#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |৫|
উষা দরজা খুললে উচ্ছাস সালাম দেয়। উষা উচ্ছাসকে ভেতরে নিয়ে বসায়। কুসুমের মা উচ্ছাসের আসার খবর শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন। উচ্ছাস কুসুমের মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
‘ কেমন আছো, খালামণি? ‘
কুসুমের মা গদগদ কণ্ঠে বললেন,
‘ তুই এসেছিস। বস তো একটু। তোর জন্যে সুজির হালুয়া করেছি। তুই তো আবার হালুয়া খুব পছন্দ করিস। ‘
‘ খালামণি, এখন হালুয়া খাবার একটুও সময় নেই। কুসুমকে বাসায় পৌছে আমি হসপিটাল যাব। প্লিজ, বুঝো। ‘
কুসুমের মায়ের এসব শোনার আগ্রহ নেই। তিনি তার কথা জানিয়ে আবার রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন। হালুয়া চুলায় বসানো। প্রায় হয়েই এসেছে। উচ্ছাস এবার উষার দিকে চাইল। কাতর কণ্ঠে বলল,
‘ উষা, খালামণিকে প্লিজ বলো গিয়ে। আমার হাতে একদম সময় নেই। দেখো, ১২:৩০ বাজে। ১ টার ভেতর হসপিটাল পৌঁছাতে হবে। ট্রাই টু অ্যান্ডারসট্যান্ড। ‘
উষা মৃদু হাসল। হাসলে উষাকে সুন্দর দেখায়। উষা বলল,
‘ কুসুম তৈরি হয়নি এখনো। তুমি বসো। ও তৈরি হয়ে আসতে আসতে তোমার হালুয়া খাওয়া হয়ে যাবে। ‘
উচ্ছাস কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
‘ এখনো তৈরি হয় নি? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ‘
‘ আসলে ঐ বাড়িতে যেতে তার একটু-আকটু ভয় করছে। ‘
‘ ভয়? কেন? ও তো আগেও গিয়েছে আমাদের বাড়িতে। ‘
‘ আগের যাওয়া আর এখনের যাওয়ায় তফাৎ আছে। এখন কুসুম তোমাদের বাড়ির বৌ। ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তার উপর কুসুম অল্পবয়স্ক। ‘
উচ্ছাস শুনে। কুসুম কি খুব বেশিই ছোট হয়ে গেছে তার জন্যে। সে কি ছোট বয়সের কুসুমকে বিয়ে করে ভুল কিছু করে বসল? পরে যদি এই বিয়ে নিয়ে তাকে পস্তাতে হয়, তখন? উচ্ছাস অন্যমনস্ক হয়ে বলে,
‘ কুসুম বোধহয় খুব বেশিই ছোট হয়ে গেছে আমার জন্য। ‘
উষা মৃদু হেসে বলে,
‘ তা তো হয়েছেই। তবে ছোট মেয়েকে বিয়ে করলে একটা সুবিধা আছে, জানো? নিজের হাতে গড়ে তোলা যায়। তোমার হাতে সুযোগ আছে। কাজে লাগাও। কুসুমের ঘর ঐদিকে। গিয়ে বলো, তৈরি হতে। আমি বললাম, শুনেনি। তুমি বললে হয়ত শুনবে। আমি ফুপুর কাছে যাচ্ছি। হালুয়া হয়েছে কি না দেখে আসছি। তুমি যাও। ‘
উচ্ছাস যেতে চাইছে না কুসুমের ঘরে। বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে তার। কুসুমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু নিজের স্ত্রীর সঙ্গে এখনো ততটাও সহজ হয়ে যায় নি উচ্ছাস। বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে এমনিতেই সে দ্বিধা দ্বন্ধে ভুগছে। তাহলে তাদের সম্পর্ক সহজ-স্বাভাবিক হবে কিভাবে? উচ্ছাস যেতে না চাইলেও উষার জোরাজোরিতে সে কুসুমের ঘরের দিকে এগুলো। ঘরের দরজা হালকা ভিড়িয়ে রাখা। ঘরের ভেতর বাইরে থেকে ততটা দেখা যাচ্ছে না। উচ্ছাস নক করল দরজায়। ভেতর থেকে কুসুমের অস্থির কণ্ঠে ভেসে এল,
‘ নক করছ কেন? দ্রুত ভেতরে আসো। ‘
উচ্ছাস হতভম্ব হয়ে পরল। কুসুম কি উচ্ছাস ভেবেই কথাটা বলল, নাকি আর কেউ ভেবে? ভেতরে যাওয়া কি ঠিক হবে? উচ্ছাস মনেমনে প্রশ্নোত্তর পর্ব সেরে ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই উচ্ছাসের চোখ কপালে উঠে গেল। কুসুম শুধুমাত্র পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ির অর্ধেক পেটিকোটে গুঁজে শরীরে শাড়ি পেচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কুসুমের বিরক্তমাখা মুখ দেখে মনে হচ্ছে, কুসুম শাড়ি পরতে পারছে না। কুসুম বিরক্ত হয়ে কুচির দিকটা হাতে নিয়ে বলল,
‘ আপা, শাড়িটা পরিয়ে দেবে? দেখো, কেমন পেঁচিয়ে গেছে সবকিছু। দাও না পরিয়ে। ‘
কথাটা বলে কুসুম শাড়ির যেটুকু শরীরে ছিল সেটুকুও খুলে ফেলতে উদ্যত হল। উচ্ছাস সঙ্গেসঙ্গে চোখ খিঁচে চিৎকার করল,
