বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ পর্ব ১৬+১৭

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৬
#নবনী_নীলা

“তুমি যতোই পালানোর চেষ্টা করো না কেনো, কোনো লাভ নেই এতো সহজে আমি তোমায় ছাড়ছি না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি সবটা জানছি।”, অফিসে যাবার আগে আবার রুহিকে সাবধান করে গেলো আহান। রুহি সকাল থেকে নানা ভাবে পালিয়ে গেছে কখনো আবার পেট ব্যাথার নাটকও করেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আজ আহান কিছুতেই তাকে ছাড়বে না। রুহি ঘরে পায়চারি শুরু করেছে। তাকে যে করেই হোক একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ নানুর ফোন এলো। ফোন স্ক্রিনে নানু লেখাটা দেখে রুহির মাথায় দারুন এক বুদ্ধি এলো।
রুহি নানুর সাথে কথা বলা শেষ করে, দিদার কাছে এলো। দিদা ঘরেই ছিলেন। তারপর দরজায় নক করে রুহি ভিতরে চলে গেলো।

রুহিকে দেখে দিদা হাশি মুখে নিজের পাশে এসে বসতে বললেন। রুহি সেটাই করলো। দিদার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে মুল কথায় এলো রুহি।
” দিদা, আমি একটু নানুকে গিয়ে দেখে আসি।”, কোমল কন্ঠে বললো রুহি।

” আহান কি রাজি হয়েছে যেতে।”, আগ্রহী হয়ে বললেন দিদা।

” নাহ্ ওনাকে তো অনেকবার বলেছি কখনোই রাজি হয় না। আজ এই কাজ তো কাল সে কাজ। বলছিলাম আমি একাই যাই। কতদিন যাই না খুব মনে পরছে।”, মন খারাপ করে বললো রুহি।

” আহ এই ছেলেটা বড্ড জেদী। ঠিক আছে তুমি মন খারাপ করো না আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি কালকে তোমাকে দিয়ে আসবে।”, রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন দিদা।
কিন্তু কালকে গেলে হবে না আজকেই তাকে যেতে হবে।
না হলে রাতে এসেই হাজারটা প্রশ্ন করবে আহান।

” দিদা কালকে না আজ বিকেলে যাই। প্লীজ”, রুহির অনুরোধ দিদা ফেলতে পারেনি তাই অনুমতি দিয়ে দিলেন। এবার রুহির প্রথম কাজ তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পরে। এ কয়েকদিন নিশ্চই কুম্ভকর্ণটা ভুলে যাবে এসব। ভুলে গেলেই বাঁচি।

রুহি বিকেলের দিকে রওনা হয়ে গেল। ড্রাইভার তাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো। রুহির নানা এই বাড়িটা বানিয়েছে। চারতলা বাড়ির চারপাশে বড়ো বড়ো গাছ। শুধু এই বাড়িটার চারপাশ গাছে ভরা। বাউন্ডারির ভীতরে বলতে গেলে সব ধরনেরই গাছ লাগিয়েছে রুহির নানা। ছোটো বেলা হতে এই বাড়িতেই তার বেড়ে ওঠা। এ বাড়ির ছাদ, উঠান সব জুড়ে আছে রুহির ছেলেবেলা। আজ কতদিন পর সে এই বাড়িতে এসেছে। বাড়িতে কোনো দারোয়ান নেই, তবে নানুর কিছু পোষা কুকুর আছে এরা দারায়ান থেকেও বেশি ভয়ানক। তবে চেনা জানা মানুষদের ওরা কিছু বলে না। দুটোই ছেলে কুকুর একটার নাম মিলো আরেকটা রেম্বো। দুটো নামই নানার রাখা।

রুহি বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই নানাকে গাছে পানি দিতে দেখলো। তারপর নানার পিছনে গিয়ে নানা বলে উঠতেই আসাদুজ্জামান সাহেব চমকে উঠলেন কারণ ফোন করে রুহি কাউকে বলেনি সে আসবে।

_____

আহান রাতে ফেরার পর কোথাও রুহিকে দেখছে না। মেয়েটা হটাৎ করে উধাও হয়ে গেলো কোথায়। সব দেখা শেষে একবার কিচেনে এসেও দেখে গেলো নেই কোথাও নেই। কয়েকবার রূমে গিয়ে ডাকলো রুহিকে কোনো সাড়া শব্দ নেই। বাধ্য হয়ে নিচে নেমে ভাবিকে জিজ্ঞেস করলো,” ভাবি রুহি কোথায়?”

