#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১০
,
,
অপুকে হা করে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নোমান সতর্কতামূলক কাশি দেয়।
অপু হতচকিত হয়ে ওঠে।
চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ায়।
নোমান গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
—সামনে থেকে সরো।
অপু কথাটা বুঝে ওঠে না।মাথা উচু করে নোমানের চোখের দিকে তাকায়।
নোমান বিরক্ত হয়।ভাবে মেয়েটা কি বয়রা নাকি?
জোরে বলে ওঠে,
—কি হলো সরো,দরজার সামনে থেকে সরে দাড়াও।
দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকলে ভিতরে যাবো কি করে।
অপু তার বোকামো বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়াতে যায়,তাড়াহুড়ো করার ফলে শাড়িতে পা বেধে পরে যেতে যায়।
নোমান তার বলিষ্ঠ হাত দিয়ে অপুকে আগলে ধরে।নিচে পরা থেকে বাচায়।
অপু চোখমুখ বুজে ভয়ে বিরবির করে।
নোমানের শার্ট খামচে ধরে।
নোমান বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে শার্ট ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
অপুর মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।
এমন মায়াবী মুখশ্রী দেখে কেমন যেন সব ওলট পালট লাগে নোমানের।
গোলাপী ঠোঁট দুটো বিরবির করায় কেমন কেঁপে কেঁপে ওঠে।
একটু ছুয়ে দেওয়ার আশায় নোমান হাত বাড়ায়।
পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয়।
সে কোন মেয়ের পাতানো ফাঁদে পা দিতে চায়না।বাবা যে ভুল করেছিলো সে ভুল নোমান করতে চায়না।
মেয়েরা যে মায়া দিয়ে বশ করে সেকথা মনে গেথে রেখেছে যে নোমান।
অপুকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ায় সে।
অপুও সোজা হয়।
ভয়ে ভয়ে নোমানের দিকে তাকায় তার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য কিন্তু তার আর সুযোগ হয়না।
নোমান অপুকে ছেড়ে হাটা শুরু করে।
অপু মনের ভেতর হাজার পরিমান সাহস সঞ্চয় করে বলে,
—এই যে শুনছেন?
নোমান থমকায়।তার বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে।
ডাকটার ভেতর একটা বউ বউ আভাস পায় সে।
পেছন ফিরে ঘুরে দাড়ায়।
অপু কিছু বলার আগেই গম্ভীর হয়ে বলে,
—এভাবে আমাকে কখনো ডাকবেনা।
অপু অবাক হয়।সে আবার কিভাবে ডাকলো?
—কিভাবে?
—এখন যেভাবে ডাকলে,সেইভাবে।
—কেনো?
নোমান এবার রাগী গলায় ধমকে ওঠে।
—ডাকবেনা মানে ডাকবেনা,আমি বলেছি তাই।
অপু ঘাড় কাত করে।
—আর কথায় কথায় এমন মাথা নাড়িয়ে জবাব দেবেনা।
অপু আবার ঘাড় নাড়ায়। পরক্ষনে জিভে কামড় দেয়।
নোমান বলে,
—কি জন্য ডেকেছিলে?
অপু আমতাআমতা করে,
—মানে আপনি ডিনার করবেন না?
নোমান রাগী চোখে তাকায়।অপু ভয়ে গুটিশুটি মেরে যায়।
—আমার ব্যাপারে তোমার না ভাবলেও চলবে।
কথাটা বলে নোমান দাড়ায় না।সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।
অপু দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে ডাইনিং এ আসে।
সব খাবার গুছিয়ে ফ্রিজে তুলে রাখে।
এতক্ষণ ধরে বসে থাকতে থাকতে খাওয়ার ইচ্ছেটা তার মরে গেছে।
রুমে ফিরে যাওয়ার পথে রুপু থমকে দাড়ায়।
আরমান খানের ঘর থেকে চাপা চিৎকারের আওয়াজ আসে।
নোমানের গলা শুনেই অপু চিনতে পারে।
অপু বোঝে আরমান খান কিছু বোঝাচ্ছে নোমানকে।
কিন্তু নোমান বুঝছেনা।
অপু দাড়ায়না,সামনে এগোনোর জন্য পা বাড়ায়।
কারো কথা আড়ালে দাঁড়িয়ে চুপিচুপি শোনার মেয়ে অপু নয়।
হাটতে গিয়ে একটা কথা কানে আসে, পা যেনো আপনাআপনি থেমে যায়।
নোমান আরমান খানকে বলছে,
—আমি কালই চলে যাবো,এবং যাবোই।তুমি কোনভাবেই বাধা দিতে পারোনা।
তুমি বলেছিলে তুমি আমার কাছে শুধু একটা জিনিস চাইবে,আর সেটা হচ্ছে আমার বিয়ে।
—তাই বলে বিয়ে করে একটা মেয়েকে তুমি এভাবে ফেলে চলে যাবে?
