#বিবর্ণ_সিঁদুর
পর্ব-০৭
#Taniya_Sheikh
রজনী ফিরে এসে স্নান সেরে সামান্য কিছু মুখে দিয়ে শুয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনের ক্লান্তি তাকে আর অবসর দেয়নি জাগার। গভীর নিদ্রায় চোখের পাতা এক হয়েছে বালিশে মাথা দিতেই। রুনা রজনীর রুমে ঢুকে রজনীকে ঘুমন্ত দেখে শিওরে গিয়ে বসল। তখনই চোখ পড়ে রজনীর সিঁথি পাশের চুলের আড়ালে একচিলতে লাল সিঁদুর। রুনা আনমনে মুচকি হেঁসে মাথায় হাত বুলিয়ে চেয়ে থাকে রজনীর মুখপানে। কচি কলা পাতা বৃষ্টি স্নাত হলে চোখে যেমন স্নিগ্ধতা লাগে । এই মেয়েটিকে দেখতেও তেমন লাগছে রুনার। কিশোরী রজনীর মুখে একধরনের লাবন্যপ্রভা বিরাজ করছে, সৌমিত্রের মনের অন্ধকার কী একটুও ভেদ করেনি সে প্রভা? নাকি করেছে বলেই পরাজয়ের ভয়ে এড়িয়ে যাওয়া। পরাজয়! কীসের পরাজয়? এইটুকু মেয়ের কাছে ভালোবাসা সমর্পন পরাজয়? না নিজেকে সমর্পণে ভয়? রুনা উঠে সিলিং ফ্যানটা ছেড়ে বসার ঘরে চলে আসে। সেদিন সৌমিত্রের মুখাবয়বে ভিন্ন কিছু দেখেছে সে। সেটা কী ছিল? আত্মদম্ভ না নিজেকে নির্বাসিত করা। সৌমিত্রের মন দোটানায় ভুগছিল এটা রুনা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। একাকিত্বের বেড়াজাল ভাঙতে পারেনি বলেই কী এমন নিষ্ঠুর হতে হলো তাকে? রুনা ভাবতে ভাবতে চেয়ার টেনে বসল। সৌমিত্রের সাথে তার ইয়ারী দোস্তি নেই তবে অনেক ভালো করেই চেনে জানে সৌমিত্রকে সে। তাদের দুজনের সম্পর্কে গাম্ভীর্য্য থাকলেও সেটা মাঝে মাঝে সরল সম্পর্কে চলে আসে। এই যেমন সেদিন রুনা বোনের অধিকাবোধ দেখাল। অধিকারবোধ কী শুধু চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ হবে? না! বোন যখন হয়েছে সে, ভাইয়ের অনুক্ত কথা তাকে বুঝতেই হবে। এই দু’টো প্রানী সহজ সম্পর্কের মাঝে যেভাবে দুর্বোধ্যের দেয়াল গড়েছে তা তো পরস্পরের প্রতি অন্যায়৷ কিন্তু এ অন্যায় রুখবে কী করে? সৌমিত্রকে কী করে বোঝাবে সে? রুনা চিন্তিত চেহারায় উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
পরদিন বিকেলে রজনী ব্যাগ পত্তর নিয়ে তৈরি কোচিংএ যাবার জন্য। তার জীবনে এখন এই একটাই লক্ষ্য। পড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ান। গলগ্রহ হয়ে বাঁচতে চায় না সারাজীবন সে। জামিল সকালেই অফিসের কাজে বেরিয়েছে। রুনা রজনীকে একা ছাড়বে না কিছুতেই। বোরখা পরে সেও তৈরি হলো রজনীকে পৌঁছে দেবার জন্য। শুধু পৌঁছে দেবে বলেই যাচ্ছে না। কোচিংটা সম্পর্কে জানার ইচ্ছেটাও প্রবল তার। অনেক প্রশংসা শুনেছে জামিলের মুখে। জনপ্রতি দশটাকা