” তোমার বউ কোথায় সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেনো?”, রসিকতা করে বললো ভাবি।

“ভাবি রসিকতা করো না। বলো।”, সিরিয়াস হয়ে বললো আহান।

” বাহ্ ভালোই প্রেম চলছে দেখছি বউকে না দেখে থাকতেই পারো না।”, ভাবির কথায় আহান নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

” আরে রাগ কোরলা নাকি? আচ্ছা বলছি রুহি নানা বাড়িতে গেছে ওর মন খারাপ করছিলো তাই দিদা ঘুরে আসতে বলেছে।” ভাবির কথা শুনে আহানের মুখ থমথমে হয়ে গেলো।

কিছু না বলে রুহিকে কল করতে করতে আহান উপরে উঠে গেলো। আহান বার বার কল করছে কিন্তু রুহি ফোন ধরছে না। আহানের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। আহান আবারো কল করতে লাগলো। এতো বার কল করার পরও রুহি ফোন ধরছে না। আহান বিছানায় গা হেলিয়ে শুয়ে পড়লো। চারপাশটা কেমন ফাকা ফাকা হয়ে আছে। কোনো এক শুন্যতায় আহানের বুকে ভার হয়ে আছে। প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বলে পালিয়েছে। ভেবেই আহানের রাগ লাগছে। এই মুহুর্তে সেখানে গিয়ে তুলে নিয়ে আসলে একটা উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যেতো।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আহান গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। আহান রহমান কি করতে পারে সেটা তোমার ধারণার বাহিরে মিস রুহি।

রুহি ছাদে গিয়েছিলো রুমির সাথে। নুড়ি ওদের ভাড়াটিয়ার মেয়ে কিন্তু দুজনের মাঝে খুবই মিল। অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় দুজনেই গল্প করতে ছাদে উঠেছে।

” তুই দেখি বিয়ে করে উধাও হয়ে গেছিস। সুন্দর জামাই পাইয়া সবাইরে ভুইল্লা গেলা।”, বাঁকা হাসি দিয়ে বললো নুড়ি।

” আমি এতো দিন পর আসছি কেউ আমার কথা জানতে চায় না সবাই খালি জামাই জামাই করতেছিস।”, বিরক্তি প্রকাশ করে বললো রুহি।

” আচ্ছা ঠিক আছে আর করবো না। কিন্তু একা এলি কেনো? বরকে নিয়ে এলি না যে।”,

” আমার বর মহা ব্যাস্ত মানুষ তার সময় নেই। শুনে নিয়েছিস শান্তি হয়েছে এবার?”

” আচ্ছা রাগ করিস না। শুন এসেছিস ভালো কথা বাহিরে বেশি ঘোরাঘুরি করিস না। নিবিড় কিন্তু পাগলের মতো তোকে খুঁজছে পেলেই তুলে নিয়ে যাবে।”,

” ওকে আমি মেরে সিধে করে দিবো। সেদিনের মারের কথা ভুলে গেছে নাকি। এতোদিন দিন তো মাথা তুলে আমার দিকে তাকাতো না। ঐ বেয়াদবটার জন্য নানী জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলো। হাতের কাছে আসুক একবার।”

” তোর বিয়ের পর থেকেই পাগলামি শুরু করেছে। তোর রাজপুত্রর হাতের মাইর খেয়ে তো সোজা হয়ে গেছিলো। ভালো কথা তুই কি এখনও মনে রাখছিস তাকে?”

” এতো সহজ না সবটা ভোলা। সেদিন রাতে যদি সেই লোকটা আমাকে না বাচাতো, আজ হয়তো এই রুহির অস্তিত্ব থাকতো না। “, বলে নিরবে একটা নিশ্বাস ফেললো রুহি।

” কিন্তু চোখ দেখেই প্রেমে পড়ে গেলি। আচ্ছা তখন না হয় ব্যাপারটা অন্য ছিলো। এখন তোর বিয়ে হয়েগেছে এখনো তুই ভুলতে পারলি না।”

” কিছু মানুষ চোখের পলকেই মনের মধ্যে ছাপ ফেলে দিতে পারে। আর কেউ সারা জীবনেও পারে না।”

