বুনোভাই,পর্ব:১৮+১৯

#বুনোভাই
#পর্ব_১৮
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার

১৮
ছাঁদ জুড়ে আলোর ফুয়ারা,বিভিন্ন রকম ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে ছাঁদটা
সাদা রঙের মোমবাতি দিয়ে পুরো ছাঁদ সাজানো হয়েছে।চারপাশে এই আলো যেনো এক আলাদা সৌন্দর্য বর্ধন করছে পুরো পরিবেশটাকে।তারচেয়ে সবচেয়ে বেশি সুন্দর মৃণালের কাছে যেটা লাগছে তা হলো মৃদূলের গাঁয়ের ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি। সত্যি মানুষটাকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে মৃণালের কাছে।আচ্ছা বুনোভাইর এতোটা সুন্দর হওয়া কী খুব দরকার ছিলো? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে মৃণাল।তারপর মুচকি হেসে নিজেকে নিজেই বলে “সে যাই হোক মানুষ টা সুন্দর হোক বা কুৎসিত, সে কেবল আমার,একান্ত আমার!”
মৃদূলের দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে মৃণাল,এটার কী মানে হতে পারে তা মৃদূল বুঝছেনা।তাই স্বভাবমতো নিজের ভ্রু-যুগল কুঁচকে মৃণালের দিকে তাকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষন করছে মৃদূল।
এদিকে আরেক দফা ভালোলাগায় ছেঁয়ে গেলো মৃণালের মন,কারণ সে যে তার বুনোভাইর এই কুঁচকানো ভ্রু-যুগল বড্ড বেশি পছন্দ করে তা কী তার বুনোভাই জানে?

-কিরে মিনু তুই এমন মিটমিট করে হাসছিস কেন আমার দিকে তাকিয়ে?
নিজের ভ্রু-জোড়া নাচিয়ে নাচিয়ে প্রশ্ন করলো মৃদূল।

-আপনার ওই কুঁচকানো ভ্রু-জোড়া দেখি।
অন্যমনষ্ক হয়ে কথাটি বলল মৃণাল।
এদিকে মৃণালের এমন সহজ সরল স্বীকারোক্তি শুনে জোরে জোরে হো হো করে হেসে উঠলো মৃদূল।আর তার হাসির শব্দে মৃণালের ভাবনার ছন্দ পতন ঘটে।সে অন্যমনষ্ক থাকায় বুঝতে পারেনি মৃদূল কেনো হাসছে। তাই সে বলল

-আপনি এভাবে কেনো হাসছেন।
হাসতে হাসতে পেটে হাত দিয়ে মৃদূল বলে,

-সত্যি মৃণাল তুই আর বড় হলি না।লাইক সিরিয়াসলি তুই আমার ভ্রু জোড়া দেখে মিটমিট করে হাসছিলি।তুই তো এখনই আঁধা পাগল হয়ে গেছিস।

-বুনোভাই খবরদার আমাকে পাগল বলবা না।আর কে বলছে আমি তোমার ভ্রু দেখছিলাম। হু আমার তো আর কোনো কাজ নাই।

-যাক বাবা একটু আগে তো তুইই বললি।এখন আবার পাল্টি খাচ্ছিস।এটা কিন্তু ভালো অভ্যাস নয় মিনু।

মৃদূলের কথায় মৃণালের একটু আগের কথা মনে পড়ে যায়,আর তাতেই সে লজ্জায় আবার লাল,নীল,বেগুনি হতে থাকে। তা দেখে মৃদূল তাকে নিজের অধর বন্দী করে ফেলে আবার।তারপর গভীর আবেশ নিয়ে বলে,

-আমার লজ্জাবতি!!!
এবার আরও বেশি লজ্জা পেয়ে মৃদূলের বুকে মুখ গুঁজে নেয় মৃণাল।
হঠাৎ করেই আচমকা মৃদূলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মৃণাল প্রশ্ন করে,

-বুনোভাই তোমার তো বিপাশা আপুর সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।তাহলে আমাদের এ সম্পর্কের কী পরিনতি হবে?
কাঁপা গলায় উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে সে মৃদুলের দিকে।

মৃদুল কিছু বলার আগেই পিছন থেকে কেও একজন বলে উঠে,

-সেটা না হয় আমি বলি মৃণালিনী!
অজ্ঞাত কন্ঠস্বর অনুসরণ করে মৃণাল মৃদূলের পিছনে তাকায়।আর তখনই তার পুরো শরীর অজানা অনুভতিতে কাঁপতে থাকে।আর অস্পষ্ট গলায় সে উচ্চারণ করে,

