বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ পর্ব ২৫+২৬

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৫
#নবনী_নীলা

“সাত মাস পর তো ছেড়েই দিবি ওকে। তাহলে কিসের এতো…।” সামিরা কথাটা শেষ না করতেই আহান কড়া গলায় বলল,”মাইন্ড উর ল্যাঙ্গুয়েজ। রুহিকে আমি এ জীবনে ছাড়ছি না। কথাটা পরিষ্কার ভাবে শুনে রাখ। সি ইজ মাইন। ….[ থেমে আবার বললো]…. আর একটা কথা ফিরে এসে যেনো তোকে আমি এখানে না দেখি।”বলেই হন হনিয়ে বেড়িয়ে গাড়ী নিয়ে রুহিকে খুজতে বেড়িয়ে পড়লো আহান।

রুহি ব্রিজের এক পাশে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ছোটো একটা নদী। রাতের বেলায় ঐ ব্রিজটায় কয়েকটা পার্সোনাল গাড়ী ছাড়া তেমন কিছু চলে না। অনেকেই রাতের বেলায় এইখানটায় এক সাথে সময় কাটাতে আসে। এই জায়গাটা রাতের বেলায় মনোমুগ্ধকর লাগে। রুহির প্রিয় জায়গায়টা, কিন্তু শুধু মন খারাপ হলেই সে এইখানটায় আসে। আজও এসেছে, কারণ সে কোথায় যাবে তার জানা নেই। সেই ফ্ল্যাটে তো মরে গেলেও যাবে না। একসাথে টাইম স্পেন্ড করুক তারা। ঐ লোকটার মুখ ও দেখবনা কোনোদিন। ভুলটা তারই ওনাকে বিশ্বাস করাটাই ভূল ছিলো। সে যে এতো বড়ো ভুল করবে কল্পনাও করেনি । ঠিক আছে মানুষ তো ভুল থেকেই শিখে সেও শিখেনিয়েছে। কিন্তু এখন সে কি করবে?
নানীর কাছেও সে যেতে পারবে না গেলে কত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অবস্থায় নেই সে। আর ভাবতেই কেনো জানি বুকটা কেপে উঠছে যে এমন একটা দিন আবার আসবে তার জিবনে আজ থেকে চারমাস বারো দিন পর। রুহি নিজেকে সামলে নিয়েছে,
কান্না থামিয়েছে আর বৃষ্টিতে ভেজার কারনে শরীরটা দূর্বল লাগছে। এক রাশ বিষণ্ণতা নিয়ে সে বসে আছে।

আহান গাড়ীর ইস্টেয়ারিংয়ে হাত রেখে রাস্তার চারপাশটা দেখছে। চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছে সে। এতো রাতে রুহিকে কোথায় খুঁজবে সে? কোনো বিপদ হলে? ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠলো আহানের। আশে পাশের সবগুলো রাস্তায় তার খোজা শেষ। সে রুহির বাড়িতেও ফোন করেছে কিন্তু রুহি যায় নি সেখানে। অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে আহানকে। কিছুক্ষণ আগে একটা অ্যাকসিডেন্ট করতে করতে বেচেঁ গেছে সে। রুহি কোথায় যেতে পারে? ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো রুহির ডায়রীর একটা জায়গায় ওর প্রিয় জায়গার নাম লেখা ছিলো। সেখানে যায় নি তো। আহান সময় নষ্ট না করে গাড়ি ঘুড়িয়ে নিয়ে জায়গাটা খুজতে লাগলো। ধীরে ধীরে রাত বাড়ছে সঙ্গে আহানের চিন্তাও বেড়ে চলেছে। এক ঘন্টা খোঁজার পর সেই ব্রিজটা খুজে পেলো আহান। গাড়িটা একপাশে রেখে সিট বেল্ট খুলে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে।
পুরো ব্রিজটা খুজতে লাগলো। জায়গাটা আহানের সেফ মনে হচ্ছে কারন গাড়ি তেমন না থাকলেও লোকজনের চলাচল আছে। রুহি ঠিক থাকলেই হয়।
আহান খুজতে খুজতে অবশেষে পেয়েও গেলো রুহিকে। রুহির দেখা পেয়ে থমকে দাড়িয়ে গেলো আহান। বুকের উপর থেকে যেনো একটা চাপ নেমে গেলো আহান চোখ বন্ধ করে সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।

