বেটারহাফ পর্ব ১

-‘যদি আপনারা কাজিন হয়ে থাকেন,তাহলে উনি কেনো প্রতিরাতে আপনার রুমে যায়?আর প্রতি সকালে কেনো আপনার চুল ভেজা থাকে?এই যে এখনও আপনার চুল বেয়ে টপটপ পানি পড়ছে,এর কারন কী?আপনি তো অবিবাহিত তাহলে কেনো প্রতিদিন সকালেই গোসল করতে হবে?’

রাত্রির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটুকু বলে থামলো বৃষ্টি!রাগে তার শরীর কাঁপছে!
বৃষ্টির কথা শুনে ড্রয়িংরুমের উপস্থিত সবাই হতভম্ভ!!সবাই যখন চা পান করছিলো তখনই কোথা থেকে বৃষ্টি হুড়মুড় করে প্রবেশ করে এসব বলতে লাগলো,সাথে সাথে সবাই চায়ে চুমুক দেওয়া বন্ধ করে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকালো!!

ও যে রাগের মাথায় কোথায় কী বলছে সেটাও বুঝে উঠতে পারতেছে না,’রাগ উঠলে কোথায় কী বলে?সাধারন মানুষ ও সেটা বুঝতে পারে না।’ আর যখন বাঙালী নারীদের স্বামীর বিষয় আসে তাহলে তো কথাই নাই!
ওর রাগ করাটা একদম ই স্বাভাবিক।
অস্বাভাবিক কিছুই নয়।বিয়ের মাস হতে চললো অথচ আজ পর্যন্ত সাগর ওর সাথে এক বিছানায় থাকে নি,প্রতিরাতেই ও বেরিয়ে পড়েছিলো, বৃষ্টি তো প্রথম কয়টা দিন বারকয়েক খবর নিয়েছিলো কিন্তুু সে কাঙ্ক্ষিত জবাব পায় নি।

কিন্তুু বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছে রাত্রি ভোরবেলায় গোসল করে,আর সাগর সকাল সকাল ওর ঘর থেকেই বেরিয়ে আসে।

এ নিয়ে সাগরের সাথে কয়েকদিন তর্ক করেও জবাব পায় নি!উল্টো সাগর ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়েছে।
কিন্তুু আজ যেনো তার ধৈর্যের বাদ ভেঙ্গে গিয়েছে!
তাই তো আজ যখন নিচে নেমে দেখলো রাত্রি ভেজা চুল নিয়ে ওর শশুড়-শাশুড়ীদের চা দিচ্ছে তখনই ও রেগে যায়।
আর এসব আবোলতাবোল বকা শুরু করে দেয়!
এদিকে মিসেস শাহিনুর বেগম কঠিন দৃষ্টিতে নেহার দিকে তাকিয়ে আছে,হয়তো কিছু বুঝাচ্ছেন!
তিনি আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছেন,তার মেয়ের জামাই আর বড় ছেলেও চা হাতে নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
বৃষ্টি কথাবার্তার মাঝেই বলে উঠলো “ও আজকেই চলে যাবে এ বাড়ী ছেড়ে সাথে সাগরের কুকীর্তি ও ফাস করবে!
মিসেস শাহিনুর চায়ের কাপ টা নিচে রেখে এগিয়ে আসলেন রাত্রির দিকে, রাত্রি তখন নিচের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ছাড়ছে।
মিসেস শাহিনুর কোনো কিছু না শুনে ঠাস করে রিয়ার গালে চড় বসিয়ে দিলেন!

-‘আশ্রয় দিয়েছিলাম বলেই কী আমার ছেলের সংসারে আগুন লাগাচ্ছিস? উপকারের কী এই প্রতিদান দিচ্ছিস?পর-পুরুষের এত শখ হলে বাড়ীর বাহিরে যাবি,আমার সংসারের দিকে কেনো নজর দিচ্ছিস?’

রাত্রি গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে সবার দিকে তাকালো,লজ্জায় তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তবুও সে চুপচাপ সব হজম করতে লাগলো! মিসেস শাহিনুর সেখানেই সব মিটমাট করে দিলেন!


-‘ভাবী,আমাকে চায়ের কাপ টা দিন!আমি দিয়ে আসি উনাকে!’
কথাটা বলে একটু লজ্জার ভান করলো! সোহাগী কিছু না বলে বড় মগ টা বৃষ্টির হাতে দিলো। বৃষ্টি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সোহাগী পিছন থেকে বললো,-‘সাবধানে যাস!’
কথাটা শুনে বৃষ্টি অবাক হলো,সে যতদূর জানে বড় ভাবী তাকে পছন্দ করে না তাহলে হঠাৎ এমন কথা!

