ব্লাক ডায়মন্ড পর্ব ২৪

#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-২৪

____________________

– মেথিস ঐ লেখা টার উপর মীরার হাতে নিজের শীতল হাত ছোঁয়ালো।

” মীরা কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে শিহরিত চোখে মেথিসের দিকে তাকালো।
মীরা মেথিস কে আজ খুব কাছ থেকে ইনিয়েবিনিয়ে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে।
মেথিসের পড়নে আজ ব্ল্যাক ব্লেজার যেনো তাঁর ফর্সা ত্বক ব্ল্যাকের সাথে পাল্লা দিয়ে আরো বেশি ধবধবে ফর্সা দেখাচ্ছে। ঠান্ডায়
মেথিসের নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।
মীরার ইচ্ছে করছে নাকে একটু আদর মাখা হাত দিয়ে টেনে দিতে।
মেথিসের চুলের ঘ্রাণ মীরাকে যেনো বেপরোয়া করে তুলেছে এ যেনো এক মাতাল করা মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ এসে মীরার বুকে এক অদ্ভুত ভালো-লাগার অনূভুতি ছোঁয়াচ্ছে।

– মেথিস মীরার কানের পাশের চুলগুলো আলতো হাতের স্পর্শে হালকা সরিয়ে কানে মুখ লাগিয়ে বললো পুরনো কিছু কি মনে পড়েছে তোমার?
আমাদের সেই দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার রং-তুলি যা দিয়ে দু’জন দু’জনার হৃদয়ে দু’টি ছবি এঁকেছিলাম পরম যত্ন করে ?

” মীরার আজ সব কিছু ক্লিয়ার করে মনে না পরলেও আবছা কিছু জিনিস চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মীরার খুব ইচ্ছে করছে আজ মেথিসের অনুভূতি গুলোকে বিশ্বাস করতে।
বিশ্বাস করে বলতে ভালোবাসি প্রিন্স আমি আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসি ।
কিন্তু মীরা কিছুই বললো না।
মীরা নিরব হয়েই মেথিসের দিকে নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।”

– প্রিন্সেস এটা আমাদের সেই পুরনো জায়গা যেখানে আমি তুমি দু’জনের রক্ত দিয়ে এ-ই গাছে আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী রেখে লিখেছিলাম।

মেথিসের আজ একটাই ইচ্ছে সব আজ প্রিন্সেস কে মনে করিয়ে ছাড়বে।

মেথিস মীরার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো প্রিন্সেস তুমি একজন ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ার হলেও তুমি কিন্তু পুন জন্মে শুধু ভ্যাম্পায়ার ই ছিলে না, তুমি ছিলে অর্ধ নেকড়ে আর অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার।
যাঁর কারণে তোমাকে ভ্যাম্পায়ার রা পুরোপুরি প্রিন্স হিসেবে মানতে নারাজ ছিলো। তুমি অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার জানতে পেরে নেকড়ে রাও তোমার সাথে বেইমানি করে।

– কথাগুলো বলে মেথিস বেশ কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।

তোমার মম ছিলো তোমার মতোই অর্ধ নেকড়ে অর্ধ ভ্যাম্পায়ার। তোমার বাবা ছিলেন একজন শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার। কিন্তু তোমার ড্যাড একটা ভুল করায় উনাকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে বিতাড়িত করা হয়।

মীরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেথিসের দিকে তাকালো।

– মেথিস একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো তোমার মম কে বিয়ে করে।
যা গ্র্যান্ডপা মেনে নেন নি।

তোমার ড্যাড তোমার মম কে নিয়ে আলাদা প্যালেসে থাকতে শুরু করে।
কিন্তু নেকড়ে রা খবর পায় তোমার ড্যাড ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে আলাদা থাকে।
আর তাঁরা সেই সুযোগ পেয়ে তোমার মম, ড্যাড কে আক্রমণ করে।

আর এভাবেই তোমার মম, ড্যাড কে অকালেই জীবন সমাধি দিতে হলো।
আর তোমাকে নিয়ে আসা হলো আমাদের ভ্যাম্পায়ার প্যালেসে।

তুমি আমি একসাথে বড়ো হতে থাকি।
আমরা দু’জন দু’জনকে খুব করে চিনতে শুরু করি, একসময় একে অপরকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলি।

কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসা আমাদের ভ্যাম্পায়ার প্যালেসের কেউ তখন মেনে নেয়নি।
তখন প্যালেসের প্রতিটা মানুষের সাথে শুরু হয় আমার মনোমালিন্য।
এক সময় আমি রাগ দেখিয়ে তোমাকে নিয়ে আলাদা প্যালেস চলে যা-ই।

