বিবর্ণ নীলাম্বরী পর্ব -০৮+৯

#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা

পর্বঃ অষ্টম

রাত বেশ হয়েছে। নীলার মা জামা কাপড় গোছাচ্ছেন কাল তারা চলে যাবে তাই।নিজের মেয়েকে এই একা বাসায় রেখে যেতে তার মন মানছে না।কিন্তু বর্ণের পরিবারের উপর বিশ্বাস আছে বলেই একা রেখে যাচ্ছেন।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে বেশ খানিক সময় হয়েছে।আজিজুর রহমান রাতের খাবারের পর একটু হাঁটাহাঁটি করেন।সেই সূত্রেই সে রাস্তায় বের হয়েছেন।সাথে বর্ণ তার ভাই ও বাবাও গিয়েছে।তাই আপাতত ঘরে শুধু নীলা,নীলার মা আর নিরুপমা আছে।

নীলার মা জামা কাপড় গুছিয়ে নীলার ঘরে যান।আজ বাসায় কেউ নেই নীলার সাথে কথা বলার এটাই মোক্ষম সময়। সে তার মেয়েদের সাথে মিশে খুব কম।একটু ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের।একটু গম্ভীর থাকতে পছন্দ করেন,কথা কম বলেন।তার মেয়েরা তাকে ভয় পায় বেশি।তবে বাবার সাথে বেশ ফ্রী।কিন্তু উনি বেশ কয়েকমাস যাবত দেখছেন তার ছোট মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। আর এবার বাড়ি যাওয়ার পর একবারে নিস্তেজ হয়ে গেছে।এর একটা বিহিত তো করতেই হবে।যেমন ভাবনা তেমন কাজ।আফসানা রহমান মানে নীলার মা হাজির হোন নীলার ঘরে।

নীলা তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।তার বারান্দা টা খুব সুন্দর।বেশ খোলামেলা।আশেপাশে তাকালে কেবল আকাশ দেখা যায়। মন ভালো হয়ে যায়।

নীলার মা ঘরে ঢুকেই দেখলেন তার মেয়ে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে চাঁদ দেখছে।মন মরা ভাব।আফসানা রহমানের ভ্রু বিরক্তিতে কুঁচকে এলো।যতই হোক তার এই মেয়েটা বেশ চঞ্চল ছিলো।বেশ দুষ্টুমি করতো যার ফলে তিনি বকা ঝকাও করতেন,চুপচাপ থাকতে বলতেন।আর এখন যখন মেয়ে চুপচাপ হয়েছে তখন মানতে পারছে না।বিশ বছর যাবত যে মেয়ে মায়ের বকা খেয়ে খিলখিল করে হাসতো বিশদিনেই সে মেয়ের নিরবতা মা-বাবাকে ভেঙে দিছে।

আফসানা রহমান নিরবে ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিলেন।দরজা আটকানোর শব্দে ধ্যান ভাঙে নীলার।ফিরে দেখে তার মা গম্ভীর ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।নীলা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।মাকে সে অনেক ভালোবাসে আবার ভয়ও পায়।সে বারান্দার দরজা আটকিয়ে ঝটপট রুমে চলে আসলো।

আফসানা রহমান ততক্ষণে নীলার খাটে গিয়ে বসল।খাটে একটা উপন্যাস বই ছিলো যেটা হয়তো নীলা পড়ছিলো।আফসানা রহমান বইটা হাতে নিয়ে নীলাকে সামনের সোফায় বসতে বললো।

নীলা ভদ্র মেয়ের মতন সোফায় গিয়ে বসলো।ভয়ে কলিজা শুকাচ্ছে।মা বেশ গম্ভীর মুডে আছে।নীলা ভয়ে হাত কচলাচ্ছে। নীলার মায়ের দৃষ্টি অগোচর হয় নি কিছু।

নীলা ভয়ে আছে মা তাকে কি জিজ্ঞেস করে ফেলে সেটা ভেবেই।কিন্তু নীলাকে অবাক করে দিয়ে তার মা সহজ প্রশ্ন করলো
-‘কেমন আছো নীলা?’

