বিলম্বিত বাসর পর্ব ১০

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_১০
#Saji_Afroz
.
.
.
২দিন পর…..
নিজের বাসায় এসেই বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো আবেশ।
নিজের রুমটা তার কাছে স্বর্গ ছাড়া কিছুই মনে হয়না। ৩দিন আদুরের বাসায় রাত্রীযাপন করেছে সে। আদুরে পাশে থাকলেও কোনো কিছুর অভাব সে বোধ করেছে। আজ বুঝতে পারলো তা কি। তা হলো নিজের রুমটা!
.
.
.
-তোমার ইচ্ছে হলে থাকতে আরো কিছুদিন।
.
ফাতেমা বেগমের কথা শুনে হাসিমুখে আদুরে বললো-
আপনাদেরও মিস করছিলাম মা। তাই চলে এসেছি।
-যখনি যেতে ইচ্ছে করে আমাকে বলবে, ঠিক আছে?
-জ্বী, ঠিক আছে।
.
আদুরের প্রতি বেশ খুশিই হয়েছেন ফাতেমা বেগম। তার কথামতো তিনদিন থেকেই আদুরে চলে এসেছে কিনা!
.
.
.
আয়ান বাবাজি তোকে ভালোভাবে পড়ায়তো?
.
পেয়ারায় মাত্র কামড় বসিয়েছে পরী। মায়ের প্রশ্নে হাত দিয়ে ইশারায় একটু অপেক্ষা করতে বললো।
মেয়ের কান্ড দেখে মুচকি হাসলেন নাসরিন আক্তার। কি সুন্দর লাগছে তাকে! কি সুন্দর এই পেয়ারা খাবার দৃশ্য। মেয়েরা এতো সুন্দর হয়া ঠিক না। গরীবের মেয়েতো একেবারেই না, ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো নাসরিন আক্তারের বুক চিরে।
মুখে থাকা পেয়ারার টুকরোটা চিবিয়ে নিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে পরী বললো-
এবার বলো মা?
-বলছিলাম আয়ান তোকে ভালোভাবে পড়ায়?
-হু।
-বকে?
-হুম বকে। না পারলেই বকে। আবেশ ভাইয়ার মতো শান্তভাবে পড়ায় না। বাচ্চার মতো সব পড়ায়। জানো মা? A তে Apple, B তে Ball পর্যন্ত লিখিয়েছে আমাকে দিয়ে। এগুলা নাকি অনেক বড় বাচ্চারাই ভুল করে।
.
পরীর কথা শুনে হালকা হাসলেন নাসরিন আক্তার। পরী তার দিকে তাকিয়ে বললো-
হাসার কি হলো?
-তোকে আবেশের চাইতে আয়ানই ভালোভাবে পড়াচ্ছে।
-বললেই হলো! আবেশ ভাইয়াই বেস্ট ছিলো।
-কি ছিলো?
-ভালো ছিলো। কতো সুন্দর ঠান্ডা মাথায় পড়াতো ভাইয়া।
-গরম মাথায় পড়ালে
পড়া মনে বেশি থাকে।
-হু! তোমাকে বলেছে?
-আজ পড়তে যাবিনা?
-যাবো।
-আয়ানের জন্য পেয়ারা নিয়ে যা। বলবি আমাদের গাছের পেয়ারা।
-ঠিক আছে।
.
.
.
-এই যে?
.
আবেশকে ডাকার পরেও তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তার পাশে বসে পড়লো আদুরে।
বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আবেশ। মনে হচ্ছে অনেকদিন সে ঘুমোতে পারেনি।
আদুরে তীক্ষ্ণস্বরে ফুঁপিয়ে বলে উঠলো-
এসে মাত্রই এভাবে ঘুমানোর কারণ কি?
আদুরের কথা কানে বাজতেই চোখ জোড়া মিটমিট করে খুলে তাকালো আবেশ।
আদুরে আবারো বললো-
কি সমস্যা তোমার?
-এতো হাইপার হচ্ছো কেনো তুমি? এই কয়েকদিন কম খাটনি হলো? এই দাওয়াত ওই দাওয়াত করে দিনগুলো গেলো। তার উপর অন্য একটা জায়গা। সবমিলিয়ে ঘুমের বড্ড ক্ষতি হলো।
-আচ্ছা! তা আমি যে এখানে এসেছি? আমার কোনো সমস্যা হয়না?
-এটা তোমার স্বামীর বাড়ি।
-ওটা তোমার বউ এর বাড়ি।
-উহু ঝগড়া করোনা। ঘুমোতে দাও।
.
