বেটারহাফ পর্ব ১৮+১৯

#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi

| পর্ব ১৮ |

সাগরের কথায় শাহিনুরের দুনিয়া থমকে গেলো। চোখদুটো জলে ভরে উঠলো। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে-সন্তান নিয়ে সংসার করেছে একা একা। এত বছরে সে কম কড়া কথা শুনে নি। কারো অতি মাত্রার কড়া কথাও তার চোখে জল আনতে পারে নি আজ অবধি। আর আজ ছেলের মুখের এমন কথা শুনে তার চোখে জল চলে এসেছে। সাগর যদি আরো একবার এ কথা বলে তাহলে হয়তো সে জল গাল বেয়ে গলা পর্যন্ত নামবে।

তিনি অত্যন্ত শান্ত গলায় বলে,–” সাগর পরে ক্ষমা চাইতে এসো না যেনো। এসবের জন্য আমি কিন্তু কোনোদিন ক্ষমা করবো না।”

সাগর তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে বলে,–” উদ্ধার করলেন আমায়।”

শাহিনুর চোখ বন্ধ করে ফেললেন। কলিজা টা জ্বলছে। কেউ হয়তো কলিজা টা ছুরি দিয়ে টুকরো টুকরো করছে। শাহিনুর বেগম বুকে হাত দিলেন। বড় বড় দু-চারটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ মেলে তাকালেন।

সাগর শাহিনুরের দিকে তাকিয়ে বলে,–” সবাই বলতো সৎ মা কোনোদিন আপন হতে পারে না। আমি বুক ফুলিয়ে বলতাম, “কে বলে পারে না আমার মা কে দেখো।” তারা জবাব দিতো,–“উনি তোর চোখে পট্টি পরিয়ে রেখেছে , কোনো একদিন তুই সেটা বুঝবি।” আমি রেগে ওদের সাথে সেখানেই বন্ধুত্ব শেষ করে দেই। কারণ ওরা আমার ফুলের মতো মায়ের নামে বাজে কথা বলতো আমাকে।
অনেক বছরের বন্ধুত্ব ছিলো, সবাই সেদিন বলেছে,”একদিন তুই পস্তাবি!”
আমি আরো রেগে যাই, এরপর আর কোনোদিন ওদের সাথে মিশি নি।

আজ এতবছর পর সবাই আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলছে, –‘কিরে বলেছিলাম না পস্তাবি, দেখ কি হাল তোর। পুরো এলাকা হইহই করছে তোর ব্যাপারে। একফোঁটাও তো শান্তি পাচ্ছিস না।’
আমি শুধু শূন্য দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।”

এটুকু বলে সাগর চুপ করে গেলো। গলার স্বর টা কেমন কাঁপছে, কান্না এসে যেতে পারে যে কোনো সময়। সে টলছে।

শাহিনুর অবাক চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ছেলেকে প্রশ্ন করেছিলো সে কেনো আর তার বন্ধুদের সাথে মিশে না?’
জবাবে সে বলেছিলো,’ ওরা বাজে ছেলে মা।’
তিনি আর সেদিন কোনো প্রশ্ন করে নি। সত্যিই ভেবে নিয়েছিলেন তার কথা।
আজ জানতে পারলো তার জন্য সাগর নিজের বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়েছে। রাতদিন যে কাঁদতো সেটা তার জন্য ছিলো?

