ভাগ্য পর্ব-০৫

#ভাগ্য ৫ পর্ব

নিজের পরিবার ব্যতীত কেউ কোনদিন আমাকে ভালোবাসেনি, হয় অবহেলা করেছে নয় করুনার চোখে দেখেছে। আজ হাসিব যেভাবে বলল, সেই বলাতে করুনা ছিল না আপনজনের স্পর্শতা ছিল।

এখানে আছি প্রায় এক মাসের বেশী হয়ে গেল, কখনো হাসিব আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখেনি, আমার সাথে কথা বলার সময় মাথা নিচু করে কথা বলে, আমাকে সে শ্রদ্ধার চোখে দেখে, আমার যা কিছু প্রয়োজন আমি না চাইতেও সে এনে দেয়।
তুহিন আমাকে আপু বলে ডাকে, সে ফ্রি মাইন্ডে কথা বলে, তুহিন আপু বলে ডাকলেও তার ফ্রি মাইন্ডের কথা বলা আমার পছন্দ না।
সেদিন হঠাৎ করে তুহিন আমাকে প্রশ্ন করে,

আচ্ছা আপু, আপনি কি বিয়ে করবেন না,কাউকে দেখেশুনে বিয়ে করে নেন, আপনার বয়স তো তেমন না, কত আর হবে বাইশ তেইশ।
একা থাকতে আপনার খারাপ লাগেনা।

তুহিনের মুখে এমন কথা শুনে মেজাজ খুব গরম হয়ে যায়, কিন্তু রাগ চেপে রেখে বলি,
দেখেন তুহিন আপনি আমাকে আপু বলে ডাকেন, তাহলে আমি আপনার কি হই, বড় বোন, বড় বোনকে এরকম প্রশ্ন করতে আপনার রুচিতে বাধল না।

কিছু না বলে তুহিন আমার সামনে থেকে চলে গেছে।
আমি বুঝতে পারি, দুইজন অবিবাহিত যুবক ছেলের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকা ঠিক হচ্ছেনা, কিন্তু আমার তো না থেকে উপায় নেই।
তারপরও বলব, আমি অনেক নিরাপদে সম্মানের সহিত আছি, তুহিন যেমনি হোক হাসিব অনেক ভালো, তার জন্যই আমি নিজের ইজ্জত সম্মান নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকতে পারতেছি।
হাসিব চাইলে যা ইচ্ছা করতে পারে, আমি তো নিরুপায়, যাবার কোনো জায়গা নেই। হাসিবের মন মানসিকতা একদম অন্য রকম, আদিবের সাথে হাসিবের আকাশ পাতাল পার্থক্য। সব পুরুষই যে নারী পেয়ে নারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তা নয় কিছু পুরুষ নারীকে সম্মানও করে।

রাতে তুহিনকে খাবার খেতে দিয়ে আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের লন্ডন শহর দেখছি।
হাসিব তার অফিসে রাতের ডিউটিতে গিয়েছে, আসবে রাত দুইটায়। তুহিন ডিউটি শেষে কিছুক্ষণ আগে বাসায় আসছে।
লন্ডন শহরে মানুষ সারারাত জেগে থাকে এখনো হাজার হাজার গাড়ি চলছে রাস্তা দিয়ে, আমাদের বাংলাদেশে রাত এগারোটায় এতো গাড়ি চলাচল করে না। বাংলাদেশের কথা মনে হতেই মা বাবা বোনদের মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠল।
জানিনা কবে বাংলাদেশে যেতে পারব আর কবে মা বাবার বোনদের মুখ দেখতে পারব।

অনুভব করলাম কেউ আমার কাঁধে হাত রাখছে, ভাবলাম মনের ভুল। কিন্তু না তুহিন আমার কাঁধে হাত রাখছে,

