#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz
.
.
.
উপমা খেয়াল করলো, তাদের দিকে এগিয়ে আসছে রোমান।
সে আরাফের উদ্দেশ্যে বললো-
আগে বলো মেয়েগুলো কে?
-ওই যে মেহেনুবা আর তাসু।
-ওহ! রোমান এদিকে আসছে। পরে কথা হবে। আমি চাইনা ও আমাদের সম্পর্কে জানুক।
-ঠিক আছে।
-ব্লক টা খুলে দিও। এবার যাও।
-ভালোবাসি বলো?
-হু বাসি। যাও তো!
.
মুচকি হেসে আরাফ চলে গেলো।
উপমার কাছে এসে রোমান বললো-
আমার একটা কাজ ছিলো। আমাদের বেরুতে হবে। বিল পেমেন্ট করেই এসেছি আমি।
-না করলেও অসুবিধে হতোনা। আমিও করতে পারতাম।
-সরি?
-কিছুনা চলুন। আমাকে ড্রপ করে দিবেন? নাকি এটার সময়ও নেই?
-কি যে বলোনা উপমা! চলো।
.
.
আরাফের মুখে হাসি দেখে মেহেনুবারও যেনো ভালো লাগছে।
আরাফের দিকে তাকিয়ে সে বললো-
তোমাকে এভাবেই ভালো লাগে।
.
আরাফের ইচ্ছে করছে তাকে উপমার কথা বলতে কিন্তু তাসুর সামনে এসব কথা তুলতে তার ইচ্ছে করছেনা। তাই সে মেহেনুবার উদ্দেশ্যে বললো-
মুড ভালো রাখার কারণ পেয়ে গিয়েছি।
.
.
.
মিশিকার মুখে সবটা শুনে পাবেল খুশিই হলো।
আরাফ কে তার ভীষণ ভালো লাগে।
মিশিকার উদ্দেশ্যে পাবেল বললো-
মেহেনুবার জন্য আরাফের মতোই একজন জীবনসঙ্গী দরকার।
যে ছেলে তার মায়েদের এতোটা ভালোবাসতে পারে নিঃসন্দেহে সে তার স্ত্রী কেও ভালোবাসবে।
ভালোই থাকবে আমাদের মেহেনুবা।
.
পাবেলার কথা শুনে মিশিকা বললো-
দুজনে রাজি হলেই হয় এইবার।
-আরে হবে। এতো ভেবোনা তো।
মেহেনুবার সাথে আজই কথা বলবে। দেখেছোই তো? আতিক ডাক্তার হয়েও কেমন! আর আরাফ তো আমাদের ঘরের ছেলেই।
-হ্যাঁ।
.
.
.
আফরান অফিসে। তাকে সবটা ফোনে জানিয়েছে মুনিরা।
আরাফের আপত্তি না থাকলে তারও আপত্তি নেই, এটাই মুনিরাকে জানায় সে।
মুনিরা ফোন রাখতেই তার উদ্দেশ্য সায়নী বললো-
কি মনে হয় তোর? আরাফ রাজি হবে?
-হবে।
-কিভাবে বুঝলি?
-কেননা মেহেনুবা মেয়েটাই এমন।
-আর যদি উপমা তার ভুল বুঝে ফিরে আসে?
-তাহলে আরাফ তাকে মেনে নিবেনা। তার মায়েদের অপমান করেছে সে।
-ভালোবাসায় এসব বিচার করা যায়না মুনিরা।
-তুমি কি বলতে চাইছো আপু? ওই মেয়েটা ফিরে আসলে আরাফ যেনো মেনে নেয় তাকে?
-হুম। যদি সে ভুল বুঝে ফিরে আসে তবেই।
-কিন্তু আমি তো মানবো না! হতে দিবোনা এই বিয়ে। এতোকিছুর পরেও কিভাবে আরাফ ওই মেয়েকে মেনে নিবে!
-আমি কিভাবে আফরান কে মেনে নিয়েছি তোকে বিয়ে করার পরেও?
.
সায়নীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো মুনিরা।
সায়নী তার দিকে তাকিয়ে বললো-
ভালোবাসতাম বলে।
-কিন্তু উনি পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। তা তুমি বুঝেছিলে।
-আমার মনেহয় আরাফ কে আরেকটু সময় দেয়া উচিত।
পরিস্থিতির শিকার হোক বা দোষ হোক। ভালোবাসার মানুষটাকে এতো সহজে ভোলা যায়না।
-একবার বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার সাথে উনার ঠিক হলোনা?
