ভালবাসার প্রহর পর্ব ২৫+২৬

#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২৫

কেবিনে নার্স নিতু ইঞ্জেকশন রেডি করছে।মাঝে মাঝে জ্ঞান হারা জেরিনকে দেখছে।বেডে অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে সে।মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।হার্টবিট রেট শুনা যাচ্ছে নিরব কেবিনে।কিছু সময় আগে নাজমুন বেগম এবং জসীম সাহেব মেয়েকে দেখে গেলেন।নার্স নিতু অপেক্ষায় আছে কখন বাইরে থাকা অস্থির হওয়া মানুষটা আসবে কেবিনে।ছোট্ট করে নিশ্বাস ছাড়লো নিতু।অতি সাবধানে জেরিনের শরীরে ইঞ্জেকশন পুস করে।কাচের দরজায় শব্দ পরতেই নিতু কিছুটা ব্যস্ত হয়ে তাকায়।জেনো এই শব্দের আশায় ছিল এতো সময়।রক্তে মাখা সাদা শার্ট পরিহিত স্পর্শ প্রবেশ করে।নম্র গলায় বলে,

—-“আমি কী আসতে পারি?”

—-“অবশ্যই স্যার প্লিজ আসুন!”

নিতু অনেকটা উত্তেজিত হয়েউ বলে।স্পর্শ ধির পায়ে বেডের পাশে থাকা চেয়ারে বসে।এক মনে জেরিনের দিকে চেয়ে রইল অনেকটা সময়।জেরিনের ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বুকের সাথে।মৃদু বেকুলতা নিয়ে নিতুকে বলে,

—-“ও তাকাচ্ছে না কেনো?”

নিতু হাল্কা হেসে বলে,

—-“ইঞ্জেকশন দিয়েছি স্যার, জ্ঞান ফিরবে দ্রুত।”

স্পর্শ জেরিনের হাতটা গালে ছোঁয়াল।ধরা গলায় বলে,

—-“জানো জেরিন, খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।তুমি চোখ খুলবে কখন? অনেক ভালবাসি তোমাকে।এই দুমাস কীভাবে পার হয়েছে আমি জানি না।সবাই কে ছেড়ে তোমাকে নিয়ে পরে আছি।জানি না বাড়ি ফিরে কীভাবে থাকবো আমি!তুমি যে আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছো।আজ একটা মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি হারিয়ে ফেলবো সব।তোমাকে ছাড়া সব অন্ধকার লাগছে। প্লিজ তাকাও না একবার?”

স্পর্শের চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি জেরিনের হাতে পরে।নার্স নিতু নিরব দর্শকের মতো দূর থেকে দেখছে ওদের।কী মায়া দুজনের মাঝে।দেখতে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে।পিটপিট করে ক্লান্ত দুচোখ খুলে তাকায় জেরিন।ধির নিচুস্বরে বলে,

—-“স্পর্শ! ”

অক্সিজেন মাস্কের জন্য অস্পষ্ট শুনায়।স্পর্শ চোখ তুলে জেরিনের আদো খোলা চাহনি দেখতে পায়।অস্থির হয়ে স্পর্শ বলে,

—-“জেরিন? তুমি চোখ খুলেছো?নার্স ও আমাকে ডেকেছে দেখুন।”

নার্স নিতু হেসে দিলো।জেরিন ক্লান্ত কন্ঠে বলে,

—-“হ্যাপি বার্থডে মি.হ্যাসবেন্ড! ”

স্পর্শ অশ্রু চোখে জেরিনের কপালে চুমু খায়।দুহাতে জেরিনের হাত ধরে বলে,

—-“এই অবস্থায় আমাকে উইশ করছো?তোমার কষ্ট হচ্ছে জেরিন?কোথায় খারাপ লাগছে আমাকে বলো?”

জেরিন সেলাইন দেওয়া হাতে মুখ থেকে মাস্ক খুলে দিলো।স্পর্শ বাধা দিলে জেরিন বলে,

—-“আমি ঠিক আছি স্পর্শ। তোমার গায়ে রক্ত?”

স্পর্শ শার্ট এর দিকে তাকায়।জেরিনের গালে হাত রেখে বলে,

—-“তেমন কিছু না। এখন কেমন লাগছে তোমার?”

