বাইজি কন্যা পর্ব ২৯+৩০

#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_২৯ ( প্রথমাংশ )
পরিহাস্যের সুরে বলা প্রণয়ের বক্তব্য’টি কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই চোখ তুলে তাকালো শাহিনুর৷ প্রণয়ের দৃষ্টি গাঢ়,নির্নিমেষ, দুর্বোধ্য। আর শাহিনুরের দৃষ্টিদ্বয় আসক্তিহীন। একজোড়া প্রগাঢ় দৃষ্টি’তে কতো সুনিপুণ ভাবে মিলিত হলো একজোড়া নির্লিপ্ত দৃষ্টিদ্বয়ের। ছাব্বিশ বছর বয়সী একজন কাঠিন্য,রাশভারী যুবকের পানে কতো অবলীলায়, অবহেলায় মাত্র পনেরো বছর বয়সী কিশোরী’টি দৃষ্টিপাত করলো। সে দৃষ্টিজোড়ায় না আছে লজ্জা, না আছে জড়তা। প্রণয়নের অন্তঃকোণে জেগে ওঠলো সেই রাতের অনুভূতি। যে রাতে প্রথম দেখেছিলো শাহিনুর’কে। সে’রাতে এই দৃষ্টিতে ভয় ছিলো,জড়তা ছিলো, কতশত সংকোচে আচ্ছন্ন ছিলো এ’দৃষ্টিজোড়া, হয়তো হিসেবনিকেশ করে বের করা যাবে না। অথচ আজ কতো পরিবর্তন! সময়ের ব্যবধান’টা একজন পরিবর্তনশীল মানুষ’কে দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পরিবর্তন না ঘটলে,মানুষের জীবন না বদলালে হয়তো সময় কতো সুন্দর, কতো নির্মম তা বোঝা কঠিন হয়ে যেতো। গত সময়,আজকের সময় এবং পরবর্তী সময় যাইহোক না কেন আপন অনুভূতিটুকু যে একই রয়েছে তা সুক্ষ্ম ভাবেই টের পেলো প্রণয়৷ সেদিনের দৃষ্টিজোড়া তার হৃদয়ে যে অনুভূতি দান করেছিলো আজকের এ মূহুর্তের এই দৃষ্টিও একই অনুভূতির সঞ্চার করছে। তবে পার্থক্য তো আছেই। তা হলো সেদিনের থেকেও আজকের অনুভূতি অনেক বেশীই দৃঢ়, অনেক বেশীই গাঢ়। এ পৃথিবীতে বহু পুরুষ বিভিন্ন কারণে বহু নারী’র প্রেমে পড়েছে। কত-শত নারী কত-শত পুরুষের বুকে প্রেমের জোয়ার এনেছে হিসেবের বাইরে। এক্ষেত্রে পুরুষ’রাও থেমে নেই। তারাও নারীদের বুকে প্রেমের জোয়ার আনে। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা সুপ্ত রয়ে যায়। প্রণয়ের হৃদ সিন্ধু পারে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ খেলা তো সেই কবেই শুরু হয়েছে। এই যে তার সম্মুখে সদ্য প্রস্ফুটিত হওয়া ফুলের ন্যায় নিষ্পাপ, শুভ্র মুখশ্রী, একজোড়া স্বচ্ছ,হরিণাক্ষী দৃষ্টি, প্রেমে পড়ার জন্য এই এটুকুই যথেষ্ট। আজ প্রণয় তীব্রভাবে অনুভব করছে দায়িত্ব আর ভালোবাসার ফারাক কতোটা হয়৷ দায়িত্ব’তে শুধু দায়িত্ব পালনই গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে ভালোবাসা নাও থাকতে পারে। কিন্তু ভালোবাসলে ভালোবাসার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনও গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্বে ভালোবাসা নাও জন্মাতে পারে,কিন্তু ভালোবাসায় দায়িত্ব আপনাআপনিই জন্মায়। প্রণয় খেয়াল করলো শাহিনুরের চোখমুখ ভীষণ রুক্ষ হয়ে আছে। অজস্র ক্লান্তি এসে ভর করেছে দৃষ্টিদ্বয়ে। ঈষৎ লাল বর্ণীয় নীরস ঠোঁটজোড়ায় দৃষ্টি পড়তেই বুকের ভিতর মুচড়ে ওঠলো। মনের ভিতর চনমনে হয়ে কেউ যেনো বলে ওঠলো,
-‘ মেয়েটা ভীষণ ক্ষুধার্ত, মেয়েটা ভীষণ তৃষ্ণার্ত। ওর খাবার প্রয়োজন, পানি প্রয়োজন, ঘুম প্রয়োজন, ভালোবাসা, আদর, স্নেহ সবটা প্রয়োজন। এসবের অভাবে মেয়েটা নুয়ে পড়ছে, ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার দেহ,মন সবটা, সবটা! ‘
হৃৎস্পন্দন থমকে গেলো প্রণয়ের। রুদ্ধশ্বাসে একহাত বাড়িয়ে শাহিনুরের গালে স্পর্শ করলো। কঠিন,গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বের পুরুষ’টি আচমকাই নম্র হয়ে ওঠলো। কিঞ্চিৎ আদুরে কন্ঠে বললো,
-‘ এই মেয়ে, তোমার মুখটা শুঁকিয়ে গেছে, কখন থেকে না খেয়ে আছো তুমি? খেতে হবে তো, ঘুমহীন চোখে ঘুম প্রয়োজন তো, এভাবে চেয়ে থেকো না নুর, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? ‘
উদ্বিগ্ন হয়ে গেলো প্রণয়। গালে ছুঁয়ে থাকা হাতটি আলতো চেপে আবারো বললো,
-‘ আই নো নুর তুমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছো, আমি তোমার এই কষ্ট দূর করতে চাই, তোমার পাশে থাকতে চাই। ‘
আর কিছু বলতে পারলো না প্রণয় তার পূর্বেই শাহিনুরের ছোট্ট, কোমল হাতটি তার পুরুষালী হাতের ওপর রাখলো। সে হাত কিঞ্চিৎ দৃঢ়তার সঙ্গে চেপে ধরে ঠাশ করে নামিয়ে দিলো। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বললো,
-‘ আমি গোসলে যাব। আপনার শার্ট’টাও ফেরত দেবো। ‘
