বৌপ্রিয়া পর্ব -০৬+৭

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |৬|

কুসুম লজ্জামিশ্রিত পায়ে বসার ঘরে এসে থামে। পা দুটো থমকে আছে, যেন এক্ষুনি হাঁটু ভে”ঙে নিচে গড়াবে। চোখের সামনে উচ্ছাস বসে আছে। উষা কুসুমকে এনে উচ্ছাসের পাশে বসাল। উচ্ছাস আড়চোখে একবার কুসুমকে দেখেই সঙ্গেসঙ্গে চোখ সরাল। হালুয়ার বাটি টেবিলে রেখে টিশার্ট টেনেটুনে উঠে দাঁড়াল। কুসুমের মা বাঁধা দিয়ে বললেন,

‘ উঠছিস কেন? চা খেয়ে যাবি। বস। ‘

উচ্ছাস খালামনির দিকে চেয়ে বেশ তাড়া দেখিয়ে বলে,

‘ খালামনি, অলরেডি ১ টা বেজে গেছে। আধা ঘন্টার মধ্যে হসপিটাল না পৌঁছাতে পারলে, আমার খবর করে দেবে ওরা। আজই কি সব জামাই আদর করে ফেলবে? আরেকদিন এসে খাব, ঘুরব, আর তোমার একেকটা স্পেশাল রেসিপি ট্রাই করব। কিন্তু আজ যেতে হবে। বুঝো প্লিজ। ‘

সাহেদার মন নরম হল বোধহয়। মাথা নেড়ে সায় জানালেও মনেমনে বোনের ছেলেকে নিজের নতুন রেসিপি মসলা চা বানিয়ে খাওয়ার ইচ্ছেটা মাটি হয়েছে দেখে আফসোসও হল বেশ। উচ্ছাস কুসুমের দিকে চেয়ে বলল,

‘ চলো কুসুম। ‘

কুসুম তাড়াহীন পায়ে উঠে দাঁড়াল। মায়ের থেকে বিদায় নিতে গেলে সাহেদা উচ্ছাসের অগোচরে মেয়ের কানে কিছু ভালো ভালো কথা ঢেলে দিলেন। কুসুম মিনমিন করে মাথা দুলাল মায়ের কথায়। উচ্ছাস ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে। গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে কুসুমের। কুসুম বেরিয়ে এল। গাড়ির পেছন সিটে বসতে চাইলে উচ্ছাস ড্রাইভিং সিট থেকে বলে,

‘ সামনে এসে বসো, কুসুম। ‘

এমনিতেই কুসুম লজ্জা এবং অস্বস্থিতে আধখান হয়ে গেছে। এখন অব্দি উচ্ছাসের দিকে চোখ তুলে চাইতে পারছে না। সারা অঙ্গ যেন জমে যাচ্ছে। আর এখন নাকি উচ্ছাসের পাশে বসবে! কুসুম মানা করল না অবশ্য। উচ্ছাসের পাশের সিটে বসল। উচ্ছাস গাড়ি চালু করে বলল,

‘ সিট বেল্ট লাগিয়ে নাও। ‘

কুসুম সিটবেল্ট লাগিয়ে আবারও চুপ করে থাকল। উচ্ছাস বলল,

‘ অস্বস্থি হচ্ছে? জানালা খুলে দেব? ‘

‘ খুলে দিন। ‘

উচ্ছাস গাড়ির এসি বন্ধ করে জানালা খুলে দিল। সঙ্গেসঙ্গে বাতাস বয়ে গেল কুসুমের গা বেয়ে। কুসুমের চুল এলোমেলো হল। আরামে চোখ বুজে এল কুসুমের। কুসুমের কোমড় অব্দি লম্বা এবং ঘন চুল। কপালের সামনে কয়েকটা চুল কেটে রাখা। সেসব বেবি হেয়ারগুলো বারবার কুসুমের চোখে নাকে ঢুকে যাচ্ছে। বাতাসের কারণে চুল বড্ড জ্বালাচ্ছে কুসুমকে। তাই কুসুম চুলগুলো হাতখোঁপা করে নিল। বেবী হেয়ারগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল। আসার সময় উষা কয়েকটা ক্লিপ কুসুমের পার্সে রেখে দিয়েছে। সেগুলো এখন ভালোভাবেই কাজে লেগে গেল। কুসুমকে এতক্ষন চুপ থাকতে দেখে উচ্ছাসের ভ্রু কুঁচকে গেল। কুসুমের দিকে না চেয়েই সে বলল,

