#বুনোভাই
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার (আসমা)
৪,
-আমি আসলে আন্তরিক ভাবো দুঃখীত মিস!আসলে বিপু একটু এরকমই। প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না।
মৃদুলদেও ওখান থেকে ছুটে আসার পর মৃণাল বাড়ির পিছনের পুকুর পাড়ে এসে বসে ছিলো।তখনই একটা পুরুষালি কন্ঠে কেউ কথাগুলো বলল।পিছন ফিরতেই মৃণাল একজন মধ্য বয়সী যুবককে দেখলো। তার ছেলেটিকে কেমন চিনা চিনা লাগছে কিন্তুু কোথায় দেখেছে তা মনে করতে পারছেনা।তাছাড়া ওই মেয়ের হয়েও বা কেনো ক্ষমা চাইছে সে,তার কিছুই সে বুঝছে না।তাই মৃণাল সেই পুরুষটির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। পুরুষটি তা বুঝে নিজেই বলল,
-হাই! আমি বিশান।মৃদুলের বন্ধু আর বিপু মানে বিপাশার বড় ভাই।
-ও আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম।
এ জন্যই ছেলেটিকে তার চেনা চেনা লাগছিলো।
মৃণালের সালাম দেওয়াতে কিছুটা ভরকে যায় বিশান।কারণ সে ভাবেই নি আজকালকার মেয়েরা হাই,হ্যালো ছাড়া সালাম দিবে।পরক্ষণেই তার মনে হলো এ মেয়েটি আলাদা অন্যদের থেকে।নিজেকে সামলিয়ে সে বলে,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনি প্লিজ বিপুর ব্যবহারে কষ্ট পাবেন না।
-না না কোনো ব্যাপার না।
-তাহলে আপনার পরিচয় টা জানতে পারি মিস।মানে আপনার নামটা!!
-মৃণালিনী! নুসাইবা তাবাসসুম মৃণালিনী। সবাই মৃণাল বলে ডাকে।
-বাহ্ চমৎকার নাম।তবে রবীন্দ্রনাথের মৃণালিনীর জীবন কিন্তুু সুখকর ছিলো না।
বলেই একটা মুচকি হাসি দেয় বিশান।
-সবার জীবন চিত্র এক হয় না।
বিশান এর কথার পিঠে বলে মৃণাল।
-বাহ্ নাম যেমন সুন্দর কথাও তার থেকে কম নয়।তো মিস. মৃণালিনী আপনি কিসে পড়ছেন এখন?
-এবছর ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা দিলাম।
-ওহ্ তাহলে তো আপনাকে আপনি বলা যাবে না।আপনি তো বিপাশারই অনেক ছোট।তাহলে কি আমি আপনাকে তুমি করে ডাকতে পারি মিস. মৃণালিনী!
বিশানের সাথে এখন একটুও কথা বলতে ইচ্ছে করছে না মৃণালের।এদিকে ওকে কিছু বলতেও পারছেনা বাড়ির নিমন্ত্রিত অতিথি বলে তারউপর বুনোভাইয়ের বন্ধু। তা না হলে মৃণাল এতোক্ষণে ছেলেটার পিন্ডি ছটকে দিতো।বিশানের কাছ থেকে ছাড়া পেতে সে বলল,
-জ্বি ভাইয়া অবশ্যই তুমি,তুই আপনার যেটা ইচ্ছে সেটা বলেই সম্মোধন করতে পারেন আমায়।আমিতো আপনার বোনোরই মতন।
যাই হোক ভাইয়া আমি এখন আসি আসলে বিয়ে বাড়িতো অনেক কাজ রয়েছে।
বলেই দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে গেলো মৃণাল।
আর এদিকে মৃণালের কথা বলার পুরোটা সময় হা করে ছিলো বিশান।বলে কি এই মেয়ে সে তার বোনের মতন।আর আমাকে ভাইয়া ভাইয়া ডাকা শুরু করলো আজব! আমি তাকে আমার ইয়ে-বানাতে চাই আর সে আমায় ডাকে ভাইয়া।এই বিশানের সাথে কথা বলার জন্য পুরো ভার্সিটির মেয়েরা পাগল আর আজ সেই বিশান নিজ থেকে এই গ্রাম্য মেয়েটার সাথে কথা বলতে এলো
