বৈধ সম্পর্ক পর্ব ৮

#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_৭
Writer: #Saji_Afroz

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

পাবেল চোখ থেকে হাত সরাতেই তার দিকে ফিরে সায়নী।পাবেল কে দেখে থমকে যায় সে।
আমতাআমতা করে বলে-
প্রতিবার আফরান ভাই আমার জন্য…
-আমি কিছু জানতে চাইনি সায়নী।
-হুম।আপনি করেছেন এসব?
রুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে মুনিরা বলে-
হুম পাবেল ভাইয়া করেছে তোমার জন্য।
খুশি হওনি তুমি?
পাবেলের দিকে তাকিয়ে সায়নী বলে-
হয়েছি।ধন্যবাদ।
-আমি করলেও আইডিয়াটা কিন্তু আফরানের।
-ও আচ্ছা।
দুপুর ২টা…..
সবাই দুপুরের খাবার খাচ্ছে।
তবে আজ রান্না করেছে মুনিরা।সায়নীর জন্মদিন উপলক্ষে আজ সে তার জন্য রান্না করেছে।
-আপু রান্না ভালো হয়নি?
-বাহ মুনিরা!তুমি দেখি ভালোই রান্না পারো।
-এতোদিন বলেছিলাম আমি পারি টুকটাক কিন্তু তুমিতো আমাকে রাঁধতেই দিতেনা।শুধু বলতে অন্য কাজ করো।
-হেহে,এখন থেকে রেঁধো।
আফরানের দিকে তাকিয়ে মুনিরা জিজ্ঞেস করে-
আপনার ভালো লাগছে?
-আমি তোমার সায়নী আপুর মতো ওতো পাম্প দিতে পারিনা।মোটামুটি ভালো হয়েছে।
আফজাল খান ছেলের উদ্দেশ্য বলেন-
আহ আফরান!শিখে যাবে আস্তে আস্তে।
মুনিরার মনটা খারাপ হয়ে যায়।সকলের সামনে আফরানের তাকে এসব বলার কি কোনো দরকার ছিলো!সে কি কখনও আফরানের মন জয় করতে পারবেনা!
বিকাল ৫টা….
নাস্তা সারার পরে পাবেল চায় সায়নীকে নিয়ে শপিং মলে যেতে।যেহেতু আজ তার জন্মদিন সেহেতু তার সাথে সময় কাটিয়ে তার পছন্দের জিনিস-ই উপহার দেওয়া ভালো।
সায়নীর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সে বের হয় পাবেলের সাথে।দুজনে একটা শপিং মলে যায়।
-শুধু কি হাটলেই হবে?কিছু নিতে হবেনা?
-থাক না।অন্য আরেকদিন নিবো।
-এটা বললেতো হবেনা সায়নী,কিছুই নিতে হবে তোমার।
মুখে কিছু না বললেও মুনিরার আজ সকালের ব্যাপারটি মোটেও ভালো লাগেনি।সায়নী কেনো এখনো আশা করবে আফরান তার জন্য কিছু করুক?আর তাছাড়া সায়নী আজ আফরান কে ভাই না বলে কেনো শুধু আফরান বলেছে!আর আফরান?সে শুধু সায়নীর প্রশংসা করতে থাকে,
তার একটু করলে কি এমন ক্ষতি হতো!এমন কিছু কি আছে যা সে জানেনা?
নাহ কি ভাবছে এসব সে!সায়নীর সাথে অনেক আগে থেকেই পাবেলের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।আর সায়নী অনেকদিন এই বাসায় থাকে।আফরান শুধু সায়নীর খালাতো ভাই নয় ভালো বন্ধুও।তাই সবসময় ভাই ডাকতে হবে কথা নেই।আর স সায়নীর জন্য আফরানেরও আলাদা টান থাকবে স্বাভাবিক।একটু বেশি ভেবে ফেলেছে।
-সায়নী?
পেছনে ফিরতেই সায়নী দেখতে পায় তার বান্ধবী মিশিকা কে।
মিশিকা…..
সায়নীর সবচেয়ে ভালো বান্ধবী।এক সাথে একই স্কুল-কলেজে পড়েছে তারা।পরবর্তীতে সায়নী চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মিশিকা চট্রগ্রাম মেডিকাল কলেজে ভর্তি হলেও তাদের মাঝে যোগাযোগ বন্ধ হয়নি।
মিশিকার ডাকে পেছনে ফিরে তাকে দেখেই সায়নী জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে-
তুই এখানে?
-হুম।তোকে কাল রাতে মেসেজ দিয়েছিলাম।
আজ তোর জন্মদিন না!উইশ করেছিলাম।
-ওহ সরিরে।আমি মেসেজ চেক করিনি।
পাবেলের দিকে চোখ পড়তেই তাকে কিছুক্ষণ দেখে মিশিকা জিজ্ঞেস করে-
কে উনি?