রুহির প্রচন্ড মাথায় ধরেছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। এমন সময়ে কেউ একজন হটাৎ তার হাত ধরতেই অজানা ভয় গ্রাস করলো। পরক্ষণে তাকাতেই আহানকে দেখে বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো রুহির। আহানের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আহানের এমন অবস্থা দেখে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রুহি। গলার টাইটা এলোমেলো অবস্থা, শার্টটার হাতা কনুই পর্যন্ত তুলে রাখা।

আহান রুহির রুহির দুই বাহু শক্ত করে ধরে ধমকের সুরে বললো,” ঘর থেকে কার পারমিশন নিয়ে বেরিয়েছ, হ্যা? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করতাম?”

আহান এমন শক্ত করে ধরে রেখেছে মনে হচ্ছে হাতই খুলে ফেলবে কাধ থেকে। তারওপর চারিদিকে মানুষ আড় চোখে তাকিয়ে আছে।
রুহি আহান থেকে চোখ সরিয়ে নিচু গলায় বললো,” ছাড়ুন মানুষ দেখছে। আর আমার কিছু হলে তো আপনারই রাস্তা পরিষ্কার। বাকি কয়েকটা মাস আর নাটক করতে হবে না। আপনি আর সামিরা একসাথে অনেক টাইম স্পেন্ড করতে পারবেন, ভালোই হতো।”

রুহির ঐ কথাগুলোয় আহানের রাগ চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। এক ঝটকায় রুহির হাত ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করতে ঘাড়ের পিছনের হাত দিয়ে ডলতে লাগলো। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে চোয়াল শক্ত করে বললো,” গাড়িতে ওঠো।”
এই মুহুর্তে এসব কথা সে বাড়াতে চাচ্ছে না। আহানের চোখ মুখ শক্ত। এইখানে কোনো সিন ক্রিয়েট হোক সে সেটা চাচ্ছে না।

কিন্তু রুহি নিজের সিদ্ধান্তে অটল রুহির আহানের মুখের উপরে বললো,” আমি আপনার সাথে যাবো না। এখন তো আর দিদা নেই যে তার জন্য আপনার সাথে আমার গিয়ে থাকতে হবে। আপনি চাইলে এক্ষুণি আপনার সামিরাকে বিয়ে করে নিন। সে তো খুব কষ্ট পেয়েছে, আপনি তো আবার তার কষ্ট দেখতেই পারেন না।আমি আপনাদের বিয়েতে না হয় গিয়ে সাক্ষ দিয়ে আসqবো। কিন্তু আমি আপনার সাথে এক মুহুর্ত এক ঘরে থাকবো না।”রাগের মাথায় গড়গড়িয়ে কথাগুলো বললো রুহি।

” তোমার অপিনিয়ন আমি চাই নি, ওকে? এইটা আমার অর্ডার। আমাকে আর রাগিয়ো না, চুপ চাপ গিয়ে গাড়িতে বসো। সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে।”, কড়া চোখে তাকিয়ে বললো আহান।

রুহি আরো রেগে গিয়ে বললো,” আপনি বাংলা ভাষা বুঝেন না? আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।”

আহানের ধৈর্যের সীমা শেষ। আর একটা কথাও সে বাড়ালো না। সোজা কোলে তুলে নিলো রুহিকে। হটাৎ এমন কিছু করায় রুহি ভয়ে আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।আহান এই রাস্তায় এমন কিছু করে ফেলবে রুহি চিন্তা করতে পারছে না। লোকটার আসলেই কোনো লজ্জায় নেই। আশে পাশে লোকজন তাকিয়ে আছে। রুহি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। রুহিকে কোলে নিয়েই আহান বুঝতে পারলো রুহি বৃষ্টিতে ভিজেছিল। আহানের চেহারার রাগটা মুহূর্তেই উধাও হয়ে চিন্তার ছাপ পড়ে গেল। এই মেয়েটা আবার জ্বর বাধাবে।

