#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi
| ৩১-শেষ পর্ব|
শাহিনুর খুব স্বাভাবিকভাবে পা ফেলে নিচে নামছে। সবাই নিশ্চুপ শুধুমাত্র তার হাটার আওয়াজের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। শাহিনুর নিচে নেমে এসে রায়হানের মুখোমুখি দাড়ালো।
রায়হানের চোখেমুখে তখন বিষ্ময় আর অবাকের রেশ। রায়হান অবাক হয়ে বলে,–“তুমি এখানে?”
শাহিনুর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,–” আমি থাকবো না তো কে থাকবে? আমি হলাম আপনার মেয়ের শাশুড়ি। ”
এ কথা শুনে রায়হান তব্দা খেয়ে যায়। সে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকায়। মাথা ভনভন করছে। শাহিনুরের চোখে মুখের ঝলক দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে মিথ্যা বলছে না।
রায়হান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,–” ওহ,আচ্ছা। এজন্যই তাহলে আমাকে এতদিন এ বাড়ীতে আসতে দেওয়া হয় নি। আর আমার মেয়ের এ অবস্থা তাহলে আপনিই করেছেন।”
শাহিনুর হালকা ভাব নিয়ে বলে,–” আপনার কথার সাথে আমি সহমত আবার সহমত নই। প্রথম কথাটা মানি শেষ কথা ঠিক নয়। আপনার মেয়ের এ অবস্থা শুধুমাত্র তার নিজের কারণেই হয়েছে।”
রায়হান বিপরীত কথা বলে। শাহিনুরও জবাব দেন। এদিকে সাগর আর বৃষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সাগর নিচে নেমে আসে। সে কৌতুহল নিয়ে বলে,—” আপনারা একে অপরকে চিনেন? কিন্তু কীভাবে?”
এ কথা শুনে উনারা দুজনই চুপ হয়ে যান। রাত্রি তা দেখে হাসে। সে উনাদের সামনে এসে বলে,–” কারন উনারা পূর্ব পরিচিত। এবং একটা সময় উনাদের খুব গভীর সম্পর্কও ছিলো।”
রাত্রির কথায় তার বাবা চমকে উঠে। সাগর চিন্তিত মুখ করে তাকাতেই রাত্রি হাসলো। এরপর সে খুব ঠান্ডা আওয়াজেই সেদিনের শাহিনুরের বলা সব কথা বলে।
সাগরের মুখের রং বদলে যেতে বেশি সময় লাগলো না। তার চোখেমুখে স্পষ্ট ঘৃণা দেখা দিচ্ছিলো।
এদিকে রায়হান অবাক হয়ে শাহিনুরের দিকে তাকায়। সে চরম বিষ্ময় নিয়ে বলে,—” তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে? আমার বাচ্চা ছিলো? ”
এটুকু বলেই সে থেমে যায় নি,চরম অস্থিরতা নিয়ে বলে,”তার কি হয়েছে? সে কই?”
শাহিনুরের বুক টা নাড়া দিয়ে উঠলো। সে চুপ করে যায়। রায়হান বারবার প্রশ্ন করতেই সে চেঁচিয়ে উঠে বলে,–“মরে গেছে সে।”
ফিকরে কেঁদে দেয় সে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, তাকে পৃথিবীর আলো দেখতে দোওয়া হয় নি। মেরে ফেলা হয়েছিলো তাকে। তিন টা মাস না হতেই তাকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছিলো।
শাহিনুর কাঁদতে থাকেন। রায়হান প্রশ্ন করে কেনো? আর কে করেছে?