-আমার কাজিন।
কথাটি শুনে পাবেল এগিয়ে এসে বলে-
শুধু কাজিন নয়,হবু স্বামী সায়নীর।
কথাটি শুনেই মিশিকা চোখ বড় বড় করে সায়নীর দিকে তাকিয়ে বলে-
উনি দেশে এসেছে বলিস নিতো?
সায়নী কিছু বলার আগেই পাবেল বলে-
তার মানে আগে আপনাকে আমার কথা বলেছে?
-হুম বলেছেতো।
-কি বলেছে?
-বিয়ে ঠিক আছে ওইটা।
সায়নীর হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে।ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখে আফরানের ফোন।
-আপনারা কথা বলুন,আমি একটু আসছি।
পাবেল বলে-
হুম ঠিক আছে।
সায়নী একটু দূরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে-
হ্যালো??
-শুভ জন্মদিন।
-এতোক্ষণ পরে?
-সবার আগেই করেছি।কার্ডটা আমার দেওয়া ছিলো।
-জানি সবই তুমি করেছো।ওই পাবেল শুধু হেল্প করেছে।
-হেহে,,মন খারাপ?
-নাহ।
-আচ্ছা বলো কি চায় তোমার?
কিছুসময় চুপ থেকে সায়নী বলে-
পরের জন্মদিন শুধু তোমার সাথে পালন করতে চাই।
পাবেল কে নিয়ে বাসায় ফেরে সায়নী….
কলিং বেল বাজাতেই মুনিরা দরজা খুলে দেয়।
ভেতরে ঢুকেই চমকে যায় সায়নী।ড্রয়িং রুমটা সাজানো।আফরানের দিকে চোখ পড়তেই দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বলে-
তোমার জন্য সাজানো।সবাই মিলে আজ আমরা তোমার জন্মদিন পালন করবো।
-দরকার ছিলোনা।
আফজাল খান,সায়নীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলেন-
খুব দরকার ছিলো।দেখি এটা নে।
-কি এটা?
-আরে নিয়েতো দেখ।
সায়নী হাতে নিয়ে বক্সটা খুলে দেখে তার খালার সোনার হার রয়েছে বক্সের ভেতরে।
-এটাতো খালাম্মার গয়না!
-হুম তোর জন্য।
-কিন্তু আমি এটা নিতে পারিনা খালু।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

-তুই অবশ্যই নিতে পারিস।তুই আমার মেয়ে সায়নী।আজ জন্মদিনে একটা দিলাম।বিয়ের সময় তোর খালার যা আছে তার অর্ধেক পাবি।বাকি অর্ধেক মুনিরার।
-কিন্তু আমারতো মায়ের গয়না আছেই।
-উফ এতো তর্ক করিস কেনো বলতো তুই!আফরান কেকটা নিয়ে আয় কেক কাটুক সায়নী।
আফরান কেক এনে টেবিলে রাখে।সায়নী সবার সাথে কেক কাটে।কিন্তু প্রথমে কাকে খাওয়াবে তা নিয়ে সবাই কৌতুুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।
-আপু তুমি আগে আমাকেই খাওয়াবে তাইনা?নাকি পাবেল ভাইয়াকে।
মুনিরার কথায় দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে সে আফজাল খান কেই কেক খাইয়ে বলে-
আমার খালুর উপর আমার কাছে কোনোদিন কেউ ছিলোনা,থাকবেও না।
সায়নীকে একে একে সবাই উপহার দিলেও আফরান থেকে সে কিছুই পায়নি।
মুনিরা বলে উঠে-
এইযে আপুর জন্য কি এনেছেন আমি দেখতে চাই।
-কিছু আনিনি।আনলেও তোমাকে দেখাতাম না।
-বারে আমি আপনার এতো কি ক্ষতি করলাম?সবসময় এতো মেজাজ দেখান কেনো?
-তুমি আমার জীবনটাই ত্যানাত্যানা করে দিয়েছো।
-ত্যানা!হাহাহাহা!
কি বেহায়া মেয়ে আবার হাসেও।আজ প্রথম আফরান খেয়াল করেছে মুনিরা হাসলে তার মুখে টোল পড়ে।বেশিক্ষণ না তাকিয়ে মুনিরার পাশ থেকে সরে যেতেই তার মা আফরানের সামনে দাঁড়ায়।
-তোমার বোনের জন্য কি উপহার এনেছো?
আমরা দেখতে চাই।
-কিছু আনিনি।
-এটাতো বিশ্বাস করা যায় না।
-কেনো?
-না মানে ও শুধু তোমার নয় ভালো বন্ধুও।
-দেখুন…..
