বিচ্ছেদ পর্ব -১৬

#বিচ্ছেদ -১৬

রিয়া আবার মেইলটা পড়লো।
আশিক লিখেছে,
“ছোট্ট এই জীবনে বার বার ভুল করেছি। ভুল সংশোধনের জন্য একটা সুযোগ চাই। তুমি কি সুযোগটা দেবে আমাকে ? ”

রিয়ার সমস্ত শরীর অবশ অবশ লাগছে।
আশিক তাকে কি বলতে চাইছে ?
কতগুলো বছর জীবন থেকে চলে গেছে..
জীবনের শুরুতেই রাগ-অভিমান আর ইগোর বশবর্তী হয়ে অপরিণত একটা সিদ্ধান্ত আজ ওদের জীবনকে কোথায় এনে দাড় করিয়েছে।
কি অদ্ভুত ব্যাপার !
যে মানুষটা একসময় তার একান্ত কাছের ছিল, সবচেয়ে আপন ছিল… সেই মানুষ টাই আজ আবার নতুন মানুষের মত করে কাছে আসার অনুমতি চাইছে।
জীবন এত নিষ্ঠুর কেন ? এত কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি কেন হতে হয় ?
জীবনের গল্পটা কি এতোও সহজ ?
চাইলেই বদলে ফেলা যায় ?

আশিক অনেক ভেবে-চিন্তে রিয়াকে মেইল করেছে। যদিও সে অনেক দ্বিধায় ছিল।
এরকম সিদ্ধান্ত নেয়াটা ঠিক হবে কিনা..?
রিয়া বিষয়টা কি ভাবে নিবে..?
এমন হাজারো দ্বিধা কাটিয়ে আশিক শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।
নিজের সন্তানের জন্য যেকোন কিছু যে করা যায় বা করতে মন চায়, আশিক জানতোই না।
রায়নাকে ফিরে পেয়ে গত কয়েক মাসে সে একটু একটু করে বুঝতে পারছে, সন্তান আল্লাহ্‌ তায়ালার অপূর্ব এক উপহার বাবা-মায়ের জন্য।
আশিক আর রায়নাকে কষ্ট দিতে চায়না।
মেয়েটা কিছুই চায়না। শুধু বাবা-মাকে একসাথে পেতে চায়।
দেশে এক মাস থাকা কালীন সময়ে আশিক লক্ষ্য করেছে,কোন গিফট বা কিছু কিনে দিলে খুশী হত কিন্তু কখনোই কোন কিছুর জন্য নিজ থেকে বায়না করতোনা।
বায়না করাটা হয়তো শেখেইনি।
রিয়া কষ্ট করে মানুষ করেছে, মেয়েটা সেটা বোঝে বলেই হয়তো নিজ থেকে কিছু চায়না।
রায়নার ভেতরে বাবা কে না পাওয়ার কষ্ট অনেক, যা তার স্বাভাবিক কথা-বার্তায় ফুটে
ওঠে প্রায় সময়।
তবে মাকে ছাড়া যে সে একদম থাকতে পারেনা,সেটাও সে মনে করিয়ে দেয় মাকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই।
অবশ্য রায়নার গল্পের অনেকটা জুড়ে থাকে তার মা। মাকে ঘিরেই তো তার জগত !
মেয়েটার জন্য কষ্ট হচ্ছে আশিকের।
কি সুন্দর করে কথা বলে তার মেয়ে !
যখন ‘বাবা’ বলে ডাকে, তখন আশিকের মন ভরে যায়। আহা.. এভাবে তাকে একমাত্র মা আদর করে ডাকতো।
মায়ের পরে কি মেয়েই ছোট্ট ‘মা’ হয়ে ফিরে আসে জীবনে ?