বিস্মিত হলো প্রণয় এতো সহজেই যে শাহিনুর মেনে যাবে ভাবতেও পারেনি৷ শার্ট ফেরত দেবে ভাবতেই হাসি পেলো, কিন্তু কথা মেনেছে তা ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ব্রিফকেস এগিয়ে দিলো। শাহিনুর তখনো প্রণয়ের দিকে চেয়ে আছে। আর ভাবছে তার আম্মা শারমিনের কথা। সে বলেছিলো একজন মানুষ’কে চিনতে হলে, জানতে হলে সর্বপ্রথম তার চোখের ভাষা’কে বুঝতে, তারপর মানুষটা’কে পড়ার চেষ্টা করতে। তাই সে দেখছে প্রণয়’কে অতি সুক্ষ্ম নজরে৷ প্রণয় ব্রিফকেস খুলে দিয়ে পুনরায় তাকালো শাহিনুরের দিকে। আবারো দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলন ঘটলো। কিন্তু শাহিনুর প্রণয়’কে কিছু ভাবার সুযোগ দিলো না, সহজ গলায়, নরম সুরে বলে ওঠলো,
-‘ গোসল থেকে এসে খাবার পাবোতো? আমার খুব খিদে পেয়েছে! ‘
বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠলো প্রণয়ের। কি নিষ্পাপ, কি সরল স্বীকারোক্তি। একটুও সময় নিলোনা প্রণয় ত্বরিতগতিতে মাথা উপর নিচ করলো। শাহিনুরও আর বসে থাকলো না। নিঃশব্দে ওঠে দাঁড়ালো। খাওয়া,ঘুম কোনটাই ঠিকমতো না হওয়াতে শরীরটা প্রচুর দুর্বল অনুভব করলো। মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠলো। সহসা দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ক্ষণকাল চুপ রইলো সে। তা দেখে প্রণয় সটান হয়ে দাঁড়িয়ে শাহিনুরের কাঁধ স্পর্শ করলো,উদবিগ্ন কন্ঠে বললো,
-‘ শরীর খারাপ লাগছে? ‘
শরীরে থাকা শেষ শক্তিটুকু দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো শাহিনুর। কাঁধে থাকা প্রণয়ের হাতটি সরিয়ে দিয়ে ছোট্ট হাতের পাঁচ আঙুলের তালু উঁচিয়ে বললো,
-‘ কথার ছলে বার বার ছুঁয়ে দিচ্ছেন কেন? আমি কি আমাকে ছুঁতে অনুমতি দিয়েছি? ‘
রাগ এবং বিরক্তি মিশিয়ে কথাটা বলে ব্রিফকেস থেকে দ্রুত একটা শাড়ি, মখমলের কাপড়ের ব্লাউজ,আর পেটিকোট নিয়ে বাথরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো শাহিনুর।
রুদ্ধ শ্বাস ছাড়লো প্রণয়। শাহিনুরের যাওয়ার পানে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। কেন জানি রাগ হলো না, খারাপ লাগলো না। হৃদয়ে বাস করা নারী’র করা ভুলে রাগতে নেই, শুধরে দিতে হয়৷ সব পুরুষ শুধরে দেয় কিনা সে জানেনা। কিন্তু সে দেবে। পুরো কক্ষ জুড়ে পায়চারি করতে করতে আরেকটি দৃশ্য মনে পড়ে গেলো তার রঙ্গনের হাতে রাখা শাহিনুরের হাতের সেই দৃশ্যটি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাই বিরবির করে বললো,
-‘ অপাত্রে ঘি ঢালতে আপনি বড়ো ওস্তাদ মনোহারিণী। ‘
#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_২৯ (শেষাংশ)
[৪২]
পাঁচফোড়ন গৃহের পরিবেশ বেশ থমথমে। আনাচে কানাচে ভৃত্যদের ছাড়া কাউকেই তেমন নজরে পড়ছে না। কারো মুখে একটুখানি রা নেই, চারিদিকে কেমন ভয়াবহ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। প্রতিটি ভৃত্যের চোখ,মুখে স্পষ্ট ভয় দেখা যাচ্ছে। সকলেই বেশ আতঙ্কিত। একটি পরিবার’কে মুরুব্বি’রা যে ছায়া দিয়ে আগলে রাখে, অলিওরের মৃত্যুর পর পাচঁফোড়ন গৃহে সেই ছায়া বিলীন হয়ে গেছে। মুরুব্বি’রা ভালো হোক বা মন্দ হোক যতোদিন তারা বেঁচে থাকেন ততোদিন তাদের ঘর,সংসারে সমস্ত বিপদ মাথার উপর দিয়েই চলে যায়। মানুষের শরীরে মাথার ভূমিকা যতোটা পরিবারে বাবার ভূমিকাও ঠিক ততোটাই। আজ অলিওর বেঁচে থাকলে তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কাছে পরাজিত হতে বাধ্য থাকতো তার ছেলেরা। সকল ঝড় ঝাপটা গৃহের বাইরেই সারতো সে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর যে ঝড় গৃহে প্রবেশ করেছে সেই ঝড় সব কিছু তছনছ না করে ছাড়বে না। এটা পরিবারের সকলের আত্মায়ই জানান দিয়েছে। ভোজন কক্ষে উপস্থিত হয়েছে পল্লব, পলাশ এবং প্রণয় চৌধুরী। তিন ভাই অপেক্ষা করছিলো মা প্রেরণার জন্য। অরুণা তিনজনের পাতেই ধীরে ধীরে খাবার বাড়তে লাগলো। আজ তিন ভাইয়ের মুখই বেশ গম্ভীর। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। রান্নাঘরে শবনম শাহিনুরের জন্য খাবার বেড়ে এক ভৃত্য’কে দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। প্রণয় তা খেয়াল করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। বড়ো আম্মা অরুণা’কে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ আম্মা কোথায়? ‘
অরুণা চেয়ার টেনে তিন পুত্রের সম্মুখে বসলো৷ বললো,
-‘ চুপচাপ খেয়ে নাও তোমরা, ছোটো বউ এখানে আসবে না। কেন আসবে না তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো? ‘