এখন সে মেয়ে কিনা তাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছে।বিশান পকেট থেকে নিজের আইফোন টা বের করে ক্যামেরা অন করে নিজের মুখ দেখছে আর নিজেই নিজের মুখে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলছে,
-আমাকে দেখতে কি ভাইয়া লাগে!😱
————————————————–
এদিকে মোবাশ্বেরা আহমেদ নিজের ঘরে তৈরি হয়ে বসে আছেন।তার মনটা এখন খুব খারাপ।কালকে মৃণালের সাথে ওইরকম ব্যাবহার করায় আজ তিনি সত্যি সত্যিই অনুতপ্ত। তাইতো কিছুক্ষণ আগে পলিকে দিয়ে মৃণালকে তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন। মেয়েটাকে এভাবে ওনার মারা উচিত হয়নি কিন্তুু ওনার রাগ উঠলে ঠিক বেঠিক জ্ঞান ওনার থাকে না।মেয়েটাকে ওনি অপছন্দ করেন ঠিকই তাই বলে বাড়িভর্তি আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে এমন না করলেও তিনি পারতেন।আসলে মেয়ের বিয়ে নিয়ে তিনি বড্ড দুঃশ্চিতায় আছেন।অনেক কষ্ট করে তিনি এমন বনেদি পরিবারে মেয়ের বিয়ের সম্মন্ধ পাঁকা করেছেন।এখন যদি বিয়েতে তাদের পক্ষ থেকে দেয়া বরাদ্দ কৃত গয়না কম পরে তাহলে তো মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে তাইতো কাল ওনি ওভাবে রিয়েক্ট করেছিলেন।আর এদিকে তার মেয়ে মৃন্ময়ী তো প্রেম করে ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে ঘরে পরে ছিলে এতোদিন। অবশেষে অনুজকে পছন্দ করায় এখন বিয়ে পর্যন্ত এগিয়েছে সব।সব মিলিয়ে ওনার একটাই ভুল ছিলে তা হলো মাথা ঠান্ডা করে সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।নিজেই নিজের মনের সাথে হিসেব কষছেন মোবাশ্বেরা আহমেদ। তখনই মৃদুল ঘরে ঢুকলো। মৃণালকে দেখে মোবাশ্বেরা বেগম একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওকে কাছে ডাকলেন ইশারা করে।মামীর প্রতি একটা চাপা রাগ কাজ করছিলো মৃণালের।তবুও সে এসেছে এ ঘরে মামীর ডাকে।
-মৃণাল মা আমার! আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?
মোবাশ্বেরা বেগমের মুখে এমন কথা শুনে অনেকটা চমকে যায় মৃনাল।সে বলে,
-এসব কি বলছো মামী।তুমি আমার কাছে ক্ষমা কেনো চাইছো?
-কালকে আমি সত্য না জেনেই তোর গায়ে হাত তুলেছি।আমার অন্যায় হয়ে গেছে মা।আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না।
মামীর এমন রুপ দেখে অনেক অবাক হয় মৃণাল।তার মামী তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কোনোদিনই তার সাথে এতো ভালো ব্যাবহার করেনি।আজ হঠাৎ কি এমন হলো যে তার মামী তার সাথে এতো ভালো আচরণ করছে?