সাগর হঠাৎ হেসে উঠলো,হেসে হেসেই বলে,–” অবাক করার বিষয় কি ছিলো জানো? আমি যখন চুপচাপ চলে আসছিলাম তখন ওরা আমাকে ধরে ফেলে। সবাই মিলে আমাকে হালকা ভাবে মেরে বুকে জড়িয়ে নিলো।
সবাই মিলে বলতে লাগলো,–“আমরা জানতাম এমন একদিন তোর জীবনে আসবে আসবেই। তুই তো বন্ধুত্ব শেষ করেছিলি আমরা করি নি। আজ তোর এ নিঃসঙ্গ সময়ে আমাদের সঙ্গ প্রয়োজন। তাই সবাই চলে আসলাম।”
আমি এবার আরো অসহায়ের মতো হয়ে গেলাম। জানো কি পরিমাণ কষ্ট হচ্ছিলো?
এ পৃথিবী তে সবচেয়ে বেশি কষ্টকর দুটো জিনিস–এক. কারো সাথে ভুলের পর অনুতপ্তের মুহূর্ত। দুই. খারাপ সময়ে তাদের সহানুভূতি। এ দুটো জিনিস একসাথে হলে খুব পোড়ায়! আমার সাথে তখন দুটোই হয়েছিলো। সেজন্য কষ্টের পাহাড় টা আকাশচুম্বী ছিলো। ওরা যদি মাফ না করে আমাকে আরো কথা শুনাতো তাহলে, বাঁচা যেতো। কিন্তু নিজের কাছেই ছোট হয়ে গিয়েছিলাম তখন। নজর ই মিলাতে পারছিলাম না। চোরের মতো থাকতে হচ্ছিলো। পুরানো ফ্রেন্ডশীপ ফিরে পেয়েছি তবে এখানে আর আমার কোনো দাম নেই, আর না কোনো মূল্য!সবসময় ঝুঁকে চলতে হবে সেখানে। ”

কথা বলতে বলতে সাগর নিচে বসে পড়লো।
শাহিনুর বেগম তার দিকে তাকিয়ে আছে। উনার চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।
ছেলের মুখ বরাবর বসে পড়লেন তিনি। নাকে তার অদ্ভুত, বাজে গন্ধ ভেসে আসছে। দুবার শুকতেই তিনি বুঝলেন তার ছেলের মুখ থেকে আসছে। বুঝতে বাকি রইলো না কিসের গন্ধ।

সাগরের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করলেন,–“সাগর তুমি মদ খেয়েছো?”

জবাবে সাগর হেসে হেসে বলে,–” না তো, আমি বিয়ার খেয়েছি। জানো ওরা কেউ আমাকে দিতে চাইছিলো না, আমি জোর করে নিয়ে খেয়েছিলাম। ”

শাহিনুর আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললেন।
ছিঃ, শেষ পর্যন্ত তার ছেলের এত অধঃপতন হয়েছে তার জন্য? বুকটা বারবার এমন কেঁপে উঠছে কেনো। নিজেকে জগন্যতম মা মনে হচ্ছে তার। কষ্টে ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে।

এজন্যই তো সে বলে, ছেলে কীভাবে তাকে এত কথা বলতে পারে। তিনি জানেন,সাগর স্বাভাবিকভাবে থাকলে জীবনেও এসব কিছুই বলতো না। মা কে খুব শ্রদ্ধা করে সে।
শাহিনুর এতক্ষণে নিঃশব্দে কাঁদলেও এবার শব্দ করে কেঁদে দিলো। আওয়াজ টা যেনো অন্য কারো কানে না যায় তাই সে মুখে শাড়ির আঁচল টা গুজে ধরলেন।

রাত্রি রুমের দরজা টা খুলে বের হয়ে দেখলো তার স্বামী নিচে বসে আছে আর শাশুড়ি কাঁদছেন। চারপাশের অবস্থা খুব বাজে।
এমন দৃশ্য দেখতেই তার মাথা টা হালকা নাড়া দিয়ে উঠলো। সে দৌড়ে এসে শাশুড়ির সামনে বসে বলে,–“কী হয়েছে মা?”
রাত্রির কন্ঠ ঘুম জড়ানো, মাত্রই তার ঘুম ভেঙ্গেছে।
সাগর রাত্রিকে দেখেই উৎফুল্ল হয়ে গেলো। সে রাত্রির মুখে,বাহুতে হাতিয়ে বলে,–“তুমি ঠিক আছো? বারবার কেনো নিজেকে মেরে ফেলতে চাও?আরেকবার এমন কিছু করতে চাইলে আমি নিজে তোমায় মেরে তারপর নিজেও মরে যাবো।”
রাত্রি বিব্রতবোধ করে উঠলো। সাগর কী বলছে এসব?আর এমন দূর্গন্ধ কেনো আসছে?
সে প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে শাশুড়ির দিকে তাকালো।
শাহিনুর কোনো কথা না বলে দ্রুত উঠে নিজের রুমের দিকে চলে যেতে লাগলো।