” তা রুহি তোর বর জানলে কি হবে বলতো?”, নুড়ির কথায় রুহির আহানের কথা মাথায় এলো। এ কয়দিন না হয় এখানে কাটিয়ে দিবে কিন্তু এরপর। ভাবতেই ভয় লাগছে। যে বদমেজাজি লোক এতো সহজে তাকে ছাড়বে না।

” ধুর আমাকে টেনশন দিস না তো।”, বলে দুজনে ছাদ থেকে নামতে গেলো। নামতে গিয়ে রুহি পা পিছলে পড়লো। জামা পুরোটা গেলো নষ্ট হয়ে তার ওপর হাতের কনুই ছিলে গেছে।
পরে গিয়ে রুহি আহহ করে আতনাদ করে উঠলো। নুড়ি রুহিকে তুলে দার করলো তারপর ঘরে নিয়ে এলো।
” তুই একটু দেখে শুনে হাটবি না?”, রুহি কে নিয়ে যেতে যেতে বলল নুড়ি।

” চুপ কর, এতো জ্ঞান দিবি না। নিজে কোনোদিন পড়ে যাসনি মনে হয়।”, বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো দুজনে।

ইজি চেয়ারে ছোট মামা চোখ বন্ধ করে একটা কবিতার বই বুকের উপর রেখে শুয়ে আছেন। সন্ধ্যা বেলায় তার কবিতা পড়তে পড়তে ইজি চেয়ারে শুয়ে থাকার অভ্যাস। রুহির গলা শুনে তিনি চোখ খুললেন, মাথায় তুলে রাখা চশমাটা চোখে দিয়ে ভালো করে তাকালেন। রুহির অবস্থা দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,” কিরে সন্ধ্যা বেলায় কোথায় এমন নাকানি চুবানি খেয়ে এলি?” সব সময় রসিকতা করা এনার অভ্যাস বটে।

রুহি আড় চোখে মামার দিকে তাকালো, এসব তার কাছে নতুন কিছু না। তিনি হসপিটালে গিয়ে রোগীদের সাথেও রসিকতা করেন।

” যা যা, বস্ত্র লইয়া শৌচাগারে যা। যা যা তোর নানি আসার আগে শৌচাগারে যা…..”, এটা মামার ইনস্ট্যান্ট বানানো কবিতা। যদিও মামা যে কবিতা বলছে সেটা আগে থেকে না বললে কেউ বুঝে না। এটাই তার প্রতিভা। এইজন্যই এতো চেষ্টার পরও কবি হতে না পারায় কুমার রয়ে গেলেন।

রুহি নানীকে জন্মের মতন ভয় পায় তাই দেরী না করে জামা নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। নানী সবটাই দেখেছে তবে আজ উনি বকবেন না কারণ অনেক দিন পর মেয়েটা এসেছে। আজ বকাবকি করে মেয়েটার মন খারাপ করে দেওয়ার দরকার নেই।

রুহি গোসল সেরে বেড়িয়ে দেখে কারেন্ট চলে গেছে। তোয়ালেটা চুলে রেখে, ঘরে সে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো। চার্জার লাইট ছিলো তবে মোমের আলো রুহির পছন্দ। নানা নানির ঘরে লাইটটা রেখে সারা ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো রুহি। আকাশ মেঘলা বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। বাতাস বইছে আর মাঝে হটাৎ দরজায় টোকা পড়লো। রুহি সবে মাত্র মাথার তোয়ালেটা খুলে রাখলো এমন সময়ে দরজায় টোকা পড়ায় রুহি একটা মোম নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে। প্রচন্ড বাতাসে দরজা খোলার সাথে সাথে মোমবাতি নিভে যায়। কাকতালীয় ভাবে ঠিক সেই সময়ে কারেন্ট চলে আসে। হটাৎ তীব্র আলোয় আহান চোখ বন্ধ করে ফেলে তারপর চোখ খুলতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে বুকটা হালকা হয়ে গেছে আহানের। রুহি দুই হাত দিয়ে চোখ ধরে আছে। বাতাসে ভেজা চুলগুলো উরছে। এমন অপরূপ দৃশ্য আহান এর আগে কখনো দেখেনি। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আহান। শেষে এগিয়ে গিয়ে রুহির কানের কাছে বললো,” আমায় দেখে বুঝি লজ্জা পেয়েছো?”
চেনা কন্ঠে রুহির বুক কেপে উঠলো। চোখ খুলে আহানকে দেখে দু পা পিছিয়ে যেতেই পরে যেতে নিলো রুহি। আহান কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,” বলেছিলাম না পালিয়ে কোথাও যেতে পারবে না। সেই আমার বাহুতে এসেই পড়তে হলো।”
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৭
#নবনী_নীলা

