বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছি মামার হাত ধরে। আজ আমার বিয়ের কথা ছিল আমার বোনের খুনির সাথে। ঐ লোকটাকে দুলাভাই বলতে আমার ঘৃনা লাগে। সবাই জানে আমার বোন আত্নহত্যা করেছে কিন্তু আর কেউ না জানলেও আমি জানি আমার আপু আত্নহত্যা করেনি তাকে খুন করা হয়েছে।
এতক্ষনে হয়তো এলাকায় জানাজানি হয়ে গেছে নাসিম বিশ্বাসের ছোট মেয়ে নাবিলা বিয়ের আসর থেকে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে। সারাজীবনের জন্য গায়ে কলঙ্কের কালি মাখালাম। খুনিকে বিয়ে না করে গায়ে কলঙ্কের দাগ লেগেছে তাতেও আমি খুশি।
আমার মা-বাবা চোখে কালো চশমা পরে আছে তাই কিছু দেখে না। জামাই বলতে তারা অজ্ঞান। মেয়ে খারাপ কিন্তু জামাই তাদের কাছে ভালো। মেয়ে জামাই যা বলে চোখ বন্ধ করে এককথায় সব মেনে নেয়। আব্বা আম্মা কখনোই আমাদেরকে বুঝতে চেষ্ঠা করেনি। সন্তান হিসাবে তাদের কাছ থেকে কোন সাপোর্ট পাইনি কোন সময় কারন পাপ করেছি মেয়ে হয়ে জন্মনিয়েছি বলে।
পৃথিবীর মানুষগুলো খুব সার্থপর নিজে ভালো থাকার জন্য অন্যের ঘারে দ্বায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়। যেমন আমার মা বাবা চেয়েছে।
খুনি কবির মানে আমার দুলাভাই মাস খানেক আগে বাবুদেরকে নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির। তার বাবা মা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে কিন্তু সে নতুন করে আবার বিয়ে করবে না। । আমার বোনের ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে ওদেরকে সৎ মায়ের হাতের ভাত খাওয়াবে না। তবে একটা শর্ত দিয়েছিল যদি আমাকে কবিরের সাথে বিয়ে দেয় তাহলে সে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করবে। বাহিরের কোন মেয়েকে কবির বিয়ে করবে না।
এই কথা শোনার পর আমার বাবা-মা অনন্দে আত্নহারা। কবিরের প্রতি তাদের ভালোবাস দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। তারা আমাকে কবিরের সাথে বিয়ে দিত এক পায়ে রাজি। আমার কাছে একটা বার জানার প্রয়োজন মনে করলো না এই বিয়েতে আমি রাজি আছি কি না।
এই সবকিছু ছিল দুলাভায়ের ভালো সাজার প্লান। মনে মনে হয় তো এতদিন এটাই চেয়েছিলো শালা একটা নাটোকবাজ।
মামা যদি না থাকত এতক্ষনে বিয়ে দেবার নামে আমাকে কোরবানি দেওয়া হত। মামাই এক মাত্র বুঝতে পেরেছে কবির ভালো ছেলে না।
মামা আমার কাছে গিয়ে শুধু একটাই কথা বলে ছিল। নাবিলা, আপা দুলাভায়ের একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নাদিয়েকে শেষ হতে হয়েছে আবার তুইও..??
তোর স্বপ্নছিলো বিসিএস ক্যাডার হবি। স্বপ্ন পুরোন করবি না..??
আমি অশ্রুভরা চোখে মামার দিকে চেয়ে মাথা নারিয়ে হ্যা বলে ছিলাম।
মামা একটা প্লাজো খিমার আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল এটা পরেনে। ওই যে মামার হাত ধরে বিয়ের আসোর থেকে পালালাম এখনো মামার হাত ধরে আছি।
এত্তক্ষন আপনারা কি ভেবেছিলেন আমি মামার সাথে পালিয়েছি (নাউযুবিল্লা)। মামা আর বাবা কি আলাদা ইসলামে যে চৌদ্দজন পুরুষের সাথে দেখা দেয়া জায়েজ তার মধ্যে মামা একজন।
— নাবিলা ওইজে সামনে দাঁড়ানো সাদা বাস ওইটা ঢাকার বাস। এই যে টিকিট, পানি, খাবার। C–3 মানে তিন নাম্বার সিটটা তোর জানালার পাশে বসবি। আমি আর সামনে যাবো না কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হতে পারে এখনে পরিচিত অনেকেই আছে।
— ঠিক আছে এটুকু আমি একাই যেতে পারব।
— তুই কোন চিন্তা করিস না দিপাকে দিয়ে আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তোর কাজ মন দিয়ে পড়াশুনা করা।
— মামা, বাবা-মায়ের দিকে খেয়াল রেখ।
— ও নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। শোন বাসের ভিতরে কারো সাথে কথা বলবি না,, কেউ কিছু দিলে খাবি না। যদি সম্ভব হয় মুখের নেকাপ খোলার দরকার নাই।চার ঘন্টা একটু কষ্ট করে থাকতে পারবি না..?