জবাবে শাহিনুর বলে,”আমি কোনো গর্বের কাজ করি নি যে তাকে জন্ম দেওয়া হতো। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তাকে আমার পেটেই মেরে দেয় আমার পরিবার। জোয়ান মেয়ে বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা? আমার পরিবার আর আমার কি কোনো সম্মান থাকতো? এভাবেই বলা হয়েছিলো আমাকে।”
রায়হান সহ উপস্থিত সবাই চুপ। রাত্রি একবার মুখ ফুটে বলতে চাইলো, ‘এখন কাঁদছেন কোনো? আপনার কয়েক মুহূর্তের সুখের জন্য একটা নিষ্পাপ প্রাণ বলি হয়ে গিয়েছে।’
কত শত মানুষের বাচ্চা হয় না,আর আপনারা বাচ্চা জন্মদানে সক্ষম হয়েও তাদের নষ্ট করে ফেলেন। সৃষ্টার বিধান ও বড় বিচিত্র। যে যেটা চায় তার সেটা থাকে না,আর যে যেটা চায় না সেটা তাকে দেওয়া হয়।
এদিকে সাগর তার মায়ের চোখের জল দেখে পুরো ক্ষেপে যায়। সে তেড়ে যায় শশুড়ের দিকে। গলা উঁচু করে বলে,–” আপনি যদি রাত্রির বাবা না হতেন তাহলে এ মুহূর্তে আপনাকে ক্ষুন করতে আমি দ্বিতীয়বার ভাবতাম না।”
কথা টা শুনে রাত্রি রেগে যায়। সে রাগী কন্ঠে বলে,–” করেন। দেখি আপনার কত সাহস! আমার বাবা বলে বাদ যাবে কেনো করেন। নিজের মায়ের চরিত্রের দোষ টা চোখে পড়লো না আমার বাবার ভুল টাই শুধু চোখে পড়লো?”
সাগর রাত্রির গাল বরাবর হাত টা নিয়েও থামিয়ে নিলো। আরো উঁচু গলায় বলে,–” তোমার সাহস কি করে হয় আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলার?”
রাত্রি সাগরের হাত টা সরিয়ে বলে,—” গায়ে হাত তুলার মত দুঃসাহস ভুলেও দেখাবেন না। আপনার মা এতটা ভালো হলে কখনোই বিয়ের আগে ফিজিক্যাল রিলেশনে যেতো না। উনি যেখানে জানতেন বিয়ের আগে এসব হারাম সম্পর্ক জড়ানো উনার মতো ফ্যামিলির মেয়ের সাথে যায় না তাহলে কেনো উনি জড়ালেন? একটা বাচ্চা যখন নষ্ট হয় তখন শুধু ছেলেকে কেনো দোষারোপ করেন? আমি বলছি না যে আমার বাবা দোষী নয়,উনারও দোষ আছে।
মেয়েটার যদি মতামত না থাকতো তাহলে কখনোই সম্ভব হতো না। দোষ তো উভয় পক্ষের সমান থাকে। আপনার মা যে বললো, উনাকে ঠকিয়েছে আমার বাবা কিন্তু আমি বলবো আপনার মাকে আমার বাবা নয় আপনার মা নিজেই ঠকিয়েছেন। তিনি কি এতটাই নির্বোধ যে বাবা উনাকে চকলেট দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে ইন্টিমেট হবে?
কারো দিকে আঙ্গুল তুলার আগে নিজের দিকে তাকাবেন। আপনারা নিজেরাই ঠিক নেই, আবার অন্যের গায়ে কাঁদা ছুড়ছেন।”
সাগর স্তব্ধ হয়ে রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে মুখে হাজারো বিষ্ময়। রাত্রি তার সাথে এভাবে কথা বলেছে? শাহিনুরের তো কান্না আরো আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে বলে,—“বোবার মুখে খই ফুটেছে। বোবা কথা বলতে শিখে গিয়েছে?”