অটোরিকশা ভাড়া এখান থেকে কোচিং পর্যন্ত। ওরা পাঁচ মিনিটে সেখানে পৌঁছে গেল। পাঁচ মিনিট লাগার কারন কোচিংএর অদূরের রাস্তাটার দু’পাশে বাজার। প্রচন্ড ভীর লেগে থাকে সেখানে দিনরাত। ওরা ভাড়া চুকিয়ে নেমে পড়ল কোচিংএর সামনে। পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের নিচের ফ্লোরটা সম্পূর্ণ কোচিং ক্লাসের জন্য বরাদ্দ। ডান হাতের সর্বকোনের ছোট্ট রুমটা অফিস রুম৷ রুনা রজনীকে সাথে নিয়ে সেদিকে হাঁটছে। তিনটে রুম থেকে স্টুডেন্টদের সামান্য শোরগোল শোনা গেলেও চারনম্বর রুমটাতে পিনপতন নীরবতা। দরজাটা ভেতর থেকে চাপানোয় রুমটার নিরবতার কারন কিছুই বোঝা গেল না। রুনা অফিস রুমে গিয়ে পরিচয় দিতেই একজন বসতে বললো সামনের চেয়ারটায়। এই কোচিং সেন্টার দু’জন শেয়ারে চালায়। একজন স্থানীয় নামকরা ম্যাথ টিচার অখিলচন্দ্র পাল অন্যজন তারই ভাইপো তন্ময় শেখর পাল। ব্যস্ততার দরুন অখিলচন্দ্র আজ আসেনি। তিনি রোজ রোজ আসেন না৷ সপ্তাহের দুইদিন স্পেশাল ক্লাসগুলোর দিনই শুধু আসেন। বাকি দিনগুলো তার প্রিয় ভাতিপো তন্ময় সহ আরও চারজন শিক্ষক ক্লাস করান। তন্ময় বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ভার্সিটি থেকে ইংলিশে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এমবিএ করছে পাশাপাশি এই কোচিং চালায়। রুনা এসব ডিটেইলস শুনল এক কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থীর কাছে। মেয়েটা রুনার পাশের বাসার। রজনীর সাথে মেয়েটির পরিচয় করিয়ে দিল রুনা। মেয়েটির কাছ থেকেই জানল-এখানে জব কোচিং সহ কম্পিউটার, সাচিবিকবিদ্যার ক্লাসও করানো হয়। রুনা মনে মনে ভেবে নিয়েছে এসএসসি শেষ হলে রজনীকে কম্পিউটার ক্লাসেও দেবে। আজকাল এটা খুবই জরুরি। ভবিষ্যতে লাগুক না লাগুক শিখে রাখতে সমস্যা কী? ওরা বসার পনেরো মিনিট পরে একজন উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের লম্বা যুবক এলো। পরনে নীল টিশার্ট আর জিন্স। ঢুকেই রুনাকে সালাম দিয়ে বসল তার নির্ধারিত চেয়ারে। সেখানকার কর্মচারীদের নিরবতায় রুনা বুঝতে পারল এটাই তন্ময়। তন্ময় বেশ গম্ভীর এবং চটপটে ভঙ্গিতে ড্রয়ার থেকে গতদিনের রজনীর ভর্তির কাগজটি হাতে নিল। স্থির চোখে কাগজটায় চোখ বুলিয়ে টেবিলে রেখে সরাসরি তাকাল রুনার দিকে। সাবলীল ভরাট গলায় বললো,
” ক্লাস কবে থেকে করাবেন?”
” জি, চেয়েছিলাম তো আজ থেকেই।”
তন্ময় হাত ঘড়ি এক পলক দেখে সরাসরি রজনীর দিকে তাকিয়ে বললো,
” আচ্ছা ঠিক আছে। এই কোচিংএর কিছু নিয়মাবলী আছে। আপনি কী সেটা অবগত আছেন?”