” বলেছিলাম না পালিয়ে কোথাও যেতে পারবে না। সেই তো আমার বাহুতে এসেই পড়তে হলো।”, আহানের কথায় রুহি ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। এটা কি করে সম্ভব? আহান এখানে কি করে এলো। রুহি অপলকে তাকিয়ে আছে, ঘটনাটা ঠিক তার হজম হচ্ছিলো না। এমন সময়ে নুড়ি তুলো আর সেভলন নিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে। আহান আর রুহিকে এভাবে দেখে সবটা গুলিয়ে গেলো নুরির।
নুড়ি একটু কেশে উঠতেই, রুহির হুশ ফিরে। চোখ বড় বড় করে ছিটকে সরে গেলো সে।

” বলছিলাম সব সময় এমন পিছলে যাবার সভাব কেনো তোর?”, বাঁকা হাসি দিয়ে রুহিকে বললো নুড়ি।
রুহি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। একে তো কোথা থেকে এই লোক উড়ে এসেছে তারমধ্যে নুড়ির বাচ্চাটা উল্টা পাল্টা কথা বলছে।
সামনে দাড়ানো মেয়েটির হাতে স্যাভলন এর বোতল আর তুলো ডেখে আহান প্রশ্ন করে বসলো,” এসব কার জন্য?”

রুহির নুড়ির হাতের দিকে তাকালো। এসব এনেছে কেনো নুড়ি।
” আরে দুলাভাই বলবেন না, আমাদের মেয়ের তো পিছলে পরার অভ্যাস। আপনি থাকলে তো আপনি ধরে ফেলেন কিন্তু আপনি ছিলেন না, ধরার ও কেউ ছিলো না তাই পরে হাতের কনুই ছিলে ফেলেছে।”

আহান ঘাড় কাত করে রুহির হাতের দিকে তাকাতেই রুহি হাত লুকিয়ে কটমট চাহীনিতে নুড়িকে বললো,” এতো উপকার করতে বলেছে কে তোকে। এসব আমার লাগবে না, এগুলো সরা আমার চোখের সামনে থেকে।”

আহান নুড়ির হাত থেকে স্যাভলন আর তুলো হাতে নিয়ে বললো,” এগুলো থাক আমার কাছে।”, রুহি কিছু বলতে যাবে আহানের গম্ভীর দৃষ্টি দেখে আর কিছু বলতে সাহস করলো না। এমন সময় সবাই বাহিরে চলে এলো। আহানকে দেখে সবাই অবাক, কারণ রুহি বলেছিলো আহান কাজের জন্যে আসতে পারবে না কিন্তু হটাৎ এই বৃষ্টির রাতে হাজির হয়ে যাবে সেটা কেউ কল্পনা করেনি। আহান এগিয়ে গিয়ে নানা নানীর সাথে কথা শুরু করলো। তাদের খবর নিলো। নানা আহানের হাতে স্যাভলনের বোতল দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন,” তোমার হাতে এটা কি?”

” আরে নানা, রুহি পরে ব্যাথা পেয়েছে শুনেই তো দুলাভাই ছুটে এসেছে।”, আহানের কথার মাঝে বেগ্রা দিয়ে বললো নুড়ি। আহান হা বা না সূচক কিছু বললো না। কারণ এখানে হুট করে আসার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না সে। এইটা একটা ভালো কারণ হিসাবে কাজে লাগানো যাবে।

নানা, নানি, মামা সবাই আহানকে নিয়ে ব্যাস্ত। রুহি মুখ গোমড়া করে চলে এসেছে নিজের রূমে। শরীরটাও ভালো লাগছে না রুহির। নুড়ি টাও চলে গেছে ওকে রেখে দিতে পারলে ভালো হতো। রুহি নিজের রূমের জানালাটা খুলে দিলো। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর। এর মাঝেই রুহির ডাক পড়লো। নানী ডাকছে, রুহি এগিয়ে গেলো।

” জামাই যে আসবে একবারও বলেছো আমায়। কান্ড জ্ঞান কোনোদিন হবে না তোমার।”, গম্ভীর মুখ বকছেন নানি।
নানির কম বয়সে বিয়ে হয়েছিলো তাই আজও তিনি বেশ জোয়ান। তাই বকা দেওয়ার সময় স্কুলের প্রিন্সিপালের মতন কঠিন ভাবে দেন। যাকে বলে ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দেওয়া।

