বাসন্তী প্রেম পর্ব ২২

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#দ্বাবিংশ_পর্ব

রুম থেকে বের হতেই কারো বিশালাকার দেহের সঙ্গে ধাক্কা খেতেই দু কদম পিছিয়ে যায় নিশাত। সাথে খানিকটা ব্যাথায় ককিয়ে উঠে সে। সামনে থাকা ব্যক্তিটা ও যেন ঘটনাক্রমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। একরাশ রাগ নিয়ে কিছু বলার উদ্দেশ্যে সামনে তাকাতেই মুখশ্রী থেকে রাগের রেশ উধাও হয়ে যায়।
– “আপনি!!”
অবাকের সুরে বলে উঠে নিশাত। সামনে থাকা ব্যাক্তি অর্থাৎ ধ্রুব নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে সামনের দিকে চোখ তুলে তাকালো।
– “আ’ম সরি! আসলে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করিনি। আর ইউ ফাইন মিস নিশাত?”
বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে ধ্রুব।
– “ইটস্ ওকে। আ’ম ফাইন। তবে এত রাতে আপনি এখানে?”
– ” আমি তো ফাইয়াজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম; কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। কিন্তু আপনি এত রাতে কোথায় বের হচ্ছিলেন মিস নিশাত‌?”
– “এইতো সিরাত আপুকে খোঁজার জন্য বের হচ্ছিলাম। তিন ঘন্টা ধরে ঘরে আসেনি তাই ভাবলাম নিচে গিয়ে একটু খুঁজে আসি!”
– “ওও আচ্ছা।”
এভাবেই টুকটাক কথাবার্তার মাঝে মিনিট পাঁচেক কেটে যায়। কথাবার্তার মাঝেই আড়চোখে বারবার নিশাতের দিকে তাকায় ধ্রুব। নিশাতের ঠোঁটের নিচে থাকা লালচে রঙের তিলটায় যেন না চাইতেও চোখ আটকে যায় তার‌। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা বজায় রেখে কোনোমতে টুকটাক কথা বলার সেখান থেকে কেটে পড়ে ধ্রুব। কথার মাঝে হুট করে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে নিশাত।

হাতের উপর পেন্ডেনের সংস্পর্শ আর ফাইয়াজের বলা কথা শুনে চমকে উঠে সিরাত। আর তার জন্মদিন? কথাটা তো মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল! কিন্তু সিরাতের জন্মদিন সম্পর্কে ফাইয়াজ জানল কি করে ভেবে ভেবে একাকার হয়ে যাচ্ছে সিরাত।
– “কি ব্যাপার কোথায় হারিয়ে গেলে? গিফট পছন্দ হয় নি?”
ফাইয়াজের কথায় হুস ফিরে সিরাতের।
– “ক,কই কিছু না তো! আর পছন্দ হবে না কেন? খুব পছন্দ হয়েছে। তবে একটা কথা বলুন তো রকস্টার সাহেব, আমার জন্মদিনের কথা আপনি জানলেন কি করে? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”
– “তোমার সাথে জুড়ে থাকা প্রতিটা জিনিস আমি জানব না তো আর কে জানবে? আফটার অল আ’ম ইউর উডবি!”
খানিকটা মুচকি হেসে বলে উঠে ফাইয়াজ।
– “উডবি? আপনি এত শিওর দিয়ে বলছেন যেন বিয়ে হয়ে গিয়েছে আপনার সাথে আমার। আর আমি কি একবারও বলেছি যে আপনাকে আমি বিয়ে করব!”
বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে ঠাট্টার ছলে বলে উঠে সিরাত‌। তবে তার কথা শুনে সামনে থাকা ব্যক্তিটির যেন ঠিক বোধগম্য হয় নি। চোখে মুখে রাগের আভা স্পষ্ট। হুট করে সিরাতের বাম বাহুদ্বয় ধরে টান দিয়ে বসে সে। আচমকা হেঁচকা টানে টাল সামলাতে না পেরে ফাইয়াজের অনেকটা কাছাকাছি এসে পৌঁছায় সিরাত‌। সাথে খানিকটা ভয়ের রেশ ও লেগে যায় সমস্ত শরীর জুড়ে। পুরো মুখশ্রী জুড়ে ভারী উত্তপ্ত নিঃশ্বাসের ছোঁয়া লাগতেই শিউরে ওঠে সিরাত।
– “ক,ক্,কি করছেন আপনি?”
– “একটু আগে কি বলছিলে আরেকবার বলো তো! আমিও শুনতে চাই তুমি একটু আগে ঠিক কি বললে!”
রাগ মিশ্রিত কন্ঠে ফাইয়াজ বলে উঠলো।
– “আমি তো মজা করছিলাম। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন‌। আর কখনো বলব না প্রমিজ।”
অস্ফুট স্বরে কম্পিত কন্ঠে বলে সিরাত। সিরাতের কথার প্রত্যুত্তরে ফাইয়াজ মুখশ্রী সিরাতের সামনে থেকে সরিয়ে সিরাতের কানের কাছে নিয়ে ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে ফিসফিস করে বলে উঠে,
– “আর একবার এ কথা ফেললে জানে মেরে ফেলব। ইউ আর অনলি মাইন‌। অনলি ফাইয়াজ আহমেদ মুগ্ধর। অন্য কারও হতেও পারবে না কখনো, মেরি জান।”

