ভালবাসার রংধনু পর্ব ৩

#ভালবাসার_রংধনু
#পর্ব_৩
#Baishakhi_Fariba

আমান স্যারের উপর অনেক রাগ উঠছে আমার।

আমিঃ আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে ছোঁয়ার?আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না আর কখনো মানবোও না।আমার থেকে দূরে থাকবেন আপনি।আপনি কি আমাকে সত্যিই ভালবাসেন নাকি আমার শরীর…

আর বলতে পারলাম না আমি।আমান স্যার আমার মুখ শক্ত করে চেপে ধরে।আমার কথা শুনে খুব রেগে গেছে সেটা বুঝতে পারছি।

আমানঃ তুমি আমাকে কি মনে করো?আমার ভালবাসাটাকে অবিশ্বাস করবে না নিহারিকা।তোমাকে আমি ভালবাসি নাকি না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।একটা কথা শুনে রাখো তোমার অনুমতি ব্যতীত তোমাকে আমি নিজের করে নেবো না।তুমি একদিন আমাকে ঠিক ভালবাসবে আর এটা আমার বিশ্বাস।

আমিঃ সে গুড়ে বালি..বলে ঘরে চলে এলাম।খাটে গিয়ে শুয়ে পরলাম।আমান স্যারও এলেন।

ঘরে এসে দেখলাম টেবিলে খাবারের প্লেট রাখা।খুব ক্ষিধে পেয়েছে আমার।সারাদিন কিছু খাইনি।আমান স্যার খাবারের প্লেটটা নিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন।খাবারের প্লেটটা আমার দিকে দিলেন।

আমানঃ নিহু খাবারটা খেয়ে নাও।

আমিঃ খাবো না আমি।ক্ষিধে নেই আমার। (রাগ করে বললাম)

আমান স্যার এসে আমাকে জোর করে শুয়া থেকে তুলে বসালেন।খাবারের প্লেটটা হাতে দিয়ে বললেন খেয়ে নিতে।আমিও বলে দিলাম যে খাবো না।তারপর উনি জোর করে আমার মুখে খাবার দিয়ে দিলেন।আমি মুখ থেকে খাবার ফেলে দিলাম।তারপর উনি যা করলেন তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।উনি উনার ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট দুটো স্পর্শ করলেন।

আমিঃঠাসসস…

স্যারের গালে থাপ্পড় মারলাম আমি।স্যার গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

আমিঃ খুব তো তখন বলেছিলেন আমার অনুমতি না নিয়ে আমাকে আপনি…

আমাকে থামিয়ে দিয়ে স্যার বললেন,

আমানঃ আমি তোমাকে বলেছি তোমার অনুমতি না নিয়ে তোমাকে আমি নিজের করে নিবো না।আমি এটা বলিনি যে তোমাকে আমি স্পর্শ করতে পারবো না।তুমি আমার বউ তাই তোমাকে আমি যখন খুশি তখন কিস করতে পারি।আর হ্যাঁ তোমার উপর এরকম অত্যাচার যখন তখন হতে পারে।সো বি রেডি নিহুপাখি।এখন ভালো মেয়ের মতো খাবারটা খেয়ে নাও। সারাদিন কিছুই খাওনি তুমি।নয়তো তোমার উপর আবার এরকম অত্যাচার শুরু হয়ে যাবে।

আমিঃ আমার কাছে দিন।আমার হাত আছে।নিজের হাত দিয়ে খেয়ে নিতে পারবো।আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।

আমানঃ যখন খেতে বলেছিলাম তখন তো খেলে না।এখন আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।তোমাকে খাইয়ে দিতে আমার কোনো কষ্ট হবে না।আর কোনো কথা নয়।ভদ্র মেয়ের মতো খাও।

আমান স্যার আমাকে খাওয়াতে শুরু করলেন।স্যারকে বিশ্বাস নেই।যদি আবার ঠোঁট দুটো স্পর্শ করে আর পেটে খুব ক্ষিধে ছিল তাই আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিলাম।উনি আমাকে অনেক যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছিলেন। মা বাবা মারা যাওয়ার পর মামা এভাবে একদিন খাইয়ে দিয়েছিলেন।তাও মামি দেখে ফেলেছিল।তারপর আর মামাকে আমায় খাওয়াতে দেয় নি।আজ আমান স্যার আমাকে যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে।

“তুমি কি আমাকে কখনো ভালবাসবে না নিহুপাখি?আরাফকে নয়।তুমি আমানকে ভালবাসবে।আমি আজকে সারাদিনে কিছুই খাইনি নিহুপাখি।তুমি তো একবারও আমাকে খেতে বলছ না।”(আমান মনে মনে বলল)

উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি কিছুই খায়নি।একবার কি জিজ্ঞাসা করবো? না দরকার নেই।উনি খেলো নাকি খেলো না তাতে আমার কি।আমাকে খাইয়ে দিয়ে আমান স্যার প্লেট নিয়ে চলে গেলেন। একবার জিজ্ঞাসা করতে মন চাইলো উনি খেয়েছেন নাকি।কিন্তু জিজ্ঞাসা করলাম না।আমি শুয়ে পরলাম।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১টা বাজে।আজকে তো রেডিওতে আমার সো ছিল।”ভালবাসার রংধনু”।প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই সো টা করতাম।আজকে করা হলো না।খুব মিস করছি।আমান স্যার হয়তো আমাকে এই সো টা করতে দেবে না।কারণ এখন তো তার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।এসব কথা ভাবছিলাম তখন আমান স্যার এলো।মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে উনি কি আমার সাথে এক বিছানায় শুবে নাকি।আমার ভাবনার মাঝেই উনি বলে উঠলেন,

আমানঃ নিহু তুমি খাটে ঘুমিয়ে পরো আমি সোফায় শুয়ে পরছি।

আমি আর কিছুই বললাম না।ভালোই হয়েছে উনি আমাকে বলেছেন।নয়তো আমি নিজেই বলতাম।তারপর ঘুমিয়ে পরলাম।

আমান বারান্দায় চলে যায়। নিহু থাপ্পড় মারায় অনেক কষ্ট পায় আমান।নিহুর কথা ভাবতে থাকে।

“তুমি আমাকে যতই থাপ্পড় মারো না কেন আমি কিছুই মনে করবো না।নিহুপাখি তুমি আরাফকে ভালোবাসতে পারো না।আরাফ তোমার যোগ্য না নিহু।আরাফের কারণে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।যে আরাফের কারণে তুমি একদিন মরতে বসেছিলে কেন আজও তাকে ভালবাসো নিহু। সেদিন যদি আরাফ তোমার সাথে মজা না করতো তাহলে আর কিছুই হতো না।সেদিনের ওই দূর্ঘটনার পরেও যদি আরাফ তোমাকে ছেড়ে না যেত তাহলে তুমি এতো কষ্টে থাকতে না।আরাফের কথা তোমাকে আমি আমার ভালবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবো নিহু।আরাফের থেকে বেশি ভালবাসবো তোমায় নিহুপাখি। আরাফ সেদিন তোমাকে সেভ করতে পারেনি তো কি হয়েছে।আমান তোমাকে সেভ করবে।কোনো আচ লাগতে দেবে না তোমার গায়ে।”

বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলল আমান।

সকালবেলা পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলেই আমান স্যারের মুখটা দেখলাম।ঘুমন্ত আমান স্যারকে দেখে বোঝা যায় না যে এই লোকের এতো রাগ।সোফায় অনেক কষ্টে শুয়ে আছে স্যার।এতটুকু সোফাতে তার মতো লম্বা মানুষের শুতে সমস্যা হবেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকাল পাঁচটা বাজে।মামা মামির কাছে থাকার সময় এই সময়ই ঘুম থেকে উঠতাম।বাড়ির কাজ করতে হতো।পিহুর কথা মনে পড়লো।বিছানা থেকে উঠে ওকে দেখতে ওর ঘরে চলে গেলাম।পিহু এখনো ঘুমিয়ে আছে।ওকে দেখে রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম আমান স্যার এখনো ঘুমাচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগলাম।

মুখে পানির স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় আমান।আমানের ঘুমটা ভেঙে যায়। আমান দেখলো নিহু গোসল করে এসেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছার কারণে ওর চুলের পানি আমানের মুখে পড়ে। নিহু একটা কালো রঙের শাড়ি পড়েছে। ভেজা চুলে নিহুকে আমানের কাছে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।আমান যে উঠে গেছে নিহু তা খেয়াল করেনি।আমান গিয়ে নিহুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

আমি নিজের কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম আমান স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার চুলে নিজের নাক ডুবিয়ে দিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে।আমি অনেক ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি।

আমিঃ ছাড়ুন আমাকে।

আমানঃ নিহুপাখি একটু সোজা হয়ে দাঁড়াও।

আমিঃ উফফফ… ছাড়ুন আমাকে।হাতির মতো বডি বানিয়েছে।

আমানঃ কি বললে তুমি?আমার বডি হাতির মতো?

আমিঃ হুম আপনার বডি হাতির মতোই।ধাক্কা দিলেও তো সরানো যায় না আপনাকে।

আমানঃতুমি জানো আমার বডি দেখলে কত মেয়ে ক্রাশ খাবে।আমাকে বিয়ে করার জন্য আমার পিছনে পড়ে থাকে মেয়েরা।

আমিঃ তাহলে তাদেরই বিয়ে করতেন।আমাকে করতে গেলেন কেন?

আমানঃ ভালবাসি নিহুপাখি। তাই তোমায় বিয়ে করেছি।

উনি যখনই আমাকে ভালবাসি বলে আমার বুকের মধ্যে ধুকধুক করে।কেন এমন হয়?আরাফ যখন আমাকে ভালবাসি বলত তখন আমার এরকম ফিলিং হতো।

আমানঃ এরপর থেকে আমার বডিকে হাতির মতো বলবে না নিহু।

আমিঃ হাজার বলবো। কি একটা বডি আপনার যে হাতির মতো বলা যাবে না।

আমানঃ তুমি আমার বডি দেখেছ যে এমন বলছ?ওয়েট তোমাকে দেখাই।

বলেই আমান স্যার নিজের শার্ট খুলতে শুরু করলেন।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here