যাই হোক সে এসব চিন্তা বাদ দিয়ে মামীর দু’হাত নিজের হাতের ভিতর নিয়ে বলে,
-ছেলেমেয়ে অন্যায় করলে বা ভুল করলে তো বাবা- মারাই শাসন করবে।আমার মাতো কবেই মারা গেছে আর বাবা সে তো থেকেও নেই।বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।তারপর আবার থেমে বলে নানু বাড়ির সবাই তো আমার অভিভাবক তার মধ্যে তুমিও আছো মামী।তাই আমাকে আদর সোহাগ এর পাশাপাশি শাসন করার অধিকারও তোমার আছে ।এতে আমার কাছে তোমার ক্ষমা চাওয়ার মতন কিছুই হয়নি।বলে একটা মুচকি হাসি দিলো মৃণাল।
মৃণালের কথায় মোবাশ্বেরা আহমেদ আস্বস্ত হলেন।তারপর মৃণালকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-তুই আমায় অপরাধবোধ থেকে বাঁচালি মা।
মৃণালও তার মামীর বুকে মাথা রাখলো। এদিকে মোবাশ্বেরা বিশ্ব জয়ের একটা রহস্যময়ী হাসি হাসলো।যার অর্থ কেবল তিনিই জানেন।অবশেষে তিনি তার কাজে সফল হলেন।
—————————————————-
মৃদুল ও তার সব বন্ধুরা মিলে বাড়ির উঠোনে আড্ডা দিচ্ছে। সিমি,বিশান,তপু,বিপাশা সবাই মিলে আড্ডাটাকে জমিয়ে তুলেছে।এদিকে গ্রামে আসার পর থেকই বিশানকে আরোও গভীর ভাবে তাকে লক্ষ্য করছে।বিশান এখানে আসার পর থেকেই কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে আছে।সবার মাঝে থেকেও যেনো সে নেই এমন টাই মনে হচ্ছে সিমির।দীর্ঘ ছয়বছর ধরে সে বিশানকে চিনে।আজ পর্যন্ত বিশানের এমন উদাসীনতা সে দেখেনি।তাই সে তপুকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-এই তপু আমাদের বিশানের কি হলো বল তো।এখানে আসার পর থেকেই কেমন অন্যমনস্ক হয়ে আছে।
তপু মনোযোগ দিয়ে আজকে সকালের তোলা ছবি গুলো দেখছিলো।এমন সময় সিমির খোঁচা দেওয়ায় সে কিছুটা বিরক্তবোধ করলো।তাই সে বলল,
-কৃমি হইছে মনে হয়।
-কিহ্। ওই ইবলিশের ভাতিজা তুই কি আমার সাথে মজা লইতাছোস?
-আজব চিজ তুই দোস্ত। দেখ বিশানের কি হইছে আমি তা কেমনে জানমু।আমি তো এখানে আসার পর থেকেই ছবি তুলতে ব্যাস্ত ছিলাম।
-হ্যাঁ হ্যাঁ তুই তো পারিস ওই একটাই কাজ।ছাঁতার মাথা যা পাস তারই ছবি তুলিস।
রেগে বলল সিমি।
-দেখ সিমি তুই একদম আমার ফটোগ্রাফি নিয়ে বাজে কথা বলবি না।তাহলে কিন্তুু আমি,,,,
পুরো কথা শেষ করার আগেই সিমি বলে উঠলো,
-তাহলে কিন্তুু কি? তুই কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস।চোখ বড় করে বলে সে।
-না তুই তো নিজেই একটা জীবন্ত ভয়! তোরে আবার আমি কি ভয় দেখামু।
-তপুর বাচ্চা তুই কিন্তুু বেশি করতাছিস।আমার মাথা কিন্তুু গরম হইয়া যাইতাছে।
-রাখ তোর মাথা গরম।আগে শোন গালি দিতে হইলে ঠিক কইরা দে।আমার বাপের নাম আসলাম শেখ।তুই তপুর বাচ্চা না কইয়া কবি আসলামের বাচ্চা বুঝলি!