‘ একটু আগের ঘটনার জন্যে আ’ম সরি। আমি সত্যিই কিছু দেখিনি। দেখার আগেই চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। তুমি এমন অস্বস্থিতে ভুগো না। স্বাভাবিক থাকো। আর আমি তো পরপুরুষ নই। এত হ্যাজিটেশন ফিল করো না, কুসুম। ‘

আবার সেই পুরোনো কথা মনে পরলে কুসুমের গাল গরম হয়ে যায়। হাত দুটো বেয়ে ঘাম ছুটে। কুসুম জানলার দিকে চেয়ে মৃদু শ্বর বলে,

‘ আমি স্বাভাবিক আছি। ‘

উচ্ছাসকে এবার শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে দেখা গেল। মেয়েটা বড্ড ছোট এবং ইমম্যাচিয়র। এমন একটা মেয়েকে নিয়ে উচ্ছাস সারাজীবন কি করে কাটাবে? উচ্ছাস চিন্তা করে।
______________________
কুসুম খালার বাড়িতে প্রায় দুই বছর পর পা রাখল। এতদিনে বাসাটা আগের মতই আছে। একটুও বদলে যায়নি। তবে বাড়ি দেখে মনে হচ্ছে বাড়িটা নতুন করে রং করা হয়েছে। এবার সম্পূর্ন বাড়ি সাদা রঙ করা হয়েছে। আগে সবুজ আর অফ হুয়াইট রং করা ছিল। তবে আগের থেকে এখন বাড়িটা দেখতে বেশি ভালো লাগছে। সাদা রঙের দু তলা বাড়ি চোখে লাগছে খুব। কুসুম বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। উচ্ছাস গাড়ি পার্ক করে নিজেও কুসুমের সঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করল। কুসুমকে দেখে উচ্ছাসদের বাড়িতে রীতিমত হইচই লেগে গেল। উচ্ছাসের চাচাতো বোনেরা দৌঁড়ে এসে কুসুমকে ঝাপটে ধরল। কুসুম এদের হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় টাল সামলাতে না পেরে পেছনে পরে যাচ্ছিল। উচ্ছাস কুসুমের পেছনে মোবাইলে কথা বলে আসছিল। কুসুমকে পরে যেতে দেখে সঙ্গেসঙ্গে কুসুমের হাত টেনে ধরে সোজা করে। বোনদের দিকে চেয়ে বলে,

‘ আস্তে, পরে যাবে ও। ‘

উচ্ছাসের বোনরা সরি বলে কুসুমকে নিয়ে বসায় সোফায়। কুসুম এতক্ষণ মাথা নত করে বসে ছিল। শিউলি আর খালামনিকে খুঁজছে ও। শিউলির সঙ্গে কুসুমের বেশ ভাব। তাদের রোজ ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। শিউলি কি বাসায় নেই? অবশেষে খালামনি এলেন এবার। কুসুমের পাশে বসে বললেন,

‘ কতদিন পর এলি কুসুম। তোর মায়েরও কত নিয়ম। খালার বাড়িতে আসবি, এতে এত নিয়ম মানার কি আছে। কেমন আছিস? খেয়েছিস কিছু? এই সায়মা কয়েকটা ফল কেটে নিয়ে আয়। শরবতও আনিস। ‘

উচ্ছাসের চাচাতো বোন সায়মা উঠে চলে গেল রান্নাঘরে। বাকিরা এখনো কুসুমকে ঘিরে বসে আছে। কুসুমকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এদের সবার সঙ্গেও কুসুমের ভাব ছিল। কিন্তু কুসুম এই দুই বছর এই বাড়িতে না আসায় এদের সঙ্গে ততটা কথা হত না। তবে উচ্ছাসের সকল বোন খুব মিশুকে। কুসুমের সঙ্গে ছোট বেলা থেকেই তাদের জমেছে খুব।