রিয়া সারারাত ঘুমাতে পারলো না।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।
রিয়া কিচেনে গিয়ে চা বানালো, চায়ের মগ হাতে বারান্দায় চলে এলো।
রায়না এখনো ঘুমাচ্ছে। কি নিষ্পাপ একটা মুখ ! এই মুখের দিকে তাকিয়েই তো এত কিছু করা। তবে মেয়েটা কষ্ট পেলে রিয়া নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা।
রিয়া অনুভব করছে, মেয়েটার মনে শুরু হয়েছে নতুন সপ্নের আনাগোনা !
রিয়া কি করবে ?
এবার কোন ভুল করা চলবে না।
খুব ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হবে।
বারো বছর আগে রিয়া শুধু নিজের কথা ভেবেছিল। কিন্তুু এখন সে একা নয়, তার সাথে রায়না জুড়ে আছে।
রায়নার কথা ভাবতে হবে।
ভোরের ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে উঠলো রিয়া।
ঠান্ডায় নাকি মনের ভেতরে ঝড় বইছে বলে কেঁপে উঠলো, কে জানে !
পাখি ডাকছে। ভোরের এই সময়টা কি কোমল। চারপাশটা কত নির্মল থাকে।
ভোরের নীরবতা ভাঙ্গে পাখির ডাকে।
সারাদিন আর পাখির ডাক শোনা যায়না।
পাখিগুলো কি দিনে ডাকাডাকি করে না ?
নিশ্চয় ডাকাডাকি করে !
কিন্তু দিনের বেলা মানুষের হাক-ডাক, গাড়ীর শব্দে পাখির ডাক শোনা যায়না।
ভোরের নিস্তব্ধতায় ওদের ডাক তাই এত স্পষ্ট। ছোটবেলায় স্কুল ছুটি থাকলে ওরা নানার বাড়ী বেড়াতে যেতো। তখন ভোরবেলা শিশির ভেজা ঘাসে পা ডুবিয়ে হাঁটতো রিয়া ওর মামাত ভাই-বোনদের সাথে।
কি যে ভাল লাগতো তখন !
নাম না জানা হাজারও পাখির কিচির-মিচির ডাক শুনে মুগ্ধ হতো।
নদীর পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করে গোসল করতো।
ছোটবেলাটা কত সুন্দর ছিল, কোন ভাবনা ছিলনা। ওরকম ভাবনাহীন জীবন যদি আবার ফিরে পাওয়া যেতো !

তোমাকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন ? কি হয়েছে তোমার ? সহকর্মী অঞ্জনার কথায় চমকে তাকালো রিয়া।
বললো,নাহ্ তেমন কিছু না,রাতে ঘুম হয়নি তাই শরীরটা খারাপ লাগছে।
রিয়া,তোমাকে খুব আনমনাও লাগছে।
কি ভাবছো এত ? বললো অঞ্জনা।
কিছু বললো না রিয়া।
একটু নড়ে চড়ে বসলো। সত্যিই তো। সে তো মনে মনে ভাবছে অনেক কিছু।
আশিকের মেইলের কথাটা কাউকে বলেনি এখনো। মা-বাবাকেও না।
কিন্তু বলা দরকার মনে হয়।কিন্তু কারো সাথে এটা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
যদিও রিয়া নিজেও খুব দ্বিধায় আছে।
এই দ্বিধা কেন ?
আশিক স্বামী হিসেবে ভাল ছিল।
কেয়ারিং ছিল। সমাজে প্রতিষ্ঠিত, শিক্ষিত, ভাল পরিবারের সন্তান। কেবল রাগ বেশী ছিল। রিয়া নিজে থেকে সরি বললে আশিকের
রাগ পানি হয়ে যেতো। কিন্তু যদি রিয়া নিজ থেকে এগিয়ে না আসতো, তাহলে সহজে আশিক তার ভেতরের রাগ কমাতো না।
তখন রাগ দেখাতো বিভিন্ন ভাবে।
শেষের বার রিয়া এগিয়ে গেলেই হয়তো আশিক আর রাগ পুষে রাখতো না মনে মনে।
তাহলে হয়তো এমন দিন আসতো না।
কিন্তু কেন যেন রিয়ার মনে তখন তীব্র অভিমান জমেছিল। তাই রিয়াও জেদ করে বসেছিল।
আশিক নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করতে চায়।
রিয়ার কি উচিৎ আশিক কে আর একটা সুযোগ দেয়া ?
এতগুলো দিন একা কাটিয়ে দিয়েছে।
প্রচন্ড মনে পড়তো আশিককে যখন রায়না ছোট ছিল। ওকে নিয়ে বাইরে কাজ করাটা কঠিন ছিল। যখন রায়নার বাবার প্রয়োজন হতো বিভিন্ন সময়। যখন রিয়া একাই মায়ের এবং বাবার ভুমিকা পালন করতো,সেসব সময় খুব মনে পড়তো আশিককে। রাগ হতো, কষ্ট হতো.. মনে হতো কেন আশিক এগিয়ে আসলো না? কেন মাঝ পথে একলা ফেলে চলে গেলো..?
যদিও রিয়া নিজেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল !
কিন্তু যখন রিয়া নিজেকে এই একাকী জীবনের সাথে মানিয়ে নিয়েছে,তখন ফিরে এলো আশিক।
একাকী ??
একাকীই তো ! আশিকের জায়গাটা অন্য কাউকে দেয়ার কথা কোনদিন ভাবেওনি রিয়া। আজও ভাবেনা।
আশিকের সন্তানকে বুকে করে অন্য আরেকজন মানুষের সাথে জীবন কাটানোর কথা কেন যেন ভাবতে পারেনি রিয়া।
এরকম দ্বৈত জীবন যাপন কখনোই শান্তির হয়না,এটা রিয়ার ধারনা।
আশিক তো চেষ্টা করেছিল । পারলো কই ?
অশান্তি মেনে নিতে পারেনি বলেই তো নীলার সাথে ওর সংসারটা টিকলো না।
রিয়া মেয়েকে সম্পূর্ণ পরিবার দিতে না পারলেও, কোন রকম অশান্তিময় জীবন দিতে চায়নি। তাই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার কথাকে উপেক্ষা করে নিজের একা থাকার সিদ্ধান্তে অটল ছিল।
আশিকের ফিরে আসাটা রিয়াকে কি উদ্বেলিত করছে ?
রিয়া যেন নিজেকেই প্রশ্ন করলো।

