বাতাসা ❣️ পর্ব -১৬

বাতাসা (১৬)
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

সকাল থেকেই আবহাওয়া আজ বেশ শীতল। তুষারের ছোট ছোট কণা পুরো শহরটাকে শীতল ছোঁয়ায় মুখরিত করে রেখেছে। গায়ে মোটা আকৃতির একটি সোয়েটার জড়িয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ছুটলো দিশা। ভার্সিটি যেতেই দেখা হলো লিও, রিক আর লিয়ার সাথে। দিশার নতুন বন্ধু-বান্ধব এরা। বেশ ভালো তাদের আচরণ। কাছাকাছি আসতেই লিয়া বললো, ‘তুমি আজ বড্ড দেড়ি করে ফেলেছো দেইশা। দেখো! তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমাদেরও দেড়ি হয়ে গেছে।’
দিশা ম্লান হেসে বললো, ‘অপেক্ষা করার দরকার ছিল না। তোমার ক্লাস করতে পারতে।’

লিও বললো, ‘আমরা বন্ধুরা সবসময় একজোট হয়ে থাকি দেলিইশা। কখনো কাউকে ছাড়া কোনো কাজ করি না।’
বলেই হাসলো লিও। দিশা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। হতাশ গলায় বললো, ‘আমার এত সুন্দর নামটাকে এত বাজে কেন বানাচ্ছো লিও?’

লিও দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো, ‘তোমার কি কোনো সহজ নাম নেই দেলিইশা?’
‘আছে। আমার পুরো নাম রীতিয়া খানম দিশা।’
লিও নাক মুখ কুঁচকে বললো, ‘রিহ-টিহয়া কান-নম দেলিইশা?’
‘লিও!’
উঁচু গলায় ডাকলো দিশা। লিও এবার শব্দ করে হাসতে লাগল। ক্যাম্পাসের দিকে যেতে যেতে বললো, ‘ওকে, ওকে! সরি! তোমাকে আমি রিহটিয়া বলেই ডাকবো। ঠিকাছে?’
‘ডেকো। আগেরটার চেয়ে এটা ডের ভালো।’
বলতে বলতেই মৃদু হাসলো দিশা। সঙ্গে বাকিরাও। ক্যাম্পাসের দিকে যেতে লাগলো সবাই।

জেন প্রথম ক্লাস করার পর আর ক্লাস করলো না। ভালো লাগছে না তার। কাল থেকেই মনটা অস্থির হয়ে আছে। দিশাকে দেখার পর থেকে! মেয়েটা আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে। গৌর রঙের ত্বকটা মলিন হয়ে গেছে। চেহারায় ছিল স্পষ্ট কষ্টের আভা। কেন? দিশার তো ভালো থাকার কথা। জেনকে তো সে ছেঁড়েছিল। কষ্টে তো জেন আছে। ভেবেই তপ্ত নিশ্বাস ফেললো জেন। ক্যাম্পাশের কাছাকাছি আসতেই দিশাকে দেখতো পেল। অচেনা এক ছেলের সজ্ঞে কেমন হেসে হেসে কথা বলছে। জেনের ভ্রু কুঁচকে গেল। এত হেসে হেসে কি বলছে সে? জেনের রাগ হতে লাগলো হঠাৎ। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দ্রুত পায়ে সে দিশার দিকে এগোলো।

লিও দিশাকে তার ছোট বেলার কিছু হাস্যকর ঘটনা শুনাচ্ছিল৷ যা শুনে দিশা, লিয়া আর রিক তিনজনেই হেসে কুটিকুটি। কথা বলতে বলতে হঠাৎ সামনে তাকাতেই থমকে গেল দিশা। জেন চোখ-মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। দিশার সামনাসামনি এসে দাঁড়ালো সে। একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিওর দিকে তাকালো। দিশাকে উদ্দেশ্য করে কঠিন গলায় বললো, ‘এখানে কি করছো? ক্লাস নেই?’

দিশা ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে। কি বলবে সে? কিভাবে বলবে? কণ্ঠনালী দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার। মৃদু ভাবে কাঁপছে। জেন এবার ধমকের সুরে বললো, ‘কথা বলছো না কেন? ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে কি?’
কম্পিত শরীরটা আরেকটু কাঁপিয়ে দিশা বললো, ‘দ-দেড়ি হয়ে গিয়ে-য়েছিল। তা..ই!’