-বিপাশা আপু তুমি!
বিপাশা কেবল একটা অদ্ভুত হাসি হাসলো যা দেখে নতুন ভয়ের সৃষ্টি হলো মৃণালের মনে।তাহলে কী তার আর বুনোভাই কে এ জীবনে পাওয়া হবে না,সে কি পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলবে মৃদূলকে।এক অজানা ভয়ের বাসা বেঁধেছে তার মনে।এতোদিন তার কোনো পিছুটান ছিলো না,কিন্তু আজকের পর সে তো আর আগের মতন স্বাভাবিক জীবনে কখনো ফিরে যেতে পারবে না,তা যে আর কখনোই সম্ভব নয়,সে কী তার এই জীবনে কোনো কিছুই পরিপূর্ণ ভাবে পাবেনা,সৃষ্টিকর্তা কেনো এতো নিষ্ঠুর তার প্রতি,কেনো সে বারংবার তার প্রিয় মানুষ গুলোকে তার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়,জানে না মৃণাল।তবে তার পক্ষে মৃদূলকে ছাড়া বেঁচে থাকাও মৃত্যু সমতুল্য। কি বলবে এখন বিপাশ! সে যে এখন তার জীবনের সবচেয়ে বড় অস্তিত্বের সংকট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!!!!!
——————————————————-
অনুজদের বাড়ির থেকে আজ মৃন্ময়ীদের বাড়িতে আরোও একটি বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।তারা তাদের ছোট ছেলে হিমাদ্র হিমেলের জন্য মৃন্ময়ীর ছোট বোনকে চায়,তাদের বাড়ির ছোট ছেলের বউ হিসেবে তাকে নিয়ে যেতে চায় সবাই।এমন একটা লোভনীয় প্রস্তাবে খুশি হয়ে যান মোবাশ্বেরা আহমেদ। তিনি কথাতেই রাজি হয়ে যান এ প্রস্তাবে।কিন্তুু মইনুল আহমেদ মেয়ের মতাতম না জেনে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত অনুজদের জানায় নি।কারণ তিনি তার মেয়েকে ভালো করেই চিনে,সে চতুর,বুদ্ধিমতি মেয়ে তাই সে কখনই কোনো পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কারো গলগ্রহ হয়ে থাকবে না।সেখানে হিমেলের মতন এতো ভালো একটা প্রতিষ্ঠিত ছেলে তার অতীত জেনে তাকে বিয়ে করতে চায় শুনলে রুপার রিয়াকশন কেমন হতে পারে তার আন্দাজ মইনুল আহমেদ এখনই করতে পারছেন।তাই তিনি অনুজদের কাছ থেকে কিছুদিনের সময় চেয়ে নিয়েছেন।
এদিকে মইনুল আহমেদ এর এই সিদ্ধান্তে মোটেও খুশি হন নি মোবাশ্বেরা আহমেদ। তার মতে এমন একটা ড্রাগ এডেক্টেড মেয়েকে ওই বাড়ির লোকজন জেনে শুনে তাদের বাড়ির বউ করে নিতে চাইছে এটাই ঢের,সেখানে আবার রুপার(মনীষা) অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন তিনি মনে করেন না।এ কথা তিনি বারবার মইনুল আহমেদ কে বলেছেন কিন্তু তিনি এ কথার কোনো কর্ণপাতই করেন নি।বরং তিনি বলেছেন “রুপা যা চাইবে তাই হবে।আমি আমাদের কোন সিদ্ধান্ত ওর উপর চাপিয়ে দিতে চাই না”।
এই কথায় আরও ক্ষুব্ধ হন মোবাশ্বেরা আহমেদ। তাই তিনি নিজের ঘরের দারে খুল দিয়ে বসে আছেন সকাল থেকে।
এদিকে মইনুল সাহেব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রুপার সাথে কথা বলার জন্য নিজের মন স্থির করলেন।