-যে জামাই বাসর রাতেও ঘুমাই তাকে এখন আর কি বলবো আমি। ধকল শুধু তার উপরই যায়, আমিতো প্লাস্টিক!
.
বিড়বিড়িয়ে এসব বললো আদুরে।
আবেশ মাথাটা উঠিয়ে প্রশ্ন করলো-
কিছু বললে?
-হু! ঘুমোতে বললাম।
-ধন্যবাদ।
.
.
.
আয়ানের কথা শুনে টমেটোর মতো লাল হয়ে গেলো পরীর মুখ।
“লাল টুকটুকে কামিজে তোকে আজ সেই লাগছে। চুলগুলো খুলে রেখে ভালোই করেছিস। ”
.
এসব কথা শুনে ভালো লাগেরই কথা। কিন্তু পরক্ষণেই আয়ানের পরের কথা শুনে পরীর হাসি মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
-কি ভেবেছিস? পেয়ারা আনলে আমি গলে গিয়ে এসব বলবো তোকে? শান্ত হয়ে পড়াবো তোকে? মোটেও না। আমাকে পটানো এতো সহজ না। আমি পড়ানোর সময় না হবে কোনো গল্প না হবে কোনো কথা। তাই আমাকে পটানোর কোনো চেষ্টা তুই করবিনা। বুঝেছিস?
.
পরী ঘাড় নেড়ে ক্ষীণ স্বরে বললো-
হুম।
.
আয়ান ধরা গলায় বললো-
পড় এখন।
.
রাগে সারা শরীর কাঁপছে পরীর।
ইচ্ছে করছে ঘাড়টা মোচড়ে দিতে আয়ানের। কিন্তু সে নিরূপায়। তাই মাথাটা ঠান্ডা করে চুপচাপ মন দিলো পড়ায়।
.
.
.
আমার নতুন জুতোটা ছিড়ে গেলো।
লামিয়ার কথা শুনে হো হো শব্দে হেসে উঠলো আয়ান, যেনো ভীষণ একটা হাসির কথা।
হাসি থামলে বললো-
তোমার পায়ে নতুন জুতো পর্যন্ত ১দিন টিকেনা। এই আমিই টিকে আছি।
-কি বলতে চাইছো তুমি?
.
লামিয়ার গম্ভীরমুখ দেখে আয়ান হালকা হেসে ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে বললো-
কই কিছু নাতো।
-আমাকে তুমি কুটনি বুঝাতে চেয়েছো। আমি কি বুঝিনা কিছুই? এখন থেকে কাল সকাল পর্যন্ত তোমার সাথে কথা বন্ধ আমার।
-আরে শুনো? জুতোটা সেলাই করতে হবে।
.
পায়ের জুতো জোড়া হাতে নিতে নিতে লামিয়া বললো-
সেটা আমি দেখে নিবো। তুমি একদম আমার পেছন পেছন আসবেনা।
.
কিছুদূর হেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো লামিয়া। পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো আয়ান তার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
মুচকি হেসে আয়ান বললো-
তুমিতো বাসায় গেলেই ফোনটা বন্ধ করে দিবে। তাই এতোটুকুই নাহয় তোমার পিছুপিছু আসি?
.
.
আগের স্মৃতি চারণ করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো লামিয়া। আজ টানা তিনদিন হলো আয়ানের ফোন বন্ধ। মনে হচ্ছে আরেকদিন হলেই তার দমটা আঁটকে যাবে৷ আয়ানের সাথে একটু কথা বলার কি কোনো ব্যবস্থা নেই?
.
.
.
ঘড়িতে সময় বিকাল ৫টা…
আবেশের পাশে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখটা লেগে এসেছিলো টেরই পায়নি আদুরে।
রুমের বাইরের চেঁচামেচির শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো তার। বিছানা ছেড়ে উঠে চোখ জোড়া কচলাতে কচলাতে দরজা খুলে ড্রয়িংরুমের দিকে এগুলো সে।
.
.
-লজ্জা শরম নাই? বাপ মা কই থাহে তোমার? এতবড় জোয়ান মাইয়াডারে পর পুরুষের বাসায় পাঠাতে তাগো বিবেকে বাধেনাই?
.
একটি শ্যামবর্ণের, চিকনা গঠনের মেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আয়ানের পাশে।
তাদের সামনের সোফায় বসে আছেন ফাতেমা বেগম।
মেয়েটিকে নানাধরনের কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন মোরশেদা।
কি করেছে এই মেয়েটি? আর কিইবা তার পরিচয়?
.
ভাবতে লাগলো আদুরে।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here