ভালবাসার রংধনু পর্ব ৫

#ভালবাসার_রংধনু
#পর্ব_৫
#Baishakhi_Fariba

নিচে গিয়ে আমি মামা উনি আর পিহু খেতে বসলাম।মামাকে বললাম থেকে যেতে কিন্তু মামা থাকবে না।নয়তো মামি কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে দিবে। মামাকে বিদায় দিয়ে রুমে চলে এলাম।

উনি সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছেন।

আমানঃ নিরুপাখি যাও রেডি হয়ে নাও।

আমি উনার কথা শুনে আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিলাম।আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে উনার আলমারিতে এতো শাড়ি কেন?

আমিঃ আচ্ছা আমাকে বিয়ে করার আগে কি আপনি আরেকটা বিয়ে করেছিলেন?

আমানঃ হোয়াট?????

আমিঃ না মানে আসলে আপনার আলমারি ভরা এতো শাড়ি,তাই আর কি জিজ্ঞাসা করলাম আমি।এতো শাড়ি তো কোনো দোকানেও থাকে না।h

আমানঃ তাই তুমি মনে করেছ যে আমি আগে আরেকটা বিয়ে করেছি।ইস্টুপিট গার্ল।আমার আলমারি ভরা এতো শাড়ি কেন সেটা সময় হলেই জানতে পারবে।যাও রেডি হয়ে এসো।

উনি আগে কোনো বিয়ে করেনি শুনে খুব ভালো লাগছে। আমি রেডি হয়ে এলাম।তারপর উনার সাথে অফিসে চলে গেলাম।সো টা শেষ করে বাসায় চলে এলাম।বিছানায় শুয়ে আছি আমি চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি ভয়ে চিৎকার দেই।আমান স্যার আমার মুখ চেপে ধরেন।

আমানঃ নিহুপাখি আমি।

আমিঃ আপনি বিছানায় কি করেন?আর কেউ অন্ধকারে এইভাবে হঠাৎ করে এসে জড়িয়ে ধরে নাকি?

আমানঃ সরি নিহুপাখি।আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে গিয়েছো।

আমিঃ মানে??? আমি ঘুমিয়ে গেলে আপনি এইগুলো করেন নাকি?

আমানঃ না,আজকেই করলাম।আর আজকে থেকে আমি তোমার সাথেই শুবো।

আমিঃ মানে কি? আমি আপনার সাথে এক বিছানায় শুবো না।

আমান আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার গলায় মুখ গুজে শুয়ে আছে।আমি উনাকে কিছু বলতেও পারছি না।উনার স্পর্শ আমার খুব চেনা চেনা লাগে।উনাকে সরানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু এই হাতির মতো বডি ওয়ালা মানুষকে সরাতেই পারলাম না।

আমানঃ নিহুপাখি ডোন্ট মুভ।এইটুকু শক্তি দিয়ে আমাকে সরাতে পারবে না।শুধু শুধু তোমার শক্তি খরচ হবে।চুপচাপ শুয়ে থাকো।

এভাবেই শুয়ে রইলাম।কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম উনি ঘুমিয়ে গেছে।উনাকে সরিয়ে দিতে গেলাম।উনি উল্টো আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।কি আর করার।এভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমান স্যারের বুকে আমি শুইয়ে আছি।আর উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমার খুব লজ্জা লাগছিলো। আমি উঠে যেতে নিলে উনি আমাকে টান দিয়ে নিজের উপর নিয়ে নেয়।

আমানঃ ঘুমানোর সময় দেখলাম আমি তোমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি।আর ঘুম থেকে উঠে দেখলাম তুমি আমার বুকে ঘুমিয়ে আছো।আর তুমি আমাকে কিছু বললেও না।সামথিং সামথিং, এম আই রাইট?

আমিঃ নাথিং নাথিং।আপনার সাথে সকাল সকাল ঝগড়া করার মুড নেই আমার।এখন আপনাকে কিছু বললেই আপনি বলবেন যে আমি তোমার স্বামী,

অধিকার আছে ইত্যাদি ইত্যাদি…

বলে চলে আসলাম।

এভাবেই দিন কাটছিলো।উনার আমার প্রতি পাগলামি,কেয়ারিং,ভালবাসা দেখে উনাকেও আমার ভালো লাগতে শুরু করলো।কিন্তু উনাকে আমি তা কখনো বুঝতে দেই নি।উনাকে ভালো লাগার আরেকটা কারণ হলো আরাফের সাথে উনার অনেজ মিল আছে।মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি আরাফ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।উনার আর আরাফের ভালবাসি বলা,কেয়ারিং করা এক স্টাইলের। উনার কাছে যত বার আসি ততবার আরাফের কথা মনে হয়।মনে হয় যে উনিই আমার আরাফ।কিন্তু উনি যে আরাফের নামটাও শুনতে চায় না।

আরাফ আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।আরাফের বাবা অনেক বড়লোক ছিলেন।আমার বাবা মধ্যবিত্ত।আরাফের মা নেই।আরাফের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় আমার জন্মদিনে।ওইদিন আরাফ আর আরাফের বাবা আসে।আরাফকে দেখেই আমার ওকে ভালো লেগে যায়। তখন ভালবাসা আর ভাললাগা কিছুই বুঝতাম না।আরাফ আমাকে কোনো ছেলের সাথে মিশতে দিত না।একদিন একটা ছেলে আমার হাত ধরে আরাফের সামনে।আরাফ ওইখানেই ছেলেটাকে অনেক মারে।আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। আরাফকে দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে যাই।কারণ আরাফ অনেক রেগে ছিল।