-তপুপুপু,,,,,,
বলেই চিৎকার দিয়ে তপুকে মারার জন্য উঠতেই তপু দিলো ভোঁ দৌড়।
এদিকে ওদের দুজনের ঝগড়াঝাটিতে বাকি তিনজনের টনক নড়লো।কিন্তুু একটা আরেকটার পিছনে দৌড়াচ্ছে কেন সেটাই বুঝছেনা তারা শুধু দর্শকের মতন হা করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের কান্ড কারখানা দেখছে।
এদিকে তপু দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে যেয়ে খুব জোরে কিছি একটার সাথে ধাক্কা খেলো।টাল সামলাতে না পেরে সে নিচে পরে গেলো।এরপর তারউপর ভারী কিন্তুু নরম কিছু একটা পড়লো।
চলবে,,,
#বুনোভাই
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার
৫
হঠাৎ করে শুকনা মাটিতে ঠাস করে পরায় খুব বিরক্ত হলো পলি তার উপর নিজের শরীরের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করলো সে যার দরুন মেজাজ পুরোই খারাপ হয়ে গেছে। সে কত সুন্দর করে দু’ঘন্টা লাগিয়ে সেজেছে সেই সাজের বারোটা বাজলো শুকনা মাটিতে আছাড় খেয়ে। পিটপিট করে চোখ জোড়া খুলল সে আর খুলেই বিকট আওয়াজ তুলে চিৎকার করে বলল,
-আব্বুউউউউউ
এদিকে সিমির সাথে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে হোঁচট খেয়ে সামনে থেকে আসা একজনকে ধরে ব্যালেন্স রাখতে চেয়েও পারলো না তপু।ধপাস করে শুকনা মাটিতেই আছাড় খেয়ে পরলো।পরার কয়েক সেকেন্ড পর সে চোখ খুলে নিজের শরীরের নিচে একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখে এই প্রথমবার ক্রাশ খেলো।মেয়েটির কাঁপা ঠোঁট, বন্ধ করা চোখ আর চিবুকের নিচে ছোট্ট তিল সব কিছুর প্রেমে পরে যায় সে।
তখনই মেয়েটির বিকট চিৎকারে তপুর চিন্তার ছন্দপতন ঘটে।তারপর উপায় অন্ত মা দেখে মেয়েটির মুখ চেপে ধরে সে।
এদিকে পলির চিৎকারের এক পর্যায় তার উপরে পরা ছেলেটি তার মুখ চেপে ধরে। এতো করে তার গলার কোনো আওয়াজ ই শোনা যাচ্ছে না স্পষ্ট ভাবে।শুধু গোঙ্গানির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
তখন তপু তখন পলিকে জিজ্ঞেস করছে,
-এই মেয়ে তুমি এভাবে চিৎকার করছো কেনো?
-কিন্তুু পলির গোঙানির শব্দ ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছে না সে। পলি বারবার তপুর হাতের দিকে ইশারা করায় সে নিজের জাত পলির মুখের উপর থেকে সরায়।
-এই মিয়া বদ কোথাকার উঠেন আমার শরীরের উপর থেকে।একেতো শুকনা মাটিতে আঁছাড় খাইছে তারউপর আমার মুখ চেপে ধরছে।
চোখ রাঙিয়ে কথাগুলো একদমে বলল পলি।
বেঁচারা তপুর এতোক্ষণে হুশ এলো।সে তড়িঘড়ি করে পলির উপর থেকে উঠল দাঁড়ালো।পলি নিজের গায়ের দুলাবালি ঝাড়তে ঝাড়তে তপুর গুষ্টি উদ্ধার করছে মুখে মুখে।ফাজিল পোলা, সুন্দরী মেয়ে দেখলেই খালি উষ্টা খাইতে মন চায়,কত্ত বড় সাহস আমার গায়ের উপর পরছে,খাড়া এখনি আব্বুরে কইয়া দিমু,চিনোস না তো আমার বাপেরে সে যদি শুনে তুই আমার গায়ের উপর,,,,,,উফ আমার কতো শখের মেকাপ!পাক্কা দু’ঘন্টা লাগিয়ে সাজছি পুরা সাজটাই নষ্ট কইরা দিলো।বলতে বলতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতে শুরু করে দিলো পলি আর সাথে বাবাকে ডাকাতো ফ্রী।
এদিকে পলির কান্নার আওয়াজ শুনে পাশের ঘর থেকে মৃণাল ছুটে আসে। ওই ঘরেই তারা বোনেরা সাজগোছ করছিলো।
মৃণাল এসেই অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে পলিকে বলল,
-কিরে পলিথিন একটু আগেই না তোকে সাজিয়ে দিছি এখন আবার এমন কান্না করতেছিস কেন আর মামারেই বা ডাকছিস কেন!