“কৃষ্ণপক্ষ” উপন্যাস বইটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে রুপা(মনীষা)।আজকাল তার গল্প, উপন্যাস বইয়ের উপর বড্ড বেশি যোক তৈরী হয়েছে।এখন দিনের অবসর সমটুকু সে এই বই পড়েই কাটিয়ে দেয়।
প্রতিদিন একটা করে হলেও সে পাঠ্যবইয়ের পার্শবর্তী অন্য বইও পড়ে।আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।
এরই মাঝে দরজার বাইরে মইনুল আহমেদ রুপা মা,রুপা মা বলে ডাকতে লাগলেন।রুপা বুঝতে পারে তার বাবা কোন কারনে এখন তার কাছে আসছে।কারনটা তার অজানা নয়,কেননা সে তার বাবা মায়ের কথা কাটাকাটি থেকে অনেক কথাই শুনতে পেয়েছে। আর তখনই মনে মনে বাবার প্রশ্নের উত্তর সে তৈরি করে রেখেছিলো।এখন শুধু তার বাবার প্রশ্ন করার অপেক্ষায় রয়েছে সে।
হাতের বইটি বন্ধ করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে, বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে ঘরের দরজা খুলে হাসি মুখে বাবাকে ঘরে ঢুকতে বলে সে।
মইনুল আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘরের ভিতরে এসে খাটের পাশের একটা টুলে বসলেন।রুপাও বাবার সামনাসামনি হয়ে খাটের উপর বসলো।
কিভাবে, কোথা থেকে কথা শুরু করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না মঈনুল আহমেদ।
এদিকে অনেক্ষন ধরে তার উশখুশ দেখে রুপা নিজে থেকেই কথা শুরু করলো,

-বাবা তুমি কী কিছু বলতে চাও আমাকে?

-না মানে মৃন্ময়ীর শ্বশুর বাড়ির সবাই তোকে ও বাড়ির ছোট করতে চায়।এখন,,,,
মইনুল আহমেদ কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে রুপা নিজেই বলল,

-তুমি কী চাও বাবা!

-তুই যে সিদ্ধান্ত নিবি আমি সেটাই মেনে নিবো।তোর উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে মা।
বলেই মুচকি হাসলেন মইনুল আহমেদ।
এদিকে বাবার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুপা বলল,

-তাহলে সেক্ষেত্রে আমার উত্তর টা না হবে বাবা।আমি পৃথিবীর যেকোনো ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি আছি তবে আপুর দেবরকে নয় এমনকি সে যদি এ পৃথিবীর সর্বশেষ পুরুষও হয় তবুও আমার পক্ষে তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা চমকে গেলেন মঈনুল আহমেদ। তার কেনো যেনো বারবার মনে হচ্ছিল রুপা আর হিমেল পূর্ব পরিচিত কিন্তু এর কোনো যুতসই প্রমান তার কাছে না থাকায় তিনি নিশ্চুপ ছিলেন।কিন্তু রুপার কথায় তিনি এটুকু পরিষ্কার হলেন যে হিমেলের সাথে রুপার কোনো না কোনো ভাবে পূর্বে পরিচয় ছিলো।মনের ভিতরকার কৌতুহল তিনি মনের ভিতরেই চেপে গেলেন।আর মুচকি হেসে রুপার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,

-তুমি যা চাইবে তাই হবে মা!আমি ওদের নিষেধ করে দিবো।
বলেই তিনি বেরিয়ে গেলন।আর এদিকে একরাশ ঘৃনায় গা ঘিন ঘিন করছে রুপার।সে কি করে একদিন এই লোকটাকে ভালোবেসেছিলো তা ভেবে।এই লোকটা এতটা নিচ সেটা তার ধারণার বাহিরে ছিলো।এখন আবার নিজে মহান হবে বলে তাকে দয়া দেখিয়ে বিয়ে করতে চায় এই লোক কত বড় সাহস,ভাবতেই অবাক লাগে রুপার!

চলবে,,,,,,,,,

#বুনোভাই
#পর্ব_১৯
#লেখনিতে_তিথি_মজুমদার

ত্রস্ত পায়ে হেঁটে মৃণাল আর মৃদূলের সামনে এসে দাঁড়ালো বিপাশা। মুখে একটা সুন্দর হাসি ফুটিয়ে সে আগেই বলে নিলো,

-দেখ ভাই মৃণালিনী এখানে আমার কোনো দোষ নাই।আমাকে যা করতে বলা হয়েছে আমি শুধু তাই করেছি।সব দোষ কিন্তু তোমার এই বুনোভাইর।

মৃদূলের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে শেষের কথাটা বলল।

-ওই আমি যা করছি বেশ করছি নাহলে এই শামুকের মুখ থেকে কোনোকালে কোনো কথা বের হতো না হু।