অরুণার কথা শুনে পলাশ কঠিন মুখে এক পলক প্রণয়ের দিকে তাকালো তো আরেকবার পল্লবের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। পল্লব চোখের ইশারায় তাকে সংযত থাকতে বলে হালকা কেশে ওঠে প্রণয়’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-‘ তুই কী ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? এটা কিন্তু আমাদের সম্মানের ব্যাপার। জমিদারের বংশধর আমরা, আমাদের জন্য তাদের সম্মানে আঘাত লাগবে এমন কাজ করা অনুচিত। ‘
অরুণা প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে তার কঠোর মুখোভঙ্গি দেখে পল্লব’কে বললো,
-‘ খাবার বসে এসব আলোচনা কেন? ‘
প্রণয় অরুণা’কে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-‘ থাক বড়ো মা কথা যখন ওঠেছে উত্তর আমি দেবো৷ ‘
পলাশ থম মেরে বসে আছে, পল্লব উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে প্রণয়ের থেকে কিছু শোনার জন্য, অরুণাও চুপ মেরে গেলো। কথা বলার পরিস্থিতি তৈরি করে নিয়ে প্রণয় পল্লবের দিকে দৃঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, ঈষৎ তাচ্ছিল্য সহকারে হেসে বললো,
-‘ বেয়াদবি নেবেন না ভাইয়া, ঘরে দু’টো বউ রেখে বাইজি গৃহের বাইজিদের সঙ্গে মেলামেশা করে আপনি এবং আপনারা জমিদার’দের কোন সম্মান রক্ষা করছেন? ‘
চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠলো পল্লবের। প্রণয়ের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-‘ বাইজি গৃহ আজকের নয় প্রণয়, এটা আমাদের পূর্ববংশীয়দের বাইজি গৃহ। আমরা তাদের ধারাগুলোই মেনে চলছি। কিন্তু কোন বাইজি’কে আমাদের এই পবিত্র গৃহে স্থান দেইনি, দেওয়ার কথা ভাবিওনি৷ ‘
-‘ আমিও কোন বাইজি’কে তুলে নিয়ে আসিনি। ‘
চোয়াল শক্ত করে দৃঢ় সুরে বলে ওঠলো প্রণয়৷ একটু থেমে আবারও বললো,
-‘ আপনি জমিদার’দের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। এতে আমি বাঁধা দেইনি, ঠিক তেমনি আপনিও আমার সিদ্ধান্তে বাঁধা দেবেন না। যদি কিছু ভুল মনে হয় বলতে পারেন।’
-‘ ভুল তো অবশ্যই একটা বাইজির মেয়ে এ বাড়ির বউ হয় কি করে! ‘
-‘ একটা বাইজির মেয়ের জন্য জমিদারের চার ছেলেদের কামপ্রবৃত্তি জাগা যদি স্বাভাবিক হয় একজন পুত্রের ভালোবাসা জেগে ওঠা অস্বাভাবিক কেন হবে ? ‘
থতমত খেয়ে পল্লব বললো,
-‘ এটা আমাদের নীতিবিরুদ্ধ। ‘
-‘ বাহ বড়ো ভাই বাহ আপনারা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া নিয়ম ভঙ্গ করতে পারেন, আর আমি সামান্য আপনাদের নিয়ম ভাঙতে পারবো না? ‘
কথোপকথনের এ পর্যায়ে পলাশ কূটবুদ্ধি খাটানোর চেষ্টা করে বললো,
-‘ তুই কি জানিস ঐ মেয়ে রঙ্গনের সঙ্গে খুব বাজেভাবে মেলামেশা করেছে? ‘
চোখজোড়া ঈষৎ রক্তিম হয়ে ওঠলো প্রণয়ের৷ সামনে বড়ো ভাই,বড়ো মা রয়েছে। শাহিনুর’কে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে আরেক বড়ো ভাই। নিজের ক্রোধটুকু কোনক্রমে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো সে। পলাশের দিকে নিবিড়ভাবে তাকালো, অধরে কিঞ্চিৎ পরিমাণ তাচ্ছিল্য নিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
-‘ সে যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কলঙ্কিত নারীও হয় তবুও তাকে আমার বউ করবো। ‘
বিস্ময়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে বসে রইলো তিনজনই। আশপাশে যেসব ভৃত্যরা প্রণয়ের বলা বাক্যটি শুনতে পেলো সকলেই ক্ষণকাল থমকে দাঁড়ালো। অবিশ্বাস্য কতোগুলো দৃষ্টি তাকিয়ে রইলো তার পানে। প্রণয় এবার বেশ উচ্চবাচ্যে বললো,
-‘ এবার যদি বলো তুমি তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য তোমার প্রবৃত্তি মেটানোর জন্য বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছো। তাহলে বলবো, নিজের ভালোবাসা’কে নিজের না করে নিজ আত্মার সঙ্গে স্বার্থপরতা বা বেইমানি কোনটাই আমি করতে পারবো না৷ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো বেইমান সে যে নিজের সঙ্গে বেইমানি করে! আমি তোমাদের প্রকৃতির নয় বলে আমি খুব বেশী উদার হবো এটা ভাবা বোকামি। জমিদারের পুত্র এক বাইজি কন্যা’কে ভালোবাসে,বিয়ে করতে চায়, এটা যদি পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম কাজও হয় তাহলে সেই জঘন্যতম কাজটি আমি অনায়াসেই করে ফেলবো।
” বাইজি কন্যা’কে ভালোবাসা যদি অপরাধ হয়, সে অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে মৃত্যুদন্ড গ্রহণ করতেও আমি প্রস্তুত। বাইজি কন্যা’কে নিজের বউ করা যদি অন্যায় হয় তাহলে এ পৃথিবীর সব ন্যায় ভুলে গিয়ে হলেও এই অন্যায়টুকু সুকৌশলে করে নেবো আমি ” ‘

