বসন্ত এসে গেছে পর্ব ২২

#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ২২

,
,
নোমানের বাড়িটা বিশাল।এতো বড় বাড়ি যে অপুর চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।
কি বিশাল বাগান সামনে,কতো নাম না জানা গাছ,ফুল।
সাইডে সুইমিংপুল।কি সুন্দর দেখতে সেটা।

কালো জামা পরা সিকিউরিটি গার্ড দাড়ানো লাইন দিয়ে।
অপু কয়েকঘন্টা ধরে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে।
নোমান সেদিকে ডাকায় না।
গাড়ি থেকে নেমে সোজা ঘরে ঢুকে নিজের রুমে চলে যায়।
অপু চারিপাশে দেখতে দেখতে এগোয়।

নোমানের রুম খুজতে খুজতে হাপিয়ে যায় অপু।
এতো বড় বাড়িতে এতোগুলো রুমের ভিরে নোমানের রুম কি করে খুজে পাবে অপু?আশেপাশে তাকায় কাউকে জিজ্ঞেস করার জন্য।

এ বাড়িতে কাজের লোকের ছড়াছড়ি। সবাই একরকম জামা কাপড় পরে চুপচাপ নিজেদের কাজ করে চলেছে।
অপুর কাছে এদের রোবট রোবট লাগছে।
অপু কাউকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনা।
এমন রোবটমার্কা মানুষদের সাথে অপুর কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে সে।
একরুম একরুম করে উকি দিয়ে নোমানকে খোঁজে।
অনেক খুজে একটা রুমে নোমানকে পায়।
এতোটুকু টাইমের মাঝে নোমান গোসলও সেড়ে ফেলেছে।
একটা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে সে।
অপু দরজায় দাড়িয়ে নক করে।
নোমান সেদিকে তাকিয়ে আবার ল্যাপটপে নজর দেয়।সেদিকে তাকিয়েই বলে,

—ভেতরে এসো।

অপু রুমে ঢুকে একপাশে দাড়িয়ে থাকে।
কোথায় থাকবে, কি করবে বুঝতে পারেনা।
এমনকি অপু তো এটাও জানেনা যে এই রুমে সে নোমানের সাথে থাকবে কি না?নাকি তার জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা আছে।

অপুকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নোমান আবার বলে,

—কি ব্যাপার,দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।

—কিন্তু আমার জামা?

—ঐ কাবার্ডে আছে দেখো।

নোমানের ইশারা করা কাবার্ড থেকে অপু জামা বের করে।
কিন্তু এটা তো শাড়ি।অপু আরও খোজে।নাহ,একটাও থ্রি পিস বা,অন্য কোন জামা নেই।
সব শাড়ি।

অপু বলে,

—এখানে তো সব শাড়ি।

নোমান কাজ করতে করতেই বলে,

—হুমমম তো?

–না মানে একটাও থ্রি পিস নেই?শাড়ি পরতে আমি কমফোর্টেবল ফিল করিনা।

নোমান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে অপুর দিকে তাকায়।বলে,

—কমফোর্টেবল না হলেও অভ্যাস করে নাও।এখন থেকে তোমায়,সবসময় শাড়িই পরতে হবে।থ্রী পিস ইজ নট এলাউড।

অপু মুখ ভার করে।
লোকটা তাকে জোর করছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে অধিকার খাটাচ্ছে।
পরমুহূর্তে খুশিতে মনটা ভরে ওঠে তার।
নোমান তার উপর অধিকার ফলাচ্ছে?
তারমানে সে কি অপুকে মেনে নিয়েছে?
খুশি মনে শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোয়।
আবার কিছু মনে পরতেই ফিরে আসে।
কাবার্ড খুলে তন্ন তন্ন করে কিছু খোজে।
না পেয়ে হতাশ হয়।
নোমান সেদিকে আড়চোখে তাকায়।
বলে,

—কি খুজছো?

অপু নোমানের সামনে দাড়িয়ে মুখ ফুলায়।একহাতে শাড়ি ধরে সামনে বাড়িয়ে ধরে।

নোমানের কপাল কুঁচকে আসে আপনাআপনি। বলে,

—কি?শাড়ি দিচ্ছো কেনো আমায়?আমি কি করবো শাড়ি দিয়ে?

—শাড়ির সাথে আর জিনিসগুলো কই?

—আর জিনিস মানে?

—শাড়ির সাথে ব্লাউজ পেটিকোট লাগে,জানেননা?সেগুলো কোথায়?

নোমান মাথা চুলকায়।সে সত্যি জানতোনা।ভেবেছে হয়তো শাড়িই কিনতে হয়,সাথে যে এতোকিছু লাগে সেটা মনে নেই তার।
বলে,

—এখনকার মতো চালিয়ে নাও।
আমি কাউকে বলে এখনি ওগুলোর ব্যবস্থা করছি।

অপু শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

নোমান রুবেল কে ডাকে।
রুবেল তার সহকারী। নোমানের একডাকেই রুবেল হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে।
নোমান বলে,

—ব্লাউজ আর পেটিকোট লাগবে,নিয়ে এসো তো।

রুবেল হতভম্ব হয়।তার স্যার ব্লাউজ পেটিকোট দিয়ে কি করবে?

নোমান রুবেলের হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

—কি হলো যাও।

রুবেল আমতাআমতা করে।সাহস করে বলে,
–আপনার মাপের ব্লাউজ পেটিকোট আনবো স্যার?সত্যিই আনবো?

নোমান রেগে যায়।ধমক দিয়ে বলে,

—আমার জন্য নাকি ইডিয়ট, তোমার ম্যামের জন্য।
গর্দভ বেরোও আমার রুম থেকে।
আউট!

রুবেল বুঝতে পেরে আবুল মার্কা হাসি হাসে।নোমানের চিৎকার, ধমক তার গায়ে লাগেনা।এতোকাল ধরে এসব শুনতে শুনতে সে এখন অভ্যস্ত।
মুখে বলে,

—ওহহ,বুঝছি স্যার।আচ্ছা এখনি আনছি।

রুবেল বেরিয়ে যেতেই অপু ওয়াশরুম থেকে বেরোয়।শাড়ি এদিকওদিক টানাটানি করে সে।
নোমান সেদিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়।
গ্রামের মহিলাদের মতো শাড়ি পরেছে অপু।
চুল একপেশে করে রেখেছে সে।
চুল থেকে টপটপ পানি ঝরছে।
নোমান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
অপু বিষয়টা লক্ষ করে লজ্জায় নুয়ে পরে।
নোমানকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে হুট করে পেছোন ঘোরে সে।

নোমান আবারও থমকায়।অপুর উন্মুক্ত খোলা পিঠের উজ্জলতায় চোখ ঝলছে আসে যেনো।হার্টবিট দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়।
শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়।হাত পা জমে আসে।
ছুয়ে দেওয়ার আশায় ভেতরটা আকুপাকু করে।পিছনে ফিরতে গিয়ে আবার ফিরে আসে,।ফট করে চুমু খেয়ে নেয় সে পিঠে।

অপু বুঝে উঠে পেছন ঘুরার আগেই গটগট পায়ে হেটে রুম থেকে বেরিয়ে যায় নোমান।
এই মুহুর্তে সে নিজেকে সামলাতে চায়।যা এ রুমে সম্ভব না।
কোন মতেই না।

,

,

চলবে…..

,
,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here