এই সময়ে মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে অবাকের সপ্তম পর্যায়ে উঠে গেছে নীলা।প্রশ্নটা বেশ সরল তাই না? কিন্তু বর্তমানে নীলার কাছে পৃথিবীর সব থেকে জটিলতম প্রশ্ন হলো এটা।এখন মাকে না মিথ্যা বলতে পারবে না সত্যি বলতে পারবে।দরদর করে ঘামছে নীলা আর এক হাত দিয়ে আরেক হাত কচলাচ্ছে। নীলার মা গলা পরিষ্কার করে আবার গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
-‘কেমন আছো তুমি সেটা জিজ্ঞেস করেছি আমি।’

নীলার জেনো অথৈ সাগরে পড়ার মতন অবস্থা। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।উড়না দিয়ে ঘাম মুছে বেশ কষ্টে উচ্চারণ করল
-‘ভালো আছি মা।’

বেশ কতক্ষণ নিরব রইল ঘরে উপস্থিত দুজন মানুষ।নীলা তার মায়ের কথা না পেয়ে মুখ তুলে তাকায়। দেখে তার মাও তার দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাকে তাকাতে দেখে উনি বললেন
-‘তুমি কি জানো তোমার মুখ বলে দিচ্ছে তুমি কেমন আছো? তোমার ভালো আছি কথা বলার ভঙ্গিমা বলে দিচ্ছে তোমার ভালো থাকার পরিমাণ কতটা।পৃথিবীর সব থেকে সহজ প্রশ্নটা তোমার ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছে।সেই ঘাম বলে দিচ্ছে এই সহজ প্রশ্ন টা তোমার কাছে কতটা কঠিন।জানো তো এই প্রশ্ন টা কারো কাছে কঠিন লাগলে তার ভিতরের খবর আন্দাজ করা যায়?’

মায়ের পর পর এত গুলো তীক্ষ্ণ কথায় ঠিক থাকতে পারে না নীলা।তার গম্ভীর মায়ের কাছে ভেঙে গুরিয়ে যায় সে।তার কারো সামনে ভেঙে যেতে খুব ইচ্ছে করছিলো তবেই না সে নতুন করে নিজেকে গড়তে পারবে।

নীলাকে কাঁদতে দেখে বিচলিত হন না আফসানা রহমান। বরং ধীরে সুস্থে খাট থেকে উঠে এসে নীলার পাশে বসেন।হাত বাড়িয়ে দেয় নীলার দিকে।নীলা জাপটে ধরে তার মাকে।আফসানা বেগম পরম মমতায় জড়িয়ে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন
-‘কাউকে পছন্দ করো তুমি?’

মায়ের প্রশ্নে কান্না থেমে যায় নীলার।অবাক দৃষ্টিতে তাকায় মায়ের দিকে।আফসানা রহমান আশ্বাসের স্বরে বলেন
-‘আমি তোমার মা সেটা নিশ্চয়ই ভুলে যাও নি?আমি সন্তানের মনের খবর বুঝবো না তো কে বুঝবে? দশ মাস তুমি আমার দেহের সাথে মিশে ছিলে আর বিশ বছর
যাবত মিশে আছো আমার আত্মার সাথে। তোমার মনের খবর আমি জানবো না?’

নীলার মা বরাবরই চুপচাপ ধরনের।কখনোই মায়ের মুখে এমন কথা শুনে নি নীলা।আজ মায়ের এরূপ দেখে সে বিমোহিত। ভরসা পাচ্ছে মাকে সবটা খুলে বলার।

নীলার মা আবারও বললেন
-‘তুমি সবটা নির্ভয়ে আমাকে বলতে পারো।তুমি কাউকে পছন্দ করে থাকলে সেটাও জানাও।আমি তোমার বাবা সেটা মেনে নিবো।তবুও চুপচাপ নীলাকে আমরা মানবো না।’

নীলা কান্না থামিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
-‘হ্যাঁ আম্মু পছন্দ করতাম।শুধু পছন্দ না ভালো ও বাসতাম।’

নীলার মা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।বেশ স্বাভাবিক স্বরেই জিজ্ঞেস করলো
-‘ভালো বাসতে? এখন বাসো না? আর কেমন ভালোবাসা ছিলো? দুজনের তরফ থেকে না একপাক্ষিক?’

নীলা দৃঢ় কন্ঠে বলল
-‘ভালোবাসতাম আম্মু একপাক্ষিক ভালোবাসা।

নীলার মা তখন গম্ভীর স্বরে বলল
-‘তাহলে তো দোষ ঐ ছেলেটার না তাই না? একপাক্ষিক ভালোবাসায় কষ্ট পেতেই হবে।আর তুমি প্রকাশ করেছো কেনো ভালোবাসাটা? যেহেতু একপাক্ষিক ছিলো সেটা।কিন্তু তাই বলে তুমি এত ভেঙে যাবে?’