রুহি জোড়ে আহানের কাধে খামচি বসালো তারপর দাতে দাঁত চিপে বললো,” অসভ্যতা করবেন না। নামান আমাকে , আমি আপনার সাথে যাবো না।”

আহান একটাও কথা বললো না। কথা বললেই কথা বাড়বে, তাই কোলে নিয়ে হাটা শুরু করলো গাড়িটা ব্রিজের শেষ মাথায়। পুরো রাস্তায় আহান রুহিকে কোলে নিয়েই এলো। মানুষজন কমতেই রুহি ঝাপাঝাপি শুরু করলো। আহান নিরবে রুহির সব কিছু সহ্য করছে। আপাদত রুহিকে বাসায় নিয়ে যাওয়াটাই আহানের প্রয়োজন। আহান গাড়ির দরজাটা খুলে রুহিকে সিটে বসিয়ে দিলো। রুহির রাগটা বেড়ে গেলো, লোকটা জোরাজুরি করছে কেনো। তারওপর মুখেই তালা মেরে বসে আছে। রুহি আরেক দফা বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই আহান রুহির হাত ধরে ফেললো। তারপর সিট বেল্টটা টেনে পরিয়ে দিলো। রুহির শরীরটা গরম হয়ে আসছে আহান নিজের সিটে থাকা কোর্টটা হাত বাড়িয়ে নিলো তারপর কোর্টটা রুহির গায়ে জরিয়ে দিতেই রুহি সরিয়ে ফেললো তারপর কড়া গলায় বললো,” এই যত্নের নাটকটা আপনার আর করতে হবে না।”

আহান রুহির দিকে এগিয়ে গেলো। চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে। রুহিকে চুপ করানোটা দরকার নাহলে আহানের মাথা খারাপ করে দিবে। আহান Ruhiru ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে মুহূর্তেই কাছে এনে অধর ছুয়ে দিলো। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো রুহি বুঝতেও পারলো না। চোখ বড় বড় করে ফেললো কিন্তু গভীর স্পর্শে আবার চোখ বুঝে নিলো। কিছুক্ষণ পর আহান সরে এলো। রুহি চোখ বন্ধ অবস্থায় আস্তে আস্তে হাপাচ্ছে। সব রাগ কেড়ে নিয়ে আহান যেনো লজ্জার চাদরে ঢেকে দিয়েছে রুহির মুখটা। সেই মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে কোর্টটা রুহির গায়ে জরিয়ে দিলো। রুহি এখনও চোখ বন্ধ করে আছে। আহান কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে নিজের সিটে এসে বসে পড়ল। কথা না বলেও চুপ করানোটা সে জানে।

রুহি মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। অসভ্য একটা লোক ইচ্ছে করছে ঘুষি মেরে নাকটা ফাটিয়ে দেই। রাস্তার মধ্যে একটা মেয়েকে….বেহায়া একটা লোক। মনে মনে বললো রুহি। আহান গাড়িটা স্টার্ট দেওয়ার আগে একবার রুহির দিকে তাকালো চুপ করে বসে আছে রুহি। যাক আপাতদ শান্ত হয়েছে মহারানী, কখন আবার বোমা হয়ে ফেটে যায়। আহান মুখ দিয়ে উফ শব্দ করলো। তারপর গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

গাড়িটা ফ্ল্যাটের সামনে এসে থামতেই রুহির গা জ্বলে উঠলো। ঐ ফ্ল্যাটে যেতেই ইচ্ছে করছে না তার চেয়ে এই গাড়িতে থাকাটা অনেক ভালো। আহান গাড়ীর চাবিটা হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। তারপর রুহির পাশের দরজা খুলে বললো,” বেড়িয়ে এসো।”