আর কিছু বলতে না দিয়ে সায়নী বলে উঠে-
আসলে আমি বলেছিলাম কিছু না দিতে,আমি চেয়ে নিবো।
ভ্রু-জোড়া কুচকে মুনিরার মা জিজ্ঞেস করেন-
তা তুমি কি চাও শুনি?
আফরানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে সায়নী বলে-
একটা গান গাইবে আমার জন্য?
আফরান কে কিছু বলতে না দিয়ে মুনিরার মা আবার বলে উঠে-
কেনো গাইবেনা!নিশ্চয় গাইবে।কিন্তু একটা শর্ত আছে।
খিলখিল করে হেসে সায়নী বলে-
গান গাইবে ও আর শর্ত দিচ্ছেন আপনি!
-আচ্ছা আবদার বলতে পারো।
-কি আবদার?
-তোমাকে পাবেলের সাথে নাচতে হবে।
কি বলেন পাবেলের আম্মা?
-এটাতো ভালো কথা।আমরা সবাই দেখতে চাই।
সায়নী কিছু বলার আগেই পাবেল এসে তার হাত ধরে বলে-
সবাইকে খুশি রাখা কিন্তু আমাদের দায়িত্ব।শুরু করা যাক?
সায়নী মাথা নেড়ে সাই দিতেই মুনিরার মা আফরানের উদ্দেশ্য বলেন-
বাবা তুমিও শুরু করো।
এই প্রথম সায়নীর জন্য গান গাইতে তার মোটেও ইচ্ছে করছেনা।কারণ সায়নী তার গানেই অন্য আরেকজনের সাথে নাচবে।
কিন্তু এই মূহুর্তে কিছু করার নেই আর।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আফরান গান গাইতে শুরু করে-
যার হাসিতে এই হৃদয়ে পূর্ণিমা হয়,,
যে শুভ্র চাদরে সব করে স্বপ্নময়,,,
সে কি আমার নয়?
সে যদি আমার না হয় তবে,,,,
চারদিক কেনো মাতে কলরবে তার ইশারায়,,
সেতো আমারি আর কারো নয়।
রাত ১১টা….
বিছানার উপরে শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে সায়নী।হঠাৎ তার মোবাইলে মেসেজ আসে।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে মেসেজটা পড়ে সে তাড়াতাড়ি উঠে বসে।
মেসেজে লেখা ছিলো-
তোমার টেবিলের ড্রয়ারে তোমার গিফট রাখা আছে।
আফরান উপহার রেখেছে!কিন্তু কি হতে পারে?দ্রুত পায়ে সে এগিয়ে গিয়ে ড্রয়ার টা খুলে।একটা ছোট বক্স তার পাশে একটা একটা খাম দেখতে পায়।
প্রথমে সে বক্সটা খুলে।খুব সুন্দর ডিসাইন এর একটা নাকফুল।বক্সের ভেতরে ছোট একটা চিরকুটও পায় সে।তাতে লেখা-
এই নাকফুলটায় তোমাকে একদম বউ বউ লাগবে।
সায়নী হেসে ড্রয়ার থেকে খামটা নেয়।
কিন্তু খামের ভেতর যা দেখে তা দেখে সে থমকে যায়।
ডির্ভোস পেপার ……..!
তাড়াতাড়ি পুরোটা পড়ে দেখে সে।মুনিরা আর আফরানের ডির্ভোস পেপার এটা।যা দেখে সায়নী নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে করে।তার মানে আফরান ওই মুনিরাকে সত্যিই বিদায় করবে!তাদের মাঝে কেউ থাকবেনা!এর চেয়ে আনন্দের,এর চেয়ে ভালো উপহার আর কি হতে পারে এই দিনে!
সায়নীর ফোন বাজতে থাকে….
আফরান ভেবে খুশিতে সে না দেখেই রিসিভ করে বলে-
আফরান ধন্যবাদ এতোগুলা।
-ওরে আমি আফরান নয়,মিশিকা।
মিশিকার নাম শুনে জিভে কামড় দিয়ে সায়নী বলে-
তুই এতো রাতে?
-আরে একটা কথা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য।
-কি?
-তুই হচ্ছিস আফরানের ভাইয়ার বউ।আফরান ভাইয়া আবার নতুন বিয়ে করে এনেছে।তুই পাবেলের সাথে বিয়ে করবি বলছিস,আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।
-আফরান মেয়েটাকে ডির্ভোস দিবে,এর আগে খালুকে সবটা জানাবে।তারপর আমি শুধু আফরানের থাকবো।
-তার মানে পাবেল কে তুই বিয়ে করবিনা?
-মাথা খারাপ নাকি!
-তাহলে পাবেলকে আমার জন্য ঠিক করে দে।
-মানে?
