#ভালবাসার_রংধনু
#পর্ব_৬
#Baishakhi_Fariba
বিছানায় বসে আছি।ভাবছি কি করে সরি বলব।কথা কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।
আমান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো নিহু বিছানায় বসে কিছু ভাবছে।
আমানঃ নিহু তোমাকে না আমি ঘুমিয়ে পরতে বললাম।অনেক রাত হয়েছে।
আমিঃ আপনি খাবেন না?আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
আমানঃ আমি খাবো না।ক্লান্ত অনেক আমি।তুমি খেয়েছ?
আমিঃ না।খাই নি।
আমানঃ কেন?
আমিঃ আসলে আপনি আসতে দেরি করছিলেন তাই চিন্তা হচ্ছিল।
আমান শুনে খুব খুশি হলো।
আমানঃ যাও খেয়ে নাও।
আমিঃ আপনাকে কিছু বলার ছিল।
আমানঃ বলো নিহু।
আমিঃ সরি।তখন মানে আপনার খাবারে অনেক মরিচ দিয়ে দিয়েছিলাম।আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি খাবারটা খাবেন না।
আমানঃ আমার নিহুপাখি আমার জন্য প্রথম কিছু বানিয়ে এনেছে আর আমি তা খাবো না তা কখনোই হতে পারে না।নুডলস টা খুব মজা হয়েছিল।তাই খাচ্ছিলাম।
আমিঃ কিন্তু আমি তো অনেক ঝাল দিয়েছিলাম।আপনার খাওয়াটা উচিত হয়নি।
আমানঃ তুমি যদি বিষ মিশিয়েও দিতে তাও আমি খেতাম।
আমিঃ আমি জানি আপনি মুখে বলছেন রাগ করেন নি কিন্তু আপনি আমার উপর রাগ করে আছেন।এজন্যই আপনি আজকে দেরিতে বাসায় এসেছেন আর একবারও আমাকে কল দেন নি।
আমানঃ (নিহুর কপালে কিস দিয়ে) আমি তোমার উপর রাগ করিনি নিহুপাখি।আজ অনেক ব্যস্ত ছিলাম।আর তুমি হয়তো খেয়াল করোনি আমি ফোনটা বাসায় রেখে গেছি।
সত্যিই তো আমি তো একবারও খেয়াল করিনি।উনার কথা শুনেই আমি বুঝে গেছি যে উনি আমার উপর রেগে নেই।কারণ যখন উনি আমার উপর রাগ করে থাকেন তখন আমাকে নিহারিকা বলে ডাকেন।
আমানঃ যাও খাবার নিয়ে এসো।আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
আমি দুইজন এর জন্যই খাবার নিয়ে আসলাম।উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।কিন্তু নিজে খাচ্ছেন না।
আমিঃ আপনি খাচ্ছেন না কেন?
আমানঃ ক্লান্ত তো,তাই খেতে মন চাচ্ছে না।
আমি উনার কাছ থেকে প্লেট টা নিয়ে উনার মুখের সামনে খাবার ধরলাম।
আমান পুরো অবাক হয়ে গেছে নিহুর ব্যবহারে।আমানের শরীর ভালো নেই তাই খেতে চাই ছিলো না।কিন্তু নিহু নিজে তাকে খাইয়ে দিবে সেটা আমান মিস করতে চায় না।তাই সে নিহুর হাতে খেতে থাকলো।
আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনার চোখ অনেক লাল হয়ে আছে।উনাকে আমার প্রথম থেকেই অসুস্থ মনে হচ্ছিলো।উনাকে খাইয়ে দিয়ে আমি প্লেট রাখতে নিচে গেলাম।উপরে এসে দেখি উনি শুয়ে আছে।আমি উনার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম। আমার খটকা লাগলো।কেননা উনি আমাকে প্রতিদিন আমি না চাইতেও জড়িয়ে ধরেন।কিন্তু আজকে তা করলেন না।
আমিঃ আমান….শুনুন।
আমানঃ……….
আমিঃ এই যে, শুনুন…
আমানঃ….
আমিঃ (কি হলো উনার?শুয়েই ঘুমিয়ে গেলেন নাকি?) আমান……..(জোরে)
এবার আমান চোখ মেলে তাকালেন।
আমানঃ কিছু বলবে নিহু?
আমিঃ আপনি ঠিক আছেন তো?
আমানঃ হ্যাঁ…..(বলেই উনি আবার ঘুমিয়ে পরলেন)
আমি উনার কপালে হাত দিলাম।উনার কপালে হাত দিয়ে আমি আঁতকে উঠলাম।উনার গায়ে এতো পরিমাণ জ্বর যে হাত দেওয়াই যাচ্ছে না।গায়ে এতো জ্বর আর আমাকে একবারও বললেন না।উনি কাপছেন জ্বরে।কম্বলটা ভালো করে উনার শরীরে দিয়ে দিলাম।জলপট্টি দেওয়ার জন্য পানি নিয়ে আসলাম।উনার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু জ্বর কমার নামও নিচ্ছে না।
উনাকে ঔষধ খাইয়ে দিলাম।এখনো জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছি। উনার ফোনে কল আসলো।ফোন নিয়ে দেখলাম উনার বাবা কল দিয়েছে।
আমানের বাবাঃ আমান কেমন আছো? নিহু কেমন আছে?
আমিঃ আমি নিহু।
আমানের বাবাঃ নিহু কেমন আছো?
