বুনোভাই,পর্ব:২+৩

#বুনোভাই
#পর্ব_২
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার(আসমা)

-মৃণালিনী,,
নিজের নামটা মৃদুলের মুখে এতোবছর পর শুনে অনেকটা অবাক হলো মৃণাল।কারণ একমাত্র মৃদুল ছাড়া কেউই তাকে মৃণালিনী বলে ডাকে না কিন্তুু হঠাৎ কোন অজানা কারণে মৃদুল আর তাকে এ নামে ডাকেনা।অবশ্য মৃদুল এখন এমনিতেও আর তাকে নিজের কাছে ডাকে না।কিন্তুু একটা সময় এই মৃদুলই তাকে মৃণালিনী বলে সারাক্ষণ নিজের কাছে ডাকতো।কোথায় হারিয়ে গেছে আজ সব।এখনতো আর সে এবাড়িতেও আসেনা।


মৃণালের কোনো ভাবান্তর না দেখে ধীর পায়ে হেঁটে মৃদুল তার কাছে যায়।হাঁটু গেড়ে মৃণালের সামনাসামনি বসে সে।গভীর ভাবে কিছুক্ষণ মৃণালের দিকে তাকিয়ে আছে সে।দুরন্ত, চঞ্চল মেয়েটা যেনো এই একটুতেই হারিয়ে গেছে,চোখের কাজল লেপ্টে আছে সারা মুখে, দীঘল কালো চুলগুলো এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে তার সারা পিঠময়,শাড়ির আঁচলটাও বুক থেকে সরে গেছে অনেকটা। আচ্ছা এ মেয়েটা এমন কেনো এখানে যদি আমার পরিবর্তে অন্যকোনো পুরুষ আসতো তাহলে কি হতো।ভাবছে মৃদুল।এমন ভাবে যেনো আরও মায়াবতী লাগছে তার চঞ্চলাবতীকে।কিন্তুু এভাবে সে মৃণালকে একদমই সয্য করতে পারছে না।
প্রথমে মৃণালের শাড়ির আঁচল টা ঠিক করে দিলো মৃদুল তারপর তার এলোমেলো চুলগুলো হাতখোঁপা করে বেঁধে দিলো,চোখের কোণের পানিটা মুছে দিলো খুব যত্ন করে।
এদিকে এতোটা সময় যেনো এক অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে মৃদুলের দিকে তাকিয়ে ছিলো মৃণাল।এই মানুষটা সব সময়ই তাকে আগলে রাখতো একটা সময়,আজও তার মাঝে সেই আগের বুনোভাইকে দেখছে যেনো সে।

-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।আমাকে কি আজই প্রথম দেখছিস!
মৃদুলের কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মৃণাল।পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করে ফেলে সে।
তারপর বলে,

-আপনি এখানে কেনো এসেছেন বুনোভাই।মামী জানলে তো খুব অশান্তি হবে।
মৃণালের মুখে এই কথা শুনে মৃদুল বলে,

-আমি কি করবো না করবো সেটা আমিই বুঝবো।আর তুই আগে আমাকে বল যে তুই এখনো এই অদ্ভুত পোশাক টা কেনো পরে আছিস।তুই কী জানিস তোকে দেখতে কি বিচ্ছিরী লাগছে।
মৃদুল কথায় প্রসঙ্গ পাল্টে বলল।

-এর থেকে ভালো কোনো পোশাক নেই আমার বিয়ে বাড়িতে পড়ার জন্য। এটাও আমাকে পলি দিয়েছে।
এটা শোনার পর মৃদুল কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল,

-খবরদার আমি না আসা পর্যন্ত তুই এ ঘর থেকে বের হবি না।
বলেই সে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে গেলো। এদিকে মৃণাল কিছুই বুঝলো না হা করে মৃদুলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো।