বিরক্তিকর মুখভঙ্গি নিয়ে মৃণাল কথাগুলো পলিকে বলল।
আর এদিকে মৃণালের মুখে পলির পলিথিন নাম শুনে তো তপু এতো নার্ভাস টাইমেও ফিক করে হেসে দিলো।আর সিমিতো সেই কখন থেকে হাসছেই।
তপুর এই ফিক করে হাসায় পলির কান্নার বেগ আরও বেড়ে যা আর মৃণালের দিকে তাকিয়ে বলে,
-দেখ মিনুর বাচ্চা তুই যখন তখন যারতার সামনে আমাকে পলিথিন বইলা ডাকবিনা।তাইলে কিন্তুু আব্বুরে বইলা দিমু। বলেই আব্বু বলে আবার কান্না জুড়ে দিলো সে।
পলির কথায় এতোক্ষণ পর মৃণাল তপু আর সিমিকে খেয়াল করলো।
এদিকে তপু আর সিমির পিছন পিছন মৃদুল,বিপাশা আর বিশান এসে ঘটনা কেন্দ্রে এসে পৌঁছায়ছে।
পলিকে এমন কাঁদতে দেখে মৃণালের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো মৃদুল তারপর জিজ্ঞেস করলো,
-মৃণাল ওর কি হয়েছে এমন ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছে কেনো?.
-আরে আমিতো কিছুই জানিনা বুনোভাই।আমিতো ওই কাচারি ঘরে ছিলাম। পলিথি,,,,পুরোকথাটা বলার আগেই পলির দিকে তাকিয়ে দেখলো মৃণাল সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।দেখেই মৃণাল বলল,আসলে পলি একটু আগে সেজে ঘর থেকে বের হয়েছিলো আর কিছুক্ষণ পরেই পর কান্নার আওয়াজ শুনে আমি ঘর থেকে বের হয়ে আসি।কিন্তুু এর আগে কি হয়েছে আমি কিছুই জানিনা।তখনই সিমি বলে উঠলো,
-দোস্ত আমি বলতাছি এখানে কী হইছিলো।
তারপরই সিমি একটু আগের ঘটে যাওয়া সব কিছু বলল সবাইকে।পুরো ঘটনা শুনে মৃণালের তো চোখ কৌটর থেকে বের হয়ে যায় যায় অবস্থা। তখনই সে পাশে দাঁড়িয়ে
থাকা পলির দিকে আঁড়চোখে তাকায়।
এদিকে পলিতো মনে হয় আজ কেঁদেকেটে একটা ছোটখাটো সাগর বানিয়ে ফেলবে তাই মনে হচ্ছে তপুর।সে ভাবছে মেয়েটা এতো কাঁদে কেনো,সে এমন কি করলো?