কুসুম খালামনির দিকে তাকাল। মৃদু হেসে বলল,

‘ আমি খেয়ে এসেছি, খালামনি। ‘

উচ্ছাসের মা এসব শুনতে নারাজ। কতদিন পর আদরের বোনের মেয়ে তাদের বাড়িতে এসেছে। ছোটবেলা থেকেই কুসুমকে খুব স্নেহ করতেন পারুল। কুসুমের দিকে তাকালে তার রাগ গলে যেত। কুসুমের নরম দেহ কোলে তুলে তিনি নিজ হাতে তাকে খাইয়ে-পরিয়ে দিতেন। কুসুমের প্রতি এত স্নেহই তাকে নিজের ছেলের বউ করতে আগ্রহী করে তুলে। তাই তো তার মায়া আদর কুসুমের বয়স তোয়াক্কা করেনি। টানা এক মাস ধরে বোনকে লাগাতার অনুরোধ করতে থাকলেন কুসুমের হাত পাবার জন্যে। শেষ অব্দি তার অনুরোধ ফেলতে পারেন না কুসুমের মা। কুসুমের বয়সকে তারা উপেক্ষা করে উচ্ছাসের সঙ্গে কুসুমের বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ে ঠিক হবার পর কুসুমদের বাড়ির রেওয়াজ অনুসারে কুসুমকে বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়ি আসতে নিষেধ করে দেন কুসুমের মা। এই নিয়ে বোনের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন উচ্ছাসের মা পারুল। তবে যাই হোক! বিয়েটা শেষ অব্দি হয়েছে এতেই তিনি খুশি, আনন্দিত।

সায়মা একটা ট্রে’তে করে ফল আর শরবত নিয়ে এলো সবার জন্যে। কুসুম একটা ফল হাতে নিয়ে তাতে কামড় বসায়। উচ্ছাস পাশের সোফায় বসে মোবাইলে কিছু একটা দেখছে। পারুল ছেলেকে বলেন,

‘ তুই বের হবি উচ্ছাস? ‘

উচ্ছাস ফোন থেকে মাথা তুলে মায়ের দিকে চায়। বলে,

‘ হ্যাঁ, শরবত খেয়েই বের হব। হসপিটালে যেতে হবে। ‘

পারুল রেগে যান। বলেন,

‘ মানে? তোকে বলেছিলাম না আজ ছুটি নিতে। কাল চলে যাবি, আজও তোর হসপিটাল করা লাগে? ‘

উচ্ছাস শরবত একটানে খেয়ে শেষ করে গ্লাস রেখে উঠে দাঁড়ায়। টিশার্টের উপর এপ্রোন পড়ে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,

‘ কিছু ফাইল পেন্ডিং আছে। সেগুলো আনতে হবে। দুপুরের খাবার আগেই এসে যাব। রাগ করো না,আম্মা। ‘

উচ্ছাস মোবাইলে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায়। কুসুম উচ্ছাসের যাবার দিকে বিবশ নজরে চেয়ে থাকে।
#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |৭|

উচ্ছ্বাস সবেমাত্র হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরেছে। গায়ের সফেদ রঙা এপ্রোন ঘামে জুবজুব। টিশার্টটাও ঘেমে গায়ের সঙ্গে মিশে গেছে। দ্রুত গোসল করতে পারলে হয়ত ভালো লাগবে। উচ্ছ্বাস ঘরে ফিরে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ শিউলির ঘর থেকে কুসুমের হাসির শব্দ শুনে উচ্ছ্বাস কেমন ঝিম ধরে গেল। কুসুম এত শব্দ করে হাসতেও পারে? কই, তার সামনে তো কুসুমের বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না এই অবস্থা হয়ে যায়। পরপরই উচ্ছ্বাসের মনে হয়, কুসুমের সঙ্গে সবে বিয়ে হয়েছে তার। বয়সে ছোট একটা মেয়ে তার মত বড়সর এক ছেলের সঙ্গে কথা বলতে অস্বস্থি হতেই পারে। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। উচ্ছ্বাস মাথা ঝাড়া দেয়। নিজের ঘরে যেতে যেতে ডাকে,

‘ শিউলি? আমার ঘরে আয় একটু। ‘

উচ্ছ্বাস ঘরে গিয়ে কাপড় ছাড়ছিল। এপ্রোন আর টিশার্ট খুলে বালতিতে ভিজিয়ে রাখল। নিজেও টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে যাবে তখন শিউলি ঘরে এল।