বলেই একটা মাছি তাড়ানোর মতন ভাব করলো মৃদূল।এদিকে এই দুই বন্ধুর কথার কোনো আগা মাথাই খুঁজে পাচ্ছে না মৃণাল।সে শুধু আহাম্মকের মতন যখন যে কথা বলছে তার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।
আর মৃণালের এমন উৎকন্ঠা ভরা চাহনি দেখে মৃদুল বিপাশাকে ইশারা করলো পুরো ঘটনাটা খুলে বলতে।তাই বিপাশাও গলা খ্যাকারি দেয় মৃণালের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এরপর বড় একটা দম নিয়ে সে বলতে শুরু করলো,

-আমি আর মৃদূল শুধুমাত্রই বন্ধু ব্যাতিত আর কিছু নই মৃণালিনী।

বলেই একটু থামলো সে। তখনই মৃণাল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো সে মূহুর্তে তখন বিপাশা তাকে হাতের ইশারা দিয়ে থামতে বলল এবং পুরো কথাটা শুনতে বলল।তাই মৃণালও আর কিছু বলল না চুপ করে দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।

-তপেশ,বিশান আর মৃদূল তিন বন্ধু এটাতো তুমিই জানোই।আমি ওদের থেকে এক ব্যাচ জুনিয়র ছিলাম আর ভাইয়ার বোন হওয়ার সুবাধে তপেশ আর মৃদূলের সাথে আমার পরিচয়টা হয় এবং তা খুব ভালো বন্ধুত্বেও পরিণত হয়।ওরা আমার বড় হলেও কখনো সেটা আমরা মনেই রাখতাম না এতোটাই বন্ডিং ছিলো আমাদের পাঁচ জনের মধ্যে। এখন নিশ্চয়ই ভাবছো পাঁচজন আবার হলাম কিভাবে সেটাও বলবো।এখন আগে আগের কথাটা শুনো।

কোথায় যেনো ছিলাম বলে একটু ভাবলো বিপাশা তারপর আবার বলল, -হুম মনে পড়েছে,তো একদিন হয়েছিলো কী আমরা সবাই মিলে একটা গেম খেলেছিলাম সেটা হলো ট্রুথ ওর ডেয়ার।স্বাভাবত আমরা চারজন ছিলাম সেই লেভেলের সাহসী।আর তপেশটা ছিলো একেবারে তার বিপরীত। ।সে যাই হোক আমাদের খেলায় সবাই আমরা ডেয়ার নিয়েছিলাম শুধু তপেশ ছাড়া।আর সেখানেই আমরা জানতে পারি তেমার প্রতি মৃদূলের দূর্বলতার কথা, তোমার প্রতি ওর একতরফা ভালোবাসার কথা। এই বই পড়ুয়া মৃদূলের মুখে সেই প্রথম কাওকে ভালোবাসে কথাটি শুনতে পেলাম।যে ছেলেকে কিনা ক্লাস আর লাইব্রেরি ছাড়া কখনোই সেই ভাবে কোথাও দেখা যেতো না,ক্যাম্পাসের কোনো মেয়ের সাথে কথা পর্যন্ত বলতে দেখতাম না সেই মৃদূলের মুখে আমরা যখন তোমার কথা শুনতে পেলাম তখনই তোমাকে দেখার জন্য আমরা চারজনেই উত্তেজিত হয়ে যাই। তখনই মৃদূল মৃন্ময়ী আপুর বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে আর তোমার সাথে দেখা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে গ্রামে যাওয়া।কারণ তোমাকে বললেই হুট করে ঢাকায় আনা যাবে না।এদিকে তোমাকে সামনাসামনি দেখার এই একটাই উপায় ছিলো। অজ্ঞতা আমরাও বাধ্য হলাম মৃন্ময়ী আপুর বিয়েতে যেতে। মৃদুলও রাজি হয় তবে সাথে একটা শর্ত জুড়ে দেয়। আর তা হলো আমরা যেনো তোমাকে কোনো ভাবেই বুঝতে না দিই যে ও তোমাকে ভালোবাসে আর তোমাকে দেখার জন্যই আমরা গ্রামে গিয়েছি।আমরা সবাই রাজি হই এবং যথারীতি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই।সেদিন তোমার সাথে ধাক্কা খাওয়ার পরে যখন প্রথম তোমাকে দেখি তখনই বুঝতে পারি তুমিই সেই যে কিনা আমাদের এই সাধু সন্ন্যাসী মার্কা পুরুষের হৃদয় হরণকারীনি।ততক্ষণাত আমি ইচ্ছে করেই তিব্র ব্যাথা পাওয়ার অভিনয় করি,এতে করে আমার রথ দেখা এবং কলা বেচাঁ দুটোই সেদিন হয়ে গিয়েছিলো।মৃদুল আমার জন্য যখন তোমাকে অযথা বকাবকি করছিলো তখন তোমার চোখভর্তি টলমলে পানি আর সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও আমার চোখে তা ঠিকই ধরা পড়ে গিয়েছিলো।এর থেকে আমি সেদিনই বুঝে যাই মৃদুল একা নয় তুমিও তাকে ভালোবাসো।