রাত্রি হাসলো। সে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলে,—” আমি কোনো কালেই বোবা ছিলাম না। জাস্ট সব চুপচাপ হজম করতাম,জবাব দিতাম না। কারন আমার হারানোর ভয় ছিলো। আমার স্বামীকে হারানোর ভয়,সংসার হারানোর ভয়,নিজেকে হারানোর ভয়। কিন্তু এখন আর এসবের ভয় নেই,কারন এসব কিছুই তো আর আমার নেই। যেই জিনিস নেই সেসবের ভয়ে চুপ করে কেনো থাকবো? আর আপনি যদি মনে করেন,আমাকে বের করে দেওয়ার ধমকি দিবেন,তাহলে শুনেন, আপনার আমাকে বলারও দরকার নেই। আমি নিজেই চলে যাবো।”
সাগর হুংকার দিয়ে বলে,—” তোমার এত সাহস কী করে হয় আমার মা কে এত কথা শুনানোর? আমি চুপ করে আছি বলে মনে করো না আমি সব শুনে থাকবো আর কিছু বলবো না তোমাকে।”
—“কি আর বলবেন আপনি? আপনার প্রতি আমার যে ভালোবাসা ছিলো সেটা আমি অনেক আগেই কোরবান করে ফেলেছি। তাই এসব ভয় আমাকে দেখাবেন না। আপনার মা কেমন আমার খুব ভালোই জানা,তাই উনার সম্পর্কে জ্ঞান দিতে আসবেন না।”
সাগর রেগে তাকাতেই রাত্রি অসভ্য ধরনের শব্দ বলে উঠে শাহিনুরের নামে।যা সাগরের সহ্য হলো না। সে কষিয়ে চড় মারে রাত্রির গালে। যা দেখে উপস্থিত সবাই হতভম্ভ। সাগর নিজেও অবাক হয়ে যায়। এত বছরে, এত মাসে, এত দিনে সে কখনো হাত টা পর্যন্ত উঠায় নি রাত্রির দিকে। আর সোজাসুজি চড় মেরে দিয়েছে।হাত টা কেঁপে উঠে। সে হাত টা সাথে সাথে নামিয়ে ফেলে। রাত্রি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকায় সাগরের দিকে। সাগর ইতোস্ত গলায় বলে,’আ্ আ আমমি আআসলে,,,”
রাত্রি হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয়। রায়হান তো রেগে মেগে বোম। তার মেজাজ বাজেভাবে খারাপ হয়ে যায়। সে রেগে তেড়ে গিয়ে ধাক্কা দেয় সাগরকে। ওর গায়ে হাত দিতে গিয়েও দেয় না। সাগর রাগী চোখে তাকায় শশুড়ের দিকে।
ফিরে ওঠে তার দিকে আসতেই রাত্রি মাঝ বরাবর এসে দাড়ায়। সে খুব অভিমান করে বলে,–” আমাকে মেরেছেন কিছু বলি নি।আমার বাবার সাথে কিছু করলে আমি এমন কিছু করবো যা কল্পনার বাহিরে।”
সাগর চুপ করে মাথা নিচু করে বলে,” আমি আসলে মারতে চাই নি। ভুলবশত,,,”
–“ভুলবশত মানে? হা হা হা!আমার খুব হাসি আসছে। ”
রাত্রির চোখে তখন জল চিকচিক করছে। বহু কষ্টে চোখে জল আটকিয়ে রাখছে সে। সাগর তো তার গালে আঘাত করে নি,সাগর আঘাত করেছে তার মনের গভীরে। চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগে মুছে ফেললো সে। হাসিমুখে সাগরকে বিদায় জানিয়ে বলে,–” ভালো থাকবেন। দোয়া করি যেনো আমিবিহীন কখনো সুখী না থাকেন। কারণ আমি চাই না আপনি সুখে থাকেন।”
সাগর বারবার আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারলো না। সে রাত্রির হাত ধরে বলে,–“কোথায় যাচ্ছো?”
রাত্রি ফিরে তাকাতেই বলে,–“আমি তোমাকে যেতে দিবো না।”
রাত্রি হাত টা ছাড়িয়ে বলে,–” আপনি যেতে না দেওয়ার কে? আজ থেকে আমাদের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলো।”
সাগর নাছড়বান্দা সে মানতে নারাজ। রাত্রি এবার জেদ ধরে বলে,” কসম খোদার,আপনি আমাকে এখানে আটকে রাখলে পরেরদিন আর আমাকে পাবেন না। আমার লাশ টাই পাবেন।”
সাগর ছেড়ে দেয় হাত। তার শরীর কেঁপে উঠলো।রাত্রি যখন তার বাবার হাত ধরে দু কদম দিয়ে দিয়েছে তখন সে গিয়ে রাত্রির সামনে বসে পড়লো। তার পা দুটো জড়িয়ে বলে,—” যেও না,প্লিজ। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, আমি আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবো না।”
রাত্রি দাড়িয়ে আছে। সে ফিরেও তাকাচ্ছে না তার দিকে। শাহিনুর বদরাগী কন্ঠে বলে,—” সাগর এসব কি হচ্ছে?”