সকলেই স্তম্ভিত, বাকরুদ্ধ। অরুণা নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে। সীমাহীন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে ভৃত্যরাও। পল্লব হতবাক হয়ে বসে আছে। পলাশ ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে। সে দৃষ্টি’কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলো প্রণয়৷ আর একটি বাক্যও সে খরচ করলো না৷ নিজের মতো খাবার খেয়ে চলে গেলো নিজের কক্ষে। সে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনে থাকা খাবারের প্লেট ছুঁড়ে ফেললো পলাশ। হতভম্ব হয়ে অরুণা চেয়ে রইলো৷ পলাশ তাকে উদ্দেশ্য করে হুংকার ছাড়লো,
-‘আম্মা’কে কিছু করতে বলুন নয়তো ধ্বংসলীলা শুরু করবো আমি! ‘
[৪৩]
গোসল শেষ করে ভেজা চুলগুলো পিঠজুড়ে ছড়িয়ে,ছিটিয়ে দিয়ে কক্ষে এলো শাহিনুর। দেখতে পেলো গোলাকার বেতের টেবিলে তার জন্য খাবার রেখে দিয়েছে। আশপাশে সচেতন দৃষ্টি বুলিয়ে অপেক্ষা না করে একে একে খাবারগুলো মেঝেতে রাখলো। তারপর হাঁটু মুড়িয়ে বসে পড়লো। সদ্য ভেজা কোঁকড়ানো চুলগুলো মেঝেতে ছুঁয়ে রইলো। টপ টপ করে পানি ঝড়তেও লাগলো। শাহিনুর সম্মুখের খাবারের দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বড়োসড়ো একটি প্লেটে সাদা ভাত দেওয়া হয়েছে তাকে, ভাতের মাঝবরাবর একটা ডিম সিদ্ধ, ছোট ছোট বাটিতে কয়েক রকমের ভাজি,তরকারি দেওয়া হয়েছে। এতো খাবার দেখে বিচলিত হয়ে গেলো মেয়েটা৷ তার ছোট্ট পেটে এতো খাবারের জায়গা হবে না। জীবনে কখনো এতো খাবার একসাথে খাওয়া হয়নি তার। তাছাড়া তার মা সবসময় খাবার নিয়ে একটি কথা বলতো, খা, না। খাওয়াটা যেমন প্রয়োজন তেমন অতিরিক্তও খাওয়াও অনুচিত। ভেবেচিন্তে সব খাবার দূরে ঠেলে শুধু মাত্র ডিম সিদ্ধ আর সবজি দিয়ে অল্প ভাত খেলো সে। মাংস তার প্রিয় হলেও আজ খেলো না। আর মাছ তো মা’কে ছাড়া সে কখনো খেতেই পারেনা। গলায় কাঁটা ফুটে যায়। কক্ষে প্রবেশ করলো প্রণয়৷ ভিতর কক্ষে দেখতে পেলো শাহিনুর খাবারগুলো গুছিয়ে রাখছে। দোনোমোনো করে শাহিনুরের কাছে গেলো সে। প্রণয়’কে দেখে শাহিনুর পরিহিত শাড়ির আঁচলটি ডান কাঁধে টেনে নিলো৷ সদ্য গোসল করে আশা শাহিনুর’কে দেখে বুকের ভিতরটা ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো প্রণয়ের৷ ঢেউ খেলানো ভেজা চুলগুলো বেয়ে পানি পড়ায় শাহিনুরের পিঠ, কোমড় সহ মেঝেও ভিজে চুপেচুপে হয়ে যাচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে কয়েক পল তাকিয়ে রইলো প্রণয়৷ শাহিনুর জড়োসড়ো হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র অস্বস্তি হচ্ছে তার। অস্বস্তি টুকু বুকে ভীষণ পীড়া দিতে শুরু করায় সে প্রণয়ের দিকে তাকালো। প্রশ্ন করলো,
-‘ আপনি কি সবসময় এ’ঘরে আসবেন? ‘
কুঁচকানো ভ্রুদ্বয় দ্বিগুণ কুঁচকে গেলো প্রণয়ের। কিছুক্ষণ পূর্বে ভোজন কক্ষে বলা নিজের বলা একটি বাক্য স্বরণ হলো তার,
-‘ সে যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কলঙ্কিত নারীও হয় তবুও তাকে আমার বউ করবো। ‘
বক্ষঃস্থলে অদ্ভুত একটা অনুভূতি জেগে ওঠলো। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে শাহিনুরের স্নিগ্ধ মুখশ্রীতে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, কতো সহজেই আজ বলে দিলো কথাটি। অথচ সেদিন রোমানার বেলায় এই কথাটি তার মাথায়ও আসেনি। সত্যি ভালোবাসা কি না পারে…। প্রণয়ের প্রগাঢ় চাহনি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো শাহিনুর। নিজের দৃষ্টি থেকে শাহিনুরের দৃষ্টি বিচ্ছিন্ন হতেই প্রণয় সম্বিৎ ফিরে পেলো। বললো,
-‘ এ প্রশ্ন কেন? ‘
নিরুত্তর রইলো শাহিনুর। উত্তর না পেয়ে প্রণয় বললো,
-‘ ব্রিফকেসে তয়ালে আছে মাথা মুছে নাও। ‘
শাহিনুর কথা শুনলো না। চুপচাপ গিয়ে পালঙ্কে বসলো। প্রণয় আবারো বললো,
-‘ চুলগুলো থেকে পানি ঝড়ছে আমার ঘর নষ্ট হচ্ছে। অন্যের ক্ষতি করা অনুচিত। ‘
শাহিনুর নীরস দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের পানে। প্রশ্ন করলো,
-‘ আমার এতোবড়ো ক্ষতিটা কে করলো? ‘
-‘ মানে? ‘
-‘ আমার আম্মা’কে কে মারলো? ‘
-‘ সবটা জেনেও বোকার মতো প্রশ্ন করছো কেন? ‘
-‘ সবটা জানি বলেই তো বিশ্বাস করতে পারছিনা। ‘
-‘ কী জানো তুমি? ‘
-‘ কিছু না। ‘
অকপটে এ কয়েকটি জবাব দিয়ে আর কিছু বললো না শাহিনুর, চুপচাপ পিঠ ঘুরে শুয়ে পড়লো। শুধু অলিওর তার মায়ের হত্যাকারী এটা কেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার? এসব ভাবতে ভাবতে সারারাত নিদ্রাহীন থাকার ফলে খুব দ্রুতই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেলো সে। প্রণয় চিন্তামগ্ন হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর খেয়াল করলো শাহিনুরের ভেজা চুলে বিছানা ভিজে যাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তয়ালে বের করে ধীরেপায়ে এগিয়ে শাহিনুরের পাশে বসলো। চুলগুলো উঁচিয়ে নিচ দিয়ে তয়ালে দিয়ে কৌশলে পেঁচিয়ে ফেললো। শাহিনুরের ধবধবে ফর্সা কোমল ত্বকে দৃষ্টি পড়তেই সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। একহাত তার ভেজা মাথায় রাখলো নম্র কন্ঠে বললো,