ফাইয়াজের এমন ফিসফিস করে বলা কথা শুনে পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় সিরাতের‌। এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। ফাইয়াজকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাঁটা শুরু করে বাইরের দিকে। এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মোটেও সম্ভব নয়। লজ্জা নামক বস্তুটি তাকে চারপাশ থেকে যেন আঁকড়ে ধরেছে।
দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের রুমের সামনে এসে পৌঁছাতেই কারো হাত জোড়া তার গলা জড়িয়ে ধরে।
– “হ্যাপি বার্থডে আপু!!”
উৎসুক হয়ে বলে উঠে নিশাত। সিরাত ও খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে নিশাতকে। ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই পেছন থেকে কারো পদধ্বনি ভেসে আসে তার কানে।
মিসেস সাবিনা, ফারিহা, ধ্রুব, ফাইয়াজ সবাই উপস্থিত হয়েছে সিরাতের রুমে। হাতে থাকা কেকের ট্রে পাশে টেবিলের উপর রাখতেই সিরাতের দিকে এগিয়ে যায় ফারিহা।
– “হ্যাপি বার্থডে ভাবি।”
সিরাতকে জড়িয়ে ধরে বলে ফারিহা‌। ফারিহার কথা শুনে উপস্থিত সকলেই ফিক করে হেসে উঠে।
একে একে কেট কেটে বেশ খানিকক্ষণ সময় কাটানোর মাঝেই ফারিহা বলে উঠে,
– “এই ভাইয়ু আজ তো সিরাত আপুর জন্মদিন। আর এমন স্পেশাল দিন একটু স্পেশাল ভাবে সেলিব্রেশন হবে না তা হয় নাকি! সিরাত আপুর জন্মদিন উপলক্ষে তোর স্পেশাল একটা গান শোনা প্লিজ!”
ফারিহা সহ সবার জোরাজুরিতে ফাইয়াজ একপ্রকার বাধ্য হয়েই উঠে রুম থেকে তার নিত্যসঙ্গী গিটার নিয়ে আসে। গিটারের টুংটাং শব্দ তুললেও দৃষ্টি তার সিরাতের দিকে স্থির।

খামোশিয়ান্‌ আওয়াজ হ্যায়,,
তুম শুননে তো আও কাভি,
ছুঁ কার তুমহে খিল যায়েগি
ঘার ইনকো বুলাও,,,কাভি!

