বলব_কবে_ভালোবাসি পর্ব ২

#বলব_কবে_ভালোবাসি
#পর্ব_০২
#Marufa_Yasmin

”মানতে তোমাকে হবেই আরু!মা সরস্বতীর সামনে তোমাদের বিয়ে হয়েছে। সেটা কে না মানলে ঘোর অমঙ্গল হবে।আর তুমি তো জানো আমাদের পরিবার কতটা ধর্ম প্রেমি। কিছুতেই আমি আমার পরিবারের অমঙ্গল হতে দেবো না ।তাতে যদি তোমাকে জোর করে ছেলেটার সাথে পাঠাতে হয় আমি তাই পাঠাবো।”

দরজায় দাঁড়িয়ে কঠর কন্ঠে কথা গুলো বললেন জগদীশ সেন। মঙ্গলা দেবী আর আরু জগদীশ বাবুর দিকে তাকিয়ে আছে।আরুর চোখ ছলছল করছে ।তার নিজের পরিবার ও তার সাথে এমন করছে ।আরু আর কিছু বলল না কারন সে জানে কিছু বলেও লাভ হবে না।তাই সে গম্ভীর মুখ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে উঠে আরু। ছাদে ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে জানুয়ারি মাস ঠান্ডাটা বেশ পড়েছে। উত্তরে বাতাস বইছে। ছাদে নানারকমের ফুল গাছ লাগানো। সেগুলো হাওয়ার সাথে দুলছে।আরুর মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল। পরিবেশটা দেখে।
আরুর মন খারাপ থাকলেই সে ছাদে আসে।
আরুর একটা সুন্দর টিয়া পাখি আছে। টিয়া গোলাপ গাছের ওপর বসে আছে। আরু কে সে খুব ভালো করেই চিনে। আরুর মন খারাপ থাকলে আরু টিযার সাথে কথা বলে। আরু টিয়া কে হাতে নিয়ে দোলনায বসে। মলিন হেসে আরু টিয়া কে বলল

” টিয়া জানিস মা সরস্বতী আমার সাথে খুব অন্যায় করলো। এভাবে কি বিয়ে হয় কত স্বপ্ন ছিল আমার বিয়ে নিয়ে।সারা বছর পড়তাম তখন একটু ও বুদ্ধি দেয়নি পড়ার জন্য আর এখন আবার বিয়ে দিয়ে দিল। ও মা সরস্বতী তুমি এমন কেনো করলে? বাচ্চা মেয়ের গলায় একটা বম্ব দত্যি চাপিয়ে দিলে।ঠিক আছে বিয়েটা দিলে দিলে কিন্তু আমি ওই ছেলেটাকে মানবো, না বর বলে।”

আরুর বেশ ঠান্ডা করছে তাই সে টিয়া কে নিয়ে নিচে চলে যায়। বসার ঘরে কেউ নেই। আরু বেশ অবাক হয় সবাই গেলো কোথায়।আরু এক পা এক পা করে রান্নাঘরে যায় সেখানে তার মা কে দেখতে পাই না।আদির রুমে যায় সেও নাই।আরুর বেশ টেনশন হচ্ছে ।তাড়াতাড়ি করে রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।তারপর আদি কে কল করে।
আদি কলটা রিসিভ করতেই আরু বলে উঠে

”দাভাই মা বাবা কোথায় রে ?কেউ বাড়িতে নেয়।”

ওপাশ থেকে আদি বলল

” আমারা সবাই শপিং করতে এসেছি।তুই খেয়ে রেস্ট নে না হলে টিভি দেখ।”

”কিন্তু ………….

আরু কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদি ফোনটা কেটে দেয়।আরুর খুব রাগ লাগে।ফোনটা টেবিলে রেখে সে টিভি অন করে সোফায় বসে টিভি দেখতে লাগল।

______________

অন্য দিকে একজন অন্ধকার রুমে বসে কেঁদে চলেছে।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারলো না । কত প্লান করেছিল আরু কে প্রপোজ করবে বলে। কিন্ত কি থেকে কি হয়ে গেলো সেই ক্লাস ফাইভ থেকে আরুর সাথে বন্ধুত্ব তার। এই বন্ধুত্ব থেকেই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু আরু কে বলে উঠতে পারেনি। যখন বলবে বলে ঠিক করল তখন আরু অন্য কারো হয়ে গেলো।খুব কাঁদছে হৃদয়।অনেক দেরী করে ফেলছে সে।

বাইরে থেকে হৃদয়ের মা ডাকাডাকি করছে কিন্ত হৃদয় দরজা খুলছে না। হৃদয়ের পরিবার বেশ চিন্তায় পরে গেলো।হৃদয়ের মা তাড়াতাড়ি করে তার স্বামী কে ডাকলেন।কন্না জড়িত কন্ঠে বললেন

”দেখো না হৃদ দরজা খুলছে না ।”

হৃদয়ের বাবা দরজায় কয় একটা টোকা দিয়ে বললেন

”হৃদ দরজা খুল। কি হয়েছে তোর? ”

হৃদ দরজা খুলে বাইরে আসে তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি সে ঘুমঘুম চোখ নিয়ে বলল

”কি হয়েছে বাপি? ঘুমাচাছিলাম ডাকছো কেনো?”

হৃদ এর বাবা তার। মায়ের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

” সব সময়ই উল্টো পাল্টা চিন্তা তোমার। ছেলে পরে পরে ঘুম দিচ্ছে।আর মা চিন্তায় শেষ।”

উনি চলে যায়। তবে হৃদ মা এর মনটা কেমন করছে তার মনে হচ্ছে।তার ছেলের কিছু হয়েছে।হৃদ তার মা কে ভাবতে দেখে বলল

”মা কি ভাবছো? আমার জন্য খাবার নিয়ে এসো।”

”হুম যাচ্ছি ”

হৃদ এর মা রান্নাঘরে চলে গেলেন ছেলের খাবার আনতে।
হৃদ মলিন হেসে রুমে ঢুকে গেলো

__________

কলিং বেল এর আওয়াজ পেয়ে আরু দরজা খুলতে গেলো সোফা থেকে উঠে। দরজা খুলে দেই।
দরজা খুলে দেখে আদি তার বাবা মা সবার হাতে অনেক ব্যাগ।আরু মুখ গমড়া করে নিজের রুমে চলে যায়।রুমে যেতেই দেখে।ফোনটা বাজছে।অচেনা নম্বর থেকে কল।আরু কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল ……….

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা মরমের মূল পথ ধরে

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ
ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ

দিও তোমার মালা খানি
বাউল এর এই মন টা রে

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি

আরু না চাইতেও তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো ”হৃদ”

ওপাশ থেকে হৃদ বলল

”কি ভাবে বুঝলি আমি? ”

”জানা নেয়।হয়তো তোর গান শুনে তোর গান শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।জানিস হৃদ বাড়িতে আমার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না।তুই বিশ্বাস কর আমি ওই ছেলেটাকে ভালোবাসি না চিনি ও না”

”তাহলে কাকে ভালোবাসিস?”

”জানি না রে।”

”আচ্ছা চিন্তা করিস না। রেস্ট নে।”

”ওকে ।”

হৃদ আর নিজের কষ্ট বাড়ালো না কলটা কেটে দিল।তখনই হৃদ এর কাঁধে কেউ হাত রাখে হৃদ চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখে……..

বাকি

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here