জেরিন নিচুস্বরে বলে,

—-“তুমি পাশে আছো, ভালো না থেকে যাবো কোথায়?”

স্পর্শ মাথা নুইয়ে হেসে দিলো।নার্স নিতু এসে জেরিনের পালস চেক করে মৃদু গলায় বলে,

—-“স্যার খুব ভেঙে পরেছিল আপনার জন্য।ওপর ওয়ালার ইশারায় আপনি চোখ মেলেছেন।আমি এখনি ডাক্তার কে ডাকছি।”

নিতু কেবিন থেকে চলে যায়।জেরিন স্পর্শের মলিন মুখে স্বস্তির আভাস দেখে হাসার চেষ্টা করল।ডান হাতটা স্পর্শের চুলে বুলিয়ে বলে,

—-“না খেয়ে আছো তাই না?কিছু খেয়ে আসো।”

স্পর্শ শিতল চাহনি দিয়ে জেরিনের হাত শক্ত করে ধরে বলে,

—-“তোমাকে রেখে কীভাবে খাবো আমি?আগে তুমি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলো।”

জেরিন হেসে দিলো।স্পর্শ আনন্দিত গলায় বলে,

—-“ভাইয়া আর বাবা এসেছে।ভাইয়া তোমাকে ব্লাড দিয়েছে জেরিন।বাবা আমাকে কী বলেছে জানো?”

জেরিন মৃদু হেসে বলে,

—-“কী বলেছে?”

—-“বলেছে, পাত্রি দেখতে মিষ্টি নিয়ে বাড়ি যেতে হয়।তোর জন্য এই প্রথম দেখলাম পাত্রি দেখতে অপারেশন থিয়েটারে যেতে হয়।”

জেরিন আর স্পর্শ কিছুটা শব্দ করে হেসে দিলো।ডাক্তার কেবিনে প্রবেশ করে সেই দৃশ্য দেখে বেশ উৎফুল্ল গলায় বলে,

—-“আরে বাহ!প্যাসেন্ট দেখি হাসছে।”

স্পর্শ উঠে দাঁড়ায়।ডাক্তার জেরিন কে চেকাপ করে হেসে বলে,

—-“ম্যাডাম তো দেখছি এখন বিপদমুক্ত। ”

স্পর্শ স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।জেরিন ধির কন্ঠে বলে,

—-“বিপদমুক্ত না হলে যে এই মানুষটা মরে যেতো।”

স্পর্শ কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলে,

—-“তেমন কিছুই না ডাক্তার।”

ডাক্তার হেসে বলেন,

—-“আজকে সবাই দেখেছে স্যার।ম্যাডামের জন্য কীভাবে অস্থির ছিলেন আপনি।”

স্পর্শ অপ্রস্তুত লজ্জায় পরে গেলো।জেরিন অপলক স্পর্শের দিকে চেয়ে আছে।ডাক্তার কিছু মেডিসিন লিখে চলে যান।ঘড়িতে রাত ৩:২০ হবে। জেরিনের হাত শক্ত করে ধরে চেয়ারে বসে জেরিনের হাতের কাছে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে স্পর্শ। জেরিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে নিজের চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারেনি সে।জেরিন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।পরম যত্নে তার প্রিয় মানুষটা হাত ধরে আছে।এই দৃশ্য জেনো বেধে রাখার মতো।

.
.
.
.
সকাল ৮:২০ বাজে ঘড়িতে। চারপাশে ব্যস্ত পরিবেশ মেতে উঠেছে।ডাক্তার জেরিন কে চেকাপ করছে।নার্স নিতু মাথার ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে দিয়েছে মাত্র।স্পর্শ ক্লান্ত মুখে জেরিনের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ডাক্তার শান্ত গলায় বলেন,

—-“এখন কিছুটা ভালো আছে উনি।কয়েক দিন পর বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।”

স্পর্শ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে,

—-“ধন্যবাদ ডাক্তার!আগে আল্লাহ তার পর আপনার উপর ভরসা।ওর কিছু হলে সত্যি…! ”