অন্যদিকে মৃণালকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছে বিশান।কি সুন্দর লাগছে এই পিচ্চি মেয়েটাকে।তার তো একেই চাই, একে না পেলে সে তো পাগল হয়ে যাবে।আর এদিকে সিমির হাসি মুখটা পুরোই পানসে হয়ে গেলো বিশানের এভাবে মৃণালের দিকে তাকিয়ে থাকাটা তার যে অসয্য লাগছে এখন। তাই সে বিশানকে একটা ধাক্কা দিয়ে ওই স্থান থেকে চলে গেলো।আর কিছুই না বুঝে হা করে সিমির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো বিশান।
এদিকে পলির কান্না এখনো থামেনি,সে বারবার আব্বুকে বলে দিব সব বলে বলে বিলাপ করে কাঁদছে। বেঁচারা তপু অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে মৃদুলের দিকে যার অর্থ হচ্ছে, “ভাই এইবারের মতন আমারে বাঁচা নাইলে এই পলিথিন আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাইবো আজকে”
তপুর করুন চাহনির ভাষা যেনো বুঝলো মৃদুল।তাই সে মৃণালকে ইশারা করে আলাদা কথা বলতে ডাকলো।দু’ভাইবোন আলাদা কথা বলে আসার পর মৃণাল পলিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার কাঁচারি ঘরে নিয়ে গেলো।এতোক্ষণ পর তপু যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
—————————————————–
কিছুক্ষণ আগে মৃন্ময়ীর বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।সবাই ভেবেছিলো বিয়ের সময় অন্যান্য মেয়েদের মতন মৃন্ময়ীও কান্না করবে।কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো সে কান্না দুরস্ত উল্টে হাসতে হাসতে তিনবার কবুল বলেছে।এতে করে গ্রামের অনেকেই কানাগুসো করছে তবে এতে করে মৃন্ময়ীর কোন হেলদোল নেই তার বক্তব্য হলো “বিয়েতে সে এতো টাকা দিয়ে সেজেছে তা কি কান্না করে নষ্ট করার জন্য,আজব।যেখানে এখনো তার জামাই তাকে ঠিক করে দেখেইনাই।”
মৃন্ময়ীর এমন উক্তি তে তার বন্ধু -বান্ধবরা সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।
”
”
”
এদিকে মৃদুল, তপু,শান সবাই মিলে ক্যাটারারদের সাথে বরপক্ষদের খাওয়া দাওয়ার দিকটা তদারকি করছে।এদিকে মৃণাল আর পলি মিলে বরের জন্য তৈরিকৃত একটা বিশেষ রান্না করা আইটেম নিয়ে প্যান্ডেলে ঢুকছিলো,অন্যদিকে তপু ডাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ডাল আনতে যাচ্ছিলো।তাড়াহুড়ো য় হাঁটতে গিয়ে নিচে পরে থাকা তারে পা প্যাচিয়ে পরে যাচ্ছিলো সে তখনই পলি আর মৃণাল সবেমাত্র প্যান্ডেলে ঢুকছিলো তপুর পরে যাওয়া দেখে মৃণাল হাতের ডিশটা পাশের একটা টেবিলে রেখে পলিকে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে তপুকে ধরলো। নির্গাত কোমর ভাঙ্গার হাত থেকে বেঁচে যাওয়ায় নিজের উদ্ধারকারীদের দেখার জন্য চোখ খোলে তপু।আর পলি বিরক্তিকর মুখভঙ্গি নিয়ে বলে,
-এই মি.তবলা আপনার কি শুকনা মাটিতে পরে যাওয়ার বাতিক আছে নাকি!
-আর আপনার বুঝি আব্বু বলে চিৎকার করে কাঁদার বাতিক আছে তাই মা মিস পলিথিন।
-😡
-☺
এইভাবেই মৃন্ময়ীর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো।রাতের দিকে জমিরা বিবি মঈনুল আহমেদ এবং মোবাশ্বেরা আহমেদকে নিজের ঘরে ডাকলেন সঙ্গে ছোট ছেলে আশরাফুল আহমেদকেও ডাকা হলো। জমিরা বিবির দুই ছেলে আর এক মেয়ে।বড় ছেলে মঈনুল সন্তানদের উচ্চমানের পড়াশোনা করাবেন বলে পরিবার নিয়ে অনেক বছর আগেই শহরে পাড়ি দেন।ছোট ছেলে আশরাফুল আহমেদ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন পলক্ আহমেদ কে।কয়েকবছর আগে তার স্ত্রী পলক্ আহমেদ একটা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।এরপর থেকেই এক মাত্র সন্তান পলি,মা আর বোনের মেয়েকে নিয়েই তিনি বেঁচে আছেন।পলি তো তার বাবা ছাড়া কিছুই বোঝেনা।তার যত আবদার,বায়না,অভিযোগ সবই বাবার কাছে।আশরাফুল তাদের গ্রামের বাড়ির জায়গা জমি সব দেখাশোনা করেন।অন্যদিকে মঈনুল আহমেদ বর্তমানে ঢাকার নাম করা বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী।টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই, এক ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে তার ভরা সংসার।তারউপর ছেলে এখন বড় ইন্জিনিয়ার হয়েছে। কয়েকদিন পর আবার বিদেশে যাবে আরও বড় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে,বড় মেয়ে মৃন্ময়ীকে আজ বিয়ে দিয়ে কিছুটা নিশ্চিত তিনি।তবে এতো সুখের মাঝেও তার একস্থানেই সব সুখ গুলো যেনো নিতিয়ে যায় আর তা হলো তার ছোট মেয়ে রুপার জন্য!!