অনেকদিন পর মা-বাবার সাথে দেখা করতে আসলো রিয়া, রায়নাকে নিয়ে।
রায়না খুব খুশী। অনেকদিন পর নানুবাড়ীতে আসতে পেরে। নানু বাসার ছাদটা সুন্দর। বিকেলে ফ্লাটের বাচ্চারা খেলতে আসে ছাদে। উঁচু রেলিং করা। গাছ-পালাও আছে কিছু। রায়নার নানু করলা, পুঁই শাক,এবং শশা গাছ লাগিয়েছেন বড় বড় টবে। ছোট ছোট শশা আর করলা ধরেছে তাতে। রেলিঙের উপর দিয়ে নেট দিয়ে ঘেরা পুরো ছাদ। উপরে খোলা আকাশ।
করলা, শশা ও পুঁই লতা লতিয়ে লতিয়ে রেলিঙ ছাড়িয়ে নেট বেয়ে উপরে উঠছে।
এগুলো ছাড়াও মরিচ ও পেয়ারা, লেবু গাছও আছে। পুঁই লতার ফল ধরেছে।
রায়না মুগ্ধ হয়ে তার নানুর লতা গাছ গুলো দেখতে লাগলো। পুঁই লতার ফল হয় জানতোই না রায়না।
বুয়ার সাথে ছাদে এসে তার খুব গাছ লাগাতে ইচ্ছে করলো। সে বুয়াকে বললো, আমি গাছ লাগাবো, আমাকে গাছের চারা আর মাটি এনে দাও। বুয়া একটা খালি টব এনে দিল।
তাতে মাটি আছে। এখন গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায় ?
রায়না বললো, আমি পুঁই ফল লাগাবো,তাহলে নিশ্চয় পুঁই লতার গাছ হবে ?
বুয়া বললো, অইবো পুঁই গাছ।
মহা আনন্দে রায়না বুয়াকে সাথে নিয়ে গাছ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