ডাক্তার স্পর্শের অবস্থা বুঝতে পারছে।হেসে ডাক্তার চলে যায়।নার্স খালি পেটের কিছু ওষুধ খাবিয়ে দিলো।ব্যস্ত পায়ে কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে নাজমুন বেগম,জসীম সাহেব,সেলিনা এবং হাসান।নার্স স্পর্শকে কিছু ওষুধ বুঝিয়ে দিচ্ছিল।হাসান কে দেখে মুখটা বাকিয়ে নিলেন তিনি।স্পর্শ একবার সবার দিকে তাকিয়ে নার্সের কথায় মন দেয়।জেরিন মা আর বাবা কে দেখে খুশি হলেও হাসান কে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।নাজমুন বেগম অস্থির হয়ে বলেন,

—-“কেমন আছিস মা?কষ্ট হচ্ছে খুব তাই না?”

জসীম সাহেব কপালে হাত বুলিয়ে বলেন,

—-“কোথাও ব্যথা হচ্ছে মা?”

সেলিনা শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করেন,

—-“স্পর্শের সাথে কথা বলেছিস? ”

সেলিনার প্রশ্নে নাজমুন বেগম একটু অবাক হলেন।জেরিন হাসার চেষ্টা করে বলে,

—-“হ্যা মামি,চোখ খুলে দেখি কাঁদছে। উনি না থাকলে ঘুমাতেই পারতাম না।”

নাজমুন বেগম স্পর্শের দিকে একবার তাকালেন।ক্লান্ত তবুও দায়িত্ব নিয়ে নার্সের সব কথা বুঝে নিচ্ছে সে।জেরিন মায়ের দিকে তাকিয়ে ধির কন্ঠে বলে,

—-“আমি ঠিক আছি আম্মু।আব্বু তোমরা ঠিক আছো?”

জসীম সাহেব হাসার চেষ্টা করে বলেন,

—-“খুব ভালো আছি আমরা।”

কেবিনে এসেছে প্রায় ১০ মিনিট হলো।হাসান একটি বার কথাও বলেনি এবং জিজ্ঞেস ও করেনি কেমন আছে জেরিন।নার্স দরজার কাছে যেয়ে পিছন ফিরে মনে পড়ে ভাব নিয়ে বলে,

—-“স্যার, একটু পর ম্যাডামের নাস্তা চলে আসবে। আপনার জন্য কী কিছু পাঠাবো?”

হাসান ভাব নিয়ে বলে,

—-“আমি খেয়ে এসছি। আর প্যাসেন্টের কিছু লাগলে জানাবেন।”

নিতু হেসে বলে,

—-“সরি আপনাকে বলছি না, আমি স্যার কে বলছি।”

হাসানের পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শ। স্পর্শ নম্রভাবে হেসে বলে,

—-“ধন্যবাদ আপনাকে! নাস্তার সাথে একটু লেবু পাঠাবেন প্লিজ।”

—-“সিওর স্যার!”

নিতু চলে যায়।হাসান চরম অপমানিত বোদ করে।জেরিন মুখ টিপে হাসে।স্পর্শ জেরিনের হাসি দেখে নিজেও একটু হাসল।সেলিনা জিজ্ঞাসু চাহনিতে বলেন,

—-“লেবু কেনো বাবা?”

স্পর্শ জেরিনের দিকে স্তির চাহনি রেখে বলে,

—-“আসলে জেরিনের একটু বমি বমি লাগছে তাই।আর হসপিটালে লেবু খেলে ওর আঘাতের জন্য ভালো হবে।”

জেরিন চোখ পাকিয়ে তাকালো। স্পর্শ ভ্রু নাচিয়ে হাসল।রাতে জেরিন কে ঘুম পারানোর সময় হঠাৎ জেরিন বলে,

—-“আমার কেমন জানি লাগছে।মনে হচ্ছে বমি হবে।”

স্পর্শ বেশ রসিকতা করে বলে,

—-“বাহ জেরিন মাত্র ১৫ দিনেই আমাকে বাবা করে দিলে?”

জেরিন অবিশ্বাস্য চাহনিতে বলে,

—-“স্পর্শ! ”

স্পর্শ হেসে বলে,

—-“ওহ তাহলে আমাকে বাবা ডাক শুনতে দিবে না?”