-‘ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। একদিন সব স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে। ‘
#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_৩০
প্রায় দেড় ঘন্টা তন্দ্রামগ্ন থাকার পর ভয়ংকর চিৎকার শুনতে পেয়ে আচম্বিতে তন্দ্রাঘোর কেটে গেলো শাহিনুরের। শোয়া থেকে সটান হয়ে বসে পড়লো সে৷ ক্রমান্বয়ে বক্ষঃস্থল উঠানামা করতে শুরু করলো তার। তীব্র নিঃশ্বাসের শব্দে বদ্ধ ঘরে থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হলো। প্রণয় তখন পিঠে বালিশ ঠেকিয়ে নিজ পালঙ্কে আধশোয়া হয়ে বসে ডাক্তারি বই পড়ছিলো৷ এমনই সময় ছোট ভাই অঙ্গনের আকস্মাৎ খ্যাপাটে সুর শুনে চমকে ওঠলো সে৷ বইয়ের পৃষ্টা ভাঁজ করে বইটি বন্ধ করে রেখে দিলো, ত্বরিতগতি’তে ওঠে দাঁড়ালো ভাইয়ের কাছে যাওয়ার জন্য৷ মেডিসিন চলছে অঙ্গনের। তাই হঠাৎ এভাবে খ্যাপে যাওয়ার কারণ’টা বোধগম্য হলো না তার। কয়েক কদম এগিয়ে দরজা অবদি গিয়ে থমকে দাঁড়ালো সে। ঘাড় ঘুরিয়ে কাঁচের দেয়ালে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বক্ষঃস্থল মৃদু কেঁপে ওঠলো শাহিনুর’কে অস্থিরচিত্তে বসে থাকতে দেখে। কর্ণকুহরে অঙ্গনের চিৎকার,চেঁচামেচি, ভাঙচুর ভেসে আসছে। চোখের সামনে শাহিনুরের ভয় মিশ্রিত মুখশ্রী। ক্ষণকাল হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থেকে দ্রুত শাহিনুরের জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর নিকটে চলে গেলো। প্রণয়’কে দেখতে পেয়ে কিঞ্চিৎ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো সে। নিজের ভয়টুকু গোপন রেখে প্রণয়ের বাড়িয়ে দেওয়া পানির গ্লাসটি বিনাবাক্যে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করলো। গ্লাসটি যখন ফেরত দেওয়ার জন্য প্রণয়ের দিকে তাকালো, প্রণয় সেটা নিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বললো,
-‘ ভয় পেয়েছো? ‘
এক ঢোক গিলে ঘুম জড়ানো কন্ঠে শাহিনুর জবাব দিলো,
-‘ ভয় কেন পাবো? ঘুম থেকে ওঠার পর পিপাসা লেগেছিলো। ‘
ভ্রু বাঁকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রণয় বললো,
-‘ তাই বুঝি… দ্যাটস লাইক এ্যা গুড গার্ল। ভয় কাতুরে নুর’কে আমিও চাইনা। আমার নুর তো বোকাসাহসী! ‘
অধরে কিঞ্চিৎ দুষ্টু হাসি মিশিয়ে কথাটুকু বলে হাতে থাকা গ্লাসটি নিয়ে চতুরতার সঙ্গে কক্ষ ত্যাগ করলো প্রণয়৷ তাকে এবার অঙ্গনের কাছে যেতে হবে, শান্ত করতে হবে ভাইটা’কে। শাহিনুর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে চেয়েছিলো,
-‘ আমি আপনার নুর না। ‘
কিন্তু তা আর বলা হলো না। অপছন্দীয় মানুষ টা অপছন্দনীয় বাক্য আওড়িয়ে ঠিক চলে গেলো।
[৪৪]
দু’দিন যাবৎ ওষুধ খায় না অঙ্গন। বাড়ির সংকীর্ণ পরিস্থিতি’তে অঙ্গনের প্রতি কাল থেকেই অবহেলা হচ্ছিল। প্রেরণাও খোঁজ নেয়নি। যার ফলস্বরূপ গতরাতে ঘুম হয়নি তার ৷ সারারাত নানাবিধ চিন্তায় নিমজ্জিত ছিলো সে। ডুবে ছিলো রোমানার সঙ্গে সেই পুরোনো স্মৃতি’তে। সেসব স্মৃতির শেষ প্রান্তে এসে যখন রোমানার কবরের দৃশ্যটুকু মনে পড়লো, অন্তঃকোণে বেজে ওঠলো, মানুষ টা আর নেই, আর কোনদিন ফিরবে না মানুষ টা। আর কোনদিন সুখ,দুঃখের গল্প বলার জন্য মানুষ’টা অঙ্গন’কে খুঁজবে না। অভিমানে গাল ভারী করে থাকবে না। দু-চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াবে না। তার হৃদয় খোদাই করে তার ভাইয়ের বউ হবার পাঁয়তারা করবে না! যে মেয়েটা জীবনে কখনো কারো সাথে খারাপ আচরণ করেনি, কারো দিকে চোখ তুলে কড়া ভাষায় কথা বলার সাহস দেখায়নি। যার ব্যবহারের মাধুর্যতায় ডুবে থাকতো সে। নিজের সমস্তটা দিয়ে যাকে খুশি করার কথা ভাবতো। এতো ত্যাগের পরও ভাগ্য কেন সহায় হলো না? কেন এলো সেই কালরাত্রি? কেন ধ্বংস হলো রোমানা? সহজসরল, ঐ ভীতু মেয়েটা ভালোবাসা’কে হারানোর ভয়ে কেন পালিয়ে গেলো? যাওয়ার আগে কেন একটা বার তাকে মনে পড়লো না৷ ছোট্ট বেলা থেকে সব সমস্যায় অঙ্গন’কে ডাকতে পারলে,অঙ্গনের কাছে আসতে পারলে এবার কেন ডাকলো না? কেন এলো না সে? এই অঙ্গন’কে শেষ পর্ষন্ত ঘৃণা করে, অভিমান করে চলে যায়নি তো?
সবটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতেই ভয়ংকর উন্মাদ হয়ে ভাঙচুর, চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে অঙ্গন। প্রণয় এসে যখন জানতে পারে ওষুধ সেবনে অনিয়ম হয়েছে, ভৃত্যদের ওপর ব্যাপক চটে যায়, নার্স’দের ধমকাতে ধমকাতে কাঁদিয়ে ছাড়ে৷ হুমকি দেয় এরপর অনিয়ম হলে বরখাস্ত করা হবে। পরবর্তী’তে যেনো কোথাও কাজ না পায় সে ব্যবস্থাও করবে! ভয়ে জর্জরিত হয়ে ওরা ক্ষমা চায়৷ জানায় এরকম ভুল আর হবে না৷ প্রণয়ও সোজাসাপ্টা বলে দেয়, তার ভাইয়ের প্রতি কারো বিন্দু অবহেলাও সে সহ্য করবে না৷ ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অঙ্গন’কে ঘুম পাড়িয়ে প্রণয় প্রেরণার সঙ্গে দেখা করতে যায়৷ কিন্তু প্রেরণা বদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করে না৷ সে বলে দেয় প্রণয় যতোক্ষণ না নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবে, যতোক্ষণ না বাইজির মেয়েটা’কে এ গৃহ থেকে বের করে দেবে ততোক্ষণ রুদ্ধ দ্বার সে উন্মুক্ত করবে না! গতরাত থেকে না খাওয়া প্রেরণা৷ এভাবে চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে সে। মায়ের জেদ সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই অবগত প্রণয় তাই কুটিলতার আশ্রয় তাকে নিতেই হলো৷ দুপুর বেলা। পল্লব,পলাশ গৃহে আসবে আরো এক,দু’ঘন্টা পর। ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য গোডাউনে গিয়েছে তারা। প্রচন্ড উদ্বিগ্নতা নিয়ে ভৃত্য দিয়ে শবনম কে ডেকে পাঠালো সে৷ শবনম আসার পর তাকে দিয়ে ডেকে পাঠালো মুনতাহা’কে৷ বৈঠকখানায় তখন কেউ ছিলো না৷ দু’জন ভৃত্য’কে সদর দরজা এবং দু’জন ভৃত্যকে বৈঠকখানার মুখ্য দরজায় খেয়াল রাখতে বললো প্রণয়৷ উপস্থিত হলো মুনতাহা৷ শবনম,মুনতাহা আর প্রণয় ছাড়া আর কেউ নেই৷ মুনতাহা দুরুদুরু বুকে মাথা নত করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আজ অবধি তার সাথে প্রণয়ের তেমন কোন কথা হয়নি৷ সম্পর্কে তারা মামাতো,ফুপাতো ভাই-বোন হলেও প্রণয় গম্ভীর, অমিশুক এবং মুনতাহা চুপচাপ স্বভাবের হওয়ার দরুন দূরত্বটা অনেক বেশীই রয়ে গেছে। অবশ্য এর পেছনে পলাশের ভুমিকাও কম নেই। সাধারণত মুনতাহা’কে পলাশ কারো সাথে তেমন মিশতে দেয় না। তার বড়ো ভাই হোক বা ছোট ভাই কারো সাথেই মুনতাহা স্বাচ্ছন্দ্যে মিশতে পারেনা। সকলের থেকে গুটিয়ে নেওয়ার স্বভাবটি মুনতাহার নিজের নয় পলাশের দেওয়া আদেশমাত্র। যার হেরফের হলে চরম মূল্য দিতে হয় তাকে! পলাশ সম্পর্কে প্রণয়ের ধারণাও কম নেই৷ তাই মুনতাহা’কে উদ্দেশ্য করে সে বললো,
-‘ এক সম্পর্কে তুমি আমার ছোট বোন অন্য সম্পর্কে বড়ো ভাবি৷ আমি তোমাকে স্নেহ, শ্রদ্ধা দু’টোই করি৷ নির্ভয়ে বসো এখানে। ‘
শবনম গিয়ে সোফায় বসলো। মুনতাহা মাথার ঘোমটাখানি আরেকটু সমানের দিকে টেনে নিয়ে নিঃশব্দে গিয়ে শবনমের পাশে বসলো। প্রণয় তাদের খুব কাছাকাছি একটি মোড়া টেনে বসলো। শবনম এবং মুনতাহার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দৃঢ়চিত্তে বললো,
-‘ রোমানা’কে আমি কখনোই ভালোবাসতে পারিনি৷ কিন্তু ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিলাম। আমি ওকে ভীষণ পছন্দ করতাম। আমার বউ হিসেবে যোগ্য ছিলো ও। কিন্তু সমস্যা একটি জায়গাতেই ছিলো তা হলো আমি ওকে ভালোবাসতে পারিনি৷ কেন পারিনি সেটা আমি জানিনা৷ একটা ভুলের জন্য বোকার মতো ও নিজেকে শেষ করে দিলো। আমি যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতাম ও এভাবে চলে যাবে তাহলে কখনোই ওকে ভালোবাসিনা এ’কথাটি বলতাম না৷ বরং চেষ্টা করতাম ওকে ভালোবাসার যেমনটা পূর্বে করে এসেছি৷ যাইহোক, আমার সম্পর্কে সবাই ভুল ধারণা পোষণ করছে৷ কারণ আমি সবার মতো করে নিজেকে প্রকাশ করতে পারিনা। ছোটবেলা থেকেই আমি চাইনি কারো কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে। আজো হয়তো পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারবো না। ‘
থামলো প্রণয়৷ শবনম, মুনতাহা দু’জনই তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রণয় আবার বলতে শুরু করলো,
-‘ আমি ঐ মেয়েটা’কে, যে মেয়েটা আমার ঘরে পৃথিবীর সকল নীরবতা’কে বরণ করে নির্লিপ্তে অবস্থান করছে সেই মেয়েটা’কে প্রথম দেখেছিলাম আমার কোয়ার্টারে। মধ্যরাত ছিলো তখন। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা। আমার সেদিন মনে হয়েছিলো,