‘ আমি উচ্ছাস। দয়া করে আর বাকিটুকু খোলো না। আমার হার্টএ্যাটাক হয়ে যাবে। ‘
কুসুম উচ্ছাসের চিৎকার শুনে সঙ্গেসঙ্গে দুহাতে শাড়ি শরীরের সঙ্গে পেঁচিয়ে দেয়ালের সঙ্গে সেটে গেল। বিস্ময়কর ডাগর ডাগর চোখ তার উচ্ছাসের পানে আটকে। উচ্ছাস চোখ বন্ধ করে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে পেছনে ফিরে গেল। কুসুম ভয়ে পেয়েছে ভীষন। কান্নামাখা কণ্ঠে বলল,
‘ আ-আপ-নি এ-এখানে কি ক-করছেন? এ-এটা আমার রু-রুম। ‘
উচ্ছাস চোখ খুলে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলল,
‘ আমাকে উষা পাঠিয়েছে, তোমাকে তৈরি হওয়ার কথা বলার জন্যে। ‘
কুসুম চোখ খিঁচে নিল। লজ্জা এবং ভয়ে গা বেয়ে তার ঘাম ছুটে গেছে। কি না কি দেখে ফেলেছে উচ্ছাস ভাই। শাড়ি ঠিক নেই, শুধু পেটিকোট আর ব্লাউজ পরা। উচ্ছাস ভাই কি না এই অবস্থায়… কুসুম আর ভাবতে পারল না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। উচ্ছাস কুসুমের কান্না দেখে ব্যতিব্যস্ত হল। আগের ন্যায় পেছন ফেরে বলল,
‘ আমি কিছু দেখেনি, সত্যি। কেঁদো না প্লিজ। আমার খুব অপরাধবোধ হচ্ছে। আমি চলে যাচ্ছি। শান্ত হও,ওকে? কুল! ‘
উচ্ছাস আর একটুও দাঁড়ায় না। দ্রুত ছুটে কুসুমের ঘর থেকে চলে যায়। কুসুম দেয়ালে ঠেসে মাটিতে বসে পরে। দ্রুত নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চলছে তার। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে সম্পূর্ণ গা। কুসুম শাড়ি শরীরে পেঁচিয়ে স্থির বসে থাকে।
উচ্ছাস ঘরের বাইরে হয়ে উষাকে ডাকে। উষা রান্নাঘর থেকে ছুটে এলে উচ্ছাস দ্রুত বলে উঠে,
‘ কুসুম ডাকছে তোমাকে। ‘
উচ্ছাসের কথা শুনে উষা কুসুমের ঘরের দিকে যায়। কুসুমের চোখ টালমাটাল জলে ভেসে যাচ্ছে। কুসুমকে এভাবে স্থির বসে থাকতে দেখে উষা দ্রুত কুসুমের পাশে এসে বসে। কুসুমের কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘ কি হয়েছে? এমন ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছিস কেন? ‘
কুসুম আগের ন্যায় অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দেয়,
‘ সে সবকিছু দেখে নিয়েছে। ‘
উষা বুঝতে পারে না কুসুমের কথার অর্থ। ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘ কে কি দেখে নিয়েছে? ‘
কুসুম আগের ন্যায় উত্তর দেয়,
‘ সে। ‘
উষা এবার সত্যিই বিরক্ত হয়। কুসুমমে মাটি থেকে টেনে তুলে বলে,
‘ তোর এসব অবুঝ কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বাদ দে। শাড়িটা এখনো পড়িস নি। শাড়ি খোল। পরিয়ে দেই। ‘
তারপর কুসুমের ‘সে সব দেখে নিয়েছে’ কথার অর্থদ্ধার না করে, উষা বেশ সুন্দর করে কুসুমকে শাড়ি পরিয়ে দিল। গলায় একটা চিকন চেইন, কানে সাধারণ দুল, চোখে হালকা কাজলের রেখা এঁকে দিল। কুসুম তৈরি এবার। উষা ড্যাবড্যাব চোখে কুসুমের দিকে চেয়ে বলল,
‘ আল্লাহ! তোকে তো ভীষন সুন্দর লাগছে রে কুসুম। তুই এত সুন্দর কেন রে। জানিস, তোকে দেখলে আমার হিংসা হয়। আমি ফর্সা হয়েও তোর মত এত সুন্দর না। ‘
কুসুম এসবের কিছুই শুনছে না যেন। সে আয়নার দিকে চেয়ে আছে অপলক। চোখের সামনে কল্পনায় একটু আগের দৃশ্য ভাসছে অনবরত। উচ্ছাসের সামনে এবার কুসুম কি করে যাবে? কুসুমের যে কেমন কেমন লাগছে। উষা কুসুমের পার্সে প্রয়োজনীয় সব ঢুকিয়ে দিয়ে কুসুমের হাতে পার্স দিল। কুসুমের হাত টেনে ধরে বলল,
‘ যাবি না? দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখনো? ‘
কুসুম হঠাৎ করে বিছানায় বসে গেল। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আমি যাব না আপা। আমার লজ্জা লাগছে। ‘
উষা শুনল না। কুসুমের হাত টেনে ধরে নিয়ে যেতে লাগল উচ্ছাসের কাছে। কুসুম লক্ষ্য করল, তার হাত কাঁপছে। ভয়ংকর কাঁপুনি দিচ্ছে সারা গা। এমন ভয়াবহ কাঁপা দেহ নিয়ে সে কি করে উচ্ছাসের সামনে যাবে। ভাবলেই রীতিমত জ্বর উঠে যাচ্ছে কুসুমের।
#চলবে