————————————————-

জমিরা বিবি রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে মোবাশ্বেরা আহমেদ এর দিকে।এদিকে মঈনুল আহমেদ ও মায়ের ঘরে অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন।অন্যদিকে স্বামী, শাশুড়ীর এমন থম মেরে থাকাকে খুব ভয় পাচ্ছেন মোবাশ্বেরা আহমেদ।
অনেকটা সময় নিরবতার পর জমিরা বিবি মুখ খুললেন,

-বড় বউ তুমি আমার নাতনীরে চড় মারলা কেন?
এই ভয়েই ছিল মোবাশ্বেরা।এই মামা, নানির জন্য তিনি মৃণালকে কখনই শাসন করতে পারেন নি।আজ রাগের বশে মেয়েটার গালে দুটো থাপ্পড় মেরেছে কি মারেনি ওমনি ওনাকে নিয়ে মা,ছেলে দরবার বসিয়েছে।

-আম্মা মৃণাল অন্যায় করেছিলো তাই আমি ওরে শাসন করছি।
নিচু গলায় কথাটি বললেন মোবাশ্বেরা।

-কি অন্যায় করছে আমার মৃণু যে তুমি ওর গায়ে হাত তুললা।
ঠান্ডা গলায় কথাটি বললেন জমিরা বিবি।

-মৃন্ময়ীর বিয়ের গয়না ওকে রাখতে দিয়েছিলাম।ও নিজের হাতেই রেখেছিলো সব গয়না। কিন্তুু সকালে আমি যখন বাক্স খুলি তখন তারমধ্যে কিছু গয়না খুঁজে পাইনি তাই,,,
মোবাশ্বেরা বেগম আর কিছু বলার আগেই জমিরা বিবি তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে উচ্চ কন্ঠে বললেন,

-আর এজন্যই তুৃমি আমার নাতনী রে চোর বানাইয়া দিবা।তোমার কাছে কী কোনো প্রমাণ ছিলো যে ওই গয়না আমার নাতনীই চুরি করছে।কি হইলো এখন এমন ভেজা বিলাইর মতন চুপ মাইরা আছো কেন বড় বউ।
তখনই মইনুল আহমেদ বলেন,

-মোবাশ্বেরা তুমি তো ভালো করেই জানো মৃণাল আমাদের কাছে কী।তাও তোমার থেকে আমি এটা অন্তত আশা করি নি।মা মরা মেয়েটার গায়ে তুমি এভাবে হাত তুললা কিছু না জেনেই।

-গয়না গুলো পাচ্ছিলাম মা,আর গয়না না পেলে যে কতো বড় ঝামেলায় পড়তে এসব নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল তখন।তাই রাগের মাথায়,,,,,,

—————————————————
মৃদূল দু’হাতে কয়েকটি ব্যাগ নিয়ে মৃণালের ঘরে গেলো।দরজা সে যাওয়ার আগে যেভাবে ভেজিয়ে গিয়েছিলো এখনো তেমনিই আছে।ঘরে ঢুকে দেখলো মৃণাল সেই আগের জায়গাতেই ঘুমিয়ে আছে।হয়তো কাঁদতে কাঁদতেই এমন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে মৃণাল।হাতে শপিং ব্যাগ গুলো খাটের উপর রেখে ধীর গলায় সে মৃণালকে ডাকা শুরু করলো,

-মৃণালিনী, মৃণালিনী উঠ,এই মৃণালিনী!

কারো মৃদুস্বরে ঘুম ভেঙে যায় মৃণালের।সে চোখ পিট পিট করে খুলে দেখে তার মুখের উপর মৃদুল ঝুঁকে আছে। ঘুমোনোর আগের কথাগুলো মনে পড়তে তার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে তারপর সে হুড়মুড় করে শোয়া থেকে উঠে বসে।আর বলে,

-আসলে কখন যে চোখটা লেগে গেছে বুঝতে পারিনি বুনোভাই।

-তুই আর কবেই বা কী বুজেছিস মিনু।
অস্পষ্ট গলায় বলল মৃদুল।

-কিছু বললেন বুনোভাই।

-না কিছু বলি নাই।এই নে এখানে দুটো জামা আছে আজকে এবং কালকে এ দুটো জামা তুই পড়বি।আর এখন এই অদ্ভুত দেখতে বাজে পোশাকটা বদলে সুন্দর করে তৈরি হয়ে বাহিরে আয়।