জেরিন মৃদু লজ্জা পেয়ে স্পর্শ থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,

—-“তুমি খুব বাজে! ”

সেই কথার তালেই লেবু আনতে বলে স্পর্শ। জেরিন সেলিনা কে জোর গলায় বলে,

—-“মামি ওর কথা শুনবে না তো।সব বাজে কথা!”
#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২৬

হসপিটালের দম বন্ধকর পরিবেশে হাসছে জেরিন।কিন্তু কেনো এই হাসি?স্পর্শ ঠিক ধরতে পারছে না কারণ! হাসান সকালে নাজমুন বেগমের কাছে বিচার দিয়েছিল, জেরিন তার সাথে কথা বলছে না।অদ্ভুত ভাবে হেসে নাজমুন বেগম বলেন,”তুমি কী একবার ও খোজ নিয়েছো মেয়েটার?অবশ্যই তুমি এসেছো ফোনে কথা বলতে আর হাসতে।” এমন উত্তরে হাসান বেশ ক্ষিপ্ত হলো।জেরিন অন্য দিক মুখ করে হেসেছিল তখন।স্পর্শ বাইরে গেছিল নাস্তা আনতে সবার জন্য।ফিরে এসে হাসান কে পেলো না।স্পর্শ অতি নম্রভাবে জসীম সাহেব কে বলেন,

—-“বাবা সারারাত না খেয়ে ছিলেন এখন কিছু খেয়ে নিন।”

নাস্তার প্যাকেট খুব সাবধানে নাজমুন বেগমের হাতে ধরিয়ে দিলো সে।নাজমুন বেগম অপ্রস্তুত হয়ে সেলিনা কে দিলেন।এমন অবস্থায় কারো খাওয়া গলা দিয়ে নামার কথা না তবে,স্পর্শের এতো যত্ন মেয়ের প্রতি দেখে নিশ্চিন্তে খেলো সবাই।খাওয়া শেষ হতেই জেরিন বলে,

—-“আমি পানি খাবো।”

স্পরে খুব যত্ন করে পানি খাবিয়ে দিলো।যেই ছেলেটা একটু বসলো জেরিন আবারো বাচ্চাদের মতো বলে,

—-“আমি জুস খাবো।”

স্পর্শ সেটাও দিলো।একটু পর আবার আবদার ধরলো।এভাবে কিছু সময় পর স্পর্শের সন্দেহের চোখে তাকালো।দাতে দাত চেপে বলে,

—-“জেরিন এসব কেনো করছো শুনি?”

জেরিন এক গাল হাসি দিয়ে বলে,

—-“তোমার সেবা নিতে বেশ মজা লাগছে।”

স্পর্শ প্রথমে অবাক পরে অপ্রস্তুত হেসে দিলো।এই অবস্থায় মেয়েটা বলে কী এসব?সেলিনা মুখ চেপে হেসে বলেন,

—-“তুমি কাল থেকে কিছু খাওনি বাবা।বাসায় যাও ফ্রেশ হয়ে আবার এসো।আমরা তো আছি এখান।”

—-“থেকে কী হবে? আমরা ছেলের মতো যত্ন করতে পারবেন?”

কাচের দরজা ঠেলে ফর্মাল পোশাকে আশরাফ মেহরাব এবং শুভ প্রবেশ করে।হাতে খাবারের বেশ বড় বক্স।সবাই দরজায় মনোযোগ দিলো।স্পর্শ বাবা কে দেখে হাল্কা হাসলো।জেরিন আশরাফ মেহরাব কে দেখেছে তবে শুভকে এই প্রথম দেখলো।আশরাফ মেহরাব সবাইকে সালাম দিয়ে সোজা জেরিনের বেডের পাশে এলো।জেরিন আধশোয়া হয়ে সালাম দিয়ে হাসে।শুভ জেরিনের মাথার কাছে স্পর্শের পাশে দাঁড়িয়ে আদুরে গলায় বলে,

—-“কেমন আছো বোন?”

জেরিন শুভর এতো আদুরে গলা পেয়ে বেশ আনন্দিত হলো।শান্ত ভাবে হেসে বলে,

—-“বেশ ভালো আছি ভাইয়া।শুভ মেহরাবের ব্লাড যে পেয়েছি আমি।”

শুভ কিছুটা অবাক হয়ে হেসে দিলো।আশরাফ মেহরাব শান্ত গলায় বলেন,

—-“এখন কেমন লাগছে তোমার?”