রিয়া বাবা-মায়ের ঘরে বসে আছে।
আসার পরই মা জানতে চেয়েছেন, চা খাবে কিনা ? কি হয়েছে রিয়ার ? এমন উদ্ভ্রান্তের মত লাগছে কেন রিয়াকে ?
মা কিভাবে বুঝলো কিছু হয়েছে রিয়ার ?
মায়েরা কি সব বুঝে ফেলেন সন্তানের মুখ দেখলেই ?
বাবা এসে রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, কি হয়েছে রে মা ?
রিয়া বাবার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,বাবা-মা বুঝি এমনই হয়। রিয়ার খুব ইচ্ছে করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে।
একটু হালকা হতে পারতো মনে হয় তাহলে।
রিয়া এবার মুখ খোলে,’আশিক একটা সুযোগ চায়। সে আমাদের জীবনে ফিরে আসতে চায়,যদি আমি রাজি থাকি।’
বাবা-মা দু’জনই অবাক হয়ে গেলেন। এমন কিছু শুনবেন একেবারেই আশা করেননি।
রিয়ার সাথে আশিকের সম্পর্ক নিয়ে তারা নতুন করে কোন আশা করেননা। কারণ, ছয় বছর আগে আশিকের মা যখন চেয়েছিলেন,তখন তারাও খুব চেয়েছিলেন,
সব কিছু আবার আগের মত হোক।
কিন্তু সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। সেসময় আশিক অমত করেছিল বলে।
হট্যৎ আশিকের এমন চাওয়া দেখে তাই অবাকই হয়েছেন।
বাবা বললেন, তুই কি ভাবছিস ? কি করবি ?
রিয়া কিছু বলার আগেই মা বললেন, আমার মনে হয় আশিককে সুযোগ দেয়া উচিৎ। নিজে থেকে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে বলেই তো ফিরতে চাচ্ছে।
বাবা বললেন,হ্যাঁ তোমার কথাও ঠিক, কিন্তু রিয়া কি চায় সেইটা অনেক জরুরী।
রায়নার কথাটাও তো ভাবতে হবে, মা বললেন।
রিয়া কিছুই বললো না।
বাবা বললেন, আমি তোর সাথে আছিরে মা। তুই যে সিদ্ধান্ত নিবি,আমার তাতেই মত থাকবে।
রিয়া বললো, ‘বাবা আমি কি করবো বলো তো ? রায়না তো মনে মনে এমনই আশা নিয়ে বসে আছে। কিন্তু…’
বাবা বললেন,আমি চাই তুই আর রায়না সুখে থাক, ভাল থাক। কখনো তো ভাবিনি তোর এমন জীবন হবে। আশিক মনে হয় এবার সত্যিই তার ভুলটা বুঝতে পেরেছে।
রিয়া বুঝতে পারলো, বাবা সরাসরি না বললেও মনে মনে চাইছেন রিয়া আশিক কে মেনে নিক।
হাত ভর্তি কাঁদা নিয়ে রায়না ছাদ থেকে নেমে এলো। রিয়া চোখ কপালে তুললো রায়নাকে দেখে। একি অবস্হা হয়েছে তোমার মামনি ?
রায়না গড় গড় করে তার বৃক্ষ রোপনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে লাগলো মায়ের কাছে। গভীর মমতা নিয়ে রিয়া মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো…

স্কুলের টিচার্স রুমের দেয়াল ঘড়িটায় একটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকী। রিয়া বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। একটার সময় ওদের ছুটি হয়। আজ রিয়া ভিপি ম্যাডামের সাথে দেখা করবে। একটার পরে ম্যাডামকে রুমে পাওয়া যায়। সকালের দিকে বেশীর ভাগ সময় তিনি কাজে খুব ব্যস্ত থাকেন,আবার অনেক সময় মিটিং এ থাকেন ম্যাডাম। রিয়ার নিজেরও সকালে একটার পর একটা ক্লাস থাকে। সেসময় কথা বলার সুযোগ হয়না।
রিয়া ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে উঠে পড়লো।
রহিমা খালা বারোটার দিকে এসে রায়নাকে নিয়ে যায়। রায়নার ক্লাস শেষ হয় তখন।
আজ রিয়ার বাসায় ফিরতে দেরী হবে।
ম্যাডাম রুমেই ছিলেন।
রিয়াকে দেখে অমায়িক ভঙ্গিতে হাসলেন।
বসতে বললেন সামনের চেয়ারে।
রিয়া বললো,,ম্যাডাম আপনি ব্যস্ত না থাকলে একটু কথা বলতাম।
রিয়া কথা শেষ করার আগেই ৫/৬ জন টিচার ঢুকলেন ভিপি ম্যাডামের রুমে, তাদের বিভিন্ন রকম কাজ নিয়ে। ম্যাডাম আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রিয়া অপেক্ষা করতে লাগলো।
আধা ঘন্টা পরে ম্যাডামের কাজ শেষ হলো।
তিনি বললেন, রিয়া কি ব্যাপার বলো তো ?
কোন সমস্যা ? তোমাকে এমন অস্হির লাগছে কেন ?
রিয়া কোন কোনরকম ভূমিকা ছাড়াই সরাসরি বললো,”আশিক একটা সুযোগ চায়। সে আমাদের জীবনে ফিরতে চায়। আমি তাকে সেই সুযোগ দিবো কিনা জানতে চেয়েছে।”

ম্যাডাম অবাক হয়ে বললেন, বলো কি ? তাই নাকি ? তুমি কি বললে ?

আমি কিছুই বলিনি এখনো।
ম্যাডাম, আমি অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চাই। আপনার পরামর্শ আমার অনেক প্রয়োজন। এজন্য এসেছি আপনার কাছে।

ম্যাডাম হাসলেন,”রিয়া তুমি যে আশিকের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে পুরোপুরি তৈরী নও, সেটা তো পরিষ্কার।
কারণ, যদি তাই হতো, তাহলে তুমি কারো মতামত চাইতে না। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে। তবে তুমি আশিকের ব্যাপারে একেবারে নেগেটিভও না, আমার মনে হচ্ছে।
এজন্য, এটা নিয়ে ভাবছো এবং আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে চাইছো।”

রিয়া কৃতজ্ঞ চোখে তাকালো ম্যাডামের দিকে। সত্যিই এমন অনুূভুতিই হচ্ছে রিয়ার। ম্যাম বুঝলেন কিভাবে ?