– মেথিস নিজের শীতল দু’টি হাত মীরার গলে আলতো করে রেখে বললো মীরা চোখ বন্ধ করো।

– মীরাও বাধ্য মেয়ের মতো চোখ দু’টি বন্ধ করলো।

মেথিসের কথায় মীরা আবারো চোখ খুলে তাকিয়ে ভীষণ অবাক।
বিশাল এক নীল সমুদ্র যাঁর পানি গুলো স্বচ্ছ নীলচে দেখাচ্ছে একদম স্বপ্নের মতো।
তাঁর মাঝখান টায় আছে বিশাল এক প্যালেস। যাঁর প্রতিটি কারুকার্য অনেক দামী দামী হিরা, মতি দিয়ে গড়া।
যে একবার দেখবে সে নির্বিকার দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েই থাকবে।

মীরাও নির্বিকার দৃষ্টিতে নীল সমুদ্রের মাঝখানে বিশাল প্যালেসটার দিকে তাকিয়ে আছে।

– মেথিস মীরার হাত ধরে বললো প্রিন্সেস চলো এটাই আমার তোমার পাতানো ভালোবাসার প্যালেস যাঁর নাম ডার্ক ডায়মন্ড।

– মীরা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো প্যালেসটার সামনে বড়ো করে লেখা ‘ডার্ক ডায়মন্ড’।

মেথিস মীরা কে নিয়ে প্যালেসটার ভেতর প্রবেশ করলো।

প্রবেশ করবার সাথে মীরার মনে এক অদ্ভুত অনূভুতির ছোঁয়া লাগলো।
মীরা নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে এটা সেটা দেখছে। মীরা সবকিছু এমনভাবে দেখছে যেনো সবকিছু তাঁর খুব পরিচিত।

– হঠাৎ মীরার স্পর্শে একটা বন্ধ দরজা খুলে গেলো।

– মেথিস এগিয়ে এসে মীরা কে নিয়ে ঐ রুমে প্রবেশ করলো।

মীরা রুমে প্রবেশ করে রীতিমতো অবাক।
এখানেও সেই দু’টি ছবি যে ছবিগুলো মীরা ঐ দর্শনীয় প্যালেস টায় দেখেছিলো।
সেই দু’জন রাজা-রানির ছবি। যে দু’জনের ছবি মীরা চোখ বন্ধ করলেও ভেসে উঠে।
যে ছবিগুলো মীরা কে খুব করেই কাছে টানে।

মেথিস মীরার দিকে ছলছল তাকিয়ে মুখটা বেশ গম্ভীর করে বললো, মীরা এনারাই তোমার মম, ড্যাড।

মেথিসের মুখ থেকে কথাটা শুনবার সাথে সাথে মীরার দু-চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
মীরা নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে মেথিস কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেললো।

– মেথিস মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো প্রিন্সেস জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি জানো নিয়তি কে যে তোমাকে মেনে নিতেই হবে।
যখন আমি তোমায় হারিয়ে একা হয়ে গিয়েছিলাম তখন আমি নিজেকেই নিজে সামলাতে অনেক বেশি হিমশিম খাচ্ছিলাম। জানি প্রিয় জনকে হারানো কতটা কষ্টকর।
তখন দুচোখ শুধু প্রিয়জন কেই খুঁজে বেড়ায়। প্রিয়জন কে একটি বারের মতো হলে-ও সামনে পেতে চায় মন।

তখন শুধু একজন আমাকে বেশ সাপোর্ট করেছিলেন।
জানতে চাইবে না সেই একজন কে?

– মীরা জানবার জন্য বেশ উৎসুক হয়ে মেথিসের দিকে তাকালো।

– মেথিস মীরার চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বললো, সে এমন একজন মানুষ যে তোমাকে বরণ করবার জন্য বেশ উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করে আছে সেই কতো যুগ ধরে।

– মীরা মেথিসের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেথিসের চোখে মীরার জন্য হাজারো অনুভূতির ভালোবাসা জমে আছে শত-শত জনম ধরে।

– মেসিস মীরা কে এগিয়ে নিয়ে একটা পর্দার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো।

মেথিস একনজর মীরার দিকে তাকিয়ে বেশ রহস্যময় হাসি হেঁসে বললো প্রিন্সেস তুমি এখন যা দেখবে নিজেকে নিজেই হয়তো আর চিনতে পারবে না।

– হঠাৎ মেথিস পর্দা টা সরিয়ে ফেললো।

– মীরা একটা ছবি দেখে বেশ অবাক হলো।
ছবিটায় মীরা নিজেকে মেথিসের বুকে পরম যত্ন করে মাথা টা রাখা অবস্থায় জড়িয়ে আছে।

মীরা ছবিটায় নিজের হাত বুলিয়ে অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করলো একদম মীরার শূন্য হৃদয় আজ পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।

– মেথিস মীরাকে ইশারা করে বললো প্রিন্সেস ছবিটা কে অঙ্কন করেছে জানো?