‘ ডেকেছিলে ভাইয়া? ‘

উচ্ছ্বাস উদোম ঘাড়ে টাওয়াল ঝুলিয়ে বলল,

‘ গোসলে যাচ্ছি। এক কাপ কফি দিয়ে যা। বড্ড মাথা ধরেছে। ‘

শিউলি মাথা দুলাল। কিছু একটা ভেবে মৃদু স্বরে বলল,

‘ আচ্ছা, দিচ্ছি। তুমি গোসল শেষ করে আসো। ‘

উচ্ছ্বাস গোসলে চলে যায়। উচ্ছ্বাস বাথরুমে যেতেই শিউলি দৌঁড়ে নিজের ঘরে আসে। কুসুম তখন বিছানায় গোল হয়ে বসে সায়মাদের সঙ্গে গল্পে মজে ছিল। তাদের যে কতরকম গল্প। কিশোরী বয়সের গল্প কার না শুনতে ভালো লাগে? সায়মার বয়ফ্রেন্ড আছে, মাত্র জানল কুসুম। সায়মা তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ভয় পাচ্ছে ইদানিং। উচ্ছ্বাস শুনলে সায়মাকে প্রাণে মেরে ফেলতে দ্বিধা করবে না, এটা সায়মার মনে হয়। একটামাত্র ভাই তাদের পরিবারে। ভাইকে কষ্ট দিলে বোনদের সবার মন পুড়ে। তাই সায়মা চিন্তা করছে, সে ব্রেকআপ করে নিবে। অথচ অন্যান্য বোনরা তাকে বারবার মানা করছে। সায়মার বয়ফ্রেন্ড বেশ ভালো এবং ভদ্র একটা ছেলে। তাকে রিজেক্ট করা মানে, সায়মার কপাল পুড়বে। উচ্ছ্বাসের প্রেম ভালোবাসার বিরুদ্ধে এসব কঠোরতা শুনে কুসুম খানিক আশ্চর্য্য হল। উচ্ছ্বাস ভাই কি প্রেম সহ্য করতে পারে না? তার জীবনেও কি কখনো প্রেম আসে নি? কুসুম এসব অবাস্তব চিন্তা করতে মশগুল হয়ে গেল! শিউলি কুসুমের পাশে এসে বসল। কুসুমকে ডাক দিল,

‘ কুসুম আপা! ভাইয়া ডাকছে তোমায়। ‘

কুসুম উচ্ছ্বাসের নাম শুনেই কেমন ভরকে গেল। কেন যেন উচ্ছ্বাসের নাম তার কানে এলে কুসুমের সারা গা ঝিম ধরে যায়। পেটের মধ্যে অদ্ভুত জিনিস মোচড় দিয়ে উঠে। মনের মধ্যে সুড়সুড়ি অনুভব হয়।
উচ্ছ্বাসের সামনে গেলে কুসুম ভয়ে সিটিয়ে যায়। গায়ে কাপন ধরে। সে কাপনে অস্থির হয়ে যায় কুসুম। এসব কেন হয় তার সঙ্গে? অদ্ভুত অনুভূতি! কুসুম বলল,

‘ আমাকে কেন ডাকছেন? ‘

শিউলি কাধ ঝাঁকিয়ে বলল,

‘ আমি কি জানি। বলল কফি দিতে তাকে। ‘

কুসুম কি আর করবে? সে বলেছে এখন কফি করে দিতেই হবে। নাহলে অন্য কথা উঠবে। তাই কুসুম গল্পের এই মজাদার আসর ছেড়ে উঠে পরল। শাড়ির আঁচল সামলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল খালা পেঁয়াজ কাটছেন। কুসুমকে দেখে কাজের খালা গদগদ হয়ে বললেন,

‘ আপা, আপনি এইখানে কি করেন? কি দরকার আমারে কন। বানাই দিতাসি। ‘

কি অমায়িক খালার কথা। খালাকে ভীষন ভালো লাগল কুসুমের। কুসুম মৃদু হেসে বললেন,

‘ কফি করব খালা। ‘

‘ কার লাইগা? আপনি খাইবেন? আমি বানাই দিতাসি। ‘

‘ না আমার জন্যে নয়। তার জন্যে। ‘

‘ তা…? ‘

কথা সম্পূর্ণ করার প্রয়োজন হয়না খালার। তিনি বুঝে ফেলেন কুসুম কার কথা বলছে। বুঝতে পেরেই হেসে উঠে বললেন,

‘ ভাইজানের লাইগা? আচ্ছা আপনি বানান। ওই তাকে চিনি আর কপি পাউডার আছে। কিছু লাগলে কইয়েন। ‘

কুসুম লজ্জা পেয়ে গেল। বাড়িতে এত মানুষ থাকতে কফি বানানোর জন্যে তার কুসুমকে প্রয়োজন পরল? ইশ! কেমন লজ্জায় জড়িয়ে গেল কুসুম। কুসুম চুলোয় গরম পানি বসাল। খানিক পর কাপে কফি বানিয়ে চামচ নাড়ল। এক ফোঁটা খেয়ে দেখল সব ঠিক আছে কি না। চিনি ঠিক আছে দেখে কফির কাপ নিয়ে চলল উচ্ছ্বাসের ঘরের দিকে।