-আপনি জামা গুলো নিয়ে যান বুনোভাই।আমি এ বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানেই আর অংশ গ্রহন করবো না।
শক্ত গলায় বলল মৃণাল।
মৃদুল বুঝতে পেরেছে মৃণাল কেনো বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না।

-মা তোর সাথে অন্যায় করছে না জেনে।এতে মৃন্ময়ীর তো কোনো দোষ নেই।আর তাছাড়া গয়না গুলো খুঁজে পাওয়া গেছে।
গয়না খুঁজে পাওয়া গেছে শুনে অবাক হয়ে তাকালো মৃণাল মৃদুলের দিকে।মৃণালের প্রশ্নত্তুর দৃষ্টি বুঝতে পেরে মৃদুল বলল,

-গয়না গুলো দাদু রাতের বেলা সেকরার কাছে রঙ করতে পাঠিয়েছিলো।মা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তাকে আর জানানে হয়নি।আর মা দাদুকে জিজ্ঞেস না করেই তোকে চোর ভাবলো।এখন সবাই সবটা জানে।আর যে অন্যায় তুই করিস নি তার জন্য তুই কেনো মুখ লুকিয়ে ঘরে বসে থাকবি।রেডি হয়ে বাহিরে আয়।আমরা সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
বলেই সে মৃণালকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
আর এদিকে দুফোঁটা চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে মৃণালের।তখনই মৃদুল বলে উঠে,

-ড্রেস চেঞ্জ করার সময় কষ্ট করে ঘরের দরজা জানালা গুলো লাগিয়ে নিস। নিজের শরীরের বর্ণনা অন্যদের জানার প্রয়োজন নাই।

মৃদুলের এ কথায় লজ্জা পেয়ে যায় মৃণাল।সে দ্রুত এসে ঘরের দরজাটা জোরে ধাক্কা দিয়ে লাগিয়ে দেয়।বারবার বুনোভাই তাকে লজ্জা দেয়।আচ্ছা বুনোভাইর কী এখন নতুন ভীমরতি ধরলো অন্যদের বিব্রত করার নাকি শুধু তার সাথেই এমন করে সে।ভাবছে মৃণাল!!!

চলবে……….