” আমি যাবো না ভিতরে আমি এইখানেই থাকবো।”, মুখ কালো করে বললো রুহি।

” আর ইউ মেড ওর হোয়াট?রুহি ডোন্ট স্টার্ট দিস এগেইন। জলদি নামো।”, তাড়া দিয়ে বললো আহান।

” আমি কিছু শুরু করিনি। আমি যখন বলেছি আমি যাবো না মানে যাবো না।”, কথার পিঠে কথা বললো রুহি।

” হুম তোমার তো আবার আমার কোলে উঠতে অনেক ভালো লাগে তাই না। আসো তাহলে।” বোলে ঝুকতেই রুহি চোখ বড় বড় করে তাকালো তারপর শাসিয়ে বলল,” একদম আমার কাছে আসবেন না।”

” আই ডোন্ট নীড ইউর পারমিশন। এবার বলো হেঁটে আসবে না কোলে করে আনবো? আই থিঙ্ক কোলে করে নেওয়াটাই বেটার।, তুমি কি বলো?”, বলেই বাকা হাসি দিলো আহান।

রুহি ভালোই বুঝেছে এই লোকটা নাছর বান্দা কি করতে আবার কি করে বসে কোনো হিতাহিত জ্ঞান নেই। ঠিক দেখা যাবে কোলে করে নিলোজ্যর মতন নিয়ে যাবে সবার সামনে দিয়ে।
রুহি মুখ কালো করে আহানের পিছু পিছু এলো। ফ্ল্যাটে ঢুকেই ভেবেছিলো ঐ শাকচুন্নির মুখটা দেখতে হবে কিন্তু তা হলো না। শাকচুন্নিটা নেই।
রুহি চুপ করে সোফায় বসে পড়লো। শরীরটা চিট চিটে লাগছে, বৃষ্টিতে ভেজার পর গোসল না করলে অসস্তি লাগে রুহির। রুহি আহানের কোর্টটা গায়ের উপর থেকে সরিয়ে একপাশে রেখে দিলো। আহান এগিয়ে এসে রুহির কপালে হাত দিতেই রুহি চমকে তাকালো। রুহির গা হাল্কা গরম এভাবে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না থার্মমিটার দরকার। আহান ব্যাস্ত হয়ে থার্মমিটার খুজতে লাগলো। রুহি এই ফাকে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। ঢুকেই শাওয়ার ছেড়ে নিচে দাড়িয়ে পড়লো।

আহান থার্মমিটার হাতে ড্রয়িং রুমে এসে রুহিকে না দেখে আবার চিন্তায় পরে গেলো, পালিয়ে যায় নি তো। খুজতে খুজতে নিজের রুমে এসে শাওয়ারের আওয়াজ পায়। এই মেয়েটা তো দেখছি তাকে জ্বালিয়ে মারবে। একে তো জ্বর তারওপর এখন শাওয়ার নিচ্ছে। আহান ওয়াশরুমের দরজায় নক করলো কয়েকবার। রুহি শুনেও না শুনার ভাবে রইলো।
আহান রেগে গলার টাই খুলে ফেললো তারপর আবার নক করে শাসিয়ে বললো,” রুহি জলদি বের হয়।”রুহি কথাটা শুনে মুখ বাকালো। এবার সে আরো সময় নিবে, সব কি কুম্ভকর্ণের ইচ্ছে মতন হবে নাকি? জোড় করে এক প্রকার তুলে নিয়ে এলো তারপর গাড়িতে ওসব ছি ছি…। রাস্তার মানুষগুলো কি না ভাবলো।
আহান কোনো উত্তর না পেয়ে রাগের ফুলছে। এসিটা অন করে শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে ফেললো। তারপর বিছানায় বসে হাঁটুর উপর দুই হাতের কনুই রেখে মাথাটা ধরে বসলো।

