বাতাসা ❣️ পর্ব -১৩

বাতাসা
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

|পর্ব-১৩|
রাত তখন ১২টা। চোখে ঘুম নেই দিশার। চুপচাপ বই পড়ছিলো সে। এমন সময় ফোন বেজে উঠল তার। রাফসানের ফোন। দীর্ঘশ্বাস ফেললো দিশা। ফোনটা রিসিভ করতেই ভেসে উঠল রাফসানের তেজি কণ্ঠ, ‘নাটক করছিস এগুলো? বিদেশে আসতে মানা করেছিস কেন? ঢং করিস?’

দিশার ধীর ও শান্ত কণ্ঠ, ‘যেতে ইচ্ছে করছে না। এটা আমার দোষ?’

রাফসান আরো চটে গেলো যেন। ধমক দিয়ে উঠল, ‘দেখ দিশা, ফাজলামি বন্ধ কর। তুই-ই তো চাইতি জেন আর তুই যেন কাছাকাছি থাকতে পারিস। সে উপায় যখন পেয়েছিস তখন হাত ছাড়া করছিস কেন?’

দিশা আগের চেয়েও শান্ত কণ্ঠে বলে, ‘আমি ওর সাথে আর রিলেশন কন্টেনিউ করতে চাই না ভাই। ওর থেকে যত দূরে থাকতে পারবো ততই আমার জন্য ভালো।’

– ‘থাপ্পড় খাবি, বেয়াদপ! অন্যের জীবন নিয়ে খেলতে শিখে গেছিস তাই না? যে ছেলেটা তোর জন্য নিজের ধর্ম পাল্টে ফেলেছে, এত কিছু করেছে! তাকে ধোকা দিচ্ছিস? ছাড়ারই যখন ছিল তখন ওকে এসব করতে বললি কেন?’

দিশা উত্তর দিতে পারে না। চুপ থাকে। ওপাশেও তীব্র নিরবতা বিরাজ করে।
হঠাৎ জেনের মলিন স্বর শোনা যায়, ‘আমার দোষটা কি দিইইসা?’

দিশা থমকায়। হৃদ চলাচল বন্ধ হয়ে যায় যেন। কাঁদতে ইচ্ছে করে। কান্নার জন্য কথা গলায় আটকে আসে তার। আটকে আসা কণ্ঠে বলে, ‘ক-কিছু করেন নি।’

হুট করে উত্তেজিত হয়ে উঠে জেন। অর্তনাদ করে উঠে, ‘তাহলে কেন এমন করছ? আমার কষ্ট চোখে পড়ছে না তোমার? স্বার্থপর! এতদিন ভালোবাসার নাটক করেছিলে কেন হ্যাঁ? বলছো না কেন?’

দিশার গলা কাঁপছে। কল কেটে দেয় সে। ফোনটা ছুঁড়ে মারে বিছানার এককোণে। ফুপিয়ে কাঁদছে দিশা। যা হচ্ছে সব তার হাতের বাহিরে। সে ইচ্ছে করে করছে না এসব। অথচ সবাই তাকে খারাপ ভাবছে। তার ভাইও তাই।

———————-

দু’দিন কেটে গেছে। সকাল ১০টা বাজে তখন। মলিন মুখে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল দিশা। দিশার বাবা ফরহান এসে তার পাশে দাঁড়ান। দিশা চমকে যায়। পরপরই নিজেকে সামলে ম্লান হাসে। ফরহান সাহেব বলেন, ‘কি হয়েছে তোর মা? এভাবে উদাসীন হয়ে থাকিস কেন?’

দিশা কিছু বলে না। শুধু মাথা নাড়িয়ে না জানায়। ফরহান সাহেব খানিক্ষণ চুপ থেকে বলেন, ‘বিদেশে গেলে তোর কি সমস্যা দিশা? তোর তো স্বপ্ন ছিল বিদেশে পড়ালেখা করার, তাই না? ভালো কিছু করার জন্য তো যাওয়া উচিত তোর। তাহলে যেতে চাইছিস না কেন?’

দিশা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে, ‘তোমাদের রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না আব্বু।’

ফরহান সাহেব হেসে উঠেন। দিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘এর জন্য নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিবি? কক্ষনো না! আমি কালই রাফসানকে বলব তোর জন্য ফ্লাইটের টিকেট কাটতে।”

দিশা হকচকিয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে, ‘কিন্তু আব্বু..!”

ফরহার সাহেব আদুরে ধমক দিয়ে বলেন, ‘একদম কিচ্ছু বলবি না। আমি যা বলেছি তা-ই হবে। ব্যাস!’

ফরহার সাহেব চলে যান। দিশা কিছু বলতে পারে না। আকাশের দিকে চেয়ে থাকে একমনে। আচ্ছা, বিদেশে গেলে তো জেনের সাথে তার দেখা হবে তার। কিভাবে জেনের মুখোমুখি হবে সে? কি অজুহাত দেবে? প্রতিউত্তত মাথায় আসে না। দীর্ঘশ্বাসেরা ঘিরে ধরে।

_________________

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here