এতগুলো বকা খেয়ে রুহির শরীর রাগে গজগজ করছে। সব হয়েছে ওই লোকটার জন্য। আমাকে জালিয়ে মারছে পুরো। রুহি নিজের রূমে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আজ ওনাকে এই ঘরে ঢুকতেই দিবো না। রুহি রুমের ভিতরে তাকানোর আগেই আবার কারেন্ট চলে গেলো। চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো।

” হ্যা একটু বৃষ্টি শুরু হলেই এরা এমন করে। এই অন্ধকারে কি আমি এখন লুকোচুরি খেলবো?”, রেগে বলল রুহি।
হটাৎ গলার পাশটায় কারোর স্পর্শে রুহি কেপে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে হাত বাড়ালো কিন্তু কেউ নেই। ভয়ে কে কে করে চিৎকার করলো রুহি। কোনো সাড়া শব্দ নেই। রুহির বুকটা আতকে উঠলো। অজানা ভয়ে ঘামতে শুরু করল সে। সব অন্ধকারে ভয়টা বেড়ে যেতেই হটাৎ কেউ আস্তে মুখ চেপে ধরে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো। প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও এখন এই স্পর্শ তার চেনা লাগছে। নিজের হার্ট বিট নিজেই শুনতে পাচ্ছে রুহি। আহানের হটাৎ এমন আচরণের পরিবর্তনে রুহি হতবাক হয়ে গেলো।
দুজনেই চুপ আর মাঝে রুহির রাগ বেড়ে গেলো। রেগে আহানের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। আহান সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নিলো।

” আমি জানি আপনি সেই কুম্ভকর্ণ। আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিলেন আপনি। কোথায় আপনি? সাহস থাকে তো সামনে আসুন। একবার সামনে আসুন তারপর আমি আপনার কি করি শুধু দেখবেন।”, রুহি অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে আহানকে ধরার চেষ্টা করছিলো। আহান ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালো তারপর হাত দিয়ে খুজে ছিটকিনি টা খোলার শব্দ করলো। এবং সঙ্গে সঙ্গে বললো,” হোয়াট দা হেল? এইখানে এতো ইলেক্ট্রিসিটি প্রবলেম কেনো?”, বলে হাতে থাকা ফোনের লাইট অন করে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো আহান।

ফোনের লাইটের আলোয় আহানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে রুহি এগিয়ে গেলো।” এইতো হাতে নাতে ধরেছি আপনাকে। আমার সাথে আপনি একটু আগে কি করলেন এগুলো?”

আহান পিছনে ফিরে রুহিকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করলো।
” তুমি ? কখন এলে?”

” একদম নাটক করবেন না। একটু আগে যা করলেন লজ্জা করছে না আপনার।”, তীক্ষ্ণ চাহিনীতে বললো রুহি। কথা বলে নিজেই একটু লজ্জা পেয়ে গেল রুহি।

আহান না বোঝার ভান করে বললো,” কি করেছি? অদ্ভুত!”

” দেখুন একদম মিথ্যে বলবেন না এই রুমে আমি আর আপনি ছাড়া কেউ নেই। তার মানে আপনি ছিলেন।”, কটাক্ষ করে বললো রুহি।

আহান মোবাইলের দিকে একবার তাকালো তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললো,” রুহি ভঙ্গিমা করো না আমি কি করেছি সেটা বলো আর লজ্জা নিয়ে কি জানি বললে। আবার বলবে একটু।”

রুহি থ মেরে তাকিয়ে আছে। আহানকে দেখে আসলেই বোঝা যাচ্ছে সে কিছু জানে না। খুব স্বাভাবিক আচরণ তার।
” দেখুন আপনি আমার সাথে রসিকতা করবেন না। একটু আগে আপনি আমার মুখ চেপে জড়িয়ে ধরেননি?”, লজ্জা আর ভয়ার্ত গলায় নিচে তাকিয়ে বললো রুহি।