জেরিন নম্রভাবে বলে,

—-“ভালো লাগছে।”

আশরাফ মেহরাব মৃদু হেসে জেরিনের মাথায় হাত রাখেন।জসীম সাহেব হাসার চেষ্টা করে বলেন,

—-“ভাবিকেও নিয়ে আসতেন। ”

শুভ সচ্ছল গলায় বলে,

—-“মা জেরিনের জন্য খাবার পাঠিয়েছে।আর স্পর্শকে একবার যেতে বলেছে।আমি জানি ও যাবে না তাই মা কে বলেছি এখানে আসতে।বিকেলে আসবে মা।এখন অফিসে যাবে। ”

নাজমুন বেগম একটু চমকালেন।এতো এক্টিভ সবাই।এই বাড়িতে বউ হলো কীভাবে জেরিন?সবাই কতো মিশুক।আর হাসানের বাড়ি থেকে কেউ এখনো এলো না।আশরাফ মেহরাব নাজমুন বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

—-“আপনি কী কোনো কারণে রেগে আছেন? ”

নাজমুন বেগম কিছুটা থতমত খেয়ে বলেন,

—-“নাতো ভাই সাহেব।”

শুভ ভ্রু কুঁচকে বলে,

—-“আন্টি মনে হয় আমার ভাইটাকে মেনে নিচ্ছে না।”

নাজমুন বেগমের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে।নাজমুন বেগম হাসার চেষ্টা করে বলেন,

—-“সেটা কেনো হবে, তোমার ভাইকে তো আমরা সবাই পছন্দ করি।”

শুভ শব্দ করে হেসে দিলো।স্পর্শ শুভকে ফিসফিস করে বলে,

—-“ভাইয়া এই মহিলা সাংঘাতিক। বাসায় গেলে মেয়েটার উপর বোম মারবে।”

শুভ নিচুস্বরে বলে,

—-“আজ মা আসলে বিয়ের কথা পাকা করেই ছাড়বো।”

সেলিনা বেশ আগ্রহ নিয়ে বলেন,

—-“দুই ভাই কী এমন ফিসফিস করছে হ্যা?”

স্পর্শ হাসার চেষ্টা করে বলে,

—-“তেমন কিছু না মামি।”

আশরাফ মেহরাব জেরিনকে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলেন,

—-“শুনো তোমাকে সেদিন কেবিনে যা বলেছি মনে আছে?”

জেরিন হাল্কা হেসে বলে,

—-“মনে আছে! ”

—-“ছেলেটাকে সেভাবেই ধরে রেখো।”

জেরিন লজ্জিত হাসি দিলো।কিছুটা সময় সবাই গল্প করে। আশরাফ মেহরাব শুভকে নিয়ে চলে যায়।শুভ যাওয়ার আগে চলে জেরিন কে জেনো মায়ের পাঠানো খাবার খাবিয়ে দেয়।

______________________________

—-“আমি তো ভাবতেই পারছি না এতো কিছু হয়ে গেছে।”

হিমুর কথায় জেরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল।একটু আগেই সে বন্ধু মহলের সাথে জেরিন কে দেখতে আসে।শাওন,সাদিয়া,নিলয়,রাফি,সাকিব সবাই সকালে দেখে গেছে একবার।একটু আগে হিমু আর প্রলয় কে নিয়ে এসেছে সবাই।প্রলয় বেশ অবিশ্বাস্য গলায় বলে,

—-“স্পর্শ বিয়ে ও করতে পারে?আল্লাহ!”

স্পর্শ পাশ থেকে গম্ভীর গলায় বলে,

—-“একটু বেশি এক্টিং করে ফেলছিস তুই।”

জেরিন হেসে বলে,

—-“ভূল বলেছে নাকি?বাবা ও তো বলেছে, আমার ছেলে বেলিফুল ও দিতে পারবে বলে জানতাম আমরা।”

স্পর্শ মাথা নিচু করে হেসে বলে,

—-“আর কত লজ্জা দিবে তুমি?”