রজনী মাথা নাড়িয়ে না বলতেই চোয়াল ফুলে উঠল তন্ময়ের। রুনার দিকে বিনীত ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো,
” দেখুন আমরা যাকে তাকে কোচিংএ ভর্তি করাই না। এখানকার কিছু রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন আছে, যা আপনাকে মানতে হবে এবং বাধ্যমূলক। আপনার হাজবেন্ড মেবি গতকাল এসেছিলেন। কাকার পরিচিত বিধায় উনাকে ভর্তি করা হয়েছে, নয়ত সিট ছিল না এবং স্টুডেন্ট হিসেবেও সে কিন্তু এখানকার উপযুক্ত নয়।”
রুনা চুপ করে আছে। তন্ময়ের তাতে ভাবান্তর নেই। রুনার শুনেছে এই ছেলেটা দেখতে যতোটা সুদর্শন কথা ততোটাই ধারালো। এই ছেলের নামডাক খুব এলাকায়। এই কোচিংটারও সুখ্যাতি অনেক। সেটা শুধুমাত্র এখানকার কঠোর নিয়ম এবং স্টুডেন্টদের সাফল্যের জন্য। ভর্তি প্রসেস সহজ নয়। ভালো রেজাল্ট এবং মেধা যাচাই বাছাই করেই নেয় এরা। ধরা যাক কারো রেজাল্ট পূর্বে ভালো নয় কিন্তু তার মধ্যে মেধা আছে তাহলেই সিলেক্ট। গরিব বলে ফেলে দেয় না বরঞ্চ রাস্তা থেকে তুলে এনে পড়াচ্ছে এমন নজিরও আছে এদের। এই কোচিংএর প্রাক্তন বেশিরভাগ স্টুডেন্টই দেশের বড় বড় কলেজ,ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। রজনীকে উদ্দেশ্যে করে এমন বলার কারন ওর বোকা বোকা ভাব করে থাকাটা। এই যেমন একটু আগে তন্ময় প্রশ্ন করেছিল কিন্তু তার জবাব মাথা নাড়িয়ে দিয়েছে রজনী। তন্ময়ের রাগের কারন ছিল ওটা। সে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড পারসোন সুতরাং তার সামনে যে আসবে তাকেও এমনই হতে হবে স্পেশালি তার স্টুডেন্ট। সে যে কতোটা স্ট্রিক্ট টিচার একটু পরেই বুঝবেন আপনারা।
তন্ময় কথা প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলে না। নিয়মাবলী সম্বলিত একটা কাগজ রুনার দিকে এগিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। রুনাও সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। তন্ময় রজনীকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
” আপনি আমার সাথে আসুন।” তারপর রুনার দিকে তাকিয়ে বিনম্র গলায় বললো,
” আপনি একটু বসুন আমি আসছি।”
তন্ময় বের হতেই রুনা রজনীর কাঁধে হাত রেখে অভয় দিয়ে বললো,
” যা। ভয় পাবি না। আমি আছি তো।”
রজনী অবনত মস্তক নাড়িয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো। অফিস রুমের বাইরে কাউকে পেল না। কোথায় যাবে ভাবতে ভাবতে একটা রুমের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। আচমকা তন্ময় পাশের রুমের দরজা খুলে রুক্ষ গলায় বললো,
” ভেতরে আসুন।”
কিছুটা চমকে উঠেছিল রজনী। নিজেকে সামলে আধোমুখে ভেতরে ঢুকল। সামনে তাকাতেই দেখল তারই বয়সী ৭/৮জন ছেলে মেয়েরা লেখায় মগ্ন। কয়েকজন আড়চোখে একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার লেখায় মনোযোগ দিল। প্রত্যেকের সামনে প্রশ্ন পত্র এবং লেখার খাতা। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না কথা বলা তো দূরের থাক। রজনী বুঝতে পারল এরা পরীক্ষা দিচ্ছে। তন্ময় আঙুল দিয়ে তৃতীয় বেঞ্চ দেখিয়ে রজনীকে বসতে বললো। চুপচাপ সেখানে গিয়ে বসল রজনী। পাশে হলুদ সালোয়ার কামিজ পরা মেয়েটা একনজর তাকাতেই “মিতুল” বলে ধমকে উঠল তন্ময়। মিতুল মেয়েটা ভয়ে ভয়ে বললো,
