বসন্ত এসে গেছে পর্ব ১১

#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১১

,

,

আজও অপুর ঘুম থেকে উঠতে বেশ বেলা হয়ে যায়।
অপু উঠে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে।
নিজেকে ইচ্ছে মতো বকে।
আজও তার ফজরের নামাজটা কাজা হয়ে গেলো ভাবতেই কান্না পায়।
ফ্রেশ হয়ে কাজা নামাজটা পরে ঘরে এদিকওদিক উকি দেয়।
নোমানকে দেখতে পায়না,ওয়াশরুমেও নেই তাহলে গেলোটা কোথায়?
এতো সকাল সকাল তো উনি নাকি ঘুম থেকে ওঠেন না।
অপু সারাবাড়িময় খোঁজে নোমানকে,
কিন্তু পায়না।
নিচে নেমে কিচেনে যায়।
কিছুক্ষণ রুজি আর নয়না খালার হাতে হাতে নাস্তা বানায়।
যদিও তারা অপুকে কাজ করতে দিতে চায়নি তবুও অপু জোর করে কাজ করে।
নাস্তা টেবিলে সাজায়।
সবাই ডাইনিং রুমে বসে ব্রেকফাস্ট করে নেয় শুধু নোমান ছাড়া।
সে তার সৎ মা অর্থাৎ মিসেস রিচির সাথে এক টেবিলে বসে খাবেনা।
অপুও খায়না,সে রুজি আর নয়না খালার সাথে খাবে।
সবার খাওয়া শেষ হলে নোমান রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে।
সুট কোট পরে অফিসের জন্য একেবারে রেডি হয়ে।
অপু নাস্তা সাজায়,কিন্তু নোমান সেদিকে ফিরেও তাকায়না।
সে গটগট করে হেটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
অপুর একবার নোমানকে ডাকতে ইচ্ছে করে।
বলতে ইচ্ছে করে,না খেয়ে যাবেননা।
কিন্তু বলা হয় না।
শুধু শুধু সেধে অপমানিত হতে চায় না অপু।

,

,

সারাটাদিন অপুর কাটে ব্যস্ততায়।
মিসেস রিচি অপুকে এই কাজ সেই কাজের আদেশ দিতে দিতে খাটিয়ে মারে।
অপুকে পেয়ে সে বেজায় খুশি।তার মতে রুজি আর নয়নার সাথে নতুন এক কাজের লোক পাওয়া গেছে। নোমানকে সে হাড়ে হাড়ে চেনে,নোমান যে এ মেয়েকে নিয়ে সংসার করবে সেকথাও মিসেস রিচি ঠিক বুঝতে পেরেছে।
অপুও কোন বিরোধিতা করেনা।
কাজ করা তার অভ্যাস আছে।
আরমান খান এসবের কিছুই টের পাননা।
বছরের বেশিরভাগ সময়ই তিনি অসুস্থ থাকেন।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়েবিটিস সহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি।
আর সাথে তো আছেই অনুতাপের যন্ত্রনা।
এতেই যেনো আরও অসুস্থ হয়ে পরেছেন তিনি।

সারাবেলা কাজ করে বিকেলে অপু রুমে আসে।
বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়।
ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে।
ঘুম ভাঙে ফোনের রিংটোনের শব্দে।
সকালে আরমান খান অপুকে একটি ফোন দিয়েছিলেন।
সেটার শব্দ শুনে অপু হাতে তুলে নেয়।
দেখে ভাইয়ার নামটা জ্বলজ্বল করছে।
খুশিতে আত্মহারা হয়ে অপু ফোন রিসিভ করে।
বলে,

—হ্যালো,আসসালামু ওয়ালাইকুম।
ভাইয়া?

ওপাশ থেকে ভাইয়ের কথা শুনে থমকে যায় অপু।
অনিক বিরক্তি মাখা স্বরে বলে,

—-উফফ্,বিয়ে দিয়েছি ভাবলাম ঝামেলা গেছে,তা না।প্রতিদিন দিন আমার ফোনের টাকা ফুরিয়ে ঢং করতে হবে।
কই নাও ধরো।

ওপাশ থেকে ভাইয়ের কন্ঠের পরিবর্তে আলেয়া বেগমের কন্ঠ শোনা যায়।বলেন,

—অপু।

অপু উত্তেজিত হয়ে পরে।অতিরিক্ত উত্তেজনায় গলা আটকে আসে।
বলে,

—মা!
তুমি ভালো আছো মা?তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো মা?ওরা কি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে?নাকি একটু দেখাশোনা করে মা?
আর অপারেশন কবে করাবে?