রাত্রি হতবাক হয়ে দুদিকে তাকাতে লাগলো। সাগর টলমল করে উঠে রাত্রিকে জড়িয়ে ধরলো। রাত্রি চমকে নিজের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখলো সাগর তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। সে তাকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিতে চাইলে, সাগর বলে উঠে,–” আমাকে ছেড়ে যেও না নাহলে মরে যাবো। আমার আত্নার মৃত্যু আরো আগে হয়ে গেছে। তুমি যদি ছেড়ে দাও তাহলে দেহের মৃত্যু ও হয়ে যাবে।”
রাত্রি দ্বিগুন চমকে গেলো। সাগরের কথা শুনতে স্পষ্ট না হলেও তার বুঝতে কষ্ট হয় নি। সে চুপ করে রইলো। সাগর উল্টাপাল্টা বকবক করছে। রাত্রি হতভম্ভ হয়ে গেলো।
সে বুঝতে কারছে না,ঘুম থেকে উঠে কি তার মাথা শূন্য হয়ে গিয়েছে নাকি?

–“কিসব উল্টাপাল্টা বলছেন আপনি?”

সাগর মুখ খুলতেই রাত্রির নাকে গন্ধ টা এসে ধাক্কা লাগলো।

–“আপনার মুখ থেকে কিসের দূর্গন্ধ আসছে? মদ খেয়েছেন?”

–” না, বিয়ার খেয়েছি।”

–” ছিঃ, আপনি এসব ছাইপাশ খেয়েছেন?আবার সেটা গর্ব করে বলছেন। এমনভাবে বলছেন যেনো অমৃত পান করছেন।”

সাগর হেসে চুপ করে রাত্রির বুকে মাথা পেতে রইলো। রাত্রি হালকা কেঁপে উঠলো। কেমন অসার লাগছে তার শরীর। কয়েক মুহূর্ত সেও চোখ বন্ধ করে সাগরের সাথে তাল মিলিয়ে চুপ করে অনুভব করলো।

২৩.

চারপাশ রোদের আলোয় ঝলমল করছে। রুমজুড়ে আলোর ছড়াছড়ি। রোদের
আলো জানালা ভেদ করে সাগরের মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
হালকা হালকা ভাবে সে চোখ মেলে তাকালো। মাথা টা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।বিছনায় বসেই মাথ্যায় হাত দিলো।
সকাল পেরিয়ে দুপুর শুরু হচ্ছে। বড্ড বেলা হয়ে গিয়েছে। চোখ তুলে
দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো সাড়ে বারোটা বেজে গিয়েছে।
সে হতভম্ভ হয়ে গেলো, এত বেলা অবধি সে ঘুমিয়েছে। কেউ তাকে ডাকে নি আর সে নিজেই বা কেনো উঠতে পারে নি?
বিছানা থেকে নামতেছিলো তখন সে দেখলো সে পোশাকবিহীন কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে আছে।

সে এবার আরো হতবাক হয়ে গিয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সে নিজের রুমেই আছে, রুমে আর কেউ ই নেই।

দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বিরবির করে বলে উঠে,–” কী হয়েছে? আমি তো বন্ধুদের সাথে ছিলাম, এরপর, এরপর? কী হয়েছে?”
#বেটারহাফ
#নিশাত_তাসনিম_নিশি

| পর্ব ১৯ |

দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বিরবির করে বলে উঠে,–” কী হয়েছে? আমি তো বন্ধুদের সাথে ছিলাম, এরপর, এরপর? কী হয়েছে?”