-হয়েছে তবে আমাকেও কিন্তু ছাড়তে পারেনি ও। প্রথম ভালোবাসা আমি ওর।
দেখ মুনিরা তোকে এসব বলার আমার একটাই কারণ। আরাফের জীবনে আমরা কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারিনা। তুই তাকে মেহেনুবার কথা বলতেই পারিস। কিন্তু জোর করতে পারিস না। উপমার রাগটা কমে নাকি সে অপেক্ষা টুকুও কি আরাফের করার উচিত নয় কি?
-এসব রাগ না আপু। বেয়াদবি।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সায়নী বললো-
তোর যেটা মনেহয় কর। কিন্তু এই ব্যাপারে আমি পুরোপুরি সাপোর্ট দিবো আরাফের সিদ্ধান্ত কে।
.
.
.
সারাদিন বাইরে ঘুরাঘুরির পরে সন্ধ্যের আগে বাসায় প্রবেশ করলো আরাফ রা।
আরাফ নিজের রুমে এসে ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দিলো।
মগ্ন হয়ে পড়লো সে উপমার ভাবনায়।
উপমার সাথে পরিচয় টা হয়েছিলো এক বন্ধুর মাধ্যমে। বন্ধুর ফুফাতো বোন উপমা।
প্রথম দেখাতে আরাফের তাকে ভালো লাগে। বন্ধুর মাধ্যমে ফ্রেন্ডশিপ এর প্রপোজাল পাঠালে উপমা এক্সেপ্ট করে।
ফোন নাম্বার আদান প্রদানও হয়।
প্রায় দুই মাস কথা বলতে বলতে দুজনেই উপলব্ধি করতে পারলো, তারা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে।
ব্যাস, শুরু হয়ে যায় তাদের প্রেমের সম্পর্ক।
তবে এই এক বছরে এক বারই খুব কাছ থেকে উপমাকে অনুভব করেছে আরাফ।
কয়েকমাস আগে সেই বন্ধুর বাসায় তার জন্মদিনের দাওয়াত পায় আরাফ। উপমাও উপস্থিত ছিলো।
তবে কিছুক্ষণ পর উপমাকে দেখতে পারছেনা আরাফ। খুঁজতে খুঁজতে ডাইনিং রুমের পেছনের বারান্দায় তাকে দেখতে পেলো সে।
উদাসীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে উপমা। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে তার।
এভাবে কোনো মেয়েকে এই প্রথম দেখছে আরাফ।
ধীরপায়ে এগিয়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো উপমাকে।
উপমা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে উঠলো-
কে?
-আমার উপমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার সাহস আর কার আছে?
.
আরাফের কন্ঠ শুনে মৃদু হেসে উপমা বললো-
ওহ তুমি! কি করবো বলো? কখনো তো ধরোনি তাই স্পর্শ টাও চিনছিনা।
-বিয়ের পর মিশে যাবো একেবারে।
-তবে বিয়ের আগেই আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করা যায়?
-কি?
-নিজের কপালে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া নেয়ার প্রবল ইচ্ছে আমার।
.
উপমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো আরাফ। তারপর কানের পাশে মুখটা নিয়ে বললো-
শখ পূরণ করে দিলাম। আমার গুলো নাহয় বিয়ের পরেই পূরণ করো।
.
.
-এই কি! ফ্রেশ না হয়ে শুয়ে আছিস কেনো?
.
মুনিরার ডাকে চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো আরাফ।
উঠে বসলো সে।
সায়নীর সাথে মুনিরা এগিয়ে আসলো আরাফের দিকে।
তার পাশে বসে মুনিরা বললো-
বাহ! ছেলেটাকে আজ হাসিখুশি লাগছে অনেক।
-হুম। তা আম্মুগণ হঠাৎ এখানে?
-বলছি বলছি। আগে হাসিমুখ হবার কারণ কি বল?
-আগে তোমরা কি বলতে এসেছো বলো।
-আমার মনেহয় আমি জানি তোর হাসিমুখের কারণ।
-কি?
-মেহেনুবা।
-মানে?
-ওর সাথে বের হয়ে মুড ফ্রেশ হয়ে গেলো তোর।
-সাথে তো তাসুও ছিলো।
-তবে মেহেনুবা আলাদা।
-হু।
-তাই আমি ভাবছিলাম এই মিষ্টি মেয়েটাকেই ছেলের বউ করবো।
-কোন ছেলে?
