটা স্কুল তোমাদের নাটক করার জায়গা নয়! আর এই ছেলে তুমি কে? আমাদের স্কুলের ছাত্র নয় তো তুমি।আর তুমি জানো সিঁদুর পড়ানোর মানে কি? আরতি তুই চিনিস ছেলেটাকে? ”
আমি কি বলব বুঝতে পারছি না।চোখ দিয়ে অশ্রুজল ঝরে চলেছে। মাথাটা ও ঘুরছে।ছেলেটার দিকে এক পলক তাকিয়ে স্যার এর দিকে তাকালাম। স্যার এর প্রশ্নের উত্তর দিতে মনে হচ্ছে কোনো বড়ো পরীক্ষা এটা। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম
”স্যার আমি ওনাকে চিনি না ”
বলেই ধপাস করে পড়ে গেলাম তারপর আর কিছু মনে নাই। যখন চোখ খুললাম দেখলাম মা বাবা দাভাই আর সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। আমি আমার রুমে। আমাকেই চোখ খুলতে দেখে সবাই অস্থির হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসলাম। মা আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
”তোর এখন কেমন লাগছে? ”
আমি মাথায় হাত রেখে বললাম
”ঠিক আছি আমি।”
”তুই ছেলেটা কে ভালোবাসিস সেটা আমাদের কে একবার বলেই তো পারতিস শুধু শুধু এত নাটক করার কি ছিল?”
আমি মা এর কথা শুনে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালাম। এসব কি বলছে মা? আমি কিছুটা রেগে বললাম
”কি সব বলছ? আমি ওই ছেলেকে ভালোবাসি না।আর কে বলল তোমাকে যে আমি ওই ছেলেকে ভালোবাসি।”
মা কিছু বলতে যাবে তখনই বাবা মা কে থামিয়ে বলল
”তোর জন্য আজ স্কুলের স্যার ম্যামদের সামনে আমাকে অপমান হতে হয়েছে। ভালোবাসিস যখন একবার এসে আমাকে বলতে পারতিস এতসব না করে ছিঃ তোকে আমার মেয়ে বলে পরিচয় দিতে বিবেকে বাধছে।”
”বাবা………
বাবা আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।হয়তো সবাই আমাকে ভুল বুঝছে।আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না ।কি হচ্ছে আমার সাথে এইসব।দাভাই আমার সামনাসামনি এসে ঠাসস করে এক চর বসিয়ে দিল আমার গালে আমি গালে হাত দিয়ে দাভাই এর দিকে তাকিয়ে আছি।দাভাই রাগি লুক নিয়ে চেঁচিয়ে বলল
” তোর থেকে এমন কিছু আশা করিনি চলে যা তোর ভালোবাসার সাথে।”
আমি কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম
”এই আপনি কে হ্যা কেনো আমার সাথে এমন করছেন? আমি তো আপনাকে চিনি না।প্লিজ সবাই কে বলুন আমি কিছু করিনি।”
ছেলেটা ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।জেনো মনে হচ্ছে আমার কোথায় সে খুব কষ্ট পেয়েছে।ছেলেটা আমার গালে হাত রেখে বলল
” কি বলছো আরু তুমি এমন কেনো করছো তুমিই তো আমাকে এইসব কথা করতে বলেছিলে। বলেছিলে তোমার পরিবার মানবে না তুমি এঈসব প্লান করেছিলে। বলেছিলে।আমাকে পাবার জন্য তুমি সব করতে পারবে।”
আমি ছেলেটার কথা শুনে আরো রেগে গেলাম মাথাটা গরম হয়ে গেল। কিসব বলছে ছেলেটা।
আমি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না ঠাসস করে চরিয়ে দিলাম। আর বললাম
”আমি আপনাকে চিনি না বলছি তো।চলে যান এখান থেকে।”
মা বিছানা থেকে উঠে এসে আমার সামনাসামনি দাঁড়ালো। হঠাত করে মা আমাকে চর মেরে দিল।
”লজ্জা করে না স্বামীর গায়ে হাত তুলতে। সবটা মেনে নিতে তোর প্রবলেম কোথায় হচ্ছে?”
