বাতাসা ❣️ পর্ব -১৫

বাতাসা
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

|পর্বঃ ১৫|
দিশা কান্নারত অবস্থায় তাকিয়ে আছে জেনের দিকে। ওই যে, তার একটু দূরত্বে জেন মনমরা হয়ে বসে আছে বেঞ্চে। হাতে বই তার। দিশা ভাবতেও পারে নি ভার্সিটি এসেই জেনের দেখা পাবে। কষ্টে বুকটা ফেঁটে উঠল যেন। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, ‘হ্যান্ডসাম বাতাসা।’

কিন্তু আফসোস, জেন শুনতে পায় নি কথাটা। দিশা ধীরে ধীরে জেনের দিকে আগাতেই হঠাৎ দিশার দিকে তাকালো জেন। সাথে সাথে থমকে গেল দু’জনেই। জেনের চোখ ভালোবাসাপূর্ণ আর আকুতি ভরা। সেই চাহনী যেন আরো ঢাবিয়ে দিলো দিশাকে। আবারো জেনের দিকে আগাতে নিলেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল জেনের। মুখ ফিরিয়ে নিলো সে। পরপরই বেঞ্চ থেকে উঠে চলে গেল। দিশা ভেঙ্গে পড়ল। দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। চোখ থেকে তরতর করে জল বেরিয়ে এলো দিশার।

ভার্সিটির প্রথম দিন আজকে। দিশা জানতো জেনের সাথে তার দেখা হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি দেখা হবে ভাবে নি। তারওপর জেনের অবহেলাও মেনে নিতে পারছে না সে। দূর্বল হয়ে পড়ছে। খুব! খুব! খুব দূর্বল!

নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে দিশার। নার্ভাস লাগছে। আশেপাশে কত সাদা, কালো চামড়ার লোক! কাউকে চেনে না দিশা। কোথায় যাবে সেটাও বুঝতে পারছে না। বাধ্য হয়ে রাফসানকে কল করে সে। কয়েকবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে রাফসান। দিশা বলে উঠে, ‘কোথায় তুই ভাইয়া? আমি এখানের কিচ্ছু চিনি না। আমাকে হেল্প কর।’

ওপাশ থেকে রাফসানের কণ্ঠ, ‘কোন দিকটায় আছিস?’

দিশা আশেপাশে তাকালো। সবুজে ঘেরা মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে সে। কিছুদূরে কেন্টিন দেখতে পারছে। দিশা কেন্টিনের দিকে এগোতে এগোতে বলল, ‘আমি কেন্টিনে।’

— ‘আচ্ছা, আসছি আমি।’

প্রায় ৫-৬ মিনিট পর রাফসানের দেখা মিলে। এসেই রাফসানের প্রথম প্রশ্ন, ‘জেন তো এ দিকটা-ই ছিল। দেখা হয়েছে ওর সাথে?’

দিশা নির্বাক রইলো অনেক্ষণ। দিশার ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে, তার গলা কেউ কাঁটা দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করছে। কণ্ঠস্বর রোধ হয়ে আসছে। বার কয়েকবার ঢোক গিলল দিশা। ভাঙ্গা গলায় মৃদুভাবে বলল, ‘হয়েছিল।’

রাফসান অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘হয়েছিল?’

দিশা কিছু বলল না। রাফসান তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হেসে আবার বলল, ‘তুই কি সত্যি জেনকে আর একবার সুযোগ দিবি না… ওয়েট, ওয়েট! তুই কেন ওকে সুযোগ দিবি? ও তো কিছু করে নি। পরিস্থিতির স্বীকার ছিল। বল! কিছু করেছে ও?’

— ‘এসব কথা বাদ দেয় ভাই।’

রাসফান মৃদু চেঁচিয়ে উঠল, ‘কেন বাদ দেবো? বল, ওর কি দোষ? শুধু শুধু কেন কষ্ট দিচ্ছিস ওকে? জানিস আমার বন্ধুটা হাসতে ভুলে গেছে। তোর কথা মনে করে করে জেনের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। সবার সামনে কাঁদতে পারে না ও। আমি দেখেছি ওকে! চোখটা একদম লাল হয়ে যায় ওর! তোর কি এসবে কিছু যায় আসে না?’

দিশা ধরা গলায় বলে, ‘না! ওর হয়ে তোর এত গুণগান গেতে হবে না। নিজের বোনকে তুচ্ছ করে জেনের জন্য অপমান করছিস কেন?’

রাফসান বাঁকা হেসে বলে, ‘কারণ তুই অপমানের যোগ্য। আমার লজ্জা হচ্ছে জানিস? আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে, আমার বোন একটা প্রতারক! ঠকবাজ!’

গাল বেয়ে নোনাজল বেয়ে পরে দিশার। রাফসান ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘ভালো তো এখনো বাসিস। এত নাটক কেন করছিস বলবি?’

দিশা জোড় গলায় বলে, ‘আমি ওকে ভালোবাসি না।’

— ‘মিথ্যা কেন বলছিস?’

দিশা উত্তর দেয় না। রাফসান অধৈর্য হয়ে উঠে। তবুও আর কোনো প্রশ্ন করে না। সামনে যেতে যেতে রাগী কণ্ঠে বলে, ‘চল! ক্লাস রুমে দেখিয়ে দিচ্ছি।’

রাফসানের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে দিশা। ডিপার্টমেন্টের কাছাকাছি আসতেই আবারো দেখা হয়ে যায় জেনের সাথে। দিশা যেদিক দিয়ে যাচ্ছে, সেদিক দিয়েই ফিরছে জেন। এবং একদম অপরিচিতদের মতো দিশার পাশ কাটিয়ে চলে যায় জেন। দিশা থমকে দাঁড়ায়। জেনের চোখ স্পষ্ট দেখেছে সে। চোখজোড়া ফুলে আছে। নীল চোখের মণি মারাত্তক লাল হয়ে গেছে। জেনের যাওয়ার দিকে কাতর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে দিশা। রাফসান একবার দিশার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার জেনের দিকে। দু’জনের মনের অবস্থা বোঝা মুশকিল। একজন ভালোবেসেও দূরে, আর আরেকজন অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে। এ মান অভিমান যে কখন শেষ হবে!

_____________

চলবে…
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here