সবাই হেসে উঠে।হিমু উদ্বেগি গলায় বলে,

—-“ভাইয়া আপনি এবার আমাদের বাসায় যান।ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট করে আসুন।আমরা এখানেই আছি।”

স্পর্শ শক্ত ভাবে বলে,

—-“প্রয়োজন নেই।”

জেরিন জোর গলায় বলে,

—-“আজকে আপনার জন্মদিন আর এভাবে ঘুরবেন?পরে সবাই বলবে আমার হ্যাসবেন্ড স্মার্ট না।”

প্রলয় সম্মতি দিয়ে বলে,

—-“বন্ধু তুই তো এমন ছিলি না।”

জেরিনের কথায় স্পর্শ বলে,

—-“ফাইন আমি যাচ্ছি!জেরিন বলাতে যাচ্ছি বুঝলি?একটু পরেই চলে আসবো।”

প্রলয় ফোড়ণ কেটে বলে,

—-“আমরা জানি তবে কেউ আটকে রাখতে পারবে না।”

স্পর্শ কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

—-“পরে দেখে নিবো তোদের।”

জেরিন পাত্তা না দিয়ে বলে,

—-“আমরা ও দেখে নিবো।”

স্পর্শ প্রলয়ের সাথে চলে যায়।সবাই হাসতে শুরু করে।রাফি কেবিনে থাকা সোফায় পা তুলে গিটারে সুর তুলে বলে,

—-“গান শুনবি? ”

জেরিন এবং বাকিরা সায় দিয়ে বলে,

—-“হ্যা শুনবো….!”

রাফি

পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আমি অন্য দিক
সবাই বলে করছো ভুল আর তোরা বলিস ঠিক
তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি
বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে?

শাওন

সুসম্পর্ক, দুঃসম্পর্ক, আত্মীয়, অনাত্মীয়, শ্ত্রু মিত্র
রক্ত সম্পর্কে কেউ বা দ্বিতীয়, সৎ অসৎ, সব দূরের কাছের
বৈধ অবৈধ, হাজারও এসব সম্পর্ক ভাঙ্গে, থাকে বন্ধুত্ব

তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি
বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে?

নিলয়

কিছু কথা যা যায় না বলা কাউকে
কিছু কাজ যা যায় না করা সহজে
কিছু আচরন মানে না কেউ সামনে
কিছু জায়গা যায় না যাওয়া চাইলেই
সবই হয় যদি তোরা থাকিস সেখানে

সবাই
বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে?

___________________________

বিকেলের প্রহর শুরু হয়েছে।বন্ধুরা বিদেয় নিয়েছে মাত্র।স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে নীল রঙের শার্ট পরে পরিপাটি হয়ে এসেছে।সেই কখন থেকে জেরিন কে হাতের ঝলক দেখাচ্ছে।বার বার ডান হাত জেরিনের চোখের সামনে নাড়াচ্ছে।জেরিন কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বলে,

—-“তোমার হাত সুন্দর জানি কিন্তু এমন করছো কেনো?”

স্পর্শ বোকার মতো হাসি দিলো।হেসে বলে,

—-“তুমি কিছু লক্ষ্য করছো জেরিন? কাল থেকে আমাকে তুমি করে বলছো।”

জেরিন কিছুটা লজ্জা নিয়ে বলে,

—-“তুমিও আমার দেওয়া ঘড়ি পরেছো দেখাতে হাত নাড়ছো।”

স্পর্শ ও লজ্জা পেলো এবার।মাথা তুলে হেসে বলে,

—-“সত্যি ঘড়িটা অসম্ভব সুন্দর। আমি কখনো পাল্টাবো না এটা।”

জেরিন খুশি হয়ে বলে,

—-“সত্যি?”

—-“হুম!”

দুজনেই চুপ করে রইল।কিছুটা সময় পর জেরিন নিচুস্বরে বলে,

—-“আমি যদি মরে যেতাম?”

স্পর্শ দ্রুত জেরিনকে জড়িয়ে ধরে।ভয়াক্ত গলায় বলে,

—-“বাজে কথা একদম বলবে না।”

দরজায় শব্দ করে মধ্য বয়সী মহিলার গম্ভীর কন্ঠভেসে আসে,

—-“আসতে পারি?”

স্পর্শ জেরিন কে ছেড়ে দরজায় তাকিয়ে একটু থমকে যায়।পর-মুহূর্তে হেসে বলে,

—-“মা তুমি এখানে?”

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here