— পারব মামা।
— যদি কষ্ট হয় মুখের নেকাপ খুললেও চারিদিকে খেয়াল করে খুলিশ কেউ যেন তোর চেহারা না দেখতে পারে। মুখের সাজ এখনো আছে মানুষ সন্দেহ করতে পারে।
— আচ্ছা তুমি চুন্তা কোইরনা।
— একদম ভয় পাবি না দিপা তোকে নিতে আসবে। বাস যেখেনে থামাবে তার পাশে একটা কফিশপ আছে ওখানে দিপা দাঁড়ান থাকবে দেখলে চিন্তে পারবি না।
— হ্যা চিনতে পারব মামা।
— একজন সৈনিক যখন যুদ্ধে ময়দানে যুদ্ধ করতে যায় তার কাজ হল সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। পিছু ফিরে তাকালেই নিশ্চিত মৃত্যু। তোর এখন পিছু ফেরার পথ নেই। বাস্তবা খুব কঠিন আর এই কঠিন পথটা তোকে একাই পার হতে হবে। শহরের আর গ্রামের মধ্যে আকাশ পাতাল ডিফারেন্স। শহরের কেউ কারো না তুই নিজেই নিজের সব কিছু আপনজন ছাড়া কাউকে পাশে পাবি না। খুব সাবধানে পা ফেলে চলতে হবে। কয়টা দিন কষ্ট কর পুলিশের চাকরিটা পেয়ে নেই তারপর দেখ ওই ফাহাদ করিরের কী করি। ওরে জমের ঘরে দিয়ে আসব। টাকা পয়শা নিয়ে চিন্তা করবি না যখন যা লাগবে আমি পাঠিয়ে দেব। মারে আমি যখনি সময় পাবো তোরে গিয়ে দেখে আসবো। মন দিয়ে পড়াশুনা করবি ঢাকা ইউনিভার্সিটিটে তোকে চান্স পেতেই হবে।
— বাসের ভিতরে জানালা দিয়ে তাকিয়ে মামার চলে যাওয়া দেখছি। অনেক দূরে চলে গেছে কিছুক্ষন পর আর দেখা যাবে না।
দূরে আকাশটাকে দেখছি কত কাছের মনে হয় কিন্তু হাত বাড়ালে না ছোঁয়াও যায়, না ধরা যায় অথচ মানুষ কষ্টে পড়লে ওই আকাশটার সাথে শেয়ার করে।
— হ্যালো এইজে আপু শুনেছেন।
— আনমনে আকাশের দিকে চেয়ে ছিলাম ধ্যান ভাংগলো ছেলেটার ডাকে। জি কিছু বলবেন।
— আপু এই সিটটা আমার যদি আপনার খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল সরাতেন তাহলে বসতাম আরকি।
— ওহ্ স্যরি,,
— না ঠিক আছে।
— এইরে ভুল হয়ে গেছে মামা তো বলছিল কারো সাথে কথা না বলতে, আর কথা বলা যাবে না।
— আপু পানির বোতলটা দেওয়া যাবে। না মানে আমি পানি আনতে ভুলে গিয়েছি।
— ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হল। খালি পানি দিতে লজ্জা করছিল তাই পানির বোতলের সাথে কেকের প্যাকেট টাও দিয়ে দিলাম। হ্যা, না কিছু বলেনি প্যাকেট খুলে কেক খাওয়া শুরু করে দিল। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে না খেয়ে আছে।
— দুইদিন ধরে কিছু খাইনি খুব খিদে পেয়েছিল চার পিস কেক খেয়ে ফেলেছি কিছু মনে করবে না প্লিজ।
— না, না, ঠিক আছে আপনি প্যাকেটটা রেখে দেন।
— আর খাবো না প্যাকেটটা নিন প্লিজ। বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। যার বাপের অঢেল টাকা সে কিনা আজ অন্যে দেয়া কেক খেয়ে খিদা মেটায়। বাবার উপরে রাগ করে বাসা থেকে চলে এসেছি।
চলবে…
#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ০১
#লেখাঃনুসরাত মাহিন