আমিঃ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
আমানের বাবাঃ আমিও ভালো আছি।আমান কোথায় নিহু?
আমিঃ উনার শরীর ভালো নেই।খুব জ্বর উনার।
আমানের বাবাঃ কখন জ্বর এসেছে?ডাক্তার দেখিয়েছ?
আমিঃ না।একটু আগে বুঝতে পেরেছি উনার জ্বর এসেছে।এতো রাতে ডাক্তার তো আসবে না।আমি মাথায় জলপট্টি দিয়েছি আর ঔষধ ও খাইয়ে দিয়েছি।
আমানের বাবাঃ ওর খেয়াল রেখো নিহু।আমান তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসে।জানি আমান তোমাকে জোর করে বিয়ে করে ঠিক করেনি।কিন্তু ওর মনটা খুব ভালো।
আমিঃ আমি ওনার খেয়াল রাখবো।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আমারও মনে হয় উনি আমাকে ভালবাসেন।কিন্তু উনার সাথে সাত দিন আমার দেখা হয়েছে।সাতদিনে কি ভালবাসা হয়ে যায়?
আমানের বাবাঃ কে বলেছে তোমাকে?আমান তো তোমাকে সেই ছোটোবেলা…..
আমিঃ ছোটোবেলা মানে???
আমানের বাবাঃ না না কিছু না।আমানের খেয়াল রেখো মা।আমি রাখছি। সকালে ফোন করবো আবার।
আমিঃ শুনুন,আমাকে বলুন।
আমানের বাবা তো ফোন কেটে দিল।উনি কি বলছিলেন? আমান আমাকে ছোটোবেলা থেকে ভালবাসে মানে কি? কিছুই বুঝতে পারছি না।মনে হলো উনার ফোনটা চেক করি।কিন্তু পাসওয়ার্ড তো আমি জানি না।প্রথমে উনার নাম লিখলাম,এইটা ভুল।পরেরবার নিহারিকা লিখলাম এইটাও ভুল।এইবার নিহুপাখি লিখলাম,ফোন খুলে গেছে।উনার ফোনে আমি যা দেখলাম তা দেখে আমি পুরো অবাক।
উনার ফোনের গ্যালারিতে আমার আর আরাফের ছোটো বেলার ছবি।তার মানে কি উনি আরাফকে চেনেন?সেখানে আরাফের বাবারও ছবি আছে।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। উনার ফোনের গ্যালারি ভরা আমার ছবি।আর সেখানে আরাফেরও ছবি আছে।যে মানুষটা আরাফের নামটাই শুনতে পারে না তার ফোনে আমার আর আরাফের ছবি কি করে থাকতে পারে? উনিই আমার আরাফ নন তো?যদি উনিই আমার আরাফ হন তাহলে এতোদিন কেন বলেননি? সব কিছু গোলমাল লাগছে।
আমান জ্বরে অনেক কাঁপছে।কাঁথাটা ভালো করে উনার শরীরে জড়িয়ে দিলাম।কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর এখনো কমেনি।উনার পাশে বসলাম। সারারাত জেগে উনার মাথায় জলপট্টি দিলাম।ভোর রাতের দিকে উনার জ্বর কিছুটা কমে এলো।তখন একটু শান্তি পেলাম।উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে উনার পাশেই ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে রোদের আলো চোখে পরতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল।আমান এখনো ঘুমিয়ে আছেন।উনার কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর এখন আর নেই।ঘুম থেকে উঠেই কালকের কথা গুলো মনে হতে লাগলো।আমাকে সত্যিটা যে করেই হোক জানতে হবে।এখানে কোনো রহস্য তো আছেই।আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে ভিজিয়ে উনার শরীরটা মুছে দিলাম।উনার শরীর মুছিয়ে দেওয়ার সময় উনার গলার বা পাশে পরপর দুটি তিল দেখলাম।আরাফের গলার বা পাশেও এরকম তিল ছিল।এখন আমার মনে হচ্ছে উনিই আমার আরাফ।কান্না করে দিলাম।আরাফ আমার এতো কাছে ছিল তাও আমি উনাকে চিনতে পারিনি।
আমার মনে এখন প্রশ্ন জাগছে যে উনি কেন আমাকে বললেন না যে উনিই আমার আরাফ?কেন আমাকে কষ্ট দিলেন উনি?কালকে উনার বাবা আমাকে বলতে নিয়েছিলেন যে আমাকে উনি ছোটো বেলা থেকেই ভালবাসেন।আর যদি উনি আমার আরাফ না হয়েই থাকেন তাহলে উনার ফোনে আমার আর আরফের ছবি কেন?আরো অনেক প্রশ্ন আছে আমার।উনার দিকে তাকালাম। সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছেন উনি।কালকে এতো অসুস্থ হওয়ার পরও আমাকে একবারও বলেন নি।বুঝতেও দেননি।
বারান্দায় চলে গেলাম।বাইরে পাখিরা ডাকছে।সূর্যের আলোয় চারদিক খুব সুন্দর লাগছে।আমাকে আরো সিউর হতে হবে।উনাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে সবকিছু। সত্যিটা আমি জানবোই।ফোনের শব্দ পেলাম।উনার বাবা কল দিয়েছেন।এটাই উপায়। উনার বাবাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।এখন উনিই আমাকে সত্যিটা বলতে পারেন।
চলবে……..