কিছু মনে করতে না পেরে সে উঠে গেলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই দেখলো বড় ভাবী ফিহাকে খাইয়ে দিচ্ছে। তাকে দেখে সোহাগী প্লেটে নাস্তা বেড়ে দিলেন। সাগর চুপচাপ খেতে বসে যায়। মাথ্যা টেনশনে ফেটে যাচ্ছে, কেমন ঝিমঝিম করছে। প্রতিটা রগে রগে টান অনুভব করছে,এত যন্ত্রণা করছে কেনো?

–“ভাবী, কড়া লিকারে এক কাপ দুধ চাও দাও তো।”

–“পাঁচ টা মিনিট ওয়েট করো, ফিহাকে খাওয়াচ্ছি। আমি এখন নড়লে ও পালিয়ে যাবে।”

সাগর চুপ করে রইলো। নাস্তা আর মুখে দিলো না, প্লেট ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে গেলো।

–“সাগর কই যাচ্ছো? দাড়াও। আমার হয়ে গেছে তো।”

–” আমি খাবো না ভাবি। আপনি ফিহাকে খাওয়ান, ও নেমে যাচ্ছে।”

সোহাগী আবার পিঁছিয়ে গিয়ে ফিহাকে ধরলো। মেয়েটাকে খাওয়াতে গেলে যত জ্বালা দেখা দেয়। আর এদিকে উনি, দুই বউ থাকতেও আমার সাথে ধারাধারি করে। আরে ভাই দেখছোস ই তো বাচ্চা খাওয়াচ্ছি দুই মিনিট অপেক্ষা করলে কি হতো? না রাগ দেখিয়ে উঠে গেলো। তাতে আমার কি হয়ে গেলো?
শুধু উনাদের রাগ,আমাদের নাই।

আপন মনে সোহাগী মিনমিন করে ফিহাকে খাওয়াতে লাগলো। ফিহা খেতে চাইলো না, মুখ থেকে বের করে দিলো। ব্যাস! আগুনে যেনো ঘি ঢেলে দিলো। চপাস চপাস করে ফিহার দুই গালে দুই থাপ্পর বসিয়ে দিলো।

ফিহা কেঁদে উঠলো। যার প্রতিধ্বনি তরঙ্গের মতো সাগরের কানে বেজে উঠলো। সে দাড়িয়ে গেলো, বড় বড় দুটো নিঃশ্বাস ফেলে বাহিরের দিকে হাটা দিলো। ভাবী তার রাগ ভাতিজির উপর তুলেছে বুঝতে অসুবিধা হয় নি তার। কিছু বলার নেই, চুপচাপ সে বেরিয়ে গেলো।

আজ সারা বাড়ী নিশ্চুপ। কোথাও থেকে কোনো শব্দ আসছে না। সাগর বাহিরে থেকে হালকা কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে ঘরে ফিরে আসলো। কারো কোনো শব্দ নেই। কি ব্যাপার! সবাই কোথাও চলে গিয়েছে নাকি? এখনো কেউ ঘুম থেকেই উঠে নি।

চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরের পাকঘরের দিকে গেলো সে। কারণ সেখান থেকেই প্লেট-চামচের ঘষাঘষির টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে।
সেখানে গিয়ে দেখলো, রাত্রি সবজি কাটছে, বড় ভাবী প্লেট-বাটি ধুচ্ছে।
বৃষ্টি আশেপাশে কোথাও নেই। সেটা তার ভাবনায় আর আসলো না।

রাত্রির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সাগর।
–“রাত্রি এখন বাড়ীতে?কিন্তু কেনো?আজ স্কুলে গেলো না কেনো?তার মানে কি সে কাল তার সাথেই কিছু করেছে? কারন মাথায় হালকা হালকা স্মৃতি আসছে যে রাত্রি তাকে জড়িয়ে ধরে ফ্লোরে বসেছিলো।”
রাত্রি তার দিকে তাকাচ্ছে না। তার মানে সন্দেহ টা ঠিক। তার মনের ভেতর এক তৃপ্তি চলে আসলো । সে ভাবে, রাত্রি হয়তো রাগ করবে তার সাথে কথা বলতে চাইবে না। কাল যা করেছে সেটা তো অন্যায়। তার সাথে আলাদা কথা বলতে হবে। তাই সে রাত্রিকে উদ্দেশ্য করে বলে, —” আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে রুমে আসো। কড়া লিকারে!”

