বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি
উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)
পর্ব :২৯
সেহেরের জ্ঞান ফিরে পরের দিন সকালে।চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে পায়।তাকে ঘিরে চারদিকে বাড়ির সবাই।পিটপিট চোখে সামনে দাদীমাকে দেখতে পায়।ব্যথাতুর শরীর নিয়ে বসতে গেলে ফলস্বরুপ বেডে উপুড় হয়ে পড়ে।হাত পায়ে ব্যান্ডেজ লাগানো মাথায় ব্যান্ডেজ । সারা শরীর জুড়ে ভীষণতর ব্যথা।দাদীমা সেহেরের কাছে এসে ঠিক ভাবে শুয়ে দিতে দিতে আওয়াজ করে বলে,”আহ! এই শরীর নিয়ে উঠছ কেন।”
সেহের ব্যথাতুর স্বরে বলে,”আমি এখানে কি করে? ”
দাদীমা বলল,”গতকাল তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছে,উনারা তোমায় নিয়ে এসেছে ”
দাদীমায়ের ইঙ্গিত অনুযায়ী সেহের সামনের দিক তাকাল। গতকালকের কালো পোশাক পরিধানকৃত সেই দুই ব্যাক্তি দাড়িয়ে।সেহের হালকা আওয়াজে বলে,”আপনারা আমার পিছু নিয়েছিলেন কেন? ”
তাদের মধ্যেকার একজন মাথা নিচু করে আমতা আমতা স্বরে বলল,” সরি ম্যাম ,স্যার চব্বিশ ঘণ্টা আপনার আশেপাশে থাকতে বলেছিল। তাই …”
সেহেরের বুঝতে বাকি রইল না এটা আরহামের কারসাজি । সেহেরের অভিমান গাল ভারী । এই সব মিথ্যা দরদের কি দরকার? আজ ষোলদিন কানাডা যাওয়ার পর একবার ঠিকঠাক কথা বলছে না। অথচ সে দেশে গার্ড লাগিয়ে রেখেছে।কে বলেছে এমন কেয়ার করতে?
তেতো মুখ করে ড্যাবড্যাব চোখে বাহিরে তাকায়।দিশা সেহেরের পাশে টুলটায় বসে মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করে,”এখন কেমন লাগছে? ”
সেহের বাহিরের দিকে মুখ ফিরিয়ে কাঠকাঠ গলায় উত্তর দেয়,”কিছুটা ভালো ”
দিশা মেয়ের দিকে টলটল চোখে তাকিয়ে থাকে।মেয়ের রাগ বিন্দু মাত্র কমেনি।শান্ত মানুষের বুঝি এই বৈশিষ্ট্য ।শান্ত অবস্থায় প্রশান্ত সাগরের মত শান্ত।আর রেগে গেলে জ্বলন্ত অগ্নিগিরির লাভার মত !
সকাল থেকে রাত অবধি সেহের কয়েকবার ফোন চেক করল।নো কল ,নো মেসেজ! আরহাম কি তার অসুস্থতা কথা জানে না? নাকি জেনে ইচ্ছে করে খোঁজ নিচ্ছে না।সেহের গম্ভীর মুখ করে কথা গুলো ভাবল।
মালিহা খানম সারারাত হসপিটালে ছিলো।দিশাও বাড়ি ফিরেনি।গতরাতে গাকেঁপে সেহেরের জ্বর এসেছিল ।নির্ঘুম সারারাত হসপিটালের বেডে কাতরেছে।ভোর বেলায় ঘুমিয়েছে ।সেহেরের সাথে মালিহা দিশা দুজন- ই জেগে ছিলো।দু’চোখের পাতা কেউ- ই এক করেনি। ক্যান্টিন থেকে চায়ের কাপ নিয়ে মালিহা খানম মাত্র বসেছে ।এমন সময় তার চোখ আটকায় সামনের দিকে।বড় বড় পা ফেলে আরহাম আসছে।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আছে।চোখে মুখে আকাশ চুম্বী ক্রুদ্ধতা ছেয়ে।নাকের পাটা ফুলে।মালিহা আরহামের রাগের প্রলয় আঁচ করতে পারছে ।চায়ের মগ রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায়।আরহামের কাছে যেতে কিছু বলবে ,তার পূর্বেউ আরহাম হাত দেখি থামিয়ে দেয়।ক্রুদ্ধ স্বরে চিৎকার করে বলে,”সেহের আপনার দায়িত্ব ছিলো, এমন কি করে ঘটল? ”
মালিহা আমতাআমতা গলায় কিছু বলতে যাবে আরহাম থামিয়ে দিয়ে বলে ,”ব্যস ,আর একটা কথাও না। কারো উপর আমার আর বিন্দু পরিমান বিশ্বাস নেই। সবাই অকেজো । আপনার কথায় ভরসায় সেহেরকে রেখে কানাডায় গিয়েছিলাম ।আপনি কি করলেন? ইট’স রিয়ালি ডিসিপয়েন্টেড মি! ”
বলেই হুড়মুড় করে কেবিনের ডুকে গেলো।মালিহা দিশা কেউ- ই আর কেবিনে ঢুকার সাহস করল না।কেই বা যেচে যেয়ে বাঘের ক্রোধের মুখোমুখি হতে চাইবে ?
সেহেরের ঘুম কাটল দুপুরের পর।আবছা আবছা চোখ খুলে সামনে কারো ঘোলাটে প্রতিচ্ছায়া লক্ষ করে।ছায়াটা তার বেশ পরিচিত।চোখ পরিষ্কার করে ভালো করে চাইতেই সেই চিরচেনা মুখখানা ভেসে উঠে।আনমনেই ঠোঁটের কোনে মিহি হাসি ফুটে উঠে।স্বপ্ন আর বাস্তবের ফারাক খুঁজতে সেহের নিজের হাতে চিমটি কাটল।নাহ,স্বপ্ন না বাস্তব ।তার প্রিয়মানুষটা সত্যি তার সামনে!
আরহাম পলকহীন ভাবে সেহেরের দিকে তাকিয়ে।মৃদু হাতে সেহেরের চুলে বিলি কাটছে। আরহামের আদুরে চাহনি সেহেরের হৃদমাঝারের শান্ত প্রবাহিণীতে উতলা ঝড় বইছে।সেহের টলটল চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে । হাজার বছরের চোখের পিপাসা নিবারণ করছে।দুজনের ঘোর কাটে সেহেরের আলতো স্বরে,”কখন ফিরেছেন? ”
আরহাম আগের মত একই চাহনি রেখে উত্তর দিলো ,”সকালে! ”
“ডাকলেন না যে? ”
“তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই। কেমন আছো? ”
“যেমন ছেড়ে গেছেন , ধীরূজ নিষ্প্রাণ! ”
সেহেরের ধারালো কথা আর তীক্ষ্ণ চাহনি আরহামের হৃদপিণ্ডকে ফালা ফালা করছে।বেশিক্ষণ এই চোখের গহীনে তাকানো যাবেননা অন্যথা কোন এক অদৃশ্য মায়াপুরীতে হারিয়ে যাবে।জোরালো এক নেশায় আবদ্ধ হবে!
আরহাম চোখ সরিয়ে জানালার বাহিরে দূর আকাশে চাইল । সূর্যিমামা অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। দিনের আলো প্রায় শেষের দিকে।সেহের আরহামের দৃষ্টিকে অনুসরণ করে দূর অম্বরে চোখ রাখল।ধীর স্বরে বলল,”না আমার থেকে পালাতে পারছেন।না আমাকে এড়িয়ে চলতে পারছেন ।এই মিছে চেষ্টা কেন ? ”
আরহাম কোন উত্তর দিলো না।সেহেরো উত্তরের আশা না করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বুঝে নিলো!
পরদিন সকালে সেহেরকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হলো।আরহাম সেহের এক গাড়িতে।দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা ।গতকাল সেই বিকালের পর দুজনের মাঝে কোন কথা হয়নি।আরহাম দুএক বার চেষ্টা চালালেও সেহের বরাবরের মত মুখে আঠা লাগিয়ে বসে। গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে।সেহের চোখ বুজে সিটে গা এলিয়ে ।হুট করে সেহের কাঁশতে শুরু করে।আরহাম পানির বোতল এগিয়ে দিলে সেহের মুখ ফিরিয়ে নেয়। আরহাম বেশ কিছুক্ষণ সেহেরের দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।রাগ দমাতে গাড়ির স্টিয়ারিং এর উপর সজোরে বাড়ি মারে।সেহের কোন রকম ভ্রুক্ষেপ না করে আগের ভঙ্গিমায় বসে থাকে।যেন কিছুই হয়নি।
গাড়ি থেকে নামার সময়ও সেহের একই জেদ ধরে।সে কোন ভাবেই আরহামের কোলে করে রুম অবধি যাবে না।এই ব্যথাতুর খোঁড়া পা নিয়ে একাই যাবে।আরহামও নাছোড়বান্দা সেহেরকে পাতাল কোল করে রুম অবধি নিয়ে যায়।
সারাদিন দুজনের চোখাচোখি যুদ্ধে পার হয়।প্রত্যেক বেলা খাবার থেকে শুরু করে ঔষধ পর্যন্ত সব কিছু নিয়ে সেহের জেদ ধরছে ।আরহাম তা জোর খাটিয়ে করাচ্ছে।একজন বুনো ওল অন্যজন বাঁঘা তেঁতুল!
রাতে আরহাম পায়ের ড্রেসিং করতে আসলে সেহের চুপচাপ বসে থাকে।কোনপ্রকার কথা বলে না ।না বাঁধা দেয়।গোল গোল চোখ করে আরহামের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে।আরহাম পায়ে মেডিসিন লাগাতে লাগাতে বলে,”এবার বাঁধা দিলে না যে? ”
সেহের তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,”আমি বাঁধা দেওয়ার কে? আদৌ সে অধিকার কি আমার আছে? ”
আরহাম কোণাকোণি চোখ করে সেহেরের দিকে চাইল ।আরহাম বেশ বুঝতে পারছে সেহের কি বুঝাচ্ছে।আরহাম কোনপ্রকার প্রত্যুত্তর করল না।
ড্রেসিং করে সরে যেতে নিলে সেহের পেছন থেকে হাত আটকায়।অশ্রুভরা টলটল চাহনি।ভিতর ভেঙ্গেচুরে কান্না বেরিয়ে আসছে।সেহের কোনরকম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলল,”কি সমস্যা আপনার? এমন বিহেভ করছেন কেন? ”
আরহাম পেছনে ফিরে সেহেরের হাত ছাড়িয়ে চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে বলল,”অসুস্থ শরীর ,অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো! ”
বলেই কাবার্ডের সামনে কাপড় বের করতে দাড়াল।সেহের কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে খোঁড়া পা নিয়ে আরহামের পিছনে দাড়ায়।শক্ত করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললে,”এমন অসুস্থ হয়ে যদি আপনাকে কাছে পাওয়া যায়। তবে সারাজীবনের জন্য এই অসুস্থতাকে মঞ্জুর।”
আরহাম পেছন ফিরতে চাইল কিন্তু পারল না সেহের শক্তভাবে আরহামকে জড়িয়ে।আরহাম গাঢ় স্বরে বলল,”কেন এমন পাগলামো করছ ? ক্ষত এখনো কাঁচা, কোথাও লেগে যাবে। ”
“লাগলে লাগুক! বাহিরের ক্ষত আপনার চোখে পড়ছে, ভিতরে যে ক্ষণে ক্ষণে এমন হাজারো ক্ষত হচ্ছে তা কি আপনার চোখে পড়ছে না? একবার এই চোখ জোড়ায় তাকান।মনের গভীরত্ব মেপে দেখুন কতটা জলে হাবুডুবু খাচ্ছি ।”
আরহাম সেহেরকে সামনে টেনে আনল।শক্ত করে গাল চেপে।কপালের সাথে কপাল মিলিয়ে ,চোখে চোখ রেখে গাঢ় স্বরে বলল,”আরেকবার ভেবে দেখো এর পরিনাম কিন্তু ভয়ানক হবে! ”
“ভাবা ভাবির সময় অনেক আগে পেড়িয়ে গেছে,এখন এটাই একমাত্র পথ।আপনাকে আমার প্রয়োজন ,খুব করে প্রয়োজন ”
আরহাম সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সেহের লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো ।আরহাম এক সেকেন্ডও অতিক্রম না করে সেহেরের ওষ্ঠদ্বয়ে নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে মিলিয়ে নিলো।মিষ্টি আবেশে দুজন জড়িয়ে রইল।
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি
উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)
পর্ব :৩০
সময় তার নিজ গতিতে চলছে।সময়ের সাথে আরহাম সেহেরের সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়েছে।অপ্রকাশিত ভালোবাসার অনুভূতি গুলো যে এতোটা সুন্দর হয় সেহেরের জানা ছিলো না।আরহামের প্রত্যেক কাজ কেয়ার সেহেরের মনে গাঢ় দাগ কাটে ।
সবকিছু ঠিক চলছিল । হুট করে একদিন বাড়িতে অতিথির আগমন ঘটে।
শৈত্যপ্রবাহ চলছে।চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন।আজকাল সূয্যি মামার দেখা খুব একটা মিলে না।মাঝেমাঝে দুপুর দিকে দুএকবার উঁকিঝুঁকি দেয়।কনকনে শীতের সকাল। সেহের গোসল সেরে নিচে নামতে দেখে বাড়িতে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।দাদীমা নিজে দাড়িয়ে থেকে কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে ।বাড়ির সবকিছু ঝকঝক চকচক করে পরিষ্কার করিয়েছে।কোনার গেস্ট রুমটাও খুলে দেওয়া হয়েছে।বাড়িতে বিশেষ অতিথি আসছে। আরহামের ছোট বেলার বন্ধু মিহি, কানাডা থেকে দেশে ফিরছে।গতরাত থেকে এ পর্যন্ত সেহের হাজারবার মিহি নাম শুনে ফিলেছে।শ’বার তো দাদীই জপে গেছে। সে সাথে আরহাম তো আছেই ।কোন এক অজানা কারণে সেহেরের মিহি নামক মেয়েটার উপর ভীষণতর জেলাসি কাজ করছে।এর পেছনে মূল কারণ কি তা সে নিজেরও অজানা। হয়তো আরহামের এতো কাছের বন্ধু বলেই! সেহের রাগ আকাশ চুম্বী রূপ নেয় যখন জানতে পারে আরহাম নিজে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে যাবে। না আরহামকে কিছু বলতে পারছিল, না সইতে।শুধু গাল ফুলিয়ে বসে ছিলো ।এতো লোক থাকতে তাকেই কেন যেতে হবে? জীবনে কিছুকিছু সময় আসে না কিছু বলা যায় ,না সহ্য করা যায়।তবুও সবটা মেনে কৃত্রিম হাসতে হয়।সেহেরের সাথেও তাই হচ্ছে।সবকিছু দেখছে মানছে আর কৃত্রিম হাসছে।
আরহাম মিহিকে রিসিভ করতে বেরিয়েছে সেই অনেকক্ষণ।সেহের বারবার ঘড়ির দিকে চোখ রাখছে।বরাবর এগারোটা বাজে, ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে সেই আটটায় । এখনো কেন বাড়ি ফিরছে না? চিন্তায় সেহেরের হাল নাজেহাল । মনে কোথাও ইন্সিকিউর ফিল হচ্ছে।ভয় হচ্ছে ,আরহামের সেই বাচ্চা প্রেমিকা মিহি- ই না হয়ে বসে!
আরহাম বাড়ি ফিরল বরাবর একটায়।গাড়ির শব্দ পেয়ে সেহের তড়িঘড়ি করে নিচে নামে।সিড়ির কাঠ ধরে দাড়াতে দেখে আরহাম সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে।পেছনে হয়তো মিহি আরহামের উচ্চতার কারণে তাকে ঠিক দেখা যাচ্ছে না।সেহের ঘাড় বাঁকিয়ে উঁচু করে চাইল।মিহি নামক মেয়েটিকে দেখে সেহের অপ্রত্যাশিত ভাবে হতভম্ব হয়ে রইল।উঁচা লম্বা স্লিম গড়নের এক অপূর্ব সুন্দরী।লম্বায় পাঁচ ফুট চার পাঁচ তো হবে- ই।মেদহীন স্লিম ফিগার।লম্বাটে মুখ।গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা।বিচ ব্রাউন সেমি কার্ল চুলগুলো পিঠ অবধি।পোশাকআশাক সাজসজ্জা দেখে মনে হচ্ছে হলিউড হিরোইন।ড্রেসিং সেন্সও একদম তুখোড়। জিন্সের সাথে ক্রিম কালার গেঞ্জি তার উপর স্কাই ব্লু জেকেট।মেঝের টাইলসের সাথে হাই হিলের সংঘর্ষে কটকট শব্দ হচ্ছে।সেহের ড্যাবড্যাব চোখ করে মিহির দিকে তাকিয়ে।মিহিকে দেখে মালিহা বেগম সহ বাড়ির অন্যসবার মুখে হাসির রেখা চওড়া হয়।মিহি সবার সাথে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত।সেহের ফাঁক বুঝে কিচেনের দিকে অগ্রসর হয়।জলখাবারে ব্যবস্থা করতে।লতা খালাকে দিয়ে জলখাবার পাঠিয়ে সেহের হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে।বড় হল ঘরটায় হাসিঠাট্টার জোরদার আওয়াজ । সবাই একত্রে গল্প করছে।দিশা,লিয়া সহ সবাই উপস্থিত! সেহের ধীর পায়ে সোফার কোণ ঘেঁষে দাড়াল। দূর থেকে দেখল আরহাম সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে।ক্লান্তির ছাপ মুখে স্পষ্ট ফুটে।কেমন জানো গভীর চিন্তায় বিভোর । আরহামের সাথে চোখাচোখি হতেই সেহের মিষ্টি হাসল।আরহাম আলতো ইশারায় সেহেরকে নিজের কাছে ডাকল । সেহের বাধ্য মেয়ের মত আরহামের পাশে যেয়ে বসল।আরহাম কোণাকোণি চোখে তাকিয়ে রইল।সেহের আলতো স্বরে জিগ্যেস করল,”ফিরতে এতো দেরী হল যে? ”
“ফ্লাইট দুই ঘন্টা ডিলে ছিলো ”
“ভীষণ ক্লান্ত কি ? ”
“উহু, ছিলাম! তোমাকে দেখে সব ক্লান্তি কেটে গেছে! ”
সেহের লজ্জিত ভঙ্গীতে চোখ নামিয়ে নিল।মিহির সেহেরের দিকে চোখ পড়তেই তড়াক করে উঠে দাড়ায়।উল্লাসিত স্বরে বলে,”ইউ মাস্ট বি সেহের ,রাইট? ”
সেহের মুচকি হেসে ‘ হ্যাঁ ‘সূচক মাথা নাড়াল।মিহি শব্দ করে বলল, “ও .এম.জি, তুমি তো কল্পনা থেকেও অনেক বেশি সুন্দর। পুরো দেসি গার্ল! ”
মিহির মুখে বাংলা কথা গুলো বেশ সুন্দর লাগছে।বেজে বাংলা উচ্চারণ গুলো খুব কিউট সাউন্ড করছে। সেহের মৃদু হেসে হালকা স্বরে বলল,” থ্যাংকস ,আপনিও ভীষণ সুন্দরী! ”
মিহি মন খারাপের ভঙ্গিমা করে বলল,”এসব আপনি বলে স্মবোধন চলবে না ,তুমি বলে ডাকবে ।”আপনি” ইট’স সাউন্ডস ওল্ডি ওল্ডি ,ইউ নো ! ”
সেহের মিহির কথার অর্থ পুরোপুরি না বুঝতে পেরে ফ্যালফ্যাল চোখে মিহির দিকে তাকিয়ে থাকে।আরহাম আওয়াজ করে বলে,”মিহি ,ডিড ইউ মিন ‘সম্বোধন’ ?”
মিহি জিভ কেটে বলে,””ইয়াহ! স্মবোধন,আই মিন সম্বোধন ”
মিহির কথায় হল ঘর হাসির গুঞ্জনে কেঁপে উঠে।সবাই আড্ডায় ব্যস্ত দিশা আড্ডার এক পর্যায় মিহি জিগ্যেস করে ,”তো মিহি বর্তমানে কানাডায় কি করছ? ”
“আন্টি তোমরা তো জানো মা মারা যাবার পর । বাবা একাই দেখাশোনা করেছে।আজ আমি যা শুধুই বাবা জন্য । বাবার শরীরটাও ইদানীং ভালো যাচ্ছেনা । স্টাডি কমপ্লিট করে ,বর্তমানে সাইকিয়াটিস্ট।বাবার চেম্বারে বাবার এ্যাসিস্টেন্ড হয়ে কাজ করছি!”
আরো কিছুক্ষণ সবাই গল্প করে।আড্ডা শেষে মিহিকে ফ্রেশ হতে তার রুমে যায়।সেহের টেবিলে খাবার লাগিয়ে আরহামকে ডাকতে যায়।রুমের ঢুকতেই হাতে টান পড়ে।সেহের চমকালেও বিন্দু মাত্র ঘাবড়ায় না।সে জানে এটা আরহামের কাজ।আরহাম সেহেরকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা হেলিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলে,”সকাল থেকে এক মুহূর্তের জন্য বউকে কাছে পাচ্ছি না ,এটা কেমন বিচার? ”
“আপনি- ই তো ব্যস্ত ছিলেন! ”
“আর এখন যে তুমি ব্যস্ত ? বাই দ্যা ওয়ে আর ইউ ওকে? ”
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে সেহের চটজলদি উত্তর দিলো ,”হ্যাঁ ঠিক আছি ,কেন? ”
“মুখ কেমন যেন বুজে আছে,সামথিং মিসিং! ”
“এমন কিছু না।” সেহের ঠান্ডা স্বরে উত্তর দিলো ।
“তুমি কি মিহিকে নিয়ে ইন্সিওর? ”
সেহের হুট করে আরহাম থেকে সড়ে দাঁড়াল।আমতা আমতা মুখ করে কিছু বলতে চাইল।কিন্তু ঠিকঠাক গুছিয়ে উঠতে পারছেনা ।আরহাম সেহেরকে নিজের কাছে টেনে এনে বাহুতে আবদ্ধ করে বলল,”তোমার থেকে কোন কিছু হাইড করবো না।হ্যাঁ ,মিহি আর আমার মাঝে সম্পর্ক ছিলো।জাস্ট স্ট্রং ফ্রেন্ডশিপ ।উই আর জাস্ট গুড ফ্রেন্ড নাথিং ইলস! স্কুলের লাস্ট দিকে মিহির আমার প্রতি অন্যকোন ফিলিংস কাজ করলেও আমার দিক থেকে ছিলো শূন্য । এরপর আমি দেশে ফিরে আসি।তারপর বহুকাল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।ততদিনে মিহির টিনেজ আবেগ ফিকে পড়ে যায়।আস্তে আস্তে আবার আগের ফ্রেন্ডশিপে টার্ন করে।সে দেশে কোন এক বিশেষ কাজে এসেছে কাজ শেষে কানাডায় ফিরে যাবে । সো এসব নিয়ে উটকো চিন্তার প্রয়োজন নেই।আমার পুরোটা জুড়ে শুধু- ই তুমি,আমার ওয়াইফ বিস্তৃত ! ”
সেহের আরহামের বুকে মাথা এলিয়ে দিলেও।নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না।মিহিকে দেখার পর তো একদমই না।আরহাম সেহেরের গাল টেনে দিয়ে বলে,”নাও গিভ মি টাইট হাগ”
সেহের মুচকি হেসে আরহামকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।ফিসফিস স্বরে বলল,” আই ট্রাস্ট ইউ! ”
আরহাম সেহেরের মাথায় চুমু এঁকে দিলো।সেহের মাথা উঠিয়ে আরহামকে তাড়া দিয়ে বলে,”লাঞ্চ করবেন নিচে চলুন! ”
আরহাম দুষ্টু হেসে ঠাই দাড়িয়ে থাকল ।চোখ চিপে বলল,”আর একটু পর প্লিজ! ”
সেহের আরহামের হাসিকে উপেক্ষা করে ঠোঁটের হাসি চেপে বলল,”অলরেডি অনেক দেরী হয়ে গেছে চলুন! ”
আরহামের হাত টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসল।
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি
উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)
পর্ব :৩১
সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ।কিন্তু এখন অবধি আহ্লাদী রোদের দেখা মিলেনি। রুষ্ট হয়ে কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে আছে।চারদিকে এখনো ধোঁয়ার মত ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে।ঘাসের উপর শিশির কণা মুক্তা দানার মত চিকচিক করছে।কনকনে শীতের সকাল।সেহের উষ্ণ তপ্ত লুইয়ের ভাজে গভীর ঘুমে মগ্ন।আবছা ঘুম কাটতে সেহের বিছানায় হাত বুলিয়ে আরহামকে খোঁজে।আরহামকে না পেয়ে বিরক্তির সাথে চোখ মেলে তাকায়।নিভু নিভু চোখে ঘড়ির দিকে তাকায় সাড়ে সাতটা! আরহামের জগিং টাইম।সেহের বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।শাওয়ার সেরে বারান্দায় দাড়ায়।শীতের প্রবণতায় প্রকৃতি মুড়িয়ে আছে। তবুও অদ্ভুত এক সতেজতা মন ছুঁয়ে যাচ্ছে।ঠান্ডার কঠিনদশায় দাঁতের সাথে দাঁত বাড়ি খেয়ে কটকট আওয়াজ হচ্ছে।বারান্দা থেকে আড়চোখে বাগানের দিকে তাকাতে সেহেরের সব শীত কেটে যায়।বুকে অদ্ভুত এক যন্ত্রণা নাড়া দিয়ে উঠে।কান থেকে তপ্ত ধোঁয়া বের হচ্ছে। আরহাম মিহি বাগানে বসে ,চা পান করছে।মিহির পোশাকে বুঝা যাচ্ছে সেও আরহামের সাথে জগিং এ গিয়েছিলো । দুজন হাসি ঠাট্টায় বেশ মজে। হাসির উচ্চ আওয়াজ বারান্দা অবধি আসছে! সেহেরের ভীষণ মন খারাপ হলো।আরহাম তো বলেছিলো,’ তার প্রত্যেকটা সকাল সেহেরের সাথে শুরু করতে চায়।’ তবে আজ মিহির সাথে কেন? সেহের ভারী মুখ নিয়ে রুমে ডুকে পড়ল।আয়নার সামনে দাড়িয়ে আনমনে বকবক করতে করতে হাতের চুড়ি আর নোসপিন পড়ে নিলো । নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে এমন সময় রুমে দিশার আগমন ঘটে।সেহের কিছুটা চমকাল । সেদিনের সেই কথাকাটা কাটির পর আজ প্রথমবার দিশা সেহেরের রুমে এসেছে।সেহের কিছু জিগ্যেস করবে তার পূর্বে দিশা বলল,”কিছু কথা বলার ছিলো ,তুমি কি ব্যস্ত? ”
সেহের ‘না ‘সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল ,”নাহ ,বলুন! ”
দিশা সেহেরের কাছে এসে দৃঢ় গলায় বলে,”এসব তুমি কি করছ? ”
সেহের কিছুটা চমকে উত্তর দেয়,”আমি কি করলাম? ”
দিশা সেহেরকে বারান্দায় টেনে নিয়ে যায়। আরহাম মিহিকে দেখিয়ে বিরক্তির স্বরে বলল,”মিহি আরহামের নৈকট্য কি তুমি দেখতে পাচ্ছ না? সেহের আরহাম মিহির টিনেজ লাভ।দুজনের এক সাথে এভাবে টাইম স্পেন্ড করা তোমাদের বৈবাহিক জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ! আস্তে আস্তে মিহি আরহামের উপর নিজের অধিকার জমাবে ।তোমার থেকে কেড়ে নিবে ।সব কিছু তছনছ হবার আগে ,সময় থাকতে নিজের জীবন গুছিয়ে নেও! নিজেদের ভেতর তৃতীয় ব্যক্তিকে দাঁড় করিও না । সবকিছু আরো জটিল করো না। ”
মায়ের কথায় সেহের তাচ্ছিল্য হেসে জবাব দিলো ,”আমার জীবনে কোন কিছুই সহজ ছিলো না।প্রথম থেকে সব জটিল ছিলো ।আরেকবার না হয় জটিলতার মুখোমুখি হই। আর তাছাড়া আমাকে কে জ্ঞান দিচ্ছে?সেই মানুষটা যে নিজেই বিয়ের পর অন্যকার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে! ”
“সেহেররর! ” দিশা ধমকের স্বরে বলল।সেহের শান্ত হলো না। উল্টা উত্তর দিলো ,”আমাকে ধমক দিলেই সত্যিটা পাল্টে যাবে না।”
দিশা সেহেরের বাহু ঝাঁকিয়ে রেগে বলে,”আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া বন্ধ করো । তুমি কতটুকু জানো? প্রত্যেকটা গল্পের দুইটা দিক থাকে । তুমি তোমার বাবা দিকটা তো শুনেছ কিন্তু কখনো কি আমার দিকটা জানার চেষ্টা করেছ? কেন আমি তোমাদের ছেড়ে এসেছি তা জানতে চেয়েছ? ”
সেহের চুপ করে থাকে।দিশা নিজ থেকে বলতে শুরু করে,”ইন্টার পরিক্ষার পর বড় আপার সাথে চিটাগাং থেকে ঢাকায় শিফট হই। আপা বরাবরই আমার খুব কাছের মানুষ ছিলো ।আমার সকল চাহিদা আপার কাছেই ছিলো।আমি ছোট থেকেই স্বাধীন থাকতে পছন্দ করি। কারো অধীনে বেঁচে থাকা আমার ভীষণ অপছন্দ ছিলো।স্বপ্ন ছিলো নিজের যোগ্যতায় কিছু একটা হবো। ঢাকায় আসার পর এখানকার ভার্সিটিতে ভর্তি হই।নতুন জীবনের পদার্পণ করি।নতুন ক্যাম্পাস ,নতুন বন্ধুমহল সব কিছুকে ঘিরে আমার এক আলাদা দুনিয়া গড়ে উঠে।সৌন্দর্যের জন্য ভার্সিটিতে সেরাদের তালিকায় ছিলাম।চোখ মেলে সবকিছু রঙিন দেখছিলাম। আমার এই রঙিন দুনিয়ায় আমানের আগমন ঘটে।খুব তাড়াতাড়ি দুজন দুজনাকে গভীর ভাবে ভালোবেসে ফেলি। সময়ের সাথে আমাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে।কোনভাবে আমাদের এই সম্পর্কের কথা আমার বাবার কান অবধি পৌঁছে যায়।বাবা জরুরী তলবে চিটাগাং ডাকে।সেখানে যেতেই জানতে পারি বাবা তার পছন্দের ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।বাবাকে আমানের কথা বলতে শক্তভাবে বলে,’রাজনীতির সাথে জড়িত এবং পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিবে না।’বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে বাবা নাছোড়বান্দা নিজের জেদে আটকে থাকে।তাই কোনপ্রকার উপায় না পেয়ে পাত্র মানে তোমার বাবার কাছে আশ্রয় চাই,তোমার বাবা আমাকে কথা দেয় তিনি এই বিয়ে আটকাবে! কিন্তু বিয়ের দিন তিনি তার কথার খেলাফ করে।আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।আমাদের বিয়ে হয়।কিন্তু বিয়ের পর কখনো তাকে মেনে নিতে পারিনি । তোমার বাবা অভার পসেসিভ ছিলো।তিনি সর্বদা আমাকে বন্ধী রাখতে চেয়েছে । আমার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে নিজের নজরবন্দি করে রাখতে চেয়েছে।যা আমার মঞ্জুর ছিলোনা ।আমি ব্যক্তিস্বাধীনতা চেয়েছি কারো অধীনে থাকা আমার মঞ্জুর নয়।যা নিয়ে তোমার বাবার সাথে আমার ঝগড়া ফ্যাসাদ লেগে থাকত।হ্ঠাৎ একদিন জানতে পারি আমান তার মানুষিক ভারসাম্য হারিয়েছে।যার পেছনে কারণটাও আমি ছিলাম।নিজেকে অপরাধি ভেবে দিন পার করছিলাম। তুমি বলেছিলে তুমি আমার ভুলের ফল ছিলে কিন্তু তুমি ছিলে তোমার বাবার জেদের ফল।।যার কারণে তোমাকে ভীষণরকম অপছন্দ করতাম।অনেক চেষ্টা করেছি সব ভুলে সংসারে মন দিতে কিন্তু আমি পারিনি।যতবার তোমাকে দেখতাম তোমার বাবার সেই অমানুষিক জেদের কথা মনে পড়তো।মানুষিক সমস্যায় দিন পার করছিলাম। এক সময় হাল ছেড়ে দেই ।তোমার বাবা থেকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেই। তোমার বাবা না চাইলে মরার হুমকি দেই ,যার পর তিনি রাজি হয়।সেই মুহূর্তে আমার কাছে এই পরাধীন জীবন থেকে মৃত্যু অনেক শান্তির মনে হয়েছে।নিজের অনুতাপ নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি। আমানের সুস্থতার জন্য এ বাড়ির মানুষ আমাকে আমানের বউ করে আনে। তাদের সম্মানে ভয়ে আমার অতীত আড়াল করতে হয়।আমি আজ অবধি যা করেছি তার পেছনে তোমার বাবাও কোনাকোন ভাবে দায়ী ছিলো।তোমার একার জীবন- ই জটিল ছিলো না।আমার জীবনও কম জটিল ছিলো না।আমার মনে সবসময় তোমার জন্য অনুতাপ কাজ করতো কিন্তু কখনো বুকে টেনে নেওয়ার সাহস করতে পারিনি।তাই তোমার সুন্দর ভবিষ্যৎ- এর জন্য আমাকে এসব করতে হয়েছে। আরহামের নামের সাথে তোমাকে জুড়তে হয়েছে।আমার জায়গায় থাকলে তুমি কি করতে? বন্দি থাকতে কারো পিঞ্জিরায়? মেনে নিতে অন্যের অধীন জীবন? ”
দিশা কথা গুলো বলে থামল।বড় বড় রাগী শ্বাস ফেলছে । সেহের মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ।মায়ের প্রতি ঘৃণা না কাটলেও একজন মানুষ হিসাবে সহানুভূতি কাজ করছে!
সত্যি তো এমন পরাধিন জীবন কার চাই? দিশার জায়গায় সেহের থাকলে কখনোই এমন বন্দি জীবন মেনে নিতো না। দিশা সেহেরের দিকে দু’কদম এগিয়ে আসে।সেহেরের মাথায় আলতো হাত রেখে বলে ,”তোমার কথায় আমার রাগ হয়না,কষ্ট হয়!
এখনো সময় আছে নিজের সবটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে গুছিয়ে রাখো ।তোমার রূপ গুন তোমার শক্তি ,এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রিয়মানুষটাকে নিজের কাছে আটকাও! তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী ,আশা করি তোমাকে আর কিছু বলে বুঝাতে হবে না। ”
কথা শেষ করে দিশা দাঁড়াল না। চোখ মুছতে মুছতে বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।সেদিন সারাদিন মায়ের কথাগুলো ভেবে পার করল।মায়ের কথায় কোথাও সত্যতা আছে।পুরুষ মানুষের মন ঘুরতে কতক্ষণ? যদি মিহির ভালোবাসা আবার উথলে উঠে? আরহাম যদি তার ছোটবেলার বান্ধবীর উপর দুর্বল হয়ে পড়ে?
সেহের সারাদিন ভেবে বিকেলে মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠে।আরহামকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলল।লিয়ার থেকে আউটিং এর জন্য ভালো প্লেস জেনে নিলো । মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আজ রাত জেগে আঁধার কুয়াশায় ঘেরা ঢাকা শহর দেখবে । কাবার্ড থেকে নতুন কালো জামদানী বের করে পরল।লতানো চুল গুলোকে পিঠের উপর মেলে দিয়ে ।চোখে গাঢ় করে কাজল এঁকে নিলো।হাত ভরা কাচের চুড়ি আর কপালে ছোট একটা কালো টিপ পরল।নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো।মন্দ লাগছে না! আরহাম কে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট কি?
বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি আরহামের অপেক্ষা করল।আরহাম আসার নাম নেই।পৃথিবীর বুকে কালো আঁধার নেমে এসেছে।ঘড়িতে আটটা বাজছে।সেহের আরহামকে ফোন করল।দুবার রিং বাজতে আরহাম ফোন রিসিভ করল।কত দূর আছে ,জিগ্যেস করতে । আরহাম উত্তর দিলো ,’মিহির সাথে এক কাজে আটকে গেছে,ফিরতে আরো রাত হবে ‘। সেহের কোনপ্রকার প্রত্যুত্তর না করে ফোন কাটল।যদি কথা না রাখতে পারে ,এমন কথা দিবেই বা কেন?
একজন রাজনীতিবিদের সাথে সাইক্রিয়াটিস্টের এতো রাত অবধি এমন কি কাজ থাকতে পারে?
পাথর ভারী কষ্টে বুক চাপা পড়ে।রাগে হাতের চুড়ি গুলো টেনে খুলে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে।ঝনঝন আওয়াজ তুলে চুড়ি গুলো ভেঙে এক এক পার্ট এক এক দিকে ছুটে যায়।সেহের অগ্নিমূর্তি হয়ে শক্ত ভাবে বিছানায় বসে থাকে। কাজল ল্যাপটানো বড় বড় অশ্রুকণা গাল বেয়ে পরল।
চলবে…❣️