অমন নিষ্পাপ মুখ এ পৃথিবীতে আর দু’টি পাওয়া যাবে না৷ সত্যি হয়তো আমি আর পাবো না। স্নিগ্ধ মুখশ্রী, একজোড়া স্বচ্ছ দৃষ্টি, বোকাসোকা একটা মন। সবকিছুতেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ি আমি৷ ওর সমস্ত সৌন্দর্যে আঁটকে গেছি ঠিক সেদিনই। ওর মাধুর্যতা আমার মন’কে হরণ করে নিয়েছে ঐ রাতেই। প্রথমে ভেবেছিলাম পুরুষ মানুষ আমি। অপরূপা নারী’র সৌন্দর্যে কুপোকাত হয়ে গেছি। কিন্তু পরে অনুভব করলাম বাইজি গৃহে অপরূপা নারী’র অভাব নেই৷ কোনদিন তো তাদের দিকে ফিরেও তাকাইনি৷ নিজের কামনা পূরণ করতে ছুটে যাইনি সেখানে। অথচ শাহিনুরের প্রতি আমি সাংঘাতিক অনুভূতি টের পেয়েছি। অস্বীকার করবো না এতে ওর পবিত্রতার ভূমিকা অনেকাংশে দায়ী ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে, রঙ্গনের সঙ্গে ওকে দেখে আমি যখন ওকে ঘৃণা করার চেষ্টা করেছি পারিনি। সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করেছি সবকিছুর পরও ওর প্রতি আমার অনুভূতি বাড়ছে৷ নিজেকে খুব ছোট মনে হতো বাইজি কন্যার জন্য বুক অস্থির হয়ে পড়তো বলে৷ সেই মনে হওয়াটুকুও কেটে গেলো। একদিকে রোমানা’কে বিয়ে করার দিন ঘনিয়ে আসছিলো অপরদিকে নুরের প্রতি অনুভূতি বেড়ে চলছিলো। কেন জানি মনে হতো নুর আমার জন্য তৈরি। ওর চোখ দু’টোতে তাকালে সেই মনে হওয়াটুকু প্রবল বিশ্বাসে রূপ নিতো। আচমকাই ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে গেলো রোমানা চলে গেলো, আব্বা চলে গেলো, চলে গেলো শারমিন বাইজিও। অসহায় হয়ে পড়লো আমার ভালোবাসা। আমি বেঁচে থাকতে ওর অসহায়ত্ব সহ্য করতে পারবোনা। এই উপলব্ধিটুকু হতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ওকে এ বাড়ি নিয়ে আসার, ওকে বিয়ে করার৷ আমার সেই সিদ্ধান্ত’টা মজবুত হলো ভাইয়ার জন্য। নুরের প্রতি ওর কুদৃষ্টি, নুরের শরীরে বাজেভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা মেনে নিতে পারিনি আমি, পারিনি মেনে নিতে। ‘
ক্রোধান্বিত হয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়লো প্রণয়৷ লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো মুনতাহা৷ দুফোঁটা অশ্রুপাত ঘটলো তার চোখ বেয়ে। প্রণয় শান্ত হলো, শান্ত কন্ঠে বললো,
-‘ তোমার কষ্ট হচ্ছে আমি জানি৷ সত্য যতোই তিক্ত হোক শুনতে হয় মুনতাহা। আমি তোমাকে এসব বলছি তার একটাই কারণ আমি চাই তুমি আম্মা’কে বোঝাও। ‘
চোখ তুলে তাকালো মুনতাহা। প্রণয় আবারও বললো,
-‘ আমি যদি নুরের পাশে না থাকি ওকে বিয়ে না করি এ গৃহে ওকে রাখা সম্ভব হবে না৷ তোমার হাজব্যান্ডের চাহিদা সম্পর্কে তুমি নিশ্চয়ই জানো? যে কোন মূল্যে সে অবৈধ ভাবে নুর’কে নিজের শয্যাসঙ্গীনি করবে! আর এই পথ আম্মাই করে দিচ্ছে। ‘
কাঁপা কন্ঠে মুনতাহা প্রশ্ন করলো,
-‘ মানে? ‘
-‘ আম্মা আজকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে নুর’কে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে। একটা বার ভাবছে না নুর’কে বাড়ি থেকে বের করা মানে ভাইয়ার রাস্তা ক্লিয়ার করা। তুমি তো জানো বাইজি গৃহের কাজকর্ম আপাতত বন্ধ রেখেছি, এবার নুরের থেকে ভাইয়ার ধ্যান সরাতে হবে৷ আমি নুর’কে বিয়ে করবো। আমার বউয়ের প্রতি আমার বড়োভাই কুদৃষ্টি দেবেনা নিশ্চয়ই। ‘
শবনম বললো,
-‘ যদি এই ভয়ানক কাজটাও করে ফেলে? ‘
-‘ ভাবি আমার স্ত্রী’কে কীভাবে রক্ষা করতে হবে, কীভাবে ভাইদের সঙ্গে নীরব ঘাতক হয়ে লড়াই করতে হবে তা খুব ভালো করে জানি আমি। আপাতত আম্মা’কে বোঝানো জরুরী। আর মুনতাহা ছাড়া আম্মা’কে কেউ বোঝাতে পারবেনা৷ মুনতাহার প্রতি তিনি ভীষণ দুর্বল। ‘
প্রণয়ের কথা শুনে মুনতাহা বললো,
-‘ আমি আম্মাকে বোঝাবো নুর আপনার বউ হলে যদি উনার মোহ নুর থেকে কেটে যায় তাহলে অবশ্যই আমি আম্মা’কে বোঝাবো। উনাকে পাওয়ার জন্য সব করতে পারি আমি সব। আমি নুরের প্রতি খুব হিংসা বোধ করি। কিন্তু নুর আপনার বউ হলে আমার ক্ষতি নয় বরং ভালোই হবে। তাই আমি কথা দিচ্ছি নুরের সঙ্গে আপনার বিয়ে হবেই। ‘
বাঁকা হাসলো প্রণয়। শবনম এবং মুনতাহার দৃষ্টিগোচর হলো না সেই হাসিটুকু। নুর’কে বিয়ে করার জন্য এতোসবের প্রয়োজন ছিলোনা৷ শুধুমাত্র মা’য়ের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে মা’য়ের অনুমতি’কে গুরুত্ব দিলো সে। তাছাড়া মা’কে অসন্তুষ্ট রেখে জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে সে প্রবেশ করতে চায়নি। হাজারহোক প্রেরণা তার জন্মদাত্রী। মানুষ’টাও তো অসহায় খুব। রোমানার মৃত্যু, স্বামীর মৃত্যু, পুত্রের মানসিক বিপর্যয় সবটা মিলিয়ে মানুষটা শোকে জর্জরিত হয়ে আছে। তাই সুকৌশলে একটি খেলা খেললো সে। যে খেলায় না সাপ মরলো আর না লাঠি ভাঙলো!