সাগর সেদিকে পাত্তা দিচ্ছে না। সে বারবার রাত্রিকে অনুরোধ করছে। এদিকে বৃষ্টি ননীর পুতুলের মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কী হচ্ছে?কী হয়েছে তার মাথায় কিছুই ডুকছে না।
কিন্তু রাত্রিকে চলে যেতে দেখে তার হুশ আসে। সে এগিয়ে এসে বলে,–” আপু,আপনি চলে যাচ্ছেন? কেনো প্লিজ যাবেন না। আরে উনি তো আমাকেও আজ মেরেছেন,তাই বলে চলে যাবা? প্লিজ যেও না।”
রাত্রি বৃষ্টির দিকে তাকায়। সে হাসলো। নিষ্পাপ চাহনী তার চোখমুখে। সে বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে,–” তুমি আমাকে বারণ করছো?তোমার উচিত আরো আগে চলে যাওয়া। আমার আগে চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু আফসোস এই সমাজের নিয়ম তোমাকে সেটা করতে দিচ্ছে না। দোয়া করি অন্তত এই নরকে যেনো শুধু তুমি ভালো থাকো। ”
বৃষ্টি ফ্যালফ্যাল করে তাকাতেই সে লে,”সম্ভব হলে চলে যেও এখান থেকে।”
সাগর তো কেঁদেই দিয়েছে। সাগরের কান্নায় অস্থির হয়ে উঠে শাহিনুর। তিনি এগিয়ে এসে ছেলেকে ধরে। রাত্রি তাকায় না তাদের দিকে। সে নিজেকে ছাড়িয়ে বাহিরে দিকে পা বাড়ায়।
সাগরের বুক চিনচিন করে উঠে। সে বুকে হাত দিয়ে ব্যাথায় কাতর হয়ে উঠে। শাহিনুর আরো অস্থির হয়ে যায়। রাত্রি তাদের দিকে ফিরে তাকায় নি,তার কোনো পিছুটান নেই। সে হেটে চলে যায়,পেছনের মানুষ জনের এত ডাক আর আহাজারি তার কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি। সে বেরিয়ে গিয়েছে।
সাগরের হার্টের সমস্যা। হাসপাতালে জোর করেই তাকে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তার রা জানায় তার অবস্থা ভালো না। তার হার্ট ব্লক হয়ে গিয়েছে। ইমিডিয়েটলি অপারেশন করে হার্টে রিং বসাতে হবে।
সেদিন অপারেশনের পর সাগরকে দুটো খবর জানানো হয়। এক তার স্ত্রী দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট দুই তার মা ব্রেইন স্ট্রোক করে হাসপাতলেই মারা গিয়েছেন। জীবন টা সেদিন থেকেই অন্যরকম হয়ে গেলো।
পরিশিষ্টঃ রাত্রি চলে যাওয়ার বেশ কিছু বছর কেটে যায়। একদিন মাঝ রাস্তায় রাত্রি আর বৃষ্টির দেখা হয়। বৃষ্টি তখন তৃতীয়বারে মতো অন্তঃসত্ত্বা। তার দুই হাত ধরে দাড়িয়ে আছে, আট বছর বয়সী এক মেয়ে আর পাঁছ বছরের একটা ছেলে। বৃষ্টির চোখে মুখে খুশির জ্বলক রাত্রির দেখা পেয়ে। রাত্রি কে দেখে বৃষ্টি প্রথম বলে,—“আপু তুমি কই ছিলে এতবছর? আপু তুমি ফিরে আসো না। উনি একদম ভালো নেই।খুব অসুস্থ। ডাক্তার বলেছে বেশিদিন বাঁচবে না। তুমি ফিরে আসো না।”
রাত্রি হাসে। সে কোনো জবাব দেয় নি। শুধু বলেছে যে সে কখনো যাবে না। তারপর অন্য কথায় চলে যায়।
কথায় কথায় রাত্রিকে সে প্রশ্ন করে, ‘আপু আপনার ছেলে কই?শাফির কথা বলছিলাম।’
রাত্রি মুচকি হেসে বলে,’ সে আমার কাছে আসার এক সপ্তাহ পর চলে গিয়েছিলো। বাচ্চা ছেলে,আবেগের টানে আমার সাথে থাকতে চেয়েছিলো। পরে পিতৃ শুন্যতায় ভুগে সে চলে যায় তার বাবা আর নতুন মায়ের কাছে।” এটুকু বলে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,” সে ছিলো আমার জীবনের ক্ষণিকের সুখের মতো।”
বৃষ্টি আর কথা বাড়ায় না। সে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে,–“আঙ্কেলের কি অবস্থা?”