” সরি স্যার।” মিতুলের কথা উপেক্ষা করে তন্ময় এগিয়ে এলো রজনীর নিকট। মিতুল ততোক্ষণে নিজের লেখায় মনোযোগ দিয়েছে পুরোপুরি। তন্ময় রজনীর টেবিলে হাত রেখে বললো,
” অপেন ইওর ইংলিশ গ্রামার বুক।”
রজনী ব্যাগের ভেতর থেকে বইটা বের করে সামনে ধরল। তখনই গম্ভীর গলায় তন্ময় বললো,
” আই সে অপেন ইওর ইংলিশ গ্রামার সো অপেন ইট অ্যান্ড লুক এট দ্য বোর্ড।” তন্ময় সরে এসে দাঁড়ায় বোর্ডের কাছে। বোকামী করার জন্য আরেকবার লজ্জিত হয় রজনী। তন্ময় বোর্ডে বইয়ের পৃষ্ঠা নাম্বার লিখে ঘুরে দাঁড়ায়। রজনী বোর্ডে লেখা পৃষ্ঠা নাম্বার অনুযায়ী পৃষ্ঠা খোলে। ন্যারেশন! রজনী বড়সড় ঢোক গিলল ন্যারেশন দেখে। অদূরে দাঁড়ান তন্ময় সেটা বুঝে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো রজনীর পাশে। এবার নিচু গলায় বললো,
” করেছেন কখনো ন্যারেশন? ”
রজনী মাথা নাড়াতেই তন্ময় গম্ভীর গলায় বলে,
” স্টান্ড আপ।”
রজনী সভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। পাশের সারির বেঞ্চে বসা একটা ছেলে এদিকে তাকাতেই হাতের মার্কার ছুরে মারে তার দিকে তন্ময়। ছেলেটার বাহুতে লেগে নিচে পড়ে যায় মার্কার। চুপচাপ সেটা উঠিয়ে সামনে রেখে অপরাধী মুখে লিখতে থাকে আবার ছেলেটা। রজনীর বুক কাঁপছে। মনে হচ্ছে কোনো রাক্ষস পুরীতে এসে গেছে ও। সামনে দাঁড়ান লোকটা মানুষের অবয়বে একটা রাক্ষস। রজনী একটু ভুল করলেই ঘাড় মটকে দেবে। কাঁদো কাঁদো রজনী টেবিলের কোনা খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় দু’হাত বুকের উপর ভাঁজ করে রজনীর দিকে তাকিয়ে বললো,
” হোয়াটস ইওর নেম?”
” রজনীকান্তা বিশ্বাস।” কাঁপা গলায় জবাব দিল রজনী।
তন্ময় বললো,
” মিস বিশ্বাস, আমার ক্লাসে কিছু নিয়ম আছে। তারমধ্যে কিছু আপনি অলরেডি বুঝে নিয়েছেন বাকি গুলোও ধীরে ধীরে বুঝে যাবেন আশা করি । আর একটা কথা মন, মস্তিষ্ক গেঁথে নিন। আমার স্টুডেন্টস চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলে। আপনি এর ব্যতিক্রম করতে পারবেন না। বুঝাতে পেরেছি?”
” হ্যাঁ স্যার।” নত মুখে বলে নিজের ভুল বুঝে ভয়ে চোখ তুলে তাকায় সাথে সাথে। তন্ময় চোখ ছোট করে একবার রজনীর ভীরু চোখের দিকে তাকিয়ে চলে আসে বোর্ডের কাছে। যেই ছেলেটার কাছে মার্কার ছিল ওর নাম ধরে ডাকতেই ছেলেটা মার্কার ছুঁড়ে দেয়। একহাতে লুফে নিয়ে হোয়াইট বোর্ডে বড় বড় করে ন্যারেশনের একটা পৃষ্ঠা নাম্বার লিখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রজনী বোর্ড থেকে চোখ সরিয়ে বইয়ের ঐ পৃষ্ঠা খুঁজছিল। তন্ময় সেদিকে তাকিয়ে বললো,
” মিস বিশ্বাস,আগামীকাল এই পেজের সবগুলো রুলস শিখে আসবেন সাথে লিখেও আনবেন। ওকে!”