আপনার সাহস তো কম না আমার শরীরে স্পর্শ করেন, হাত সরান, আমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে তুহিন আমার খুব কাছে ঘেঁষে দাঁড়ায়।
আমি বললাম দেখেন তুহিন আপনি কিন্তু কাজটা ভালো করছেন না, আমার কাছ থেকে দূরে সরেন।

আমি আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি, আপনার কথা ভেবে রাতে আমার ঘুম আসেনা, প্লিজ ইসরাত আমার সাথে আপনি শারীরিক সম্পর্ক করেন, আপনি যা চাইবেন তাই দেবো, যেদিন থেকে আপনাকে দেখেছি সেদিন থেকে আপনার দেহের উপর আমার নেশা পড়ে গিয়েছে, অনেক আগেই এই কথা গুলো বলতাম, হাসিবের ভয়ে বলিনি, কিন্তু আজ আর না বলে থাকতে পারলাম না, নীল রঙের শাড়ীতে আপনাকে খুব হট লাগছে।

এতো নিচ আপনি, ইচ্ছা করছে আপনার গালে কষে একটা চড় মারতে, কিন্তু পারব না হাসিব বাসায় আসুক, তাকেই বলব আপনার এই নোংরা প্রস্তাবের কথা।

আমার কথা শুনে তুহিন হেসে দিল, বলল, কখন হাসিব আসবে আর কখন তুমি বলবে, তার আগে আমি যা করতে চাই করে নেবো, আমি হাসিবের মত সাধু পুরুষ হয়ে আর থাকতে পারব না, এতদিন থেকেছি এইটাই বেশী। তুহিন আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে কিস করতে চাইল, আমি তার হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলাম।
খুব কষ্ট লাগছে যাকে ভাই মনে করলাম সে আজ আমার ইজ্জত নষ্ট করার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে, ইচ্ছা মত কাঁদলাম। এখন মনে হচ্ছে হাসিব ও কি আমার সাথে এমন কিছু করতে চাইবে, আমি তো তার ভরসায় এখানে আছি সে যদি এমন কিছু করতে চায় তাহলে নিজেকে আর রক্ষা করতে পারব না।

তুহিন অনেকবার দরজায় এসে ডাকল,
বলল, তুমি চাইলে তোমাকে আমি বিয়ে করব, তবুও দরজা খুলে দাও, ইসরাত প্লিজ আমাকে বিশ্বাস কর, আমি সত্যি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
তুহিনের মুখে এমন প্রতিশ্রুতি শুনে ঘৃনায় তার মুখে থুতু দিতে ইচ্ছা করছে, লম্পটটা নিজের কামনা সিদ্ধির উদ্দেশ্যে কত মিথ্যা বলছে।
সে যা বলার বলুক আমি অপেক্ষা করে আছি হাসিব আসার। শয়তানটা অনেক ডাকাডাকি করে এখন মনে হয় ঘুমাচ্ছে, রাত দেড়টা বাজে, কিছুক্ষণ পর হাসিব আসবে।
আমার চোখ লেগে আসছে ঘুমে, তবুও আমি জোর করে চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করছি, খুব ক্ষিদে লাগছে রাতের খাবার খাইনি, ভাবছিলাম তুহিনের খাওয়া শেষ হলে আমি খাবো।

রুমের বাহিরে শব্দ শুনে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম হাসিব আসছে, আমি সাথে সাথেই দরজা খুলে হাসিবকে বললাম আমার কিছু কথা আছে যদি শুনতেন, হাসিব আমার রুমে আসল, কি হয়েছে জানতে চাইলো।
কি করে বলল বুঝতে পারছিনা, আমি চুপ করে আছি, হাসিব আমার মুখের দিকে চেয়ে বলল,

আপনার চেহারা মলিন কেন, কি হয়েছে আপনার, বলুন কি হয়েছে, আপনার যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে নির্ভয়ে আমাকে বলতে পারেন, কি হলো কাঁদছেন কেন, তুহিন আপনার সাথে কোনো অসভ্য আচরণ করছে, করলে বলেন তাকে আমি দেখে নিবো।

