বাতাসা
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
|পর্বঃ ১৪|
গোছগাছ করা শেষ। ট্রলিব্যাগটা বিছানার এক সাইডে রেখে বারান্দায় চলে যায় দিশা। পরপরই লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে। এতক্ষণ যেন তার শ্বাস আটকে আসছিলো। এখন প্রকৃতির মুক্ত বাতাস পেয়ে শান্তি লাগছে। সত্যিই কি শান্তি লাগছে? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো দিশা। ভেতর থেকে উত্তর এলো, না! বাহ্যিক দিক দিয়ে শান্তি পেলেও ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তার। রুমে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল দিশা। ফোন হাতে নিয়ে চালু করল। মুহুর্তেই ফোনের স্ক্রীনে জেনের একটা মেসেজ ভেসে উঠল। ২-৩ ঘন্টা আগে পাঠিয়েছে জেন। তীব্র ক্ষোপ, রাগ মেসেজের অক্ষরে অক্ষরে ফুটিয়ে তুলেছে জেন। ক্ষিপ্ত মন নিয়ে লিখেছে,
‘তুমি খুব খারাপ দিইইসা। প্রতারক তুমি! ভালোবাসার অভিনয় করেছিলে আমার সাথে তাই না? কিন্তু আমি সেটা করি নি জানো? সত্যিই ভালোবেসে ছিলাম। যার মূল্য তুমি আমাকে দাও নি। আমিও ভেবে নিয়েছি। আজ, এই মুহর্ত থেকে আমি তোমার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবো। নিজের ভালোবাসাকে মাটির ধাপে ধাপে বিলিয়ে দেবো। ভালো থেকো।
For the last time,
Your Batasa Handsome.’
থরথর করে কেঁপে উঠল দিশা। ফোন হাত থেকে পরে গেল। কান্না যেন বাঁধ মানল না। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো সে। পরক্ষণেই মুখে বালিশ চেপে ধরলো দিশা। সেই ভাবেই কাঁদতে লাগলো আবার। নাহলে যে, সবাই তার কান্নার আওয়াজ শুনে ফেলবে।
—————————-
বাংলাদেশ থেকে এইমাত্র লন্ডনে নামলো বাংলাদেশ বিমানটি। সাথে সাথে এক ধরণের উত্তেজনা ঘিরে ধরল দিশাকে। ধীরে ধীরে সবার সাথে বিমান থেকে নিচে নামলো দিশা। এয়ারপোর্টে আসতেই একটা বাজে ঘটনার সম্মুখীন হলো সে। তাড়াহুড়ো করার দরুণ লন্ডনের একজন অধিবাসীর সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায় দিশার। ধাক্কাটা এত জোড়েই লাগে যে দুজনেই ফ্লোরে পরে যায়। যেহেতু দোষটা দিশার, সেহেতু সে-ই প্রথমে বলে উঠে, ‘ক্ষমা করবেন ভাইয়া। আমি দেখিনি আপনাকে। দুঃখীত।”
যুবকটি মুচকি হাসলো। বিনয়ের সঙ্গে বলে উঠলো, ‘সমস্যা নেই ম্যাম। আমারো কিছুটা দোষ ছিল।’
দিশার মুখে মলিন হাসি ফুটে উঠল এবার। উঠে দাঁড়ালো তারা দুজনেই। ফ্লোর থেকে নিজের ব্যাগ উঠিয়ে বলে উঠে দিশা, ‘ধন্যবাদ আমাকে বোঝার জন্য।’
যুবকটি হাসলো মাত্র। যুবকটির দিকে একপলক তাকিয়ে এয়ারপোর্টের বাহিরে চলে যেতে লাগলো দিশা।
এয়ারপোর্টের বাহিরে রাফসান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল দিশার। এয়ারপোর্ট ভবন থেকে দিশাকে বের হতে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠল তার। দিশা কাছে আসতেই তাকে জড়িয়ে ধরল রাফসান। ভাড়া করা গাড়ি পাশেই ছিল। গাড়িতে উঠে বসলো রাফসান আর দিশা দু’জনে। গাড়ি চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ নিরব রইলো দুজনেই। হঠাৎ রাফসানের কণ্ঠ শোনা গেল, ‘তুই যা করেছিস ভালো করিস নি দিশা। এখনো সময় আছে নিজের ভুল শিকার করার।’
দিশা জবাব দিলো না। রাফসান আবারো বলল, ‘তুই কি আমার কথা শুনতে পাস নি? কিছু বলেছি!’
–‘আপাতত এসব কথা বাদ দেয় ভাই। আমার ভালো লাগছে না।’
থমথমে গলায় বলল দিশা।
রাফসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে জোড়ালো গলায় বলল, ‘তোর এডমিশন আগে থেকেই করে রেখেছিলাম আমি। তুই চাইলে কাল থেকে ভার্সিটি যেতে পারিস।’
প্রতিউত্তরে কিছু বলল না দিশা। জানালা গলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল শুধু। তার মাথায় একটাই ভাবনা ঘুরছে, ভার্সিটি গেলে সে কিভাবে জেনের মুখোমুখি হবে? আরেক দফা দীর্ঘশ্বাস ফেললো দিশা। ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে সেখানের লেখাগুলো ছুঁয়ে দিতে লাগলো।
‘I am not your heart,
But I miss you.
I am not your family,
But I care you.
I am not your blood,
But I am ready to shear your pain
Because I am a stupid boy
Who loves you very very much.
পুরোটা পরে মুখে বেদনা দায়ক হাসি ফুটে উঠল দিশার। জেন লিখে দিয়েছিল তাকে। তার জেন!
_____________
চলবে…
(