রজনী পেজ উল্টানো বাদ দিয়ে সভয়ে তন্ময়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বললো। তন্ময় মার্কার টেবিলের উপর রেখে হাতের ইশারায় রজনীকে বসতে বলে বললো,
” এখন এটাই পড়তে থাকুন।”
রজনী বসে স্যারের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বইয়ের নির্দিষ্ট পেজটা খুঁজে পড়তে লাগল। তন্ময় দু’কদম এগিয়ে এসে বললো,
” বুঝতে সমস্যা হলে বিনা সংকোচ প্রশ্ন করবেন। যদি না করেন তার দায় আপনাকেই বহন করতে হবে মিস বিশ্বাস।”
রজনী কথাটা শুনে একবার তাকাল তন্ময়ের দিকে। তন্ময় ততোক্ষণে দৃষ্টি সরিয়ে ঘুরে ঘুরে বাকি স্টুডেন্টদের দেখছে। তারপর সোজা বেরিয়ে গেল বাইরে৷ তন্ময় যাওয়ার পর দু’একজন মৃদু হেঁসে রজনীর দিকে তাকিয়ে ইশারায় পড়তে বললো। ওদের ইশারা বুঝে পড়ায় মনোযোগ দিল রজনী।
তন্ময় ফিরে এলো রুনার সামনে৷ বসে বললো,
” পড়েছেন নিয়মাবলী? ”
রুনা বললো,
” জি।”
তন্ময় ঝুঁকে দু’হাত টেবিলের উপর রেখে বলে,
” আপনার কী হয় মিস বিশ্বাস?”
” বোন।”
” আপন? ”
” ও হিন্দু আমি মুসলিম৷ তবে কিছু সম্পর্ক রক্তের নয় আত্মার হয়। সেদিক দিয়ে আপন”
এই এতোটুকু সময়ের মধ্যে এবার সামান্য হাসল তন্ময়। তন্ময়ের হাসি দেখলেই তন্ময় নামের সার্থকতা উপলব্ধি করা যায়। তন্ময় ওভাবেই বললো,
” সেটা ঠিক। যা হোক, পার্সোনাল বিষয় জানার জন্য প্রশ্ন করিনি। প্রশ্নটা করেছি মিস বিশ্বাস সম্পর্কে কিছু কথা বলব বলে। দেখুন আপু, এখানে যারা পড়তে আসে সবাই দুই ঘন্টা আমাদের তদারকিতে থাকে। বাকি বাইশঘন্টা আপনাদের আই মিন পরিবারের কাছে থাকে। একটা স্টুডেন্টের জন্য দুই ঘন্টা পড়াটা কিন্তু পড়া নয়। এটলিস্ট পাঁচ ঘন্টা তাকে পড়তে হবে। আর আমাদের এখানে পড়লে, তাদের আরও বেশি সময় টেবিলের বই খাতার সামনে দিতে হবে। সো আপনি এদিকটা একটু খেয়াল রাখবেন৷ আপনার বোনকে কিন্তু নতুন বলে একচুল ছাড় কিংবা এক্সট্রা কেয়ার নিতে পারব না আমরা। তাকেই এবং আপনাদের সেটা নিতে হবে। আমরা বুঝিয়ে, দেখিয়ে দেব এবং সুদে আসলে পড়া আদায় করে নেব। এর অন্যথা হলে যথেষ্ট শাস্তি পেতে হবে তাকে। যার কারনে কোনো কৈফিয়ত অথবা বিচার এখানে গ্রহনযোগ্য হবে না। এখানে ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখানো হয় না শুধু, তা কীভাবে বাস্তবে পরিনত করতে হয় সেটাও শিখিয়ে দেই। এখানের দুই ঘন্টা, চব্বিশ ঘন্টার সারাংশ যেন হয় সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করছি আপনাকে।”
রুনা তন্ময় হয়ে তন্ময়ের কথা শুনল। এই ছেলের গলার স্বর চমৎকার। কানে ঝঙ্কার তোলে প্রতিটি শব্দ। আশেপাশে যারা বসা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনল যেন এই প্রথম শুনছে,অথচ প্রতিটি গার্ডিয়ানকেই এই কথাগুলোই বলা হয়ে থাকে। রুনা মৃদু হেঁসে সম্মতি জানাল। রজনী সম্পর্কে কিছু বলবে ভেবেও এসব শুনে বললো না। বলার প্রয়োজন বোধ করল না সে। তার নিজের ইচ্ছা রজনী পড়ুক। এই কষ্টের সিঁড়ি ডিঙিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে ধাবমান হোক।
চলবে,,,
“তুমি অতঃপর তুমিই” দু একদিন পরে পাবেন।