নীলা আবার কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতেই বলে
-‘আমি প্রকাশ করতে চাই নি আম্মু।ও আমাকে বাধ্য করেছে প্রকাশ করতে।আমার সাথে এমন অভিনয় করেছিলো যেনো সে আমাকে বেশ পছন্দ করে।কিন্তু সব মিথ্যা ছিলো আম্মু। ও আমাকে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলো। যদি আমি ভালোবাসি সেটা না বলি তবে ও নাকি মরে যাবে।আমি বাধ্য হয়েই স্বীকার করে ছিলাম।আম্মু এটাই যে আমার জীবনের বড় ভুল হয়ে দাঁড়াবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি গো।’

এবার আফসানা রহমান বেশ নড়ে গেলেন। তার মানে তার মেয়ে বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েছে।সবটা জানতে হবে ভেবে আফসানা রহমান প্রশ্ন করলেন
-‘তারপর কি হয়েছে খুলে বলো সবটা।’

নীলা কান্না থামিয়ে বলা শুরু করে
-‘আজ থেকে ঠিক আটমাস আগে তার পাগালামি সহ্য করতে না পেরে আমি আমার ভালোবাসার কথা স্বীকার করেই ফেলি।আমি ভেবেছিলাম সেও আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।আমাদের সম্পর্কের ঠিক তিনমাস পর সে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যায়। তারপর সেখানে গিয়ে সে আমার সাথে জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করে।আমি তাকে সেদিন চড় মেরে ওখান থেকে নিজের সম্মান টুকু বাঁচিয়ে ফিরতে পেরে ছিলাম।পরে জানতে পারি সে আমাকে ভালোবাসে না।শুধু আমাকে নিয়ে মজা করার জন্য এসব করেছিলো।’

নীলার কথা থেমে যায়।সেদিনের কথা মনে পড়তে আৎকে উঠে সে।সেদিন যদি ঐ ছেলেটা তাকে না বাঁচাতো তাহলে তার আজ কি হতো সে নিজেও জানেনা।সেদিনের পর ঐ ছেলেটাকে দেখে নি নীলা।অবশ্য দেখলেও চিনতে পারবে না কারণ ছেলেটা হেলমেট পড়া ছিলো।রাহাত যখন নীলাকে জোড় করে শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছিলো তখন হঠাৎ করে হেলমেট পড়া একটা ছেলে এসে রাহাতকে বেশ মেরে ছিলো।কী ভয়ঙ্কর ছিলো সে দিন টা।

আফসানা বেগম কতক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইলেন।যতই হোক তিনি তো মা।এতকিছু তার এই ছোট্ট মেয়েটার সাথে হয়েছে তারই অগোচরে।যাক তার মেয়ে যে সেই জানোয়ারের থেকে পরিত্রান পেয়েছে সেটাই কম কিসে।

পরম যত্নে জড়িয়ে নেয় মেয়েকে বাহুডোরে।ছেলেটার পরিচয় জানতে হবে তাকে।কিন্তু এখন আর মেয়েকে কিছু জিজ্ঞেস করা উচিত হবে না ভেবে চুপ করে থাকে সে।

বেশ অনেকক্ষণ কাঁদার পর শান্ত হয়ে মায়ের কোলেই শুয়ে পড়ে নীলা।আফসানা রহমান ঘুমন্ত মেয়ের চোখে চুমু খায়।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।সব আদর জেনো ঢেলে দিচ্ছে সে।দুই মেয়ে যে তাদের স্বামী স্ত্রীর জান।মেয়েকে ঠিক মতন শুইয়ে দিয়ে আফসানা রহমান রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।ততক্ষণে আজিজুর রহমানও চলে এসেছেন।আফসানা রহমান কাউকে কিছু বলেন না।তবে এতটুকু সে নিশ্চিত যে কালকে নীলার সকাল সুন্দর কিছু আনবে।
#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা

পর্বঃ নবম

নীলার বাবা-মা, বোন গ্রামে চলে গেছে পনেরো দিন অতিবাহিত হয়েছে।প্রথম কয়েকদিন নীলার বেশ খারাপ লাগলেও এখন সেটা আর লাগে না।বর্ণের পরিবার তার সাথে বেশ মিশেছে।সারাদিন তার এফ্লাট ওফ্লাট করে কেটে যায়। রান্নাবান্নাও করা লাগে না তেমন।এক বেলা নিজের রান্না খেলে তিন বেলা বর্ণের ঘরের থেকে খাবার পাঠায়। নীলা অবশ্য নিতে চায় না রাগ করে কিন্তু কে শুনে কার কথা।আবার বাড়ি থেকেও মা এখন প্রায়ই ফোন দিয়ে ওদের সাথে মিশতে বলে।নীলা এ কয়েকদিন ভার্সিটিতে যায় নি। ঠিক করেছে কাল থেকে আবার নিয়মিত যাবে।ভার্সিটির বন্ধুরা বেশ খোঁজখবর নিয়েছে। এখন টেবিল গোছগাছ করে বই গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে কালকের জন্য। হঠাৎ করে তার ডায়েরি থেকে একটা চিঠি পরলো।নীলা কতক্ষণ চিঠিটার দিকে তাকিয়ে সযত্নে তুলে নিলো।এই চিঠিটা তার মা তার টেবিলে রেখে গিয়েছিলো যাওয়ার দিন।নীলা জানতো না। তারা যাওয়ার পরের দিন বিকেলে টেবিল গুছানোর সময় এই চিঠিটা পায় সে।প্রথমে বুঝতে পারে না তার খালি ঘরে চিঠি আসলো কোথা থেকে। তারপর চিঠিটা খোলার পর সে বুঝতে পারলো এটা তার মা রেখে গেছে।সেখানে তার মা খুব সযত্নে লিখে ছিলো

আমার রাজকন্যা,
অবাক হচ্ছো তোমাকে এই নামে সম্বোধন করাতে? আমি তো মনে মনে এই নামেই ডাকি তোমাদের।তোমরা জানোই আমি তোমাদের বাবার মতন ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না তাই বলে ভালোবাসি না তেমনটা না।তোমাকে এই চিঠিটা লিখেছি দুটো কারণে।প্রথম কারণ আমি কথা গুলো তোমাকে সামনাসামনি বলতে চাই নি কারণ এমন কিছু কথা আছে যা বাবা মা আর সন্তানদের মাঝে হওয়া শোভনীয় না,তবুও বলতে হচ্ছে কারণ তোমার এগুলো জানা প্রয়োজন।আসলে তুমি যে মনমরা হয়ে থাকো জানো তোমার বাবার উপর কি প্রভাব ফেলে এইসব?আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তোমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার তুমি সমাধান করতে পারবে।কিন্তু সেটা দিন গড়িয়ে ছয়মাসের মাথায় যখন এসে ঠেকলো তখন আর পারলাম না এই ব্যাপার একান্তই তোমার ব্যাক্তিগত ভেবে চুপ করে বসে থাকতে।তুমি ছয়মাসে হাত গনা দু বার বাড়ি এসে ছিলে আর মোট মিলিয়ে দুবারে সাতদিন বাড়িতে কাটিয়েছো।আর আমি ছ’মাস মানে একশ আশি দিনই বাড়িতে কাটিয়ে ছিলাম।তোমার বাবার সাথে ছিলাম।তুমি সাতদিনে হয়তো খেয়াল করো নি বা তোমার বাবা তোমাকে বুঝতে দেয় নি যে তোমার নিরবতা তাকে কতটা ভেঙে দিয়েছে।কত রাত সে ঘুমায় নি।কি নিয়ে জেনো সবসময় চুপচাপ থাকতো।গভীর ভাবনায় থাকতো।পরে একদিন জোড় করে জিজ্ঞেস করার পর সে মুখ খুলে বলল তার ছোট মেয়েনমর চুপচাপ হয়ে যাওয়া টা সে মানতে পারে নি।আমি বরাবরই তোমার বাবাকে শক্তপোক্ত দেখেছি।এই মানুষটার এমন রূপ মানতে কষ্ট হচ্ছিলো।আমি ওনারে বলেছিলাম তোমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে কিন্তু সে আমাকে কি বলেছে জানো? সে বললো “আফসা মেয়ে আমাদের বড় হয়েছে।সেটা মাথায় রাখতে হবে।ওর এমন সমস্যাই হয়েছে যে সেটা ও কারো সামনে প্রকাশ করতে পাচ্ছে না।নিজের ভিতরে রাখার কারণে কথার ভারে সে চুপচাপ হয়ে গেছে।আমাদের ওরে সময় দেওয়া উচিত। আকারে ইঙ্গিতে ইশারা করে বুঝানো উচিৎ যে আমরা ওর পাশে আছি।আমাদের উচিত নিজেদের মতন করে ওকে না জিজ্ঞেস করে ওর সমস্যা খুঁজে বের করা।” জানো সেদিন তোমার বাবার কথায় আমি বেশ মুগ্ধ হয়ে ছিলাম ভাগ্য করে বাবা পেয়েছো বটে।তোমার বাবার কথা অনুযায়ী তোমাকে সময় দিলাম।কিন্তু ছয়মাস সময়ও তোমার কম হয়ে গেলো আমাদের ভরসা করতে।যাক ওসব ব্যাপারে আর কিছু বলবো না।তোমার আর আমার কথা গুলো শুধু আমাদের দুজনের মাঝেই রাখবো তুমি নির্ভয় থাকো।কিন্তু শর্ত একটাই আমরা আমাদের আগের নীলাকে ফিরে পেতে চাই।অন্তত তোমার ঐ নিঃস্বার্থ বাবার কথাটা ভেবে মুভ অন করো।কালো, তিক্ত স্মৃতি মুচড়ে ফেলো পা দিয়ে।নেক্সট টাইম যখন বাড়ি যাবে তখন আমি ঐ আগের নীলাকে চাই।নিজের খেয়াল রাখবে।আর সবার সাথে মিশবে।