”মা আমি …………
মা আমাকে থামিয়ে বলল
” দীপ্ত তুমি তোমার পরিবার কে নিয়ে কাল আমাদের বাড়িতে এসো। তোমাদের আবার নতুন করে বিয়ে দেবো।”
” আন্টি আরু আমার ওপর রাগ করে আছে।তাই ও এইসব অস্বীকার করছে।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ।”
”আরু যদি একবার আমাকে তোমার কথা বলতো তাহলে এতকিছু করতেই হতো না ।তোমার মতো হীরের টুকরো ছেলেকে কে না মেয়ের জামাই করতে চাইবে না।”
”আন্টি আজ তাহলে আসি আমি।”
”ঠিক আছে সাবধানে যাও।”
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মা আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আরতি সেন আরু পরিবারের দুষ্টু মেয়ে এবং আদরের মেয়ে।আরুর দাভাই আদিত্য সেন আদি কলেজে পড়ে।আরু স্কুলে 12 এ পড়ে এইবার উঠেছে সামনেবার HS দেবে।
প্রদীপ্ত চ্যাটার্জি একজন বড়ো নাম করা ডাক্তার।নিজের হসপিটাল আছে বাবা মা এর একমাত্র ছেলে। মুম্বই এ থাকতো আগে এখন কলকাতায় থাকে।
______
আরু এখনো রুমে বসে আছে রুম অন্ধকার করে।খুব কাঁদছে। হঠাত করে কি সব হয়ে গেলো রাধাকৃষ্ণ কি চাই তার থেকে?কেনো এমন পরীক্ষায় ফেলল তাকে? কত মজা করছিল সকালে। বন্ধুদের সাথে। কোথা থেকে কি হয়ে গেল।আরু ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে গেলো রুমের লাইট টা অন করল। আয়নায় নিজেকে দেখছে লাল সিঁদুরে লেপ্টে আছে তার সিঁথি। আরু নিজেকে দেখছে। হঠাত আরু চেঁচিয়ে নিজেকে বলতে লাগল
”মানি না এ বিয়ে আমি।”
একটা কাপড় নিয়ে সিঁদুরটা জোরে জোরে মুছতে লাগে।কিন্তু সিঁদুর তো মুছেই না ।হঠাত রুমে আরুর মা মঙ্গলা দেবী এসে উপস্থিত হন।আরু কে দেখে উনি তাছিল্য হেসে বললেন
” চাইলেও তুই সিঁদুর মুছতে পারবি না। কারন মা সরস্বতী চেয়েছে এটা।বিধির বিধান। পাগলামো করেছেন সিঁদুর মুছতে যাস না এতে স্বামীর অকল্যাণ হবে। ভগবান যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন।খেয়ে নে।”
”মা তুমি বিশ্বাস করো …….
”আমি জানি তুই এসবের কিছুই জানিস না তবে ছেলেটা তোকে ভালোবাসে ।আর মা ও চেয়েছে তাই ছেলেটা হুট করে তোকে সিঁদুর পরিয়ে দিল।সবটা কাকতালীয় না ।বুঝলি।”
”মা তুমি এসব বলছো? আমি মানি না এই বিয়ে।”
দরজায় কেউ ঢুকতে ঢুকতে বলল
”মানতে তোমাকে হবেই …………………..
#বলব_কবে_ভালোবাসি
#পর্ব_০১
#Marufa_Yasmin
(কালকে এর গল্পটা ইডিট করতে গিয়ে কেমন করে ডিলিট হয়ে গেছে তাই ওটা আর লিখলাম না মনটাও খারাপ হয়েছিল।তাই এই নাম এ নতুন গল্প নিয়ে এলাম অন্য ধরনের ।আশা করি ভালো লাগবে। ভালো রেসপন্স পেলে এগাবো না হলে পরের পর্বে শেষ )
বাকি