আরাফঃ নিহুপাখি তোমাকে বলেছিলাম না কোনো ছেলের সাথে কথা না বলতে?কোনো ছেলের আশেপাশে না থাকতে?তাহলে ও কেন তোমার হাত ধরলো? বলো নিহুপাখি।

আমিঃ আসলে…..(ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না)

আরাফঃ এইবারের মতো মাফ করে দিলাম নিহুপাখি।নেক্সট টাইম তোমাকে কোনো ছেলের সাথে দেখলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

আমিঃ ঠি..ঠিক আছে।

আরাফঃ নিহুপাখি।

আমিঃ হুম।

আরাফঃ আই লাভ ইউ।

আরাফের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।এইদিনই প্রথম আরাফ আমাকে ভালবাসার কথা বলে।তারপর থেকে আরাফের প্রতি আমার ভাললাগা আরো বাড়তে থাকে।আস্তে আস্তে ভালবাসতে শুরু করি।কিন্তু এক ঘটনা আমার লাইফটাকে পুরো বদলে দেয়।

আরাফের কথা ভাবছিলাম তখন আমান আসেন।

আমানঃ নিহুপাখি।

উনার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসি।

আমানঃ কি এতো ভাবছ নিহুপাখি?

আমিঃ কিছু না। কিছু বলবেন।

আমানঃ আমার জন্য কিছু রান্না করো।খুব খিদে পেয়েছে।

আমিঃ খাবার আছে।আপনি আসুন আমি দিচ্ছি।

আমানঃ না।তোমার হাতের রান্না খাবো।

আমিঃ আমি রান্না করতে পারবে না।

আমানঃ রান্না না করলে চলো তোমাকে আদর করি।

আমিঃ কিহহ???

আমানঃ এখন তুমি ঠিক করো রান্না করবে নাকি আদর খাবে?

আমিঃ যাচ্ছি রান্না করতে।

রাগ করে রান্নাঘরে চলে গেলাম।উনার জন্য নুডলস রান্না করলাম।অনেক শখ উনার আমার হাতের রান্না খাবে।ইচ্ছামতো মরিচ দিয়ে দিলাম।এইবার খান আপনি।

নুডলস নিয়ে উনাকে দিলাম।উনি এক চামচ মুখে দিয়ে বসে আছেন।এতো ঝাল কি কেউ খেতে পারে নাকি।আমি বসে বসে হাসছিলাম।তারপর দেখলাম উনি পুরো নুডলস টাই খাচ্ছে।ঝালে উনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আমি জোর করে উনার কাছ থেকে বাটিটা নিয়ে নিলাম।

আমিঃ আপনি পাগল নাকি?এতো ঝাল তাও খাচ্ছেন।

উনাকে পানি দিলাম।তাও ঝাল কমছে না।চিনি আনার জন্য নিচে গেলাম।চিনি খাওয়ার পর ঝাল কমলেও উনার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।উনি আমাকে কিছু বললেন না।রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলেন।আমার উনার সাথে এরকম করাটা ঠিক হয়নি।

প্রতিদিন একটু পর পর আমাকে কল দেয়।আর আজকে একবার কল দিলো না।রাত আটটা বেজে গেছে।উনি এখনো এলেন না।অনেক চিন্তা হচ্ছে উনার জন্য। কেন যে ওরকম করলাম।শুধু আমার হাতের রান্নাই তো খেতে চেয়েছিলেন।

আমিঃ রহিমা খালা উনি আজকে এখনো আসছেন না কেন?

রহিমা খালাঃ চিন্তা কইরেন না মেমসাব।মালিক আইসা পরবো।কাম করতাছে মনে হয়।আমার সব কাম করা শেষ। আমি এহন যাই।

আমিঃ আচ্ছা।

পিহুঃ আপু খেতে দাও।

আমিঃ আয়।

পিহুঃ আপু ভাইয়া কোথায়?

আমিঃ অফিসে কাজ করছেন।পরে আসবে।

পিহুঃ তুমি খাবে না?

আমিঃ আমি পরে খেয়ে নিব।তুই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।

উনার জন্য অপেক্ষা করছি।রাত এগারোটা বাজে।উনি এখনো আসছেন না।একটু পর কলিং বেল এর আওয়াজ শুনলাম।,তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।উনি এসেছেন। উনার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে উনি অসুস্থ।

আমিঃ আজকে আসতে এতো দেরি হলো কেন?প্রতিদিন তো তাড়াতাড়ি চলে আসেন?

আমানঃ অফিসে অনেক কাজের চাপ ছিল তাই দেরি হয়েছে।

আমিঃ আপনার কি শরীর খারাপ?

আমানঃ না।আই এম ওকে।আজকে অনেক কাজ করতে হয়েছে তাই ক্লান্ত।

উনাকে সরি বলা দরকার। তখন আমার ওরকম কাজ করাটা ঠিক হয়নি।

আমিঃ আচ্ছা শুনুন।

আমানঃ বলো নিহু।

আমিঃ আসলে…না কিছু না।

আমানঃ তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

বলে উনি ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here