অনেক্ষন পর রুহি খেয়াল করলো সে জামা কাপড় কিছুই আনে নি এমনকি তোয়ালে পর্যন্তও আনেনি। এবার কি হবে? হায় আল্লাহ তার সাথেই কেনো এমন হয়। রুহির কেঁদেই ফেলতে ইচ্ছে করছে। রুহি দরজাটা অল্প খুলে বাহিরে তাকাতেই আহানের চোখে চোখ পড়লো। এদিকে তাকিয়ে ছিলো নাকি? আহান শক্ত চোখে তাকিয়েই আছে। রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো। আহান রেগে গিয়ে বলল,” ঐখান থেকেও কি আমায় কোলে করে আনতে হবে?”
রুহি মুখ বাঁকিয়ে মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিলো।

আহানের মাথা ব্যাথা ব্যাথা শুরু হলো। এই মেয়েটা তাকে পাগল বানিয়ে দম নিবে মনে হচ্ছে। আহান এগিয়ে এসে দরজায় নক করে ভালো করে বললো,” আচ্ছা আমি কিছু বলবনা বের হও তুমি।”

রুহির কাছেও কোনো উপায় নেই আর আহান যেহেতু ভালো করে বলছে তাহলে সাহায্য চাওয়াই যায়। যদিও বদমাইশ লোকের কাছে সাহায্য চাইতে তার বয়েই গেছে তবুও বিপদে পড়লে বিড়ালকে ও মাসি ডাকতে হয়। আর উনিতো চিতা।

রুহি ভিতর থেকে বলল,” আমার জামা লাগাবে আমি ভুলে গেছি।”
” আচ্ছা অপেক্ষায় কর। আনছি।”, বোলে আহান গেস্ট রুমে এলো এসে আহানের মেজাজ আরেকদফা বিগড়ে গেলো। রুহির জামা কাপড় গুলো পানি দিয়ে একদম ভিজানো।এসব একজনই করতে পারে সামিরা। ওর সাহস দেখে আহানের রাগটা সপ্ত আকাশে পৌছে গেছে। আহান নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। কারণ তার রুহিকে সামলাতে হবে এমনিতেই সে ভুল বুঝে বসে আছে। সামিরার বেবস্থাটা পরে করা যাবে। আহান রেগে শার্টটা খুলে বিছানায় ছুড়ে মারলো। তারপর ক্লোজেট থেকে নিজের একটা সাদা শার্ট আর একটা ট্রাউজার নিয়ে দরজায় নক করলো।
রুহি একটু খুলে হাতটা বাড়িয়ে জামা গুলো নিয়ে গেলো। তারপর ভিতরে দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো,” এসব কি আপনি মজা করছেন আমার সাথে আমি এইসব পড়বো না। আমার জামা কোথায়?”

” রুহি, সত্যি বলছি আমাকে আর রাগিয়ে দিও না। দুই মিনিটের মধ্যে এগুলো পরে বেড়িয়ে এসো ওয়াশরুম থেকে , নইলে আমি ভিতরে আসছি। এই দরজা ভেঙ্গে ভিতরে যেতে আমার দুই মিনিট ও লাগবে না।”, কড়া গলায় বললো আহান। সব রাগ শেষমেষ দরজায় গিয়ে না পরে মনে তো হচ্ছে ভেঙেই ফেলবে। রুহি একটা ঢোক গিললো।
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৬
#নবনী_নীলা

” রুহি, সত্যি বলছি আমাকে আর রাগিয়ে দিও না। দুই মিনিটের মধ্যে এগুলো পরে বেড়িয়ে এসো ওয়াশরুম থেকে , নইলে আমি ভিতরে আসছি। এই দরজা ভেঙ্গে ভিতরে যেতে আমার
দুই মিনিট ও লাগবে না।”, কড়া গলায় বললো আহান। সব রাগ শেষমেষ দরজায় গিয়ে না পরে মনে তো হচ্ছে ভেঙেই ফেলবে। রুহি একটা ঢোক গিললো।
এই লোকটার মাথায় যে কি ঘুরে? তার জামা কাপড় আমি পড়তে যাবো কেনো? এগুলো কি বিশাল বিশাল! লোকটার মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতে দরজায় আবার টোকা পড়তেই রুহির হুস ফিরল, দরজাটা না ভেঙ্গে ফেলে ঐ লোকটা। উপায় না পেয়ে আহানের দেওয়া শার্ট প্যান্ট পরে নিলো রুহি। প্যান্টটা নিচের দিকে ভাজ করে ঠিক করে নিলো কিন্তু শার্টটা? সেইটা তো কাধ বেয়ে পরে যাচ্ছে। গলা কাধের অনেকটা খোলা বললেই চলে।