ইতি তোমার
মা।

হঠাৎ দমকা বাতাসে ধ্যান ফিরলো নীলার।সে ভাবতে ভাবতে আধাঁর নেমেছে চারদিক।এই শীতকালেও বোধহয় বৃষ্টি আসবে।বাহিরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।নীলা চিঠিটা যত্ন করে আবার ডায়েরির ভাজে রেখে গেলো।

জানালা গুলো শক্ত করে আটকিয়ে দিলো। বারান্দার দরজা আটকানোর সময় কালো গোলাপের চাড়াটার উপর নজর পড়লো তার।

যাওয়ার দিন সকালে বাবা কোথা থেকে জেনো একটা কালো গোলাপের চাড়া এনেছিলো। নীলার হাতে দিয়ে বলেছিলো
-‘এটা আমার তরফ থেকে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার তোমার জন্য।’

নীলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।কারণ তার বাবা এর চেয়ে দামী উপহার তাকে দিয়েছিলো কিন্তু কখনোই মূল্যবান বলে নি।তাহলে এই ফুলের চারাকে মূল্যবান বলছে কেনো।বাবা যেহেতু কিছু বলেছে তার মানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।আর সেই কারণ বাবা বাদে কেউ বলতে পারবে না।তাই সময় নষ্ট না করে নীলা তার বাবাকে বলল
-‘আচ্ছা বাবা এর আগেও তো তুমি আমাকে এর চেয়ে মূল্যবান উপহার দিয়েছো অনেক কিন্তু কখনো তো এভাবে বলো নি।’

আজিজুর রহমান মেয়ের কথায় মুচকি হাসলেন।তারপর গাছটাাে বারান্দায় একপাশে সুন্দর করে রেখে বললেন
-‘মূল্যবান অর্থ জানো আম্মু?টাকা বেশি মানেই উপহার মূল্যবান না।দামি আর মূল্যবান মিলিয়ে ফেলো না আম্মু।মূল্যবান মানে এমন কিছু যেটার বিকল্প তুমি পাবে না।এখন হয়তো বলতে পারো এগাছের বিকল্পে তুমি আরেকটা গাছ আনতে পারবে।তাহলে আমি বলবো হ্যাঁ আনতে পারবে ঠিকই কিন্তু এগাছ তোমাকে প্রতিনিয়ত যে শিক্ষা দিবে সেটা হয়তো অন্য কোনো গাছ দিতে পারবে না।’

নীলা অবাক হলো। একটা গাছ তাকে কি শিক্ষা দিবে? অবাক হয়েই সে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল
-‘বাবা, গাছ আমাকে কীভাবে শিক্ষা দিবে?’

আজিজুর রহমান এগিয়ে আসেন।একটু হেসে বলে
-‘এটা কি গাছ জানো আম্মু? এটা কালো গোলাপ গাছ।এটা যখন তুমি যত্ন করবে,পানি দিবে,সাড় দিবে এটা তোমাকে তখন একটা কালো গোলাপ উপহার দিবে।আর যখন তুমি তোমার চোখের সামনে একটা কালো গোলাপকে ফুটতে দেখবে তখন তুমি মুগ্ধ হবে আর নিজেই মনে মনে বলবে কালো জিনিসের সৌন্দর্য ঠিক কতটুকু।কালো মানেই যে নিকৃষ্ট, অসুন্দর তেমনটা না।কালো মানেই কয়লা না কালো গোলাপও যে হতে পারে সেটা তুমি বুঝবে।’

বাবার কথায় মুগ্ধ হয় নীলা।সেদিন থেকেই এই গাছটার যত্ন নেয় মে নিয়মিত। হঠাৎ বজ্রপাতে ধ্যান ভাঙে নীলার।তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে গোলাপের চারাটা রুমে নিয়ে আসে যদি ঝড়ে পরে যায় সে ভয়ে।সেও যে কালো জিনিসের সৌন্দর্য নিজ চোখে দেখতে চায়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here