এ বলে সে চলে যায়। রাত্রি তার কথা শুনেও শুনলো না। নিজের মতো কাজ করতে লাগলো। সেটা দেখে সোহাগী তাড়া দিয়ে বলে,–“কি হলো রাত্রি? শুনছো না, জামাইরে চা দিতে বলেছে।”

–“শুনেছি ভাবি। সবজি টা কেটে নেই। আর অল্প একটু সবজি রয়েছে।”

–” রাখো তোমার সবজি। আগে চা দিয়ে আসো না হলে রাগ তুঙ্গে উঠবে। একটু আগে আমার উপরে রাগ করে চলে গিয়েছে না খেয়ে। এখন তুমি দেরী করলে আরো কাহিনী হবে, তোমার কাটার দরকার নেই আমি কাটবো।”

–” কি বলেন ভাবী। এখন তো সময় পাই না, আজ শুক্রবার বলে একটু কাজ করতে পারছি।”

–“পরে এসে কইরো। আগে গিয়ে তোমার জামাইরে ঠান্ডা করো নাহলে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিবে।”

রাত্রি তাচ্ছিল্য করে বলে,–” আমার জামাই…!!!!”

সোহাগী কথা টা শুনলো,তবুও চুপ করে রইলো। রাত্রি উঠে গিয়ে চা বানাতে লেগে পড়লো। সে ইচ্ছে করেই চাপাতা বেশি দিলো। কড়া লিকার বলেছে তাই না? দাড়াও খাওয়াচ্ছি। এক দানাও তো চিনি দিবো না দেখি খাও কিভাবে?

চা টা ঢেলে নিলো মগে। মগ নিয়ে পা বাড়াতেই ভাবলো, বেশি কড়া হয়ে গেলো না? এত দুধ দেওয়ার পরেও কালার টা কালছে! তাই চামচের মাথা দিয়ে হালকা চিনি নিয়ে নাড়ালো।

রুমে আসতেই দেখলো সাগর জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে। উত্তরমূখী বাতাস জানালা দিয়ে এসে ঢেউ খেলছে তার চুল নিয়ে। আর সে চোখ বন্ধ করে সেটা উপভোগ করছে।

রাত্রি চা টা নিয়ে এসে সাগরের সামনে শব্দ করে রাখলো।

সাগর চোখ মেলে তাকালো। রাত্রির চোখমুখে স্পষ্ট রাগ আর বিরক্তির আভাস। তার মনের ধারনা এবার তীব্র হয়ে গেলো। রাত্রি চলে যেতে নিচ্ছিলো, সে তার হাত ধরে আটকে ফেলে। রাত্রি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে পেছনে ঘুরে তাকালো। সাগর ওকে টান মেরে বাহু বন্ধনে আটকে নিলো।

–“কি সমস্যা? এভাবে টানাটানি করছেন কেনো?”