—-” বছর তিনেক আগে পরপারে চলে গিয়েছে। মনে বেশ দুঃখ ছিলো আমার প্রতি।”
—“কেনো?”
—“কারন সেদিনের পর থেকে উনার সাথে থাকলেও কোনোদিন কথা বলেনি আমি। দেখাশুনা সব ঠিকঠাক করলেও কথা টা কখনোই বলি। উনি বাবা বলে যে সব মাফ সেটা কখনোই মানি নি। উনি কিন্তু বারবার ক্ষমা চেয়েছিলেন। আমি শুধু শুনেছিলাম।”
বৃষ্টি চুপ করে গেলো। দুজনে আরো কিছু সময় ভাব বিনিময় করলো। বৃষ্টি চলে যেতেই রাত্রি আনমনে হাঁটতে লাগলো। চোখে আষাঢ় জল এসে ভীড় জমিয়েছে। এ মাঝপথে খুব কাঁদতে ইচ্ছা করলো তার। সে যদি বাচ্চাদানে সক্ষম হতো তাহলে হয়তো সবার মতো তারও একটা সুখের সংসার হতো। তবে এ নিয়ে তার মনে আফসোস নেই, স্কুলে সে এত এত বাচ্চার কাছে মা ডাক শুনছে যে তার মন ভরে আছে। স্কুল ট্রান্সফার হয়েছে তার বহু কয়েকবার। প্রতিটা জায়গায় বেশ ভালোই নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে সে। বাজারে এসেছিলো কিছু খাবার নিতে। পথের এতিমখানায় দিয়ে যাবে সেগুলো। সে খুশি।তার জীবনের একটা গতি হয়েছে। মাঝে মাঝে তার মন খুব খারাপ হয় যখন সাগরের কথা মনে পড়ে। খুব ভালোবাসতো স্বামীকে। স্বামী ভক্ত নারীদের খুঁজলে তাকেই সর্ব প্রথম পাওয়া যেতো যদি না সেদিন সেই ঝড় আসতো। চোখের জল মুছে এতিমখানায় হাসিমুখে ভেতরে চলে যায় রাত্রি। এটাই তার জীবন। সে খুশি এ জীবনে।
সমাপ্ত….
আপনাদের প্রশ্ন ছিলো নায়িকা কে?
**গল্পের নায়িকা রাত্রি। গল্পটা বন্ধ্যা মেয়ে নিয়ে ছিলো।তাই এ গল্পে রাত্রির বিষয় অধিক ছিলো। এ গল্পটার অর্ধ শতাংশ আমার কাছের কারো জীবনী। তাই জোর করেও রাত্রির সাথে সাগরের মিল দিতে পারতাম না।কারন সেই আপুকে কয়েক টা মাস না রেখেই বিদায় করে দিয়েছিলো। আশা করি সবার মন মতো করতে পেরেছি। আমি চেষ্টা করেছি মনমতো করার।জানি ভালো মতো লিখতে পারি নি।সত্যিই দুঃখিত। আমি তৃতীয় পক্ষ হয়ে লিখতে পারি না এটা প্রথমেই বলেছিলাম। ভালোবাসা সকল পাঠকের প্রতি যারা এতদিন ধৈর্য্য ধরে পাশে ছিলেন। আবারো বলি এটা কোনো ক্রাশ খাওয়া নায়ক-নায়কির গল্প ছিলো না।সামাজিক গল্প তাই সবার যে ভালো লাগবে না সেটা আমি জানি। ভালোবাসা রইলো সকল পাঠকের প্রতি।