রুহির চেহারা দেখার মতোন হয়েছে। আহান আরেকটু রাগিয়ে দিয়ে বললো,” আমি!”, বলেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,” আমি কেনো তোমায় জড়িয়ে ধরবো? এমনিতেও তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
কথা গুলো যেনো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতন গিয়ে লাগলো। শেষের কথাটা শুনে রুহির রাগ আকাশ ছুলো। আহান বিরক্তির ভাব করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আহান বেড়িয়ে যেতেই রুমটা অন্ধকার হয়ে গেলো। ভয়ে রুহি আহানের পিছু পিছু আসতে লাগলো। আহান সেটা খেয়াল করে ভালোই মজা পাচ্ছে। আহানের হাব ভাব রুহিকে আরো কনফিউজড করে ফেললো।
কিছুক্ষণ পর কারেন্ট চলে এলো। সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। রুহির গলা দিয়ে খাবার নামছে না। মামা আহানকে নিজের লেখা একটা কবিতা শুনাচ্ছে, আহান উপায় না পেয়ে মনোযোগ সহকারে শুনছে। নানি বকা দিয়ে মামাকে থামলো অন্যসময় মামার কবিতায় রুহির হেসে লুটিয়ে পরে আজ রুহি নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে।

” কিরে তোর আবার কি হলো? আজ হাসলি না যে।”, সন্দেহের চোখে প্রশ্ন করলো মামা।

” আসলে নুড়ির সাথে অনেক হেসেছি তো, তাই গাল দুটো নিস্তেজ হয়ে গেছে।”, বলে পাশ কাটিয়ে গেলো রুহি।

আহান আড় চোখে রুহির উপর নজর রাখছে। যাক জব্দ করা গেছে তাহলে। রুহি সবার আগেই খাবার টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে গেলো খারাপ লাগছে বলে।

রুহি ঘরে পায়চারি শুরু করেছে। ওটা আহানই ছিলো না হলে কে হবে নাকি কোনো হেলোসিনেশন নাকি আরো ভয়ানক কিছু। রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে ভয়ে। আহান ঘরের সামনে আসতেই রুহি আহানকে টেনে নিয়ে রূমের দরজা বন্ধ করে ফেললো।

” কি করতে চাচ্ছো তুমি?”, বাকা হাসি দিয়ে বললো আহান।
চিন্তায় চিন্তায় রুহির মাথা পুরো হাং হয়ে গেছে। এসব বোঝার অবস্থায় সে নেই।

” ওটা আপনি ছিলেন। সত্যিই করে বলুন।”, কাপা কাপা গলায় বললো রুহি।

” আবার একই কথা। আমি ওয়াসরুমে ছিলাম রুহি, আমি কিভাবে তোমার মুখ চেপে ধরবো বলতো। তুমি নিশ্চই কোনো ভুল ভাল চিন্তায় ছিলে তাই এমন মনে হয়েছে।”, রুহিকে বুঝিয়ে বললো আহান।

” আমি ভুল ভাল কিছু ভাবছি না আমি আপনার স্পর্শ পেয়েছি। ওটা আপনিই ছিলেন। প্লীজ আমাকে ভয় দেখাবেন না।”, ভয়ার্ত গলায় বললো রুহি।

” আমার স্পর্শ? তুমি কি করে চিনো আমার স্পর্শ।”, ঘাড় কাত করে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আহান।

রুহি লজ্জায় মরে যাচ্ছে। শেষ মেষ কেঁদেই ফেললো সে। এই রে বেশী হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। আহান রুহির হাত ধরে বিছানায় বসালো।
” আরে আরে কাদঁছো কেনো? বলো আমায় কি হয়েছে।”, রুহি লজ্জায় কেঁদেই যাচ্ছে। তারপর কিছু না বলে উঠে যেতেই আহান রুহির হাত ধরে টেনে এনে নিজের কোলে বসালো। তারপর হাত দিয়ে রুহির চোঁখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তারপর আবার গলায় অধর ছুয়ে দিতেই রুহি কান্না কান্না চোখে মুখ তুলে আহানের দিকে তাকালো।

” ওটা আমিই, এবার শান্ত হও। আমি জাস্ট একটু মজা করছিলাম তুমি এতো ভয় পেয়ে যাবে আমি বুঝিনি।”, বলতে বলতে রুহির চোখের পানি মুছে দিলো।

রুহি রাগে ফেটে যাচ্ছে। এতো রাগ হচ্ছে তার যে যে কি বলবে কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। আহানকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করছে। আহান দুই হাত দিয়ে রুহিকে বাহুতে জরিয়ে ধরে পিছনে হেলে বেডে শুয়ে পড়লো।

[ চলবে ]
[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here