আলেয়া বেগম হেসে ফেলেন।
হাসতে হাসতে বলেন,

—এসব তো তোকে আমার বলার কথা।তার বদলে তুই বলছিস?

অপু কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

—উফ্ বলোনা মা।

—আমি ভালো আছি।কোন অসুবিধা হচ্ছে না আমার।অপারেশন করাবে কিছুদিন পর।
আর তুই?তুই ভালো আছিস তো মা?
ওখানে সবাই কেমন রে?ভালো তো?আর তোর জামাই? সে কেমন?

কিছুক্ষণ থেমে আবার বলেন,

অনিক এভাবে টাকার জন্য তোকে বিয়ে দিয়ে দেবে আমি ভাবতে পারিনি অপু।আমার ভাবতেও অবাক লাগে ও কি আমার পেটে ছিলো?ও কি সত্যিই আমার সেই অনিক?
নিজের বোনটাকে….

আর কিছু বলতে পারেন না আলেয়া বেগম।মুখে আঁচল চেপে কেঁদে ফেলেন।
পাশ থেকে ভাবির গলার আওয়াজ শুনতে পায় অপু।সে বলে,

—দেখো গো দেখো,তোমার মা তোমার নামে দুর্নাম শুরু করে দিয়েছে মেয়ের কাছে।
কাদের জন্য দিনরাত খেটে মরছো তুমি?কাদের পেছনে টাকা খরচ করো?
মেয়েটাকে এতো ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছে,কোথায়,ছেলের সুনাম করবে তা না।
আরে এতো বড় ঘরে মেয়ের বিয়ে দিতে পারতেন কখনো?

অপু চুপ করে শোনে ফোনের এপাশে বসে।
সে ঠিক বুঝতে পারে তার মা ভালো নেই।
অমানুষদের মাঝে কোন মানুষ ভালো থাকতে পারেনা।
অপু ভাবে তাকে একটা চাকরী জোগাড় করতে হবে।
তাহলে মাকে নিয়ে সে আর তার মা কোথাও থাকতে পারবে আলাদা।
চাকরী না পেলে অপু কোথায় যাবে মাকে নিয়ে?এ বাড়ি থেকেও এখন যেতে পারবেনা সে।
ভাইয়ের সংসারে অপু আর যেতে চায়না।
তারচেয়ে ভালো চাকরীর চেষ্টা করা যাক।

মায়ের সাথে আরেকটু কথা বলে ফোন রাখে অপু।
নিচে নেমে রুজি আর নয়নার সাথে গল্প করে।
রাতে সবাইকে খাইয়ে অপু নোমানের অপেক্ষা করে।
যদিও জানে নোমান এসব পছন্দ করেনা তবুও অপু অপেক্ষা করে।
ঘড়ির কাটা ১০ টা থেকে ১২ টায় পৌছায় তবু নোমান আসেনা।
রুজি ঘুম থেকে উঠে পানি খেতে ডাইনিংয়ে আসে।
দেখে অপু চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঝিমাচ্ছে।
সে অপুকে হালকা ধাক্কা দেয়।
বারকয়েক ধাক্কা দেওয়ার পর অপু চোখ খোলে।
নিভুনিভু চোখে রুজি কে দেখে বলে,

—কি হয়েছে খালা?আপনার ছোট স্যার কি এসেছেন?

রুজি টলমলে চোখে অপুর দিকে তাকায়।
বলে,

—ছোট স্যার তো এবাড়িতে আর আসবেন না মা।উনি তো নিজের বাড়িতে চলে গেছেন।

অপু তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ায়।
তার ঘুম যেন এক নিমিষে সূদুর দেশে পালায়।
কাল রাতের কথাগুলো অপুর মনে পরে।
সারাদিনের ব্যস্তায় অপু সেসব কথা ভুলতে বসেছিলো প্রায়।

নিজের চোখও জলে ভরে ওঠে।
মুচকি হেসে বলে,

—আর আসবেননা একথা কেনো বলেন খালা,উনি অবশ্যই আসবেন।
ঠিক আসবেন।
এটা আমার বিশ্বাস।

রুজি বেগম অবাক দৃষ্টিতে অপুকে দেখে।
চোখে অবহেলার জল আর মুখে বিশ্বাসী হাসি।
কি অদ্ভুত দেখায় অপুকে।

,

,

,

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here