আহান রুহির বাড়িতে ফোন করে ব্যাপারটা সামলে নিলো। রুহির নানা নানি সবাই চিন্তায় পরে গিয়েছিলো। আপাদত সামাল দেওয়া গেছে। আহান কল কেটে পিছনে ফিরতেই রুহি বের হলো। আহান রুহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। ভেজা চুলগুলো থেকে টপ টপ করে পানি পরছে, পরনে সাদা শার্টটায় গলা আর কাধের দিকটায় চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো আহান।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আহানকে এমন খালি গায়ে দেখতে দেখতে হবে কে জানতো। এর আগেও দেখেছে তবে মুখ ঘুরিয়ে ফেলেছিল রুহি। আজ আহানের দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে গেলো রুহির। চওড়া কাঁধ, লাল ফর্সা গায়ের রঙ এক কথায় সুদর্শন পুরুষ। এমন খুঁটিয়ে সে আগে দেখেনি। আহানের চোখের দিকে তাকাতেই হুশ ফিরল রুহির। একটা ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে নিলো রুহি।

” তোমার চুল থেকে এভাবে পানি পড়ছে কেনো?”, বলেই আহান তোয়ালে খুজতে লাগলো।

রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে একবার চুলের দিকে তাকালো তারপর বলল,” ও আমি তোয়ালে নিতেও ভুলে গেছিলাম।” এর মাঝে আহান তোয়ালে এনে রুহির মাথাটা মুড়িয়ে দিলো। তারপর চুলের পানি তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগলো। রুহি বুঝতে পারছেন না আহানের কাজ গুলো। কয়েকমাস পর যখন অন্য কাউকে বিয়েই করবে তাহলে এতো যত্ন নিচ্ছে কেনো তার। অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি এখণও। আহান এভাবে মাথা মুছে দেওয়ার কারনে রুহির কেনো জানি ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আহান তোয়ালেটা খুলে নিতেই দেখলো রুহির গলায় বিন্দু বিন্দু পানির ছিটে। আহান রুহির চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দিয়ে গলা ও কাধের অংশের পানি মুছে দিতেই রুহির শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো। রুহি সরে যেতে চাইলে কিন্তু আহান এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে রাখলো।
দুজনের নিরবতায় অন্য এক পরিবেশ হয়ে গেলো। দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মুহূর্তেই সামিরার বলা কথাগুলো গুলো মনে পড়তেই রুহি বলে উঠলো,” কয়েকমাস পর যে চলে যাবে তার জন্য বেশী কেয়ার হয়ে যাচ্ছে না। আমাকে এভাবে অপমান করে এখন আপনি ঘায়ে মলম লাগাচ্ছেন?”

রুহির কথায় আহান রুহিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বললো,
” আমি তোমায় কোনো অপমান করিনি।”

” আপনি বলেছিলেন এই এগ্রিমেন্টের কথা আমি আর আপনি বাদে আর কেউ কোনোদিন জানবে না। সাত মাস পর আপনি আর আমি আলাদা হয়ে গেলেও কেউ জানবে না। কিন্তু নিজের গার্লফ্রেন্ডের মন ভালো করতে আপনি সব কিছু বলে দিলেন। আজ কাল আমার মতো মেয়ে নাকি পাওয়া যায় না যারা চুক্তিতে কারো সাথে থাকতে রাজি হয়। কথাটার ভার কতো আপনি জানেন? এইটা কি আমার প্রাপ্য ছিল। মানছি কথাটা সত্য কিন্তু.. ” কথা গুলো বলতেই রুহির চোখের কোণে পানি জমে যায় তাই আহানের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় সে।

