ভালবাসার রংধনু পর্ব ২

#ভালবাসার_রংধনু
#পর্ব_২
#Baishakhi_Fariba

আমান স্যার আমার দিকে একবার তাকিয়ে কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন ফ্রেশ হতে।আমার চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে।চোখ থেকে একফোঁটা পানি পড়ছে না।হয়তো কান্না করতে পারলে একটু শান্তি পেতাম।উনি ফ্রেশ হয়ে আসলেন।উনি বের হয়ে আসতেই আমি তার কলার ধরে বললাম,

আমিঃ আমার বোন কোথায় বলুন?ওর কোনো ক্ষতি করেননি তো আপনি?কি হলো বলছেন না কেন?ছিঃ…আপনি এতটা নিচে নামতে পারলেন কিভাবে?একটা বাচ্চা মেয়েকে ব্যবহার করে বিয়ে করেছেন আপনি আমায়।

আমানঃ নিহু তোমার বোন একদম ঠিক আছে।ওর কোনো ক্ষতিই আমি করিনি।তুমি কি করে ভাবলে যে আমি ওর ক্ষতি করবো।

আমিঃ তা আমি নিজের কানেই শুনেছি।

আমানঃ নিজের কানের শুনা সব কথা বিশ্বাস করতে হয় না।তোমার বোন সুরক্ষিত আছে।

আমিঃ আমার বোনকে নিয়ে আসুন।আমি ওকে দেখবো।

আমানঃ তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি তোমাকে পিহুর কাছে নিয়ে যাচ্ছি।

আমিঃ না আমি এখনই যাবো।

আমানঃ আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না নিহু।যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।নয়তো পিহুর কাছে নিয়ে যাবো না তোমাকে।

আমিঃ এটাই আপনার আসল রূপ।পিহুর কোনো ক্ষতি করেছেন।তাই আপনি বাহানা দিচ্ছেন।

আমানঃ সাট আপ নিহারিকা(ধমক দিয়ে) কানের শোনা সবকিছু সবসময় সত্যি হয় না।গো নাউ।

আমিঃ কি পড়বো আমি? কোনো জামা তো আনিনি।

আমানঃ আলমারিতে দেখো অনেকগুলো শাড়ি রাখা আছে।ওইখান থেকে পড়ো।

আমি আলমারি খুলে দেখলাম আলমারি শাড়ি দিয়ে ভরা।আমি পুরোই অবাক।আচ্ছা আমি উনার দ্বিতীয় স্ত্রী নই তো।হতেও তো পারে উনি আগে একবার বিয়ে করেছিলেন।কিন্তু বয়স দেখেতো মনে হয় না।কিন্তু শাড়ি গুলো তো সব নতুন।ধুর আমি কি সব ভাবছি।উনি একটা বিয়ে করুক বা দশটা তাতে আমার কি।আমি একটা নীল রঙের শাড়ি নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

নিহু ফ্রেশ হতে যাওয়ার পর আমান বারান্দায় চলে যায়। মনে মনে বলতে থাকে,

“নিহুপাখি তুমি কি আমাকে কখনোই বুঝতে পারবে না?তোমার বোনকে ব্যবহার করে আমি তোমাকে বিয়ে করিনি।তুমি আসলেই বোকা।একবার সত্যিটা যাচাই করে নিলে না।যাই হোক আমার জন্য তোমাকে বিয়ে করা সহজ হয়েছে।আমার প্রতি তোমার ভুল ধারণা একদিন ভাঙবে।আমার বিশ্বাস তুমিও আমাকে একদিন ভালবাসবে।”

আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম।পিহুকে দেখার জন্য মনটা আনচান করছে।আমান পিছনে তাকিয়ে দেখলো নিহু বেরিয়ে এসেছে।নীল রঙের শাড়ি পড়ে তাকে একদম নীল পরি লাগছে।আমান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে নিহুর দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি দেখলাম আমান স্যার আমার দিকে অন্য রকম ভাবে তাকিয়ে আছে।তার তাকানো দেখে আমার আনকম্ফরটেবল লাগছে।

আমিঃ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?জীবনে কি মেয়ে দেখেননি?

আমানঃ মেয়ে তো অনেক দেখেছি কিন্তু পরি কখনো দেখিনি।আজকে পরিও দেখে নিলাম।

আমিঃ দেখুন আপনি কিন্তু…

আমানঃ আমি কি?

আমিঃ কিছু না।পিহুর কাছে নিয়ে চলুন আমাকে।

আমানঃ আচ্ছা আসো।

আমান স্যার আমাকে নিচের একটা ঘরে নিয়ে গেলো।পিহুকে দেখলাম আমি।পিহু আমাকে দেখে দৌঁড়ে এলো।জড়িয়ে ধরলাম ওকে।

আমিঃ পিহু তুই ঠিক আছিস তো?কিছু হয়নি তো তোর?আমান স্যার কোনো ক্ষতি করেনি তো?

পিহুঃ আপু ভাইয়া আমার কোনো ক্ষতি করে নি।আমি একদম ঠিক আছি।

আমিঃ তুই খেয়েছিস কিছু?

পিহুঃ হুম।আপু জানো ভাইয়া আমাকে অনেক ভালো ভালো খাবার খেতে দিয়েছে।আমি তো আগে এমন ভালো খাবার খাইনি আর খেলেও আমার মনে নেই।জানো আপু ভাইয়া আমাকে এত্তগুলা চকলেট দিয়েছে।

পিহুর কথাগুলো শুনে আমান স্যারের দিকে তাকালাম।পিহুর কথা শুনে মন বলছে যে উনি ভালো কিন্তু তাহলে আমাকে এভাবে জোর করে বিয়ে করলেন কেন?