বেকারার হ্যায় বাত কার নে কো
কেহ্ নে দো ইনকো জারা,,,,,!
খামোশিয়া,,,,,,,তেরি মেরি খামোশিয়া,
খামোশিয়া,,,,,,,লিপটি হুয়ি খামোশিয়া,

কেয়া উছ গালি মে কাভি তেরা যানা হুয়া
যাহাছে জামানে কো গুজরে জামানা হুয়া
মেরা সামায় তো ওয়াহি পে হে ঠেহ্‌রা হুয়া,,
বাতাউ তুমহে মেরে সাথ কেয়া কেয়া হুয়া!

মমমম‌, খামোশিয়া ইক সাজ্ হ্যায়
তুম ধুন কই লাও জারা
খামোশিয়া আলফাজ হ্যায়,,
কাভি আ গুনগুনালে জারা,,

বেকারার হ্যায় বাত কার নে কো
কেহ নে দো ইনকো জারা,,
খামোশিয়া,,,,,,,তেরি মেরি খামোশিয়া
খামোশিয়া,,,,,,,লিপটি হুয়ি খামোশিয়া

নাদীয়া কা পানি ভি খামোশ বেহ্ তা ইয়াহা
খিলি চান্দনি মে ছিপে হ্যায় লাখ খামোশিয়ান্
বারিশ কি বুন্দো কি হোতি কাহা হ্যায় জুবা্
সুলাগতে দিলো মে খামোশি হ্যায় উঠতা ধুঁয়া,,

খামোশিয়ান আকাশ হ্যায়,,
তুম উড়নে তো আও জারা,
খামোশিয়ান্ এহসাস হ্যায়
তুমহে মেহসুস হোতি হ্যায় কেয়া,,,
বেকারার হ্যায় বাত কার নে কো
কেহ্ নে ইনকো জারা,,,

খামোশিয়া,,,,,,, তেরি মেরি খামোশিয়া
খামোশিয়া,,,,, লিপটি হুয়ি খামোশিয়া

পুরোটা গানের মাঝে ফাইয়াজের দৃষ্টি যেন সিরাতের মাঝেই বিদ্ধ ছিল। সিরাত ও একমনে সবটা শুনে গিয়েছে নীরবে। চোখে মুখে ছিল অদ্ভুত মুগ্ধতা। মন খারাপের মাঝেও এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে সব যেন নিমিষেই মিলিয়ে যায় কর্পূরের ন্যায়। ফাইয়াজের ধ্যান ফিরে আসে ফারিহার করতালির আওয়াজ শুনে।
খোলা দরজার অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সবটাই পরখ করে নেয় রিয়া। খানিকটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিঃশব্দে মনে মনে বিড়বিড় করে উঠে,
– “আনন্দের পাল্লা খুব ভারি হয়ে গিয়েছে তাই না সিরাত‌। তবে এই খুশি শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য। তোমার ঐ খুশি সবার কান্নায় পরিণত করে দেব আমি। যেটা আমার সেটা শুধু আমারই। আমার আর ফাইয়াজের মাঝে তুমি থার্ড পার্সন হয়ে গেলে তোমাকে তো সরতেই হবে আর সেটাও খুব তাড়াতাড়ি।”
বলার সাথে সাথে মুখের কোণে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে রিয়ার।
বেশ খানিকটা রাত হয়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ সবাই ধীরস্থির ভাবে বেরিয়ে পড়ে সিরাতের রুম থেকে। ফাইয়াজ ও রুমের বাইরে পা বাড়াবে এমন সময় পেছন থেকে সিরাত মৃদু স্বরে বলে উঠে,
– “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ, রকস্টার সাহেব!”
সিরাতের কথা কর্নগোচর হতেই পেছন ফিরে তাকায় ফাইয়াজ। মুখে মুচকি হাঁসি পূর্বের তুলনায় বজায় রেখে এগিয়ে যায় সিরাতের দিকে। আলতো হাতে সিরাতের বাম চিবুকের উপর স্পর্শ করে ফিসফিস আওয়াজে বলে উঠে,
– “ইউ আর ওয়েলকাম‌ মেরি জান! গুড নাইট!”
বলেই পুনরায় সামনের দরজার দিকে হাঁটা শুরু করে সে।………….

#চলবে 🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here