উচ্ছ্বাস তখন গোসল থেকে বেরিয়েছে। উদোম গায়ে শুধু ট্রাউজার পরা। মোবাইলে কথা বলছে। আগামীকালের ফ্লাইট সংক্রান্ত কথাবার্তা। কুসুম দরজার টোকা দিল। উচ্ছ্বাস ভেতর থেকে বলল,

‘ আয়। ‘

কুসুম গুটিগুটি পায়ে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল। উদোম গায়ে এই প্রথম উচ্ছ্বাসকে দেখেই কুসুম রীতিমত চমকে উঠল। সারা গা বেয়ে শীতল স্রোত বইয়ে গেল। কুসুম নত শিরে মৃদু স্বরে বলল,

‘ আপনার কফি। ‘

কুসুমের কন্ঠ শোনামাত্রই উচ্ছ্বাস চমকে উঠল। দ্রুত মোবাইল রেখে পেছনে ফিরে গেল। লজ্জায় আবৃত কুসুমকে দেখে উচ্ছ্বাস খানিক অপ্রস্তুত হল। বিছানা থেকে টিশার্ট নিয়ে দ্রুত গায়ে জড়াতে জড়াতে বলল,

‘ তুমি কফি বানাতে গেলে কেন? আমি তো শিউলিকে বলেছিলাম। ‘

উচ্ছ্বাস ততক্ষণে টিশার্ট পরে নিয়েছে। কুসুম এবার মাথা তুলে চাইল। ডাগর ডাগর চোখে অবাক হয়ে বলল,

‘ কিন্তু শিউলি তো বলল আপনি আমাকে বলেছেন কফি দিতে। ‘

উচ্ছ্বাস ভ্রু কুঁচকাল। হয়ত শিউলির কারসাজি সে বুঝতে পেরেছে। ভাবনার ফলস্বরূপ উচ্ছ্বাসের ভ্রু দুটো আঁকাবাঁকা হয়ে সুন্দর এক খাঁজ তৈরি করল কপালে। কুসুম দেখল সেটা দুই চোখ ভরে। উচ্ছ্বাস অত্যন্ত সুন্দর একজন পুরুষ। গৌড় বর্নের এ পুরুষকে কুসুমের ন্যায় শ্যামলা রঙের মেয়ের সঙ্গে কি কখনো মানাবে? কখনোই না! কুসুমের ভয় হয়। এমন যদি হয়,কুসুমের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে উচ্ছ্বাসের আফসোস হয়। কুসুমকে ছেড়ে দিতে চায় না শুধুমাত্র এই গায়ের রঙের জন্যে? এমন কি কখনো হবে? কুসুম মনেপ্রাণে দোয়া করল, এমন যেন কখনো না হয়। যেই বিয়ে নিয়ে কুসুম ইতিমধ্যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, সেই বিয়ের বন্ধন যেন কখনো না ভাঙে।

উচ্ছ্বাস এগিয়ে এক কুসুমের দিকে। কুসুমের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল,

‘ শিউলি মজা করেছে তোমার সঙ্গে। কফি খাওয়া দরকার, একজন বানালেই হল। কফি দাও। ‘

কুসুম কফির কাপ এগিয়ে দিল। উচ্ছ্বাস কফির কাপে চুমুক দিয়ে বিছানায় এসে বসল। কুসুম এখনো দাড়িয়ে আছে। উচ্ছ্বাস বুঝতে পারল না কুসুমের ভাবনা। কুসুম উৎসুক চোখে চেয়ে আছে উচ্ছ্বাসের দিকে। এবার উচ্ছ্বাস বুঝতে পারল, কুসুম কেন এখনও দাড়িয়ে আছে তার ঘরে। উচ্ছ্বাস মৃদু হাসল। কাপে আরেকবার চুমুক দিয়ে বলল,

‘ কফিটা ভালো হয়েছে। ‘

কুসুম যেন নেচে উঠল এ কথা শুনে। কুসুম সবসময়ই নিজের জন্যে কফি বানায়। কফি বানাতে বানাতে অভ্যস্ত হলেও আজ উচ্ছ্বাসের জন্যে কফি বানাতে গিয়ে কুসুমের হাত কেপেছে। বারবার মনে হয়েছে, কফিটা বাজে হবে। উচ্ছ্বাস পছন্দ করবে না। যাই হোক। কুসুমের বানানো কফি উচ্ছ্বাসের পছন্দ হয়েছে, সেই বিশাল ব্যাপার। কুসুমের যা শোনার ইচ্ছে ছিল, শোনা হয়ে গেছে। এবার কুসুম দ্রুত উচ্ছ্বাসের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here