-‘আপনার চা!’ কথাটা বলে ও সাগরের সামনে গিয়ে দাড়ালো। সাগর আয়নায় বৃষ্টিকে দেখলো!বৃষ্টি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ও পিছন থেকে বৃষ্টির হাত টেনে ধরে বললো, ‘দাড়াও!’

বৃষ্টি লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে দাড়ালো। কারণ এর আগে কখনও সাতর তাকে স্পর্শ করে নি।

বৃষ্টি ভাবলো তাকে হয়তো তার সাথে কথা বলবে,কিন্তু তা না করে ও সারসরি সকালের ঘটনা প্রশ্ন করে বসলো। বৃষ্টির মাথা খারাপ হয়ে যায়,সে জিদ দেখিয়ে উল্টাপাল্টা বলে চলে যেতে নিচ্ছিলো।

হঠাৎ হাতে গরম কিছুর আভাস পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো!

সাগর ততক্ষণে পুরো গরম চা ওর হাতে ঢেলে দিয়েছে! বৃষ্টির গলা চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে বললো,-‘তোর সাহস কী করে হয় রাত্রির নামে ওসব বলার?”

বৃষ্টি অন্য হাত দিয়ে সাগরের হাত সরানোর তুমুল চেষ্টা করছে!ওর প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসছে! সাগরের থেকে ছাড়া পেতেই ও খুক খুক করে কেশে উঠলো! সাগরকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো,-‘তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করেছেন? এতদিন আমি শিউর ছিলাম না এখন আমি পুরো শিউর যে আপনার সাথে যে ওই নষ্টা মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক আছে! আমি আজকেই কৌর্টে যাবো,আমি কেস করবো আর বলবো যে বউ থাকা স্বত্তেও আপনি অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ায় মেতে আছেন এবং আমাকে মারারও চেষ্টা করেছেন,প্রমান স্বরুপ আমার এই হাত ই যথেষ্ট! ‘

-‘তোর সাহস কী করে হলো রাত্রিকে নষ্টা বলার? ‘
-‘এখন আমি বলছি একটি পর পুরো দুনিয়া বলবে। ‘

সাগর,বৃষ্টির গাল চেপে বললো,” দ্বিতীয় বার যদি তোর মুখ দিয়ে এ কথা বের হয় তাহলে আর জীবনের দ্বিতীয়বার কথাও বলতে পারবি না!’

-‘কী হবে?আমি বলবো একশবার বলবো।আপনারা যখন নষ্টামি করেন তখন কিছু না, শুধু আমি বললেই দোষ?ওই মেয়ের তো লজ্জা-শরম কিছুই নেই, ওর আশ্রয় হওয়া উচিত পতিতালয়ে!’

সাগরের আর সহ্য করতে পারলো না। এ মেয়েটা বড্ড তর্ক করে,আজ তাকে এক শিক্ষা দিতে হবে।প্যান্টের বেল্ট টা এক টান মেরে খুলে ফেললো,চপাস চপাস করে বৃষ্টির গায়ে বেল্টের আঘাত বসাতে লাগলো!

টানা বিশ মিনিট মারার পর ও ক্লান্ত হয়ে পড়লো,এদিকে বৃষ্টির চিৎকার শুনে বাহিরে ভিড় জমালো ঘরের প্রতিটা সদস্যা! সবাই দরজা খোলার জন্য চেঁচিয়ে বলছে। ফ্লোরে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে বৃষ্টি, শরীরের প্রায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে!

ওর কোনো নড়াচড়া নেই,দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ক্লান্ত শরীর টা টেনে নিয়ে কোনোরকম দরজা টা খুলে দিলো সাগর! সাথে সাথে হুড়মুড় করে প্রবেশ করলো পুরো পরিবার।

ঘরের মেঝেতে বৃষ্টিকে পড়ে থাকতে দেখে সবাই হতভম্ভ হয়ে আছে!মেঝ ভাবী আর ননদ শিফা তো বিলাপ করা শুরু করে দিলাে। সবাই হতবাক!!

সাগর ওদের বিলাপ শুনে পিছনে ঘুরে তাকালো!সাথে সাথে ও নিজেও চমকে উঠলো, কারন,

.
চলবে?

#বেটারহাফ
#পার্ট_১
Nishat Tasnim Nishi

[তৃতীয় পক্ষের লেখার টান কম!পড়ে স্বস্তি পাওয়া যায় না! তবুও আমার লেখার মান ঠিক করার জন্য লিখলাম!কেমন ছিলো পর্ব? গঠনমূলক মন্তব্য আশাবাদী। কার্টেসী ব্যতীত কপি করবেন না!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here