আজ প্রথম হাসিব আমার মুখের দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো, তাকিয়ে থেকে সে আমার মনের কথা বুঝতে পারছে।
আমি তুহিনের ব্যপারে সব বললাম, সব শুনেই হাসিব রেগে গেলো, তার চোখ দুইটা লাল হয়ে গেছে।
বললাম, যাই করেন আমার জন্য আপনারা মারামারি কিছু কইরেন না।

হাসিব তুহিনের রুমে গিয়ে তুহিনের শরীর থেকে কম্বল টান মেরে ফেলে দেয়।
তুহিন ঘুমাচ্ছিলো সে ভয়ে পেয়ে লাফিয়ে উঠে বসে, হাসিবের রাগান্বিত চেহারা দেখে তুহিন বলে,

দেখ হাসিব আমি ইসরাতকে তেমন কিছু বলিনি, বিয়ের কথা বলছি, সে আমাকে অপমান করছে, মনে হয় তোর সাথে আমার নামে আবোল তাবোল বলছে।
তুহিনের কথা হাসিব বিশ্বাস না করে, তুহিনের গেঞ্জির কলার ধরে কয়েকটা ঘুষি মারে তুহিনের নাকে মুখে, ঠোঁট কেটে রক্ত বের হতে থাকে।
তুহিনও হাসিবকে মারার জন্য ক্ষেপে উঠে কিন্তু হাসিবের সঙ্গে শক্তিতে পারেনা। হাসিব তুহিনকে আরো মারতে থাকে, আমি থামাতে চেষ্টা করে পারছিনা।
হাসিব তুহিনকে মারছে আর বলছে,

শালা তোকে আমি প্রথম দিন থেকে বলছি একটা অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দিলাম, কখনো বাজে নজরে তাকাইবি না, নিজের বোন মনে করবি, তুই এতটা নিচ নির্লজ্জ যাকে আপু বলে ডাকলি আজ তার সম্মান নষ্ট করতে চাইলি, তোকে তো পুলিশে দেয়া উচিত।

অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে হাসিবকে তুহিনের রুম থেকে নিয়ে আসলাম।
হাসিবকে বললাম, আপনি এখন ডিনার করেন।
সে খাইতে চাইল না,
জানতে চাইলো আমি খেয়েছি কি না, আমি খাইনি শুনে সে আমাকে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলল।
আপনি না খেয়ে থাকবেন আর আমি খাবো তা হবেনা, যদি আপনি খান তাহলে আমিও খাবো।
আমার কথায় হাসিব রাজী হলো খেতে, খাওয়া শেষে বলল, আমাকে রুমে গিয়ে ঘুমাতে, সে ড্রয়িং রুমে বিছানা করে থাকবে।
আমি থাকব খাটে আপনি থাকবেন ফ্লোরে সেটা কি করে হয়, আপনি খাটে ঘুমান আমি নিচে বিছানা করে থাকব।

হাসিব অবাক হয়ে বলল, আপনি ড্রয়িংরুমে থাকবেন বলেন কি, শয়তানটা একা পেয়ে আবার কি না কি করতে চাইবে।
আরে আমি ড্রয়িংরুমে থাকতে চাইনি,আপনার রুমেই থাকব, আপনি খাটে ঘুমাবেন আর আমি ফ্লোরে।
হাসিব রাজী হলো না, আমাকে জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে হাসিব ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়ল।

আমার ঘুম আসছে না, ভাবছি পৃথিবীতে কত ধরনের মানুষ আছে, কেউ ভালো কেউ খারাপ।
খারাপ মানুষের সংখ্যাই বেশী, ভালোর সংখ্যা হাতে গোনা, তবে আমার সৌভাগ্য তেমন একজন মানুষের দেখা পেয়েছি।

চলবে,,,

সাদমান হাসিব সাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here