#বৃষ্টিস্নাত_সাঁঝ
|৫|
#সা_জি_দ
কয়েকটা সিড়ি নামতেই ড্রইংরুমের দৃশ্য চোখে পড়লো। প্রহর এর পা আপনাআপনিই থেমে গেল। সাঁঝ এর হাত প্রহরের হাতে আবদ্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে সাঁঝও থামলো। ড্রইংরুমের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে যে মেয়েটি এতক্ষণ চ্যাচামেচি করছিল প্রহরকে দেখেই সে শান্ত হয়ে গেল। আচমকা ছুটে এসে ঝাপিয়ে পড়লো প্রহরের বুকে। এমন আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে গেল প্রহর। তাল হারাতে নিলে সামলে নিল নিজেকে। শান্ত কন্ঠে মেয়েটিকে সরে যেতে বললেও সে কানে তুললো না সে-ই কথা। হঠাত প্রহরের কী হলো কে জানে, একহাত দিয়েই মেয়েটিকে ছাড়িয়ে নিলো নিজের থেকে। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেও রেলিঙ ধরে নিজেকে সামলালো মেয়েটি। হঠাৎই মেয়েটির চোখ গেল সাঁঝ এর দিকে। এতকিছুর পরও সাঁঝ এর হাত ছাড়েনি প্রহর। সাঁঝ এর দিকে এগোতে চাইলেও রত্না আর আরেকটা ছেলে এসে সরিয়ে নিল মেয়েটিকে। ধপ করে ফ্লোর এ বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো মেয়েটি। সেকি বুকভাঙা কান্না! সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রহর বললো-
“ঘরে গিয়ে বসো, আমি আসছি।”
তবে সেই কথা সাঁঝ এর কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো না। সে একমনে তাকিয়ে আছে সামনের এই মেয়েটির দিকে। প্রহর এবার কিছুটা উচ্চস্বরেই বললো-
“দাড়িয়ে আছো কেন? ঘরে যাও।”
এবার কাজ হলো। বাধ্য মেয়ের মত নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো সাঁঝ।
_
ঘরে এসেও অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলো সাঁঝ। এই অপরিচিত মেয়েটার এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেন করলো সে সম্পর্কে না জানলে কিছুতেই মন শান্ত হচ্ছে না।
মিনিট বিশেক পর ঘরে এলো প্রহর। সাঁঝ এর মুখোমুখি বসে বললো-
“প্রচুর প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুড়ছে জানি। এই ছোট্ট মাথাকে এত চাপ দিও না তো! আমি নিজেই সব বলবো।”
বলেই জামাকাপড় নিয়ে গোসলে চলে গেল প্রহর। খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে উঠে পড়লো সাঁঝ৷ কিছুক্ষণ পরই পার্লার এর লোক আসবে।
এটাই ছিল প্রহর এর সাথে সাঁঝ এর শেষ কথা। সারাদিন নানান ব্যাস্ততায় একটুও কথা বলতে পারেনি। তবে এত আনন্দ-উল্লাসের মাঝেও সাঁঝ এর মনে ঘুরছিল সকালের সেই ঘটনা।
_
“রুপা আর আমি ছোটবেলার বন্ধু। আমাদের বাবারা বিজনেস পার্টনার, সেই সুবাদেই পরিচয়। আমার কাছে ও সাধারণ বন্ধু হলেও ও আমাকে বন্ধুর থেকে একটু বেশি কিছুই ভাবতো। তবে এই কথা আমি জেনেছি বছর দুয়েক আগে। প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে মেয়েদের সিক্সথ্ সেন্স বেশ ভালো হলেও ছেলেদের সিক্সথ্ সেন্স একেবারেই দুর্বল। তাই ও না বলার আগে আমি বুঝিই নি। তবে ও কখনওই এমন ব্যাবহার করেনি যে সন্দেহ হয়।”
“আচ্ছা, আপনার কী অন্য কাওকে পছন্দ ছিল?”
সাঁঝ এর কথায় হাসলো প্রহর।
“অন্য কাওকে পছন্দ করলে তোমাকে বিয়ে করতাম কেন?”
নিজের উপরই বিরক্ত হলো সাঁঝ।
“তাহলে রুপা ওনাকে মেনে নেননি কেন?”
” ওর সম্পর্কে ভাবার সুযোগ পেয়েছি নাকি? এসব জানার তিনদিনের মাথায়ই তোমার সাথে দেখা হয়।”
কিছুক্ষণ মৌনতা পালন করলো দুজনই। সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করলো সাঁঝ। স্বামীর সাথে প্রেম করবে বলে কখনোই সম্পর্কে যায়নি সে। তবে একটা ভয় ছিল, তার স্বামীর জীবনেও কী সেই প্রথম ভালোবাসা হবে? এবার সেই আশঙ্কাও দুর হলো।
আচমকা সাঁঝকে কোলে তুলে নিল প্রহর। ছাদ থেকে নেমে হাটা ধরলো ঘরের দিকে।
_
একদিনের ঘটনা –
সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। যেমনতেমন বৃষ্টি না, ক্যাটস এন্ড ডগ টাইপের বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মধ্যে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার মজাই আলাদা। অফিস না গিয়ে সেই মজাই উপভোগ করছিল প্রহর। সাঁঝ তখন ভুনাখিচুড়ি রান্নায় ব্যাস্ত। তবে নীলিমা চৌধুরী একা ছাড়েননি ওকে। নিজেই পাশে দাড়িয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। রান্নাবান্না শেষ করে এসেও প্রহরকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকালো সাঁঝ। তবে কিছু না বলে নি:শব্দে চলে গেল ছাদে। শ্রাবণধারায় ভেজাতে লাগলো নিজেকে। প্রহরও যে কখন ছাদ এ এসেছে তা খেয়ালই করেনি সাঁঝ। ছাদ এর দরজার কাছে দাড়িয়ে একমনে প্রেয়সীর বৃষ্টিবিলাস উপভোগ করে প্রহর। দু’বছর আগে নাহয় নিজের চোখকে নামিয়ে নিয়েছিল কিন্তু আজ কী চোখ নামিয়ে নেওয়ার কোনও কারন আছে?
সমাপ্ত।