কথাগুলো শুনেই আহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো। শুধু তাকে ভুল বুঝে মেয়েটা চোখের জল ফেলছে। আহান হাত দিয়ে রুহির দুই গাল ধরে নিজের দিকে ফিরলো। তারপর মাথা ঠান্ডা করে বললো, ” প্রথমত সামিরা আমার গার্লফ্রেন্ড না, কথাটা শেষবারের মত আমি তোমায় পরিষ্কার ভাবে বলে রাখছি। দ্বিতীয়ত ঐ এগ্রিমেন্টের কাগজ আমি ওকে দেই নি, আমার অবহেলার কারনে কোনোভাবে ও আমার ঘরে এসে সেগুলো পেয়েছে। তোমাকে আমি কোনো অপমান করিনি তাই আমাকে ভুল বোঝাটা বন্ধ করো।”

” একটা মেয়ে শুধু শুধু আমাকে মিথ্যে কথা বলবে কেনো?।”, অভিমানী গলায় বললো।

” সত্যিটা আমি তোমায় জানালাম,তোমার আমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে না হলে করো না। সেটা তোমার উপর নির্ভর করে।”, বোলেই আহান রুহির গাল দুটো ছেড়ে দেয়। আহান চায় না জোর করে কাউকে কিছু বোঝাতে বুঝতে হলে সে এমনই বুঝবে না হলে কোনোদিন বুঝবে না। রুহি যদি ভুল বুঝে থাকতে চায় তাহলে থাকুক।

রুহি নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো আহানের দিকে। এ কেমন দোটানায় পরে গেলো সে। ইচ্ছে তো করছে আহানকে বিশ্বাস করে তবে একটা কিন্তু থেকেই যায় তার মনে। অতীতটা তাকে কিছুই বিশ্বাস করতে দিচ্ছে না।

বেল বেজে ওঠায় আহান রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রুহি আড় চোখে আহানের যাওয়ার দিকে তাকালো, নিশ্চই শাকচুন্নিটা এসেছে। কে এসেছে দেখার জন্যে রুহি আহানের পিছু পিছু এসে ড্রয়িং রুমে দাড়ালো। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকালো কিন্তু রুহির ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো ডেলিভারি বয় এসেছে। রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো তারপর নিজের রূমের দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেলো রুহির। একি দরজায় তালা মারা কেনো? কোথায় ঘুমাবে সে? কে করেছে এই কাজ। রুহি এগিয়ে গিয়ে রুমের তালাটা ধরে ঝাকানো শুরু করলো।

আহান দরজা লাগিয়ে ভিতরে এসে রুহিকে দেখলো তালা নিয়ে ঝাকাঝাকি করছে। আহান কিচ্ছু বললো না কারণ তালাটা সে মেরেছে। খাবার গুলো নিয়ে রূমে চলে গেলো। রুহি রেগে আহানের পিছে পিছে গেলো।
” ঐ রুমটায় তালা মেরেছে কে?”, রাগে ফুলতে ফুলতে বললো।

আহান একটু ভেবে সঙ্গে সঙ্গে বললো,” সামিরা, সামিরা তালা মেরেছে।”

আহানের কথা রুহির মাথার উপর দিয়ে গেলো
সামিরা তালা মেরেছে মানে? মানে কি এসবের? সব মিথ্যে, এই লোকটাই করেছে, হাড়ে হাড়ে চেনা আছে এই কুম্ভকর্ণটাকে। সব নষ্টের গোড়া এই মহাজন।

” হ্যা, কেনো সে তালা মারবে কেনো?”, হতবাক হয়ে বললো রুহি।

” জানি না, আমি তো সে জন্যই তোমার ব্যাগ আনতে পারলাম না। তাই আমার জামা পরে চাতক পাখির মতন ঘুরে বেড়াচ্ছ।”, বোলেই ঠোঁট চেপে হাসলো আহান।