-তুই যখন করবিনা তাকে আমার জন্য ঠিক করে দে।ডাক্তারি পাশ করার জন্য বিয়ে করিনি।এখন ডাক্তারও হয়েছি।বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।কিন্তু কাউকে ভালো লাগেনা।
-হাহা।লাগবে কেমনে,ডাক্তার বলে কথা!
-ধ্যাত ওসব কিছুনা।এমনেই লাগেনি।কিন্তু আজ পাবেলকে দেখে….
-লাড্ডু ফুটেছে মনের ভেতর?
-হুম ফুটেছে।
-ঠিক আছে আমি কথা বলবো উনার সাথে।
আজতো তোকে দেখেছেন।তুই সুন্দরী,স্মার্ট
,ডাক্তার।
আশা করি না করবেনা।
-সত্যি বলবি?
-আরে হুম বলবো।
পাবেল কে কিভাবে আফরানের ব্যাপারে বলবে তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় ছিলো সায়নী।মিশিকা তার চিন্তা অনেকটায় কমিয়ে দিয়েছে।সায়নী বিবাহিত জানার পরে পাবেল নিশ্চয় মিশিকাকে মেনে নিবে।হুম আর দেরী করা ঠিক হবেনা।
সায়নী ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করে পাবেলের নাম্বারে-
হ্যালো তুমি এতো রাতে সায়নী!
-এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
-না মানে দিনেই ফোন দাওনা,এই সময়ে দেখে একটু অবাক হওয়ার কথা নয়?
-হেহে।আপনি একটু ছাদে আসবেন প্লিজ?
-এখন?
-হুম জরুরী কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।
-ঠিক আছে আমি এখুনি আসছি।
আফরানকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুনিরাও তার পাশে যায়।মুনিরাকে দেখেও আফরান কোনো কথা বলেনা।নিরবতা ভেঙে মুনিরা বলে-
আমার জন্মদিনেও একটা গান উপহার দিবেন প্লিজ?এমনি শোনাবেন না আমি জানি।
তবে জন্মদিনের উপহার হিসেবে শোনানো যায় তাইনা?যে গানটা শুধু আমার জন্যই হবে…
-কবে তোমার জন্মদিন?
-আরো ৫মাস আছে।
-তাহলে সম্ভব নয়।
-কেনো?
-ততোদিনে তুমি এই বাড়িতে থাকবেনা।
-বুঝলাম না?
ছাদে গিয়ে সায়নী দেখতে পায় পাবেল দাঁড়িয়ে আছে।পাবেল তাকে দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
সায়নী তার দিকে এগিয়ে গিয়েই বলে-
আমি যে কথা গুলো বলবো,জানিনা আপনি কিভাবে নিবেন।জানি দেরী হয়েছে কিন্তু খুব বেশি দেরী হয়নি।
-কি বলতে চাইছো তুমি সায়নী?
-আসলে…মানে…
-বলেছিলাম কোনো ফর্মালিটি অন্তত আমার সাথে নয়।বলো তুমি।
পাবেলের কথায় একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সায়নী বলে-
-আমি এই বিয়েটা করতে পারবোনা।কারণ আমি আফরান কে ভালোবাসি।
সায়নীর কথা শুনে পাবেলের চোখ যেনো কপালে উঠে যায়।কি বলছে সায়নী!আফরান কে ভালোবাসে মানে!
-শুনছেন?
কোনরকমভাবে নিজেকে সামলিয়ে পাবেল প্রশ্ন করে-
আমি ঠিক বুঝলাম না তুমি কি বলছো?
-আফরান আর আমি একে অপরকে ভালোবাসি।
-তোমার মাথা ঠিক আছে সায়নী?আফরান বিবাহিত।
-আমিও বিবাহিত।
-কি!আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।
-আমি বুঝাচ্ছি আপনাকে।আফরান আর আমি একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি একবছর আগেই।কিন্তু সেটা গোপনে।
-তাহলে ও মুনিরাকে কেনো বিয়ে করেছে?
-বাধ্য হয়ে।আপনিতো আনাসের বন্ধু,জানেনতো সে মারা গিয়েছে বিয়ের দিন কনের বাড়ি পৌছানোর পথেই।সেদিন গ্রামের সকলে মুনিরাকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করতে থাকে।আর তখন খালু আফরানকে অনুরোধ করে মুনিরাকে বিয়ে করার জন্য।
-আর আফরান নাচতে নাচতে বিয়েটা করে নিয়েছে!
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সায়নী বলে-
ও চায়নি করতে।পরিস্থিতির চাপে পড়ে করতে বাধ্য হয়েছে।
-আর তুমি?কিসের চাপে পড়ে আমাকে বলোনি আগে?