#বুনোভাই
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার

বাইরে চারদিক নিস্তব্ধ, নিঝুম। সব পাখপাখালি তাদের নীড়ে ঘুমাচ্ছে। কোথাও পাতা নড়ার শব্দও নেই, যেনো সম্পূর্ণ প্রকৃতি ঘুমে আচ্ছন্ন, খালি জেগে আছে আকাশের বিশাল চাঁদটা আর তার সাথী তারারা। চারপাশের বাড়িঘর, গাছপালা সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জ্যোৎস্নায়।চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় সবাইকে কেমন যেনো মায়াবী দেখাচ্ছিলো।এ সব কিছুই মুগ্ধ হয়ে দেখছে মৃণাল।রাতের এই নিস্তব্ধতা তার ভীষণ প্রিয়।সে সুযোগ পেলেই গভীর রাতে রাতের নিস্তব্ধতা বিলাস করে।জ্যোৎস্নার থেকেও তার রাতের নিস্তব্ধতা প্রিয়।কিছুক্ষণ আগেই গায়ে হলুদের সব অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে এরপরে যে যার মত যেখানে জায়গা পেয়েছে সেখানেই শুয়ে গিয়েছে। বিয়ে বাড়ি বলে অনেক মানুষ এখন পুরো বাড়িতে গিজগিজ করছে।তাই পর্যাপ্ত ঘর থাকা সত্ত্বেও মানুষের জায়গার অবাব পরে গেছে।মৃণাল তার জন্য এ বাড়িতে বরাদ্দ কৃত ঘরটা মৃন্ময়ীর সব বন্ধু দের জন্য ছেড়ে দিয়েছে।তাকে নানুর সাথে ঘুমাতে বলা হয়েছে। তবে বিছানায় শুয়েও তার কেনো যেনো আজ ঘুম আসছিলো না তাই সে রাতের নিস্তব্ধতা বিলাস করতে ছাঁদে চলে এসেছে।
হঠাৎ করে অনেকগুলো কাক ডেকে উঠলো। মৃণাল শুনেছে জ্যোৎস্না হলে কাকেরা মনে করে ভোর হয়ে আসছে।তাই তারা ডালাডাকি শুরু করে দেয়, এরই মধ্যে মাঝে মাঝে কোথা থেকে হাসনাহেনা ফুলের মন মাতানো সুরভী এসে মনপ্রাণ ভরে দিচ্ছে। সে সুরভী প্রাণ ভরে নিচ্ছে মৃণাল।তখনই ভারি পুরুষালী স্বরে কেউ বলে উঠলো,
-এতো রাতে তুই এখানে কি করছিস মৃনাল!
গভীর নিস্তব্ধতায় কারো কন্ঠস্বর শুনে চমকে তাকায় পিছনে।পিছন ফিরি সে দেখে তার বুনোভাই পকেটে দু হাত গুজে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।বুনোভাইর এই ভ্রু কুঁচকে তাকানোটা মৃণালের খুব প্রিয়।ছোট বেলায় সে অনেক সময় ইচ্ছে করেই বুনোভাইকে উদ্ভট সব পরিস্থিতিতে ফেলতো শুধু মাএ তার কুঁচকে যাওয়া ভ্রু-যুগল দেখবে বলে।আজ সে না চাইতেও মৃদুলের সেই কুঁচকে যাওয়া ভ্রু-যুগল দেখতে পেলো।
মৃণালের কোনো ভাবান্তর না দেখে মৃদুল আবার জিজ্ঞেস করলো,

-কিরে এমন হাবালার মতন তাকিয়ে আছিস কেনো।কি জিজ্ঞেস করলাম তোকে কানে যায়নি সে কথা!
মৃদুলের মুখে হাবলা সম্মোধন শুনে কিছুটা ভরকে যায় মৃণাল। তারপর বলে,

-আপনি আমায় হাবলা বললেন বুনোভাই?

-হাবলা বললাম বুঝি? ওহ সরি ওটা তো তোর ক্ষেত্রে হবে হাবলি।স্ত্রী লিঙ্গ আর পু লিঙ্গ তে গুলিয়ে ফেলেছিলাম।
হাসতে হাসতে জবাব দেয় মৃদূল।মৃণালের তার কথা শুনে রাগ করা উচিত কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো এ মুহূর্তে তার একদমই রাগ হচ্ছে না মৃদুলের উপর কারণ হচ্ছে তার ভুবন ভুলানো হাসি।এ হাসি দেখার জন্য যদি তাকে হাবলির স্ট্যাম্পও নিতে হয় সে তাতেও রাজি।আচ্ছা সে কি বুনোভাইর প্রেমে পড়ে গেলো? তার এ মানুষ টার জন্য এমন ব্যাকুলতা,তার জন্য ছটফটানি, তার সকল ভাবে নিজের ভাবের বহিঃপ্রকাশ ই কি তবে ভালোবাসা?
আচ্ছা তার এই অনুভূতি গুলো কি তবে বুনোভাইর প্রতি তার ভালোবাসা নাকি মোহ্!আচ্ছা মোহ্ আর প্রেম দুটো কী এক? নাহ্ মোহ্ সে তো এক সাময়িক প্রবল উত্তেজনা মাত্র যা ক্ষণিকেই শেষ হয়ে যায় আর প্রেম সে তো ধীর,প্রশসান্ত ও চিরন্তন।মানুষ ধীরে ধীরে অন্যের প্রেমে পড়ে।এই প্রেম তখনই চিরস্থায়ী হয় যখন তাতে ভালোবাসা থাকে তবেই সে প্রেম পূর্নতা পায়। এসব নানান কথা নিজ মনেই ভাবছে মৃণাল।
এদিকে মিটমিট করে হাসছে মৃণাল তা দেখে ধীর পায়ে তার আরো কাছে যায় মৃদুল,তারপর মৃণালের মুখের সামনে গিয়ে তার এলোমেলো উড়ন্ত চুল গুলোয় ফু দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-কিরে মিনু কথা বলছিস না কেনো আর।এমন চুপ হয়ে গেলি কেনো।
মৃদুলের ঘোর লাগানো মৃদু কন্ঠস্বরে হালকা কেঁপে উঠে মৃণাল তার মুখের গরম নিঃশ্বাস পরছে মুখে কেমন যেনো একটা কম্পন বয়ে গেলো পরো শরীরে মৃণালের। আনন্দঘন লজ্জা মিশ্রিত এক অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো পুরো শরীর ও মন।হঠাৎই মৃদুলকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে যায় সে।একবারও পিছন ফিরে তাকায় নি সে।যদি তাকাতো তাহলে আবার সে তার বুনোভাইর কুঁচকে যাওয়া ভ্রু-যুগল দেখতে পেতো।
————————————————-
পুরো বাড়িতে আজ বিয়ের আমেজ।সকাল থেকই বাড়ির পুরুষরা রান্না বান্না,অতিথি আপ্যায়নের আয়োজনে ব্যাস্ত।এদিকে মৃন্ময়ী তার বন্ধু বান্ধব এবং সব কাজিনরা মিলে সাজগোছ নিয়ে মহা ব্যাস্ত।মৃন্ময়ী কে আজ প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্ট সাজাতে এসেছে। বিয়ের আয়োজন গ্রামে হলেও মৃন্ময়ী কড়াকড়ি ভাবে সবাইকে বলে দিয়েছে সে তার বিয়েতে প্রফেশনাল মেকাআপ আর্টিস্ট ছাড়া সাজবেনা।তাই মৃদুল নিজেই বোনের জন্য এ ব্যবস্থা করেছে।দুদিনের জন্য এই মেকআপ আর্টিস্ট কে এপোয়েন্ট করা হয়েছে।
গাড় নীল আর লালের মিশলে একটা ভারী লেহেঙ্গার সাথে ব্রাইডাল মেকআপ করবে আজ মৃন্ময়ী। নীল তার প্রিয় রঙ তাই সে আগেই অনুজকে (মৃম্ময়ীর হবু স্বামী) বলে দিয়েছে শাড়ীর মধ্যে যেনো অবশ্যই নীল রঙটা থাকে। তাই অনুজ বিশেষ ভাবে এই শাড়িটা অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়েছে মৃন্ময়ীর জন্য।

মৃদুলের দেয়া আকাশীরং এর একটা সুন্দর থ্রিপিস পরেছে মৃণাল।গতকাল রাতে বিয়ে বাড়িতে পড়ার জন্য মৃদুল তার জন্য দুটি থ্রিপিস কিনে এনেছে। আজ তার মধ্যেই একটা সে পরেছে।মাথার চুল গুলোকে হালকা পাম্প করে ফুলিয়ে ক্লিপ দিয়ে বেঁধে চুল গুলো ছড়িয়ে রেখেছে পুরো পিঠময়।চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়েছে ব্যস এটাই তার জন্য এনাফ।এর থেকে বেশি সে সাজেনা কখনো তাই আজও এই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সে তার নিজের গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধতা রেখে সেজেছে।
সাজগোজ শেষ করে সে বাহিরে এসে মৃদুলকে খুঁজছে। মৃদুলকে সে আজ সকাল থেকেই দেখতে পাচ্ছে না কিন্তুু এখন তার মন তার বুনোভাই কে চায় কারন আজকের তার এই সাজ শুধু মাএ মৃদুলের জন্য। একটা তৃষ্ণার্ত কাঁক যেভাবে হন্যে হয়ে চারদিকে পানি খুঁজে আজ যেনো মৃদুলকে সেভাবেই মৃণালের দু চোখ খুঁজছে। অন্যমানস্ক হয়ে যখন মৃণালের দু-চোখ মৃদুলকে খোঁজায় ব্যাস্ত তখনি সে কেউ একজনের সাথে জোরসে ধাক্কা খায়।মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা অতি আধুনিক সুন্দরী স্মার্ট একটি মেয়ে কপালে হাত দিয়ে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়েছে। আর বলছে,

-ইউ চোখ কোথায় রেখে হাঁটতে বের হয়েছ।তোমার জন্য আমার কপালটাই বোধহয় ফেঁটে গেলো।এখন আমার কি হবে।বলেই আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগে।তখনই কোথা থেকে যেনো মৃদুল হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। মৃণালের পাশ কাটিয়ে সে ওই মেয়েটির সামনে গিয়ে তাকে উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করে,

-কি হয়েছে বিপু!তুই মাথায় হাত দিয়ে এভাবে কাঁদছিস কেনো।কিরে কিছু তো বল।আর বাকিরা সব কই?
মৃদুল পিছনে কাউকে খুঁজ করার জন্য চোখ বুলাচ্ছে।
বিপু নামক মেয়েটা মৃদুলকে দেখে আরও সুর করে ন্যাকা কান্না জুড়ে বলতে লাগলো,

-ঢাকা থেকে একটু আগেই আমরা তোদের বাড়িতে এসেছি। গ্রুপের বাকিরা গ্রামের পরিবেশের ছবি তুলতে তুলতে পিছনে পরে গেছে।তাই আমি একাই হাঁটতে হাঁটতে বাড়িতে ঢুকছিলাম আর তখনই এই মেয়েটা এসে আমায় ধাক্কা দিয়ে আমার কপালটাই ফঁাটিয়ে দিলো।
বলেই আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো বিপু।
আর এদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে না বুঝেই বোকার মতন দাঁড়িয়ে আছে মৃণাল।এখানে ঘটা সব কিছুই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তখনই মৃদুল ধমক দেয়া গলায় মৃণালকে বলল,

-মৃণাল তুই কি চোখে দেখতে পাস না।কিভাবে হাঁটিস তুই? এতো বড় একটা মানুষকে তোর চোখে লাগলো না।ধাক্কা দিয়ে দিলি।
মৃদুলের ধমক শুনে অনেকটা অপমানিত বোধ করলো সাথে বুকের বা পাশে হালকা কষ্টও অনুভব হলো মৃণালের।কি করেছে সে? সে নাহয় একটু ধাক্কা দিয়েই ফেলেছে কিন্তুু তা তো আর ইচ্ছে করে দেয়নি।আর এই মেয়ের সাথে সেও তো কপালে ব্যাথা পেয়েছে কই সে তো একবারও বুনোভাইর কাছে নালিশ করেনি।তবুও সে মৃদুলের সম্মানার্থে বলল,

-সরি বুনোভাই আমি খেয়াল করিনি।একটু অন্যমনস্ক ছিলাম।

-মৃণাল আল্লাহ তোকে দুইটা চোখ দিয়েছে ওগুলো কাজে লাগা।আর আমাকে সরি না বলে বিপুকে সরি বল।
মৃদুলের এমন কড়া কথায় মৃণালের চোখের কোনে পানির আনাগোনা দেখা দিয়েছে। নিজেকে সংযত করে সে বিপাশার দিকে এগিয়ে গিয়ে ‘সরি’ বলেই ছুটে বাড়ির দিকে চলে যায় আর একবারও পিছন ফিরে তাকায় নি সে।সে যদি পিছন ফিরে তাকাতো তাহলে সবাই তার চোখের অবাধ্য পানিগুলো দেখতে পেতো।

চলে আসছি ধামাকা নিয়ে।বিপাশাকে নিয়ে আপনাদের মনোভাব প্রকাশ করে যাবেন।😊
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here