মৃদুলকে এ কথা বলতেই সে অভিশ্বাস করে তখন আমরাই ওকে বলি যে তোমার মুখ থেকেই আমরা ওকে প্রথম ভালোবাসি কথাটি শুনাবো। তবে এইবার আমরা ওকে শর্ত দিলাম।আর তা হলো আমরা ওকে যা করতে বলবো ওকে তাই করতে হবে আর হলোও তাই । কিন্তু কোনো তেই তুমি তোমার মনের কথা মুখে স্বীকার করছিলে না ।তাই বিশান ভাইয়াকে বললাম তোমার সাথে আঠার মতন লেগে থাকতে বললাম।যার ফলে তুমি ওরে অন্তত মনের কথাটা বলো।কিন্তু তুমি এতোটাই বোকা যে বিশান ভাইয়া যে তোমাকে ফ্লাট করছে তুমি সেটাও বুঝতে পারতেছিলে না।এরপর নিরুপায় হয়ে মাঠে নামালাম সিমি কে।ওকে দিয়ে তোমাকে ভাইয়ার হাবভাব বুঝালাম।এরপরেই জানতে পারি তুমি অনেক আগ থেকেই কাওকে ভালোবাসো।কিন্তু নিশ্চিত ভাবে বুঝার কোনো উপায় তুমি রাখো নি।তাই আমরা কেউই বুঝলাম না তুমি আসলো কাকে ভালোবাসো।তারপর ভাইয়াকে দিয়ে যখন তোমাকে প্রপোজ করানোর পর অবশেষে আমরা জানতে পারি আমরা যা ভেবেছি তাই ঠিক।কিন্তু আমরা যেহেতু মৃদুলকে কথা দিয়েছিলাম মুখ দিয়েই ওকে ভালোবাসি কথাটি শুনাবো,তাই তখন আমরা প্ল্যান করি আমাদের মিথ্যে এঙ্গেজমেন্টের।যাতে করে তুমি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার একটা চেষ্টা করো এবং মৃদূলকে তোমার মনের কথা খুলে বলো।
কিন্তু আমরা ভাবলাম কী আর তুমি করলে কি! পুরাই বাংলা সিনেমার মতন নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে নিজে আজীবন দুঃখের সাগরে ভাসার আত্নব্রত হলে।ব্যাস এবার আর মৃদূলকে সামলানো গেলো না সে সরাসরিই তোমাকে প্রেম নিবেদন এর সিদ্ধান্ত নিলো।আমরাও সম্মত হলাপ উপায় অন্ত না পেয়ে।আর তারপরই এই কিডন্যেপিং এর প্ল্যান।আর এখানে আমরা কিছু করার আগেই তুমি নিজের মনের সব কথা বলে দিলে।

বলেই বিপাশা ছাঁদ কাঁপানো একটা উচ্চহাসি দিলো।আর এদিকে এতোক্ষণ ধরে বিপাশার সমস্ত কথা শুনে এক প্রকার তব্দা বনে গেলো মৃণাল।কোনো কিছু বলার মতন শব্দ সে খুঁজে পেলো না।প্রাপ্তির এক অদ্ভুত আনন্দ নিয়ে সে যেনো অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে।
হঠাৎ করেই বিকট আওয়াজের একটা শব্দ হলো আর সঙ্গে সঙ্গেই মৃণাল প্রবল আত্ননাদ করে মৃদূলের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
তাহলে কী সবটা স্বপ্ন ছিলো মৃণালের। সে এখনই চোখ খুললে দেখতে পাবে সব কিছু মিথ্যে! মৃদূলের বুকে চোখ বুঝে তাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ভাবছে মৃণাল।

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here