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

-তখন আপনাকে আপনার বাসা থেকেও জানানো হয়নি বিয়ের ব্যাপারে।
-কিন্তু বড়দের মাঝে সব ঠিক ছিলো।আমার আম্মুতো কতো আশা করে আছেন।আম্মুর কাছে শুনেছিলাম তোমার বাবারা যখন মারা যান আমার বাবা চায়নি মা-বাবা ছাড়া কোনো মেয়েকে বাড়ির বউ করতে।বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে বাড়ির বউ করার সিদ্ধান্ত নেয় আম্মু।কেননা এটা তোমার মা-বাবার ও ইচ্ছে ছিলো।তাই সবসময় তোমার খবর নিতেন।শেষ এক বছরে তোমার তার সাথে যোগাযোগও ছিলো,আমার সাথে না থাকলেও।তুমি তাকে হলেও আগে বলতে পারতে?
-আসলে আমার মাথা কাজ করেনি।
-ওকে!আমার মায়ের কথা বাদ দাও।তোমার খালু তোমার অভিভাবক।তুমি তাকে অন্তত জানাতে?
-চেয়েছিলাম।যেদিন জানাতে যাই তার শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।ডাক্তার বলেছিলেন যেকোনো সময় খারাপ কিছু হতে পারে।
-তাই বলে….
-আমি কোনো ভূল করিনি।যখন যেটা সঠিক মনে হয়েছে তখন সেটাই করেছি।এখন মনে হয়েছে আপনাকে সব জানানোর দরকার তাই জানাতে এসেছি।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে পাবেল জিজ্ঞেস করে-
আজ কেনো দরকার মনে করলে?
-কারণ আফরান,মুনিরাকে ডির্ভোস দেওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
-ওহ।
ছলছল চোখে পাবেলের দিকে তাকিয়ে সায়নী বলে-
প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।
লম্বা একটা দম ফেলে পাবেল বলে-
চোখের পানি আটকাও।প্রিয় মানুষদের চোখের পানি সহ্য হয়না আমার।
সায়নী উড়না দিয়ে তার চোখ মুছে পাবেলের পাশে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে বলে-
আপনি খালুকে প্লিজ বলবেন এই বিয়েটা আপনি করতে পারবেন না?
-যদি কারণ জিজ্ঞেস করে?
-বলবেন সেটা আপনি বলতে চান না।
-আফরান তো মুনিরাকে ডির্ভোস দিয়েই ফেলবে তখন তো বললেই হয়।
-আসলে আমি চাইছি আমি যে অসহায় এটা খালু বুঝুক।আপনি বিয়েটা করবেন না বললে আমার প্রতি খালুর আলাদা একটা টান হবে তখন মুনিরাকে সরানো আরো সহজ হবে।
-ঠিক আছে বলবো।
সায়নী তার হাত ছেড়ে বলে-
আপনাকে একটা নাম্বার মেসেজ করবো।
-কার?
-আজ দেখা হয়েছিলো আপনার সাথে,আমার বান্ধবী মিশিকা।ওর আপনাকে অনেক পছন্দ হয়েছে।আপনি চাইলে ওর সাথে বিয়ের কথা আগাতে পারেন।সুন্দরী,স্মার্ট,ডাক্তার আর ভালো ফ্যামিলির মেয়ে সে।
-দয়া দেখাচ্ছো?
-নাহ,মিশিকা বলেছে তাই বললাম।বাকিটা আপনার ইচ্ছে।আমি এখন যাই।আপনি কাল খালুকে বলবেন মনে করে।
আজ সায়নী প্রথম পাবেলকে স্পর্শ করেছে।
কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতিতে সায়নীর ছোঁয়া পেতে হবে তার জানা ছিলোনা।যে ছোঁয়াটা প্রথম ও শেষ।
সায়নী চলে যাচ্ছে…..
পাবেলের কষ্ট হচ্ছে অনেক।
নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে উঠে-
সায়নী শুনছো?
সায়নী পেছনে ফিরে তাকাতেই পাবেল বলে-
আমিও তোমাকে ভালোবাসি।শুধু মাত্র তোমার জন্য আমি দেশে এসেছি।যদি সম্ভব হয় ফিরে এসো।
আফরানের কথায় মুনিরার দমটা আটকে আসতে চায়ছে।এতোদিন পরিবেশ শান্ত ছিলো বড় কোনো ঝড় হবে বলে!কিন্তু কেনো!
তার সাথেই বারবার এমন হবে কেনো!
আফরানকে কিছু বলতে না দেখে সে হঠাৎ বলে উঠে-
আমি আপনাকে ভালোবাসি।
মুনিরার মুখে এমন একটা কথা শুনে থমকে যায় আফরান।
-আমি সত্যি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আপনার সাথে থাকতে চাই আমি।
-এটা হয়না মুনিরা।
-কেনো হয়না?