আমানঃ দেখলে তো আমি বলেছিলাম তোমার বোনের কোনো ক্ষতি করিনি।

আমিঃ করেন নি।কিন্তু আমি বিয়েটা না করলে করতেন।পিহু আয় তোকে ঘুম পাড়িয়ে দেই।

আমান স্যারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পিহুকে নিয়ে ঘরে চলে গেলাম।পিহুকে বুকে নিয়ে শুয়ে পরলাম।পিহুকে ঘুম পাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম।মামা মামির কথা ভাবছি।ওখানে কি হচ্ছে কিছুই জানতে পারছি না।মামি হয়তো আমাকে খুব খুঁজেছে।মামা হয়তো খুব খুশি হয়েছে আমার বিয়েটা না হওয়ায়।চোখ বন্ধ করে এসব কথা ভাবছিলাম।হঠাৎ মনে হলো আমি শূন্যে ভাসছি।চোখ মেলে দেখি আমান স্যার আমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছেন।

আমিঃ আমাকে কোলে নিয়েছেন কেন আপনি?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?নামান আমাকে এক্ষুনি।

আমানঃ নিহুপাখি কাম ডাউন।সেই বিয়ে পড়ানোর আগে থেকে এখন পর্যন্ত তুমি আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করে ফেলেছ।আমি তোমাকে আমাদের ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।

আমিঃ আমি যাবো না আপনার সাথে।আমি পিহুর সাথে ঘুমাব।ছাড়ুন আপনি আমাকে।পিহু একা আছে।

আমি তাকে কিল আর চিমটি মারতে যাবো তার আগে উনি বললেন..

আমানঃ ভুলেও এবার কিল আর চিমটি মারার কথা ভেবো না।আগের বার তো মারলে।কিছু তো করতে পারনি।এইবারও পারবে না। পিহু যে একা ঘুমাতে পারে তা আমি জানি নিহুপাখি।তাও আমি রহিমা খালাকে বলেছি পিহুর রুমে ঘুমাতে।

আমিঃ আমি আপনাকে ভালবাসি না।কেন বিয়ে করলেন আপনি আমাকে?আমি আরাফকে ভালবাসি।

উনি আমার কথা শুনে কিছুই বললেন না।মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে অনেক রেগে গেছে।উনি আমাকে ঘরে নিয়ে এলেন।খাটে বসিয়ে দিলেন আমাকে।আমার মুখ চেপে ধরে বললেন..

“তোমার মুখে যেন আমি ছাড়া আর কোনো ছেলের নাম না শুনি।তুমি আমি বাদে আর কাউকে ভালবাসতে পারো না।তুমি শুধু আমার নিহুপাখি।”

কথাটি বলে আমার মুখটা ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলেন আর যেন ঘর এর বাইরে এক পাও না দেই,তাহলে খুব খারাপ হবে।এই লোককে বিশ্বাস নেই।তাই ঘরের বাইরে যাই নি।কান্না করতে লাগলাম।আরাফকে ছাড়া আমি আর কাউকেই ভালবাসতে পারবো না।উনার ঘরটা দেখতে লাগলাম।ঘরটা অনেক সুন্দর আর সাজানো গুছানো।বারান্দায় চলে গেলাম।বারান্দাটা বড় আর খুব সুন্দর।গোলাপ ফুলের গাছ লাগানো আছে।এখানে দাঁড়িয়ে থেকে মন কিছুটা ভালো লাগছে।

নিহু যখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল তখন আমান এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে আসে।রুমে এসে নিহুকে না দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।বারান্দায় গিয়ে দেখে নিহু সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।আমান যেন নিজের প্রাণ ফিরে পায়।

আমানঃ নিহুপাখি ঘরে এসো।

আমিঃ(এহ আসছে আমাকে হুকুম করে।আমি তোর কথা কেন শুনবো?)মনে মনে

আমানঃ কি হলো নিহুপাখি?

আমিঃ আমার নাম নিহারিকা নিহু।নিহুপাখি নয়।তাই আমাকে এসব অদ্ভুত নামে ডাকবেন না।

আমানঃ কেন নিহুপাখি?আচ্ছা একটা কথা বলো।আমি যখন তোমাকে নিহুপাখি বলে ডাকি তখন কি তোমার খারাপ লাগে?(আমার কানের কাছে উনার মুখ এনে বললেন)

উনি যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন উনার ঠোঁট আমার কানে লাগছিল।উনার স্পর্শে আমি শিউরে উঠলাম।উনার কথা শুনে বুকের মাঝে কেমন একটা করে উঠলো।সত্যি কথা বলতে আমান স্যার যখনই আমাকে নিহুপাখি বলে ডাকে তখন খুব ভালো লাগে।মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে।মনে হয় যেন আরাফ আমাকে নিহুপাখি বলে ডাকছে। কিন্তু এই কথাটা তাকে বললাম না।হঠাৎ করে উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমার অন্য রকম লাগছিল।আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার গলায় মুখ গুজে দিল।এখন তো আমার যায় যায় অবস্থা।উনি আমার এতো কাছে এই প্রথম।আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি।

উনাকে সরানোর মতো শক্তিটাও পাচ্ছি না।উনি আমার গলায় মুখ গুজেই বলতে শুরু করলেন…

আমানঃ নিহুপাখি বলো।আমি যখন তোমাকে ডাকি তখন কি তোমার খারাপ লাগে?

আমিঃ জানি না।

উনার কণ্ঠটা অন্যরকম লাগছিল।আরাফের কথা মনে পড়তেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার কাছ থেকে সরিয়ে দিলাম….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here