” আপনি হাসছেন কেনো তারমানে আপনি করেছেন। আপনার হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোরের মতো মিট মিট করে হাসছেন।”, কড়া গলায় বললো রুহি।

“আমি কেনো রুমটায় তালা মারতে যাবো। আমি করিনি, বিশ্বাস করো। আচ্ছা আমি দেখছি চাবিটা কোথাও খুজে পাওয়া যায় কিনা।”, বলে এক বাটি সুপ নিয়ে আহান এগিয়ে এলো তারপর সেটা রুহির হাতে ধরিয়ে বলল,” তুমি এটা শেষ করো আমি দেখছি কিভাবে দরজাটা খোলা যায়। আর শেষ করো নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।”,বলে আহান সত্যি সত্যি খুজতে লাগলো।

রুহি সুপের বাটিটা হাতে বিছানায় বসে পড়লো। আসলেই কি আহান তালা দেয় নি? ঐ শাকচুন্নিটা দিয়েছে কিন্তু কেনো? কি কনফিউজিং !
আহান কিছু বলে নি ঐ মেয়ে নিজে নিজে খুজে পেপার পেয়েছে। আহানের সাথে সময় কাটাবে বলে এলো,ফিরে এসে দেখি কোথাও নেই। আবার গেষ্ট রুমে তালা মেরে গেছে। ভাবতে ভাবতে পুরো সুপটা খেয়ে ফেললো রুহি। এতক্ষণ সে আনমনা ছিলো। আহানের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা চাবি হাতে দরজার দিকে যাচ্ছে।

” চাবি পেয়েছেন?”, বলেই বাটিটা একপাশে রেখে উঠে দাড়ালো। আহান কিছু না বলে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তারপর চাবি দিয়ে ভিতর থেকে লক করে দিলো। রুহি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি দরজা লাগলেন কেনো?”

” হুম, দেখলাম দরজাটার লক ঠিক আছে কিনা?”বলেই চাবি হাতে করে গা হেলিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো আহান। রুহির বিস্ময়ের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তারমানে তাকে বোকা বানানো হয়েছে! এই কাজটা উনি করেছেন। রুহি রাগে ফুলতে লাগলো।

” আপনি এতক্ষণ ধরে এই চাবিটা খুজছিলেন?”, গাল ফুলিয়ে প্রশ্ন করতেই আহান রুহির হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। হটাৎ টেনে ধরায় রুহি আহানের বুকের উপর পড়তেই চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়লো রুহির। আহান হাত দিয়ে আলতো করে রুহির গালে হাত দিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিলো। আহান এক রাশ নেশা ভরা চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের চোখের দিকে তাকিয়ে দমে গেলো রুহি। সব রাগ যেনো উড়ে গেলো।আহান নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে বললো,” আমি জীবনেও কোনো মেয়ের জন্য এতো কিছু করিনি। আজ তোমার জন্য মিথ্যে পর্যন্ত বললাম যে আমি কিনা মিথ্যে বলা পছন্দ পর্যন্ত করি না। তুমি এতো বিরক্ত করো সারা দিন উল্টা পাল্টা কথা বলো তারপরও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারি না। কেনো বলতো?”

রুহি ঘন ঘন চোখের পাতা ফেললো। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে রুহি, এটা কি আহান! বুকের ভেতরে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। আহান রুহির কোমড় জড়িয়ে বিছানার সাথে মিশিয়ে দিতেই রুহি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,” কি করছেন?”এক রাশ লজ্জা ঘিরে ধরেছে রুহিকে।

আহান রুহির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,” খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তোমায়।”রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। তারপর লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরলো। বুকের ভিতরটায় উথাল পাথাল চলছে। আহান রুহির গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো,” লজ্জা পেলে তোমায় দেখতে দারুণ লাগে।তখন ইচ্ছে করে তোমায়………….”

[ #চলবে ]
[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here