ম্যাডাম বললেন,রায়না এসেছিল সেদিন আমার রুমে। সে আমার জন্য কিছু চকলেটস আর ফুল নিয়ে এসেছিল।
আমি অনেক আদর করে দিলাম।
রায়নাকে আমি এমনিতেই খুব আদর করি।
সে তার দু’চোখে দীপ্তিময় আলো ছড়িয়ে আমাকে বলেছিল, ‘মিস্…এগুলো বাবা এনেছেন আমার জন্য।’ বলার মধ্য বাবা থাকার গর্ব ছিল।
আমি ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝতে পেরেছিলাম, মেয়েটা মা-বাবা দু’জনকেই চায়।
অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক।

রিয়া বললো,আমিও জানি এটা।
রায়নার কথা ভেবেই এটা নিয়ে আরো ভাবছি।

ম্যাডাম বললেন, ‘হ্যাঁ… ভাল করে ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। ছোট্ট এই জীবনে ভুল-ভ্রান্তি থাকবেই। ভুলগুলো শুধরে.. একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলার নামই জীবন।’

রিয়া ভিপি ম্যাডামের রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো।

মাঠের মাঝখানে ডে-শিফটের এক দল ছোট ছোট মেয়ে ছুটোছুটি করে খেলা করছে।
রিয়ার খুব ছোটবেলার কথা মনে পড়লো।
কত আনন্দময় ছিল তার ছোটবেলা।
বাবা-মা, ভাই-বোনদের নিয়ে তাদের খুব সুখী পরিবার ছিল। তাদের স্কুলের বড় মাঠে এমন ছুটোছুটি করতো রিয়া। রোদে খেলা করার জন্য কত বকুনী খেয়েছে মায়ের কাছে।
খুব ভাল আবৃতি করতো রিয়া।
কাঠবেড়ালী, লিচুচোর, সৎ পাত্র কবিতাগুলো একেবারে ঝরঝরে মুখস্হ ছিল।
খুব সুন্দর এক্সপ্রেশন দিয়ে হাত পা নেড়ে নেড়ে রিয়া আবৃতি করতো।
টিচারাও এজন্য তাকে একটু বাড়তি আদর করতেন। রিয়াও খুব এনজয় করতো নিজের এই বাড়তি কদর। ক্লাসের বন্ধুদের সামনে কত ভাব নিত সে এজন্য।
ছোট বেলাটাই ভাল ছিল।
চিন্তা-ভাবনাহীন একটা জীবন ছিল।
রিয়ার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে ছোটবেলার ভাবনাহীন জীবনটাতে।
বড় হয়ে যাওয়ার কত কষ্ট !
ছোটবেলায় খুব তাড়াতাড়ি বড় হতে ইচ্ছে করতো।
তখন তো জানতো না বড় হওয়ার সাথে সাথে ছোটবেলার আনন্দগুলো হারিয়ে যায় !
অনেক বড় বড় কষ্ট সে জায়গাটা দখল করে নেয়।

রাতে ইভা ফোন করলো।
সে খুব চায় আবার সব কিছু আগের মত হোক,সেটাই জানালো।
তবে রিয়াকে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অনুরোধ করলো।
আশিক রায়নার সাথে প্রতিদিন কথা বলে।
অল্প সময়ের জন্য হলেও ফোন করে।
মেয়েটাও খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে তার বাবার ফোনের জন্য।
সম্পর্ক গুলো এত মায়ায় জড়ানো কেন ?
আশিক মেয়ের কাছে তার মায়ের খবর নেয়, রিয়া বুঝতে পারে এপ্রান্ত থেকে রায়নার কথা শুনে।
বারান্দার টবে ফুল ফুটেছে।
বেলী ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে রিয়ার ঘর-বারান্দা। আশিক প্রায় সময় বেলী ফুলের মালা কিনে আনতো রিয়া খুশী হত বলে।
রিয়া সত্যিই খুব খুশী হতো আশিক ফুল আনলে।

আশিক আরো একবার ওর জন্য বেলী ফুলের সুবাস নিয়ে অপেক্ষা করছে ।
কি করবে রিয়া….????

(চলবে..)

১০/১০/২০১৭
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here