#বলব_কবে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৩
#Marufa_Yasmin
হৃদ আর নিজের কষ্ট বাড়ালো না কলটা কেটে দিল।তখনই হৃদ এর কাঁধে কেউ হাত রাখে হৃদ চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখে……..
তার মা হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
হৃদয়ের বুক কাঁপছে।হৃদ ভাবছে তার মা সবটা শুনে ফেলল নাকি?কিন্তু কি করে সে এমন কোনো কথা বলেনি। জাস্ট কথা বলেছে আরুর সাথে মা বুঝেনি হৃদ এর মা হৃদ কে ভাবতে দেখে বললেন
”আমি জানি তুই কি ভাবছিস।ভাবছিস তোর কথা গুলো আমি শুনে ফেললাম নাকি।আমি জানি তুই আরু কে ভালোবাসিস।পাগলটা আরু কে আমার ও পছন্দ। তুই ওকে তোর মনের কথাটা খুলে বলে দে এত কষ্ট না পেয়ে। আমার বিশ্বাস আরু ও তোকে ভালোবাসে।”
হৃদ আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না তার মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। তার মা হৃদ এর কান্নার কারণ বুঝতে পারছেন না।হৃদ কাঁদতে কাঁদতে বলল
”মা আমি অনেক দেরী করে ফেলেছি।আরু অন্য কারো হয়ে গেছে। ও আর কখনো আমার হবে না।আরু এখন অন্য কারো স্ত্রী মা।আমি আমার আরু কে সারাজীবন এর মতো হারিয়ে ফেলেছি মা। অনেক দেরি করে ফেলেছি।আমি যদি আগেই বলে দিতাম আর বলেই বা কি হতো ছেলেটা তো ওকে সিঁদুর পড়িয়ে দিয়েছিল………
হৃদ আর কথা বলতে পারছে না কেঁদে চলেছে।হৃদ এর কান্নায় তার মা এর চোখেও পানি চলে আসে।
হৃদয়ের বুকে কেমন জেনো ব্যাথা করছে।হয়তো এটা ভালোবাসা হারানোর ব্যথা। আবিরা দেবী ছেলেকে কি বলে শান্তনা দেবে তা ওনার জানা নেই।হৃদ আরু কে এত ভালোবাসতো।হৃদ আবিরা দেবী কে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদে চলেছে।আবিরা দেবী চোখের জল মুছে হৃদ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন ।
” হৃদ ঠাকুর হয়তো এটাই চেয়েছেন।তাই এমন হয়েছে এত ভেঙ্গে পরিস না।বিধির বিধান সবাই কে মানতে হয়।নিজেকে সামলেনে।তুই ছাড়া আমার আর তোর বাপির কে আছে বল?তুই এভাবে ভেঙ্গে পড়লে আমাদের কি হবে? ”
”মা আমি পারছি না আরু কে ভুলতে।”
”ভুলতে কে বলেছে? তাকে তুই মনে রাখ।তোর মনের এক কোনে রেখে দে।সব জিনিসই তো কপালে থাকে না।”
কথাটা বলে আবিরা দেবি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ছেলের কষ্ট আর দেখতে পারছেন না।হৃদ বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগে।ভালোবাসা না পাওয়ার বেদনা তো সেই জানে যে ভালোবাসা পাইনি। এই বেদনা যে কি সেটা সবাই বোঝে না।
_________
শীতের সকালের সূর্য এর আলো এসে আরুর চোখে পড়তে।আরু দু’হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেয়।আরু কে দেখে মনে হচ্ছে ঘুমন্ত পরি। বিছানায় উঠে বসে আরু।চোখ কচলাতে কচলাতে বাথরুমে যায় ফ্রেশ হতে।
মঙ্গলা দেবী হন্তদন্ত হয়ে আরুর রুমে ঢুকে আলমারি থেকে হলুদ আর লালে একটা শাড়ি বের করে আরুর বিছানায় রাখেন।আর বিছানাটা গুছিয়ে দেন।আরু ফ্রেশ হয়ে বেরতেই রুমে তার মাকে দেখে গম্ভীর হয়ে বলল
”সকাল সকাল আমার রুমে কি মনে করে? ”
”বাড়িতে আজ পূজো আছে প্রদীপ্ত এর পরিবার ও আসবে।একসাথে পূজো ও হবে আর বিয়ের কথাবার্তাও হয়ে যাবে।এই শাড়িটা রেখে গেলাম তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ঠাকুর ঘরে আয়।”