-আমাদের ছেলে কয়টা রে?
.
আরাফ অবাক চোখে তাকিয়ে বললো-
এসব কি বলছো তুমি! আমি উপমাকে ভালোবাসি।
-কিন্তু সে তো তোকে ভালোবাসে না। আর আমাদের এতো অপমান করার পরেও এসব কি বলছিস তুই?
-উপমা তোমাদের সরি বলবে বলেছে।
-কবে?
-আজই দেখা হয়েছে উপমার সাথে। তোমাদের বলতাম আমি।
.
এতক্ষণে সায়নী বুঝতে পারলো আরাফের মুখে হাসির ঝলকের কারণ কি।
তবে মুনিরা গম্ভীর গলায় বললো-
সরি তেই সব মিটমাট হয়ে যাবে তুই ভাবলি কি করে! ওই মেয়েকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না। আমাদের নিয়ে এতো কথা বললো, অপমান করে তাড়িয়ে দিলো, তোর ভালোবাসার অপমান করলো। তারপরেও তুই এসব বলছিস। আমাদের ভালোবাসিস না তুই?
-বাসি ছোট আম্মু। কিন্তু আমি উপমাকেও ভালোবাসি।
-তুই ওর মেয়ের জালে অন্ধ হয়ে গেছিস। আমি…
.
আর কিছু না বলে মুনিরা চলে গেলো রুম ছেড়ে।
আরাফ সায়নীর কাছে এসে বললো-
উপমা আমার প্রথম ভালোবাসা বড় আম্মু। আমি জানি ও ভুল করেছে। কিন্তু ক্ষমা তো মহৎ গুণ তাইনা?
-হু।
-ও যদি তোমাদের সরি বলে তবেই আমি সম্পর্ক টা আগাবো। আমি জানি ও বলবে। কেননা ও আজ আমাকে ভালোবাসে বলেছে।
-তাহলে আরেকটা সুযোগ দে। তবে উপমাকে নয়, নিজের ভালোবাসা কে। যাতে পরবর্তীতে আর কোনো আফসোস না থাকে। তুই যে সিদ্ধান্ত নিবি নে, আমি তোর সাথে আছি।
-হুম। এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আশা রাখছি।
-কিন্তু ছোট আম্মু?
-রাগ কমলে ঠিক হয়ে যাবে। উপমা যা করেছে রাগ করাই স্বাভাবিক।
.
.
.
-আরাফকে তোর কেমন লাগে?
.
মায়ের মুখে এমন একটা কথা শুনে চমকে গেলো মেহেনুবা।
সে জবাব দেয়ার আগেই তাসু বলে উঠলো-
আমার তো অনেক বেশিই ভালো লাগে।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে মিশিকা বললো-
যাকে প্রশ্ন করেছি উত্তর টা সেই দিক না?
.
মেহেনুবা শান্ত স্বরে বললো-
ভালো লাগে।
-আমরা চাচ্ছি আরাফের সাথে তোর বিয়ে হোক। করবি?
.
কথাটি শুনেই যেনো মেহেনুবা বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।
আর তাসু হাসি ভর মুখ নিয়ে বললো-
এই হ্যান্ডসাম আরাফ, আই মিন মাই ক্রাশ হবে আমার দুলাভাই!
হায়….
এর শালী হতে পেরেই যে ধন্য হয়ে যাবো আমি!
.
মায়ের দিকে তাকিয়ে মেহেনুবা জিজ্ঞাসা করলো-
এসব কি তুমি বলছো? না মানে আন্টি বা আরাফ জানে?
-আরেহ! সায়নীরা রাজি। তারা রাজি মানে আরাফও রাজি। এখন তোর টা বল।
-তারা রাজি মানে আরাফও রাজি না। আমার আরাফের মত টা দরকার।
-তুই তোর টা তো বল?
-আরাফ যদি চায়, আমার আপত্তি নেই।
.
মেহেনুবার জবাব শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে তাসু বললো-
তার মানে আরাফ কে তুই পছন্দ করতি তাইতো কিছু না ভেবেই হ্যাঁ করে দিলি।
-এসব কিছু না। তুই তো জানিসই এসবে আমি বিশ্বাস করিনা।
.