[৪৫]
বৈশাখ মাসের বিকালবেলা। পশ্চিমা আকাশে মেঘেরা গুড়ুম গুড়ুম গর্জন তুলছে। চুপচাপ ঘরের কোণে বসে আছে শাহিনুর। এই ঝড়’টাকে ভীষণ ভয় পায় সে৷ এই যে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হচ্ছে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে তার। একটুপরই হয়তো চারদিক ঘনান্ধকার করে আকাশের বুকের হাহাকারগুলো বৃষ্টি হয়ে ভূমিতলে নেমে আসবে। ঝড়ের আঘাতে সবকিছু যখন তছনছ হয়ে যাবে প্রকৃতি’তে নেমে আসা ধ্বংসলীলা সম্পন্ন হবে তখনই আবার কেঁদে ওঠবে আকাশ৷ ভাসিয়ে দেবে ঘর,বাড়ি, গাছপালা, পথ,মাঠ সবকিছুই। জড়োসড়ো হয়ে বসে আম্মার শেখানো দোয়া দরূদ পড়ছে শাহিনুর। সবসময় এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মা’কে কাছে পেয়েছে। ভয়ে নিস্পন্দ হয়ে মা’য়ের বুকে গুটিশুটি মেরে জায়গা করে নিয়েছে, মা’য়ের স্নেহে, মা’য়ের সাহসে ফিরে পেয়েছে নিজ স্পন্দন গুলো’কে। অথচ আজ চারদিক শূন্য তার। মা নেই পাশে, নেই কোন আপনজন, তার এমন ভয়াবহ বিপর্যয়ে এই কালবৈশাখী ঝড়ের খুব কী প্রয়োজন ছিলো? জীবনে আসা ঝড়টুকু কী কম ছিলো? পরোক্ষণেই ভাবলো, সে কতো বোকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর অভিমান করছে,অভিযোগ তুলছে। ধীরে ধীরে মেঘের গর্জন দৃঢ় হতে শুরু করলো। শাহিনুরও চোখমুখ খিঁচে দোয়া পড়তে লাগলো৷ এমন সময় প্রণয় কক্ষে এলো। শব্দ পেয়ে চমকে তাকালো শাহিনুর৷ দেখলো প্রণয় কক্ষে এসে দরজা লাগাচ্ছে। কিছুটা ভয় কাটলো এই ভেবে তার পাশের ঘরে একটা মানুষ তো আছে। পরোক্ষণেই আবার স্মরণ হলো শারমিনের বলা একটি কথা, নিজের দুর্বলতাগুলো’কে কখনো কারো কাছে প্রকাশ করবে না। এই যে সে এখন ভয় পাচ্ছে প্রণয় যদি বুঝে যায় তাহলে তো তার দুর্বল জায়গাটা বুঝে যাবে। তখন নিশ্চয়ই হাসবে? শাহিনুর জড়োসড়ো অবস্থায় বসেই এসব ভাবছিলো। তখনি প্রণয়ের চোখ পড়লো ওর দিকে। বিচলিত হলো তার দৃষ্টিজোড়া। তা দেখে নিজের ভয় গোপন করার চেষ্টা করলো শাহিনুর। চট করে দাঁড়িয়ে মৃদু পায়ে কক্ষজুড়ে হেঁটে বেড়াতে শুরু করলো৷ এহেন কাণ্ড দেখে হকচকিয়ে গেলো প্রণয়। ব্যাপারটা কি ঘটলো বোঝার জন্য ধীরগতিতে এগিয়ে গেলো সে। দরজা ধাক্কিয়ে ও’কক্ষে প্রবেশ করলো। কিন্তু শাহিনুর বিন্দু ভ্রুক্ষেপ করলো না৷ সে তার মতো মৃদ্যুপায়ে হাঁটতে লাগলো৷ প্রণয় চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
-‘ কোন সমস্যা? ‘
হাঁটা পায়ে শাহিনুর তাকে পাশ কাটিয়ে একবার ঘরের উত্তর দিক গেলো তো আরেকবার দক্ষিণ দিকে। প্রণয় পুনরায় প্রশ্ন করলো,
-‘ কি হয়েছে এমন ছটফট করছো কেন? ‘
শাহিনুর তার দিকে না তাকিয়েই ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাঁটতে লাগলো এবং বললো,
-‘ সারাক্ষণ বসে থাকি তাই ভাবলাম একটু হাঁটি। ‘
ভ্রুদ্বয় উঁচিয়ে শাহিনুরের দিকে চেয়ে চেয়েই পালঙ্কে গিয়ে স্থিরচিত্তে বসলো প্রণয়। পাতলা ও লম্বা গড়নবিশিষ্ট শাহিনুরের চঞ্চল দেহটা ক্রমাগত ছুটে বেড়াচ্ছে। শাহিনুরের এই অস্থিরতা কীসের বোঝার জন্যই নীরবতা পালন করছে প্রণয়৷ বাইরে তুমুল বাতাসে চারপাশ লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। আকাশের মেঘের গর্জন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে প্রণয়৷ শীতল হাওয়া কক্ষেও আসছে। সে হাওয়ার বেগ যখন তীব্র হলো শাহিনুরের আঁচল উড়তে লাগলো। সে হাওয়ায় যখন উলোটপালোট বেগ শুরু হলো শাহিনুরের হাঁটা পা থেমে গেলো। শরীরে শাড়ির আঁচলটুকু জড়িয়ে রাখতে হিমশিম খেয়ে গেলো মেয়েটা৷ একদিকে মনে তীব্র ভয় অপরদিকে বারে বারে বক্ষস্থলে চেপে রাখা আঁচলটুকুর সরে যাওয়ায় তীব্র লজ্জা। সবটা মিলেমিশে যখন সীমাহীন অস্থির হয়ে পড়লো শাহিনুর তখনি আকাশ ফাটিয়ে বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটলো৷ সেই শব্দে প্রণয় দিব্যি ঠায় বসে রইলো৷ অথচ তাকে অবাক করে দিয়ে এতোক্ষণের চঞ্চল দেহটা আম্মা ডেকে আর্তচিৎকার দিয়ে নুয়ে পড়লো মেঝেতে৷ ক্ষণকাল স্তব্দ হয়ে বসে থেকে সহসা শাহিনুর’কে গিয়ে ধরলো প্রণয়৷ নিজ বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়ে বুঝলো বজ্রপাতের বিকট শব্দে তার অতিসাহসী মানুষ’টা জ্ঞান হারিয়েছে। এবার বুঝলো এতোক্ষণের এই তীব্র অস্বস্তির পেছনের কারণ। সন্তর্পণে বক্ষে চেপে ধরলো শাহিনুর’কে। নারী শরীরি উষ্ণতায় শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে পড়লো প্রণয়ের। মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠলো। অবাধ্য অনুভূতির আশকারা গুলো তুচ্ছ করে কয়েক পল সেভাবে থেকে পালঙ্কে শুইয়ে দিলো। শাড়ির আঁচল খুলে তখন মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। কিশোরী দেহের প্রবৃত্তি জাগানো অনেকাংশই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। নিজের দৃষ্টিজোড়া সংযত করে রুদ্ধ শ্বাস ছাড়লো প্রণয়। ত্বরিতগতিতে মেঝে থেকে শাড়ির আঁচল উঠিয়ে ঢেকে ফেললো শাহিনুরের বুক৷ ক্ষণকাল পূর্বে যে বুকের উষ্ণতা অনুভব করেছে সে, যেখানটায় দৃষ্টি যেতেই হৃৎপিণ্ডে ধড়াস করে ওঠেছে তার। শ্বাস-প্রশ্বাস হয়ে ওঠেছে ঘন, উত্তপ্ত। হাহ্ এ এক অসহনীয় যন্ত্রণাময় সুখানুভূতি!

চলবে…
কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here