মঙ্গলা দেবী রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আরু বিরক্তি নিয়ে বিছানায় বসে পড়ে কপালে মারতে মারতে বলল
”পরেছি কোন ঝামেলায়।ভগবান তুমি বাঁচাও আমায়। পারছি না আর নিতে এত কান্ড। ধ্যাত ভালো লাগে না।কি আর করবি আরু তোর কপাল পোড়া। যাই শাড়িটা পরে রেডি হয়ে যায়।”
আরু আয়নার সামনে যায়।নিজের দিকে তাকায়।লাল টকটকে সিঁদুরটা এখনো সিঁথিতে লেপ্টে আছে।আরু। দরজাটা লক করে শাড়িটা পরে নেয়।হাতে লাল চুরি ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।বড়ো বড়ো চোখে গাঢ় করে কাজল।চুলটা ছাড়া মাঝে সিঁথি করে সরু করে সিঁদুরটা লাগিয়ে নেয়।আরু কে দেখে মনে হচ্ছে মা দুর্গা ধরিত্রীর বুকে মানুষ রুপে নেমে এসেছে।
নিজেকে আয়নায় ভালো করে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরু।বসার রুমে যেতেই দেখে দীপ্ত ও তার পরিবার সোফায় বসে আছে।তাদের সাথে জগদীশ বাবু কথা বলছেন।আরু ওইদিকে পাত্তা না দিয়ে ঠাকুর ঘরে যেতে নিলে জগদীশ বাবু পেছন থেকে আরু কে ডাকলেন
”আরু এই দিকে আয় দীপ্তর পরিবার এসেছে প্রণাম কর।”
আরু মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে দীপ্তর বাবা মা কে প্রণাম করে।দিপ্তর মা আরুর মাথায় হাত দিয়ে বললেন
”বেঁচে থাকো মা। সুখি হও।”
আরু কে পাশে বসায়।দীপ্তর মা।
কিছুখন পর পূজো শুরু হয়।দীপ্ত আর আরু মিলে অঞ্জলি দেয়।না চাওয়ার সত্ত্বেও।পূজো শেষে।আরু ছাদে চলে যায়।কনকনে ঠান্ডা।আর শুধু একটা শাড়ি পরে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।আদি দিপ্ত কে জোর করে ছাদে পাঠায়।শিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতেই দেখে আরু ছাদে দাঁড়িয়ে।দীপ্ত আরুর কাছে গিয়ে বলে উঠে
”কি এত ভাবছেন? ”
আরু পেছনে ঘুরে দেখে দীপ্ত মুখ ভেংচি দিয়ে বলল
”আমাকে কেনো বলব?আর আপনি আমার সাথে কেনো এমন করছেন?আমি কি সত্যিই কোনোদিন আপনাকে বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি? আমি তো আপনাকে চিনি ও না। কেনো আমার লাইফের একশোটা বাজাচ্ছেন? এমনি তেই আমি অনেক টেনশনে থাকি।”
”কিসের টেনশন? আচ্ছা আপনি আমার সম্পর্কে জানেন? ”
”ইচ্ছে নাই ।”
”আমি প্রদীপ্ত চ্যাটার্জি বাবা মা এর একমাত্র ছেলে এই কিছুদিন আগে পরীক্ষা দিয়ে এমবিবিএস পেয়েছি। এখন ….
”এই থামুন এত কিছু জেনে আমার লাভ নেই।”
আরু চলে যেতে নিলে দীপ্ত ল্যাং মেরে ফেলে দেয়।আরু কে আরু ধাপাস করে পরে যায় আরু দিপ্তর হাত ধরে ফেলে দেয়।আরু আহহহ করে উঠে। দিপ্ত রেগে যায়। রেগে উঠে দাঁড়ায়। আরু তাড়াতাড়ি করে ছুটে পালাতে যাবে ওমনি ……….. দিপ্ত পেছন থেকে আরুর হাত ধরে নেয়।আরু রাগে গজগজ করতে করতে বলল
”প্রবলেম টা কি আপনার? আমার হাত ধরেন কোন সাহসে? ”
দীপ্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল
”সাহস কি করে হয় আমাকে ফেলার? ”
”আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ল্যাং মাড়ার ?”
”বেশ করেছি আমাকে ইগনোর করার ফল।”
”বেশ করেছি আমাকে ফেলে দেওয়ার ফল।”
দিপ্ত রেগে গিয়ে ………
(ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন তবুও খারাপ মন্তব্য করবেন না।হিন্দু ধর্মের গল্প বলে মানুষ এতটা কথা শোনাবে ভাবিনি ।কেমন লাগলো জানাবেন)
বাকি