তুমি আমার সাথে,রিচির সাথে এক বাড়িতে থাকতে চাওনা,ঠিক আছে থেকোনা।আলাদা বাড়িতে থাকো তুমি,সেইখানে চলে যেতে চাইছো?আচ্ছা ঠিক আছে তাও মানলাম।কিন্তু অপুকে তোমার সাথে নিয়ে যাও।তাকে কেনো সাথে নিবেনা?
নোমান কাঠ কাঠ গলায় উত্তর দেয়,
—কারন আমার কাজ ছিলো তোমার কথা রাখতে বিয়ে করা।
শেষ!বিয়ে তো করেছি।
এখন এই মেয়েকে নিয়ে তোমরা যা ইচ্ছে করো।
—বললেই তো হয়না নোমান,বিয়ে করছো আর তোমার দায়িত্ব শেষ?মেয়েটার ওপর তোমার কোন দায়িত্ব নেই?
—না।
—নোমান!
—আমার উপর কোন জোর করবেনা বাবা,সে অধিকার তোমার নেই।
বিয়েটা করে শুধুমাত্র বাবা হিসেবে তোমার একটা ইচ্ছে পুরন করেছি।
দ্যাটস্ ইট।
আরমান খান আর কোন কথা খুজে পাননা।
তবু একবার বলেন,
—কিন্তু মেয়েটা…
কথা শেষ হওয়ার আগেই নোমান বলে,
—টাকা দিয়ে বিদেয় করে দাও।
ওসব রাস্তার মেয়েরা টাকা পেলেই খুশি।
অপু আর সেখানে দাড়ায় না।
একছুটে রুমে চলে আসে।
ওয়াশরুমে ঢুকে কল চালু করে।
ডুকরে কেঁদে ওঠে।
বুকের ভারী পাথরের মতো কষ্টগুলো নরম হয়ে পানীয় আকারে চোখ বেয়ে নেমে আসে।
নিজের কাছে এতো ছোট মনে নিজেকে।
জঘন্য কীটের মতো লাগে জিবনটাকে।
ভাবে এক নিমেষে শেষ করে দেয় এই জঘন্য কীটটাকে।
বেসিনের পাশের ব্লেড নিয়ে হাতে নেয়।
একহাত দিয়ে আরেকহাতের শিরা বরাবর ব্লেড তাক করে।
চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নেয়।
পরক্ষনেই মায়ের মুখটা চোখের উপর ভেসে ওঠে।
অপুর কিছু হলে তার মায়ের কি হবে?
মাকে কে দেখবে?
মায়ের জন্যই তো এতো বড় বলিদান দিলো অপু।
নিজেকে নিজে বোঝায় অপু।
তাছাড়া আত্মহত্যা মহাপাপ।
এতো বড় পাপ কেনো করবে অপু?ওই রাগী বদমেজাজি লোকটার জন্য?
নাহ,এমনটা অপু কিছুতেই করবেনা।
ওই লোকটাকে ছাড়াই অপু ভালো থাকবে।খুব খুব ভালো থাকবে।
চোখ মুখে পানি দিয়ে নিজেকে নিজে বুঝ দেয়।
কান্নার ফলে চোখ মুখ ফুলে গেছে।কেমন গুলুমুলু লাগছে দেখতে।
দুহাত দিয়ে চুল ঠিক করে বড় বড় নিশ্বাস নেয়।
নিজেকে সামলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।
,
,
,
চলবে…..