জমিরা বিবি গলা পরিস্কার করে সবার উদ্দেশ্য বললেন,
-গতকাইল আমি তোমাগোরে কইছিলাম মৃণাল নানুভাইরে তোমগো লগে ঢাহা লইয়া যাইতে মনে আছে তোমাগো।
-হ্যাঁ মা আমি তো অমত করি নি।বরং এটা আরও ভালো হবে যে আমা ভাগনিটা এখন আমার চোখের সামনে থাকবে সবসময়।
মঈনুল আহমেদ বলল।
-মা মৃণালিনী কে কি ঢাকায় না পাঠালেই নয়।ও আর পলি তো পিঠোপিঠি। দুজন সে ছোটবেলা থেকে একসাথে। আর তাছাড়া ও তো এখানে ভালোই আছে।
মন খারাপ গলায় বললেন আশরাফুল আহমেদ।
-আশু বাপ আমার আমি বেবাকই জানি। তয় হয়ইছে কী জানো বাপ নাতনির আমার বড় ইচ্ছা সে ডাক্তার হইবো।হের মা যেমন হেরে জনম দিতে যাইয়া পরপারে চইলা গেছে এমন যেনো আর কোনো মায় তার সন্তান জনম দিয়া না যাইতে পারে হেল্লাইগা হেয় ডাক্তার হইবো।
বলতে বলতেই জমিরা বিবির গলা ধরে এলো।ঘরের পরিবেশটা হঠাৎ যেনো কেমন ঘোমট হয়ে গেলো।আর হবে বা নাই কেনো বড় ভাইদের আগে ছোট বোনের এমন আকস্মিক মৃত্যু তারাও যে মন থেকে মানতে পারেনা।তবুও সই,যে বোনের মেয়েটাকে তারা নিজেদের কাছে আগলে রাখতে পারছে।
ঘরের নিরবতা ভেঙে জমিরা বিবি মোবাশ্বেরা আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-হুনো বউমা আমার নাতনির যেনো কোনোরকম অসুবিধা না হয় হেই দায়িত্ব কিন্তুু এহন থেইকা তোমার বুঝছো।
-মা আপনি চিন্তা করবেন না। মৃণালকে আমি আমার সন্তানের মতনই রাখবো।
জমিরা বিবিকে আশ্বস্ত করার জন্য মোবাশ্বেরা আহমেদ কথাগুলো বললেও মনে মনে বললেন,
-আমাকে প্যাঁচে ফেলে ওই অপয়া টাকে আমার গাড়ে চাপাচ্ছেন মা।এর ফল যে কতো খারাপ হবে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
তা না হলে কি আমি ওই মুখপুড়ির কাছে ক্ষমা চাই।আমি তো জানি মৃণাল আমার কাছে কখনোই সেচ্ছায় যাবে না।তাইতো আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে ওর চোখে ভালো সাজলাম। তা কি আর এমনি এমনি মা।
বলেই মোবাশ্বেরা আহমেদ একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো।যার অর্থ তিনি ছাড়া কেউই বুঝবেনা।
কি আছে মোবাশ্বেরা আহমেদ এর মনে?😕পাঠকদের কাছে জানতে চাওয়া আমার অবুঝ মন,😑
চলবে,,,,,,,,,