#বাতাসা❤
writer : Ishanur Tasmia Mira
পর্ব-০২
.
রাস্তা পার হওয়ার সময় হুট করে জেন দিশার হাত হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আচমকা এমন হওয়ায় জেনের বুকে থুবড়ে পড়ে দিশা। কিছু বুঝে উঠার আগেই দিশাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে জেন বলে উঠে….
— পাগল নাকি তুমি? রাস্তা পার হতে জানো না? আমি একজন আমেরিকান হয়েও এত সতর্ক আর তুমি? ব্লাডি ফুল! ইচ্ছে তো করছে তোমাকে আমার ভাষার একশ একটা গালি দিয়ে দেই। স্টুপিড গার্ল!
বলতে বলতেই জেন দিশার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। একটা রিকশা ঠিক করে দিশাকে নিয়ে বসে পরে রিকশায়। আশ্চর্য রকম ভাবে এবার ভয় পেল না, বরং দিশার হাত শক্ত করে ধরে রইল সে। এই এতটুকু সময়ে দিশাও কোনো কথা বলল না। আর না করল হাত ছাঁড়ানোর কোনো ব্যর্থ চেষ্টা। প্রায় মিনিট দশেক পর তারা বাসায় পৌঁছে যায়। দিশা কিছু না বলে রিকশা থেকে নেমে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। কিন্তু জেনের কথায় থমকে দাঁড়ায় সে। পেছনে ফিরতেই জেন ভাড়া মিটিয়ে দিশা সামনে দাঁড়ায়। অপরাধীর নেয় বলে উঠে…..
— সরি দিইইসা!সো সরি! তোমার সাথে আমার এমন রুড ব্যবহার করা উচিত ছিল না। আসলে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই…সরি!
হাসলো দিশা। মুচকি হেসে বলল….
— ইস্ট ওকে জেন ভাইয়া!
এবার যেন জেনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। দাঁত কেলিয়ে হাসলো সে।
২.
রুমে ঢুকেই আগে ফ্রেস হয়ে নিলো দিশা। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মনে হলো “এই বুঝি সব ক্লান্তি শেষ হয়ে গেল।এখন একটু ঘুমালে মন্দ হয় না।” যেই ভাবা সেই কাজ! চোখ বন্ধ করতেই যেন ঘুমের ভর এসে চেপে বসে তার চোখে। নিমিষেই ঘুমিয়ে পরে সে।
.
ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে যায় অনেক। মার ডাকে ঘুম ভাংগে দিশার। তখন বাজে প্রায় দশটা কি সাড়ে দশটা। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসে দিশা। কিছুক্ষন ওভাবে বসে থেকেই দাঁড়িয়ে পরে সে। পেটের ভেতর ইঁদুরগুলি তিরিংবিরিং করছে। আপাতত এখন খাবার খাওয়ার খুব প্রয়োজন।
কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে দিশা চলে যায় নিচে ডাইনিং রুমে। চেয়ারে বসতেই কোথা থেকে জেন এসে হুড়মুড়িয়ে তার পাশে এসে বসে পরে। দিশার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে উঠে….
— ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে তোমার দিইইসা।
প্রতিউত্তরে হাসলো দিশা। তখনই রাফসান বলে উঠে….
— কালকে একটু জেনকে এলাকাটা ঘুড়িয়ে নিয়ে আসিস তো দিশা।
— আমার ভার্সিটি আছে ভাইয়া। কিভাবে কি?
চটে গেল রাফসান। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল….
— যাদি না ভার্সিটি।না গেলে এমন কি হবে? তাছাড়া আমার একটা কাজ আছে। নাহলে কি আমি তোকে বলতাম ওকে ঘুড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা।
কিছু বলল না দিশা। এখন কথা বাড়ালে তা নিতান্তই অভদ্রতা দেখাবে। যা দিশা এ মুহুর্তে প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। জেনের সামনে তো না-ই না।
.
খাওয়া শেষে সব কাজিনরা মিলে চলে গেল ছাদে। এটা ওদের প্রতিদিনের একটা অভ্যেস। রাতের খাবার শেষ হওয়ার পরপরই ছাদে গিয়ে আড্ডা দিতে মেতে উঠে সব ভাইবোনেরা।ওদের সাথে এখন নতুন যোগ দিয়েছে জেন। বেশ ভালোই লাগে জেনের বাঙালি কালচার। তবে বাঙালিদের ভাষাটা অনেক কঠিন। এই এত দিনে সে দুই-তিনটে বাক্য ছাড়া কিছুই শিখতে পারে নি। এই যে, এখন যে ওরা বাংলায় কিসব বলছে তার বিন্দু মাত্রও বুঝতে পারছে না জেন। তবে ভালো লাগছে! কেন যেন দিশা পাশে থাকলে তার সব ভালো লাগে। রাফসান বলেছে এটা নাকি “ভালোবাসা”। আসকেই কি ভালোবাসা? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে জেন!
.
.
#চলবে🍁