– আমি।

কোনো এক মধুচন্দ্রিমা রাতে।
তখন ছিলো ঘুটঘুটে অন্ধকার। একফালি চাঁদের আলোতে আমি আপনার বুকে পরম যত্নে মাথা টা রেখে এই ছবি নিজের হাতে এঁকেছিলাম।

ঐদিন ছিল আমাদের ভ্যাম্পায়ারদের জন্য খুব স্পেশাল দিন।
শুনেছিলাম ঐ দিন আকাশের দিকে তাকিয়ে যে যা চায় তাই পায়।
আমি আর আপনিও চেয়েছিলাম যেনো দু’জন দু’জনকে শত জনমেও পাই।

কথাগুলো বলে মীরা অবাক হয়ে মেথিসের দিকে তাকালো।

মেথিসও চরম অবাক মীরার দিকে তাকিয়ে। মেথিস যেনো নিজেই নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।

মীরা মেথিসের গালে আলতো করে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বললো, প্রিন্স সত্যি আমার সব মনে পড়েছে, আমি ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস আর আপনি আমার প্রিন্স এন্ড্রে মেথিস।

মীরা মেথিসের হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো প্রিন্স সত্যি আমার সব মনে পড়েছে।
আর এটাও মনে পড়েছে এই ডার্ক ডায়মন্ড প্যালেস আপনি আমার জন্য ডার্ক ডায়মন্ড নামে নির্মিত করে আমাদের ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে রেখেছিলেন।
আর যা আজও অক্ষত রয়েছে সেই আগেরকার মতোই।

হঠাৎ মেথিসের মুখ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।

– মীরা মেথিসের গালে হাত রেখে বললো, আপনি কি সেই দিনটার কথা ভেবে মন খারাপ করছেন,?

– মেথিস গম্ভীর মুখ করে বললো হুম আজকের দিনেই তুমি আর আমি আলাদা হয়েছিলাম।

– এই দিনেই গ্র্যান্ডপা আমাকে তোমাকে অনেক অনুনয় বিনয় করে ভ্যাম্পায়ার প্যালেসে ফিরবার জন্য। আমি রাজি হইনি কিন্তু তুমি গ্র্যান্ডপার সাথে ঠিক ফিরে গেছো ভ্যাম্পায়ার প্যালেসে।

-এই ফিরে যাওয়াই তোমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

.
.
.
নেকড়ে রা আমাদের মনমানসিকতার দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে ভ্যাম্পায়ার প্যালেস কে আক্রমণ করে বসে এবং তাঁরা জিতে যায়।

– মীরা খুব ভালো করে খেয়াল করলো মেথিস কথাগুলো বলছে আর রাগে গজগজ করছে আর ভেতরে ভেতরে প্রতিশোধের আগুনে পোড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে।

– হঠাৎ মেথিসের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো।
মেথিস গুটিগুটি পায়ে মীরার কাছে এগিয়ে আসলো।

” মীরার বুকে তোলপাড় করা ঝড় উঠতে শুরু করেছে। মেথিসের শীতল নিঃশ্বাস মীরার ঘাড়ে এসে পড়ছে।
মীরা হাত দু’টো মুঠো করে রেখেছে।”

– মেথিস মীরা কে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, প্রিন্সেস তোমাকে আমি আর হারাতে চাই না, একটি বারের জন্যও নয়। আগের জন্মে তোমাকে ওঁরা ভুল প্ররোচনায় নিজের জীবনকে সমাধি দিয়েছে এবার আমি আর ওদের ছাড়বো না কিছুতেই না।

মেথিস কথাগুলো বলছে আর মীরা কে নিজের সাথে আরো বেশি করে জড়িয়ে নিচ্ছে। যেনো একটু ছেড়ে দিলেই মীরা আবার আগের কার মতো হারিয়ে যাবে।

– হঠাৎ মেথিস আহ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো।

– মীরার বুকে ভয় হতে লাগলো।
মীরার বুক ভয়ে ধুপধাপ করছে, মীরার কলিজা শুকিয়ে আসছে। ভয়ে মীরার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
হঠাৎ মীরার হাত রক্তে ভেজা ভেজা লাগলো।

মীরা কিছু বুঝবার আগেই মেথিস ঢলে পরলো।

– মীরা মেথিসের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেথিসের পিঠে নেকড়ে দের বিষাক্ত তীর যা ভ্যাম্পায়ার দের জন্য মরণ তীর নামেই পরিচিত।

মেথিসের গায়ের রং নীল বর্ন ধারণ করতে লাগলো। মেথিস আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়লো, দু-চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ করে ফেললো।

ভয়ে মীরার হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো।

মীরা মেথিস বলে চিৎকার দিলো।

মীরার চিৎকারে পুরো প্যালেস জুড়ে নিরবতা ছেয়ে গেলো।

#চলবে——

বিদ্রঃ গল্পটা প্রতিদিন দেওয়া হবে।
আজ বড়ো করে দিতে চেষ্টা করলাম আর বড়ো দেওয়া সম্ভব নয়।
সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
কেউ কষ্ট পাবেন না রহস্যময় গল্পগুলো এমনই কখন কি হয় কে জানে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here