দিশাকে থামিয়ে লিও বললো, ‘হেই ব্রো, কে তুমি? রিহ-টিহয়ার সাথে এরুপ ব্যবহার করছ কেন?’
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিটাকে আরেকটু তীক্ষ্ণ করে নিলো জেন। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, ‘নান অফ ইউর বিজন্যাস!’
পরক্ষণেই দিশার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে বললো, ‘চলো।’

বলা শেষ হওয়ার আগেই দিশা তার হাত জেনের হাতের মাঝে আবিষ্কার করলো। খুব শক্ত করে হাত ধরে আছে জেন। টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভার্সিটির পেছনের দিকটায়।

———————————–

ভার্সিটির পেছনের দিকটা বেশ নির্জন। শান্ত, নির্মল পরিবেশ চারপাশে। দিশাকে একপাশে এনে হাত ছেঁড়ে দিলো জেন। দিশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছে জেনকে। ফর্সা মুখটা লালচে রঙ ধারণ করেছে। অশান্ত লাগছে তাকে। অস্থির ভাবে পায়চারি করছে এপাশ থেকে ওপাশ। এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। নিরবতা ভেঙ্গে দিশা কাঁপা গলায় ডাকলো, ‘জেন?’

সঙ্গে সঙ্গে জেন দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু দিশার দিকে তাকালো না। ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে সে। দিশা মৃদু স্বরে আবার বললো, ‘ক-কেমন আ-ছেন?’
এতক্ষণে জেন গম্ভীর গলায় বললো, ‘কেমন থাকার কথা দিইইশা। কষ্টে, তাই না? হ্যাঁ আমি কষ্টেই আছি। কষ্টে রাখার জন্যই তো মাঝপথে ছেঁড়ে চলে গিয়েছিলেন। তোমার আশা পূরণ হয়েছে তো। কাঁদছো কেন? হাসো! হাসছো না কেন?’

শেষের বাক্যটা চেঁচিয়ে বললো জেন। দিশা ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো। কান্না ভেঁজা গলায় কিছু বলতে নিলে, জেন হঠাৎ দিশার একদম কাছে এসে দাঁড়াল। দিশার বাহুজোড়া শক্ত করে চেপে বাজখাঁই গলায় বললো, ‘ওই ছেলেটার সঙ্গে হেসে হেসে কি বলছিলে দিইইশা? আমাকে জ্বালাতে অনেক ভালো লাগে তোমার তাই না? ওয়েট! ওই ছেলেটা তোমার প্রেমিক নিশ্চয়ই! বাহ্! এখানে আসতে না আসতেই নতুন প্রেমিক খুঁজে নিয়েছো? আর আমাকে দেখো! আমি নামক গর্দভ এখনো তোমার বিরহে কাতর হয়ে আছি। কতটা গর্দভ আমি, দেখেছো?’

কথা বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পরছে জেন। কান্নার গতি বেড়ে যাচ্ছে দিশার। কাঁপা গলায় সে বললো, ‘ও-ও আমা-র প্রেমিক না জেন।’
‘তো কি হবে নাকি? প্রসেস চালিয়ে দিয়েছো?’
‘চুপ করো জেন। তুমি আমাকে এতটা খারাপ ভাবো?’

জেন দিশার চোখে চোখ রেখে দৃঢ় গলায় বললো, ‘আরো খারাপ ভাবা উচিত ছিল দিইইশা। আরো খারাপ! কিন্তু আফসোস! আমি সেটা পারছি না। কিন্তু চিন্তা করো না। খুব শীগ্রই ঘৃণা জিনিসটা চলে আসবে।’
বলেই দিশাকে ছেঁড়ে দিলো জেন। অনেকখানি দূরত্বে দাঁড়ালো। এবং কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইল দিশার কান্নারত মুখপানে। ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যাচ্ছে জেন। দহরে পুড়ছে। না! এই মেয়ের সামনে আর থাকা যাবে না। পরে যদি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে? জেন চলে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী হলো। দিশা দু’হাত দিয়ে বারবার চোখ মুছছে। জেনকে চলে যেতে দেখে দ্রুত জেনের কাছে ছুটল সে। কথা বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু জেন শুনছে না কিছুই। বাধ্য হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো দিশা, ‘আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি জেন। তোমার মা আমাকে এসব করতে বলেছিল।’

মুহুর্তেই পরিবেশটা কেমন শান্ত হয়ে গেল। জেন থমকে দাঁড়ালো। বিস্ফোরিত নয়নে দিশার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘ক-কি? কি বললে?’
দিশা ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো। লম্বা নিশ্বাস টেনে আবার বললো, ‘আমি আর পারছি না জেন। আমার দ্বারা মিথ্যে অভিনয় আর সম্ভব না। আমি আপনাকে ভালোবাসি জেন। ভীষণ ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই। নিঃস্ব আমি।’

___________________

চলবে…
★কপি করা নিষিদ্ধ। রি-চেক করা হয়নি।★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here