-সময় এলে সব জানবে।
কথা না বাড়িয়ে আফরান সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
এটা কি সেই আফরান যে তাকে আশ্বাস দিয়েছিলো তার সাথে অন্যায় কিছু হবেনা!
সেসব তাহলে মিথ্যে ছিলো সেইদিন!
হুম আফরান বলেছিলো তার ভালোবাসা আছে,কিন্তু সে ভেবেছিলো নিজের ভালোবাসার রঙে রাঙাতে পারবে আফরান কে।কিন্তু সে পারেনি,ব্যর্থ হয়েছে সে।
বারন্দায় বসে পড়ে মুনিরা, চোখ দিয়ে পড়তে থাকে তার অনবরত পানি।
একদিনে আফরান ও সায়নী নিজের ভালোবাসা পাবার আশায় প্রহর গুনছে,,
অপরদিকে পাবেল ও মুনিরা ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনায় ছটফট করছে।
সকাল ৬টা….
আফরান সোফা থেকে উঠতেই চোখ যায় বিছানার দিকে।বিছানায় মুনিরাকে দেখতে পায়না সে।মুনিরা এতো সকালে কই গিয়েছে ভাবতেই চোখ যায় বারান্দার দিকে।
আফরানের অভ্যাস সকালে ঘুম থেকে উঠেই বারান্দায় যাওয়া।কিন্তু আজ সে উঠার আগেই বারান্দার দরজা খোলা।মুনিরা কি খুলেছে?
সোফা থেকে উঠে বারান্দায় যেতেই থমকে যায় সে।
মাটিতে শুয়ে আছে মুনিরা।সে কি কাল রাতে এখানেই ছিলো!
আফরান নিচু হয়ে তাকে ডাকতে থাকে-
মুনিরা?
সাড়া না পেয়ে গায়ে হাত দিতেই উপলব্ধি করে মুনিরার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর।তাই আর না ডেকেই সে মুনিরাকে কোলে তুলে নিয়ে শুইয়ে দেয় বিছানায়।
মুনিরার নিষ্পাপ মুখটা দেখে আজ তার ভীষণ খারাপ লাগছে।এই মেয়েটার কি দোষ!
সেতো তাকে জোর করেনি বিয়ে করতে তাহলে তার ভূলের শাস্তি এই মেয়েটা কেনো পাবে!
মুনিরার মাথায় হাত বুলাতে থাকে আফরান।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে মুনিরা।আফরানকে তার পাশে দেখে খুশিতে চোখে পানি চলে আসে তার।মাথার উপর থেকে আফরানের হাতটি নিয়ে নিজের বুকের উপরে রাখে বলে সে-
আপনি এমন কেনো?আমার বান্ধবী,আপু অনেকের কাছে শুনেছি বিয়ের পর তাদের বর কতো আদর-সোহাগ করে।আর আপনি একটা ডাইনির জন্য আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন।
আফরান বুঝতে পারে জ্বরের ঘোরে মুনিরা আবোলতাবোল বলছে।
নিজের হাতটা সরিয়ে সে বলে-
ঠাণ্ডা এখনো যায়নি।তুমি কেনো কাল রাতে বারান্দায় শুতে গিয়েছো?
-আমারতো প্রথম থেকেই ওখানে শোয়ার দরকার ছিলো।তাহলে আপনাকে তখনি এতোটা কাছে পেতাম।
মুনিরার সাথে এখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই আফরান বুঝতে পারে।মুনিরার গায়ের উপর কাঁথা দিয়ে বলে-
ঘুমাও চুপচাপ এখন।পরে শুনবো সব কথা।
সকাল ৭টা….
সায়নী ঘুম থেকে উঠেই টেবিলের কাছে গিয়ে ড্রয়ার খুলে ডির্ভোস পেপারটা হাতে নিয়ে আরেকবার দেখে নেয় সে।তার স্বপ্ন খুব তাড়াতাড়ি সত্যি হতে চলেছে!
কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে পেপারটা ঘাটাঘাটি করে সায়নী।পরক্ষণেই তার পাবেলের কথা মনে পড়ে।ছেলেটাকে কি খুব বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছে সে?আয়নার সামনে যায় সায়নী।নিজেকে ভালো করে কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে ভাবে,সে কি এতোটায় সুন্দরী যে বিবাহিত জানার পরেও পাবেল তাকে ভালোবাসে বলেছে!
এই কয়েকদিনের মাঝে ভালোবাসা তৈরি হয় নাকি?অবশ্য প্রথম দেখাতেও হয় শুনেছে।তবে এসব আদৌ ভালোবাসা নাকি মৌহ?আচ্ছা মুনিরাও কি আফরানকে ভালোবাসে বলেছে?বিশ্বাস নেই ওই মেয়ের,বলতেই পারে।আফরান যদি ওর কথায় গলে যায়!
নাহ,তাড়াতাড়ি করতে হবে যা করার।পাবেল কে পুরোপুরি ঝাটায় করে তারপর মুনিরার ব্যবস্থা করতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানানোর জন্য রান্নার ঘরে যায় সায়নী।মুনিরার মাকে চুলার পাশে দেখে চমকে যায় সে।
-আন্টি আপনি?
-কেনো!আমার মেয়ের শ্বশুরঘরের যেকোনো জায়গায় আমি যেতে পারিনা?
-কেনো নয়!কিন্তু আপনি মনেহয় কোনো কাজ করছেন।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে কাজ করা কি ভালো দেখায়?আমাকে বলুন না,আমি করে দেয়।
-মুনিরার জন্য দুধ বানাতে আসছিলাম।জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে।
-জ্বর!কখন থেকে?
-আমিতো এখুনি জানলাম।জামাই এর সাথে বসার ঘরে দেখা হয়ছে একটু আগে।তখন বলছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে,আপনি যান আমি বানিয়ে নিয়ে যাবো

আফরানের হাত ধরে শুয়ে আছে মুনিরা…..
আফরান একটু সরলেই সে আবার ডাকাডাকি করে ব্যস্ত হয়ে যায়।বাধ্য হয়ে আফরানকে তার পাশে বসে থাকতে হয়।
ছোট একটা ট্রে এর উপর এক মগ গরম দুধ নিয়ে আফরানের রুমে হাজির হয় সায়নী।
আফরানের একটা হাত বুকের মাঝে নিয়ে মুনিরা গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে দেখে মেজাজটায় বিগড়ে যায় তার।দ্রুত পায়ে হেটে খাটের পাশের ছোট টেবিলটার উপর ট্রে-টা রাখে সে এক প্রকার শব্দ করে।
সায়নীকে দেখে আফরান তার হাতটি সরিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।আর তখনি মুনিরা বলতে থাকে-
আপনি আবার হাত সরিয়েছেন!আমার শান্তি লাগছেনা আপনার হাতটা না ধরলে,প্লিজ কাছে আসেন না প্লিজ।
চোখ বন্ধ করে খানিকক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে সায়নী।মুনিরার পাশে বসে বলে-
আমার হাত ধরলে হবে?
চোখ দুটো মিটমিট করে খুলে মুনিরা বলে-
ও আপু তুমি!আমার ভালো আপুটা তুমি এসেছো!
আফরান আর না দাঁড়িয়ে রুম থেকে চলে যায়।
আফরানকে চলে যেতে দেখে সায়নী বলে উঠে মুনিরাকে-
আফরান তোমায় আদর করেছে কখনো?
খিলখিল করে হেসে মুনিরা বলে-
কোন একটা ডাইনির জন্য আমাকে ছেড়ে দিবে বলেছে।
মুনিরার মুখে নিজেকে ডাইনি ডাকা শুনলেও কথাটা শুনে অনেকটা শান্তি পায় সায়নী।
মুনিরাকে শোয়া থেকে বসানোর জন্য গায়ে হাত দিতেই চমকে যায় সে।
-এ কি জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে তোমার!হঠাৎ এমন কি করে হলো?
আফরান কি মুনিরাকে নিয়ে একটু বেশি ভেবে ফেলেছে?
হয়তো,,কিন্তু তার এখন শুধুমাত্র সায়নীকে নিয়ে ভাবতে হবে।কিভাবে বাবাকে সব বলা যায়…
ড্রয়িংরুমে আফরানকে পায়চারি করতে দেখে মুনিরার বাবা তার দিকে এগিয়ে যান।মুনিরার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে তার জ্বর।মেয়েকে দেখতেই বের হন রুম থেকে।
-জামাই বাবা?
-জ্বী বলেন?
-আমার মেয়েটা খুব জ্বালায়ছে তোমাকে?আসলে ওর জ্বর উঠলে হুঁশ থাকেনা।
-নাহ ঠিক আছে।
-আমার মেয়েটা একটা ভালো স্বামী পায়ছে তাই আমি যে কতো খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা।মুনিরার আম্মা আমাকে বলছে তুমি ওর যত্ন নিচ্ছো অনেক।শুনে শান্তি পেলাম বাবা।কি করে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো….
-ধন্যবাদ এর কিছু নেই,আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।
-তুমি খুব ভালো বাবা।আমার মেয়েটাকে এভাবে সুখে রেখো।বড় ভালো মেয়ে সে।
কেউ বলতে পারবেনা কোনোদিন কারো খারাপ চেয়েছে বা ক্ষতি করেছে সে।কিন্তু বিয়ের দিন ওর সাথেই এমন কিছু হয়ে যাবে আমি ভাবতে পারিনাই।আফজাল আর তুমি না থাকলে যে কি হতো….
-থাক না ওসব কথা।
-ঠিক আছে।তবে জানো?যে গ্রামের মানুষ মুনিরাকে অপয়া বলেছিলো সেই গ্রামের মানুষ তাকে এখন ভাগ্যবতী বলে,যে গ্রামের মানুষ তাকে ওই গ্রামে রাখতে চায়নি আজ তারাই ওকে নিজের বাসায় নিয়ে দাওয়াত খাওয়াতে চায়।
সব তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে।একটা কথা রাখবা বাবা?
-কি?
-আমাদের সাথে ওকে নিয়ে গ্রামে চলো।
সবাই দেখুক আমার মেয়ে কতো সুখে আছে।
-আচ্ছা আগে সুস্থ হোক ও।
-আমি একটু দেখতে যাইতে চাইছিলাম মুনিরাকে এখন।
-ওখানে সায়নী আছে,ওর খেয়াল রাখছে।
যেতে পারবেন আপনিও।
-বড় ভালো সায়নী মেয়েটা।মুনিরাকে একদম বোনের মতোই দেখে।
-হুম।
-আচ্ছা থাক সায়নী থাক,আমি পরে যাবো।
সারারাত ঘুম হয়নি পাবেলের।কাল রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা স্বপ্ন নাকি সত্যি তার বুঝতে এখনো কষ্ট হচ্ছে।সায়নীকে কথা দিলেও এতো গুলো মানুষকে তার কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছেনা।সবচেয়ে বড় কথা সে নিজেও সায়নীর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে।বৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আমেরিকা থেকে এসেছে সে।
তার জন্য অনেক মেয়ে পাগল হলেও প্রথম কোনো মেয়ের জন্য সে পাগল হতে রাজী ছিলো।সেই মেয়েটি সায়নী।আর এই সায়নী-ই তাকে অন্য একটা মেয়ের ফোন নাম্বার দিয়ে চলে গেলো!
জীবনটা বড়ই অদ্ভুত…..
কথা যখন দিয়েছে আফজাল খান কে সবটা জানাতে হবে।তার মায়ের কষ্ট,বাবার রাগ,
আফজাল খানের বিশ্বাস এসব নিয়ে ভাবা যাবেনা।সায়নীকে দেয়া কথাই তার রাখতে হবে।তাতে যদি সায়নী ভালো থাকে,থাকুক।
আর না ভেবে পাবেল এগিয়ে যায় আফজাল খানের রুমের দিকে……
সকাল সকাল পত্রিকা পড়া আফজাল খানের অভ্যাস।তবে সায়নীর হাতে বানানো এক কাপ চায়ের সাথে পড়তে না পারলে যেনো মজা পাওয়া যায়না।এতোক্ষণে চা নিয়ে আসার কথা সায়নীর।আজও উঠেনি সে,শরীর টা কি আবার খারাপ করেছে!কতো হাসি খুশি একটা মেয়ে ছিলো সে, তবে বেশ কিছুদিন তার ব্যবহার দেখে কেমন যেনো লাগছে।সায়নী কি কোনো কষ্টে আছে!
বুকটা ফেটে যাবে তবুও মুখ খুলবেনা সে।
পাবেলের সাথে বিয়েতে কি তার অমত রয়েছে?হওয়ার তো কথা নয়।বছর খানেক আগেই সায়নীকে বলা হয়েছিলো পাবেলের কথা।তাহলে কি অন্যকিছু!
নাহ,অযথায় ভাবছে।পাবেল অনেক ভালো একটা ছেলে।ওর মতো ছেলেকে ভালো না লেগে কি থাকা যায়!দুজনে ভালো থাকবে খুব।কিন্তু এই ঘরটা সায়নীকে ছাড়া শূন্য হয়ে যাবে।
-আসতে পারি?
পাবেলের গলার আওয়াজ শুনে ভাবনার জগৎ থেকে বের হন আফজাল খান।
-আরে তুমি!এসো বাবা।
পাবেল ভেতরে ঢুকে আফজাল খানের পাশে বসতে বসতে বলে-
ভালো আছেন?
-আছি,তুমি?
-জ্বী আমিও ভালো আছি।
-আমি তোমার কথায় ভাবছিলাম।
-কি ভাবছেন?
-সায়নীকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে একদম নিশ্চিতে থাকবো আমি।আমি জানি তুমি ওকে অনেক ভালো রাখবে।মেয়েটা বড় লক্ষি আমার।তোমাকেও সে সুখে রাখবে মিলিয়ে নিও আমার কথা।
আফজাল খানের কথা শুনে পাবেলের তাকে কিছু বলতে ইচ্ছে না হলেও সায়নীর কথা রাখতে বলে-
আমি সায়নীকে বিয়ে করতে পারবোনা।

.
#_____________চলবে________________
.

#

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here