মিশিকা হেসে বললো-
ওরে থাম তোরা! আরাফ এমনই একটা ছেলে। তাকে পছন্দ না করে উপায় আছে! আমি সায়নীকে জিজ্ঞাসা করে আসি, আরাফ কি জানালো।
.
.
মেহেনুবা জানেনা আরাফ কি বলবে।
উপমার দেয়া আঘাত যে আরাফ ভুলতে পারেনি জানে সে।
এতো সহজে অন্য একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হতে রাজি হবে তো আরাফ?
আর সে নিজেই বা এতোকিছু জানার পরেও কেনো রাজি হয়ে গেলো!
তাহলে তাসুর কথাই কি সত্যি!
আরাফ কে সে আগে থেকেই পছন্দ করতো?
.
.
.
ব্লক লিস্ট থেকে উপমার ফোন নাম্বার টা সরিয়ে তাকে ফোন দিলো আরাফ।
-হ্যালো?
-উপমা শুনছো? ব্লকটা আমি খুলে দিয়েছি।
.
মুচকি হেসে উপমা বললো-
সেটা তোমার ফোন দেখেই বুঝেছি।
-কাল আসবে আমাদের বাসায়? আম্মুদের বলবে তুমি, তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো।
-সরি বলতে আসবো আমি।
-আমি জানতাম, আমার উপমা বেস্ট।
-হু। তার আগে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-বলো?
-এভাবে নয়। কালই বলবো। তোমার বাসায় আমাকে নেবার জন্য এখানে আসবেনা তুমি?
-তুমি বললে আসবো। আঙ্কেল আন্টিকে সরিও বলে আসবো।
-ঠিক আছে। তাহলে কাল দেখা হচ্ছে। এখন রাখছি।
.
.
.
মুনিরার রুমে এসে সায়নী বললো-
আরাফ যা চায়ছে তা কিন্তু অযৌক্তিক নয়। আমি তোকে বলেছিলামও, উপমা ফিরে আসলে…
-আমাকে কিছু বুঝিয়ে লাভ নেই আপু। আমি উপমা কে কখনো ক্ষমা করবোনা।
-আরাফের কথাটাও ভাববি না তুই?
-ও ভাবছে আমাদের কথা!
.
-তোরা এখানে? আমি সারা বাড়ি খুঁজছি।
.
মিশিকার প্রশ্ন শুনেই সায়নী বুঝতে পারলো, তাদের কথপোকথন সে শুনেনি।
সায়নী তার দিকে তাকিয়ে বললো-
ভেতরে আয় মিশি।
.
ভেতরে এসে তাদের উদ্দেশ্যে মিশিকা বললো-
মেহেনুবা রাজি হয়েছে। তবে বলেছে আরাফ চায়লেই এই বিয়ে হবে।
.
মুনিরা হাসিমুখে বলে উঠলো-
ওমা তাই!
আমাদের আরাফও রাজি। কেনো চায়বেনা আরাফ! আমার কথা ঠিক শুনবে।
-বলেছো ওকে?
.
মুনিরাকে কিছু বলতে না দিয়ে সায়নী বললো-
আসলে আরাফের এখুনি বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলোনা। আগে বাবার সাথে কাজে হাত লাগানোর ইচ্ছে আছে। তাই ভাবছিলাম যে, ছেলেটা আগে কাজে জয়েন করে নিক তারপর নাহয় বলবো।
-উহু সায়নী! জয়েনের সাথে পছন্দ অপছন্দের সম্পর্ক কি! আচ্ছা আমি নিজেই যাচ্ছি আরাফের কাছে। এতোটুক অন্তত ফ্রি আমি ওর সাথে।
.
তার পথ আটকে মুনিরা বললো-
আরাফ ঘুমোচ্ছে এখন। উঠলেই আমি জিজ্ঞাসা করবো। তবে ধরে রাখুন আপু, মেহেনুবা আর আরাফের বিয়েটা হবেই।
.
.
.
অবশেষে কাল ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
উপমাকে নিজের করে পাবে আরাফ, ভাবতেই মনে ভালো লাগা কাজ করছে তার।
তার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।
কিন্তু তার ছোট আম্মু মেনে নিবে তো উপমাকে?
আর বড় আম্মু তো তার সিদ্ধান্ত কেই মেনে নিবে বলেছে।
এসব ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠছে আরাফের।
তার জন্য দুই মায়ের মাঝে আবার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে না তো!
.
(চলবে)