–” সমস্যা হলো তুমি।”

–” আমি? কি করেছি আমি? ফাজলামি করেন? ছাড়ুন। আমাকে ধরবেন না, ঘেন্না লাগে।”

সাগর চপচাপ রাত্রির ছুটোছুটি দেখছে। এবার সে আর ধারনা করলো না,পুরোপুরি নিশ্চিত সে।

–” সরি। আসলে রাতে আমি কন্ট্রোলে ছিলাম না। আই ওয়াজ ড্রাংক। রিয়েলি ভেরি সরি। আমি না ইচ্ছে করে কিছু করতে চাই নি।”

রাত্রি ভ্রু বাকালো। রাতের জন্য সরি মানে? যদি বলতো এত দিনের জন্য সরি,তাহলে মানতাম কিন্তু হাইলাইট করে কাল রাত উচ্চারণ করলো কেনো?
দোষ করেছে মায়ের সাথে আর সরি বলছে আমাকে? মা তো কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিলো তার মানে নিশ্চই উনি নির্ঘাত কিছু বলেছেন। আমি তো উনার উপর রেগে ছিলাম তাই বুক থেকে সরিয়ে টেনে টেনে তার রুমে দিয়ে এসেছি। তাহলে আমাকে সরি বলছে কেনো রাতের জন্য?

রাত্রি রেগে বলে,–“ছাড়ুন আমাকে। আপনার নব ঢং দেখলে গা জ্বলে। ”

সাগর ওকে চুপ করাতে পারছে না দেখে আচমকা গলায় মুখ গুজে বলে, –” আই নো লাস্ট নাইট ওয়াজ ভেরী বিউটিফুল!আই উইশ আই ওয়াজ ইন মাই সেন্স!”

ছাদ থেকে মাত্রই বৃষ্টি নেমে এসেছে। ঘরে ডুকতে যাবে এমন সময় স্বামীকে তার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে এমনভাবে দেখে তার পা থেমে যায়।

চুপিচুপি সে দিকে তাকিয়ে পিছু হাটতে লাগলো। উজ্জ্বল আকাশে সাতার কাটা পূর্নিমার চাঁদের মতো ছিলো গত রাত। সে ভেবেছিলো রাতের পর থেকে তার সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। সাগর তাকে মেনে নিবে, আর কোনো বাঁধা আসবে না সম্পর্কে। তার মনে এক ফালি আশা জমেছিলো। শব্দবিহীন পা ফেলে সে দৌড়ে চলে যেতে লাগলো ছাঁদের দিকে।

আকাশ টা বদলে গেছে। কালো কালো খন্ড মেঘ পুরো আকাশে জমে আছে। একটু আগে কি কড়া রোদ ছিলো!আর এখন সেটা তলিয়ে গেলো কালো মেঘের ভেলার নিচে। চারপাশ শোঁ শোঁ বাতাস বইছে খুব জোরে জোরে। মনে হচ্ছে খুব বড় না হলেও ছোটখাটো ঝড় বইবে।

প্রকৃতি আজ এমন রূপ ধারন করলো কেনো? একটু আগেও তো ঝকঝকে ফকফকে পরিষ্কার আকাশ ছিলো। মনে হচ্ছে, আশার আলো জ্বলে উঠতেই নিভে গিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় প্রকৃতির সাথে মানুষের মনের টান রয়েছে।

বৃষ্টি হাটু গেড়ে বসে আছে। দৃষ্টি তার কালো আকাশের দিকে। চোখ দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। গাল বেয়ে হাতের উপর পড়তেই তার সম্মতি ফিরে আসলো।

অশ্রুফোঁটা ছুঁয়ে বলে,–” আমার কান্না আসছে কেনো? কার জন্য কাঁদছি? নিয়তির উপর নাকি নিজের অসহায়ত্বের উপর? কাঁদবো না আমি। একদম কাঁদবো না। ওরা কি পেয়েছে? আমি কি মানুষ নয়? শুধু শুধু নাটক করছে সবাই মিলে আমার সাথে। ”

চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইলো সে। চোখের পানি কিন্তু তার সঙ্গ দিচ্ছে না, সে নিজের মতো বইছে।

চলবে!

[ লেইট হয়ে গেছে,আবার পর্ব টা বড় তাই রিচেক করি নি। ভুলগুলো কষ্ট করে বুঝে নিবেন।টাইপিং মিস্টেক গুলো আর কি! কাল বৃষ্টি কই বলে